চন্দ্রমুখী >> সুস্মিতা শশী । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প

সুস্মিতা শশী রচিত ‘চন্দ্রমুখী‘ রোমান্টিক ছোটগল্পটি ভালোবাসা দিবস-২০১৯ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩’ এ পঞ্চম স্থান অর্জন করে।
“অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হওয়ার জন্য সবেমাত্র ওয়াশরুমে ঢুকেছি আর মুন ডাকাডাকি শুরু করেছে। এই মেয়েটার কি কোনো কাণ্ডজ্ঞান নেই? স্বামী অফিস থেকে ফিরেছে কোথায় হাত থেকে  ব্যাগটা নিবে, তোয়ালেটা এগিয়ে দিবে। তা তো করবেই না উল্টো ডাকাডাকি শুরু করেছে।
ফ্রেশ হয়ে ওর কাছে গিয়ে বললাম,
— কী হয়েছে? তখন ডাকছিলে কেন?
— তোমার কল এসেছে।
— কে কল করেছিলো? ধরলে না কেন?
— আননোন নাম্বার।
— ও আচ্ছা। ফোনটা দাও আমার কাছে।
ফোন নিয়ে তো আমি অবাক। যে নাম্বারে কল এসেছে এ সিমকার্ড দীর্ঘ সাত বছর পর অন করা হয়েছে। পুরোনো কাগজ ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে গত পরশু সিমকার্ডটা পাই। বন্ধ সিমের অফার পাওয়ার আশায় সেদিনই সিমটা অন করি।
এতদিন পর কে আমার এই নাম্বারে কল করবে? আর কোনোকিছু না ভেবে কল ব্যাক করলাম। ওপাশ থেকে একটি মেয়েলি কণ্ঠ বলে উঠলো,
— হ্যালো, আপনি কি কুষ্টিয়া থেকে অনিক বলছেন?
— স্যরি রং নাম্বার।  আমি রাঙ্গামাটি থেকে অন্তর বলছি।
— মাফ করবেন, ভুল নাম্বারে কলটা চলে গেছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে। এরপর থেকে দেখেশুনে নাম্বার ডায়াল করবেন।
কল রেখে ডাইনিং রুমে খেতে গেলে মুন জিজ্ঞেস করলো কে কল করেছিলো। ওকে বললাম রং নাম্বার ছিলো।
তিনদিন পর আবার আমার ওই পুরাতন নাম্বারে কল আসে। তখন আমি অফিসে ছিলাম। আবারও কি কেউ ভুলে কল করেছে? সবার নাম্বার আমার সিমের সাথেই মিলে যায় নাকি। ভালোই তো। এসব ভাবতে ভাবতেই কলটা কেটে গেলো। কিছুক্ষণ পর একই নাম্বার থেকে আবার কল এলো।
রিসিভ করতেই এক ভদ্রলোকের কণ্ঠস্বর শোনা গেলো।  উনি কুরিয়ার অফিস থেকে কল করেছেন। আমার নামে নাকি একটা পার্সেল এসেছে।
আমার নামে পার্সেল! একদম অবাক হয়ে গেলাম। আমার নামে কে পার্সেল করবে? তাও আবার এই নাম্বারে যেটা সাত বছর পর অন হলো! মানুষ ভাবতে ভালোবাসে, তাই আমিও ভাবতে লাগলাম কে হতে পারে। ভাবনায় এমনভাবে ডুবে গিয়েছিলাম যে ভুলে গিয়েছি আমি এখন অফিসে আছি। আমার কলিগের ডাকে আমার সম্বিত ফেরে।
ভাবতে ভাবতে যখন কোনো কূলকিনারা পেলাম না তাই আবার ভাবলাম বাসায় ফেরার পথে পার্সেলটা নিয়ে যাব।
পার্সেলটা চন্দ্রমুখী নামে কেউ একজন পাঠিয়েছে। এই নামে আমি কাউকে চিনি না। খুলে দেখলাম সাতটি বই রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের “চোখের বালি”, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “সোনালী দুঃখ”, সমরেশ মজুমদারের “সাতকাহন “, হুমায়ূন আহমেদের “পেন্সিলে আঁকা পরী”, ফাতিমা রুমির ” সাঁঝবেলা” সাদাত হোসাইনের ” নির্বাসন” এবং “কাজল চোখের মেয়ে”।
ছাত্রজীবনে বই পড়তে প্রচুর ভালোবাসতাম। এখন বই পড়ার সময় এবং ইচ্ছে কোনোটিই নেই।
সাঁঝবেলা বইয়ের উপর একটা চিরকুট লক্ষ্য করলাম।  লেখা রয়েছে “এই বই প্রথমে পড়বেন।”
পড়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না তবুও কেউ যখন বললো তার কথা রাখতেই রাতে বই নিয়ে বসলাম। দু’পাতা পড়তেই ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসলো। চেয়ার থেকে উঠতে গিয়ে বইটা পড়ে গেলো। তুলতে গিয়ে দেখি শেষের পৃষ্ঠায় কারো হাতের লেখা রয়েছে। কৌতুহল নিয়ে তুলে দেখি একটা কবিতা।
শিরোনাম “আমি চন্দ্রমুখী বলছি”
“শুনছেন, আমি চন্দ্রমুখী বলছি।
চিনতে পেরেছেন কি আমায়?
কী ভাবছেন? এ নামে কাউকে চিনেন না?
না চেনারই কথা।
এটা তো আমার বাবা মায়ের দেয়া নাম না!
তাঁদের দেয়া নাম বললে ঠিকই চিনতে পারতেন।
চন্দ্রমুখী তো আপনারই দেয়া নাম-
তাই হয়তো চিনতে অসুবিধা হচ্ছে।
বুঝতে পারছেন না আমি কোন চন্দ্রমুখী।
না থাক, চেনার দরকার নেই।
এবার বলুন, আপনি ভালো আছেন তো?
ভালো আছে কি মুন?
হ্যাঁ আপনার মুনের কথাই বলছি।
মনে আছে? ওইযে একবার বলেছিলাম,
“আমি মুন না, আমি শশী।”
তখনই তো আপনি আমার নাম দিলেন চন্দ্রমুখী।
জানেন? তখন থেকেই আপনায় চন্দ্র ভাবতাম।
আমার চন্দ্র, এই চন্দ্রমুখীর চন্দ্র।
ভেবেছিলাম সারাজীবন চন্দ্রমুখী হয়েই চন্দ্রের পাশে থাকব।
কিন্তু আপনি তো চন্দ্র না,
আপনার অন্তরে তাই চন্দ্রমুখীর ঠাঁই হলো না।
ঠাঁই পেলো না শশীও।
ওই অন্তর তো আগেই দলিল করা ছিলো একটা মুন এর নামে।
কী আশ্চর্য দেখেন!
মুন আর শশী দুটোর অর্থ চাঁদ হলেও
একজন মুন হয়েই রইলো আর আরেকজন চন্দ্রমুখী।”


এইচএসসি দিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং ভর্তি কোচিং করতে ঢাকা যাই। কোচিং এর অদূরেই একটা পাব্লিক লাইব্রেরী ছিলো। প্রতিদিন বিকেলে বন্ধুরা যখন খেলতে যায় আমি তখন লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়ি। বই পড়া আমার শখ না, নেশা হয়ে গিয়েছিলো। মুনের সাথে সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর ওকে ভুলতে আরও বেশিবেশি বই পড়া শুরু করি।
একদিন বিকেলে লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখি একটা টেবিলও ফাঁকা নেই। সবাই কাগজ কলম নিয়ে কী যেন লিখছে। এদিক ওদিক তাকাতে দেখি একটা মেয়ে একা বসে আছে। বাকি সবার মতো মেয়েটিও কী যেন লিখছে। ওর পাশের চেয়ারটা খালি। আমি গিয়ে মেয়েটার কাছে বসার অনুমতি চাইলাম। ও মুখের সামনে আঙুল নিয়ে শশশশ শব্দ করে মাথা নাড়িয়ে আমায় বসার অনুমতি দিলো।
আমি একটা বই এনে পড়ছিলাম।
হঠাৎ মেয়েটি ফিসফিসিয়ে বললো,
— শুনুন ওইখানে গিয়ে প্রশ্ন আর পেপার নিয়ে আসুন। (হাত দিয়ে দেখিয়ে)
— কীসের প্রশ্ন আর পেপার?
— এমা! আপনি জানেন না আজ সর্বসাধারনের বই পাঠ প্রতিযোগিতা চলছে? আপনার পছন্দমতো বই নিয়ে পড়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিবেন ব্যাস।
— আপনি প্রশ্ন এনেছেন?
— আমিতো জমা দিয়েছি অনেকক্ষণ হলো।
— তাহলে এখন কী লিখছেন?
— কবিতা।
— আপনি কবিতা লিখতে পারেন? একটু আধটু পারি। আপনি কবিতা পড়তে ভালোবাসেন?
— হ্যাঁ ভালবাসি। আমিও আপনার মতো একটু আধটু কবিতা লিখতে চেষ্টা করি।
— ওমা তাই! আমাকে আপনার লেখা কবিতা শোনাবেন না?
— আজ তো নিয়ে আসিনি।
— আজ নিয়ে আসেননি কাল আসবেন। লাইব্রেরীর সামনে যে বকুল গাছ রয়েছে ওখানে। ঠিক আছে?
— তা নাহয় মানলাম কিন্তু আজ আপনার লেখা কবিতা তো পড়তেই পারি তাই না? দিন আপনার কবিতা পড়ি।
— আপনি এখন কবিতা পড়বেন? প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবেন না?
— না, করবো না। একটু পরেই তো সন্ধ্যা হয়ে যাবে। এখন পড়ব কখন আর লিখব কখন বলুন? তারচেয়ে বরং চলুন আজই বকুলতলায় যাই। এখানে আর কতক্ষণ ফিসফিসিয়ে কথা বলব। দেখুন সবাই আমাদের দেখছে।
মেয়েটি চারপাশ দেখে একটু লজ্জা পেল। আমায় বললো, চলুন তাহলে।
বকুলতলায় বসে ওর লেখা কয়েকটা কবিতা পড়লাম।  অনেক ভালো লেগেছে কবিতাগুলো।  আমি প্রশংসা করে বললাম,
— কবি সাহেবা তো অসম্ভব ভালো কবিতা লেখে।
— দেখুন আমায় কবি কবি করবেন না। ভালোলাগে না। আমার একটা নাম রয়েছে।
— নাম তো রয়েছেই কিন্তু আপনার নাম তো আমি জানি না।
— আরে তাই তো। আপনি তো আমার নামই জানেন না। আমার নাম শশী। সায়ন্তনি শশী। আপনার নাম?
— আমি শাহরিয়ার আলম। ডাকনাম অন্তর।
— অন্তর = ছুমন্তর।  হিহিহি ( খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো)
— আমার নামকে বিকৃত করা না? ওকে শুনুন তাহলে,  শশী = ভুষি।
— এই যে চুপ চুপ।  একদম ভুষি বলবেন না।
— আচ্ছা বললাম না।
— এই তো গুড বয়। আপনি বই পড়তে ভালোবাসেন তাই না?
— হ্যাঁ বাসিই তো।
— সাতকাহন পড়েছেন?
— না।
— সোনালী দুঃখ, চোখের বালি, পেন্সিলে আঁকা পরী এসব?
— না এগুলোও পড়া হয়নি।
— উফ একটাও পড়েননি! আচ্ছা আমি একদিন আপনাকে এগুলো গিফট করবো।
— আপনার ইচ্ছে।
— হুঁ আমার ইচ্ছে। দাঁড়ান বাসায় একটা ফোন দিয়ে জানিয়ে দেই আমি লাইব্রেরীতে আছি। নয়তো আম্মু খুব চিন্তা করবে।
শশী মোবাইল বের করে আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখলো। তারপর আমায় বললো, আপনার মোবাইলটা একটু দেবেন? আমার মোবাইলে চার্জ নাই। আমি মোবাইল দিলাম।
পরেরদিন বিকেলে আমি আবার লাইব্রেরীর সামনে ওই বকুলতলায় যাই। মুনের সাথে সম্পর্ক চলাকালে ওকে নিয়ে অনেক কবিতা লিখেছিলাম সেগুলোর কয়েকটা শশীকে দেখালাম। শশী মুগ্ধ হয়ে সব কবিতা পড়লো।
— এত আবেগ কই পান বলুন তো? এত্ত সুন্দর হইছে কবিতাগুলো। আমার কবিতায় তো কোনো আবেগ নাই।
— প্রেমে করলে এমনিতেই আবেগ চলে আসে।
— তাই! আপনি প্রেম করেন?
— করতাম।
— করতাম মানে?
— এখন করি না।
— কেন? এখন করেন না কেন? (অবাক হয়ে)
— ওর সাথে ঝগড়া হইছে। বাসা থেকে নাকি ওর বিয়েও ঠিক করেছে। আমার সাথে নাকি ওর যায় না।
— ওহ। থাক মন খারাপ করবেন না।
— আর মন খারাপ! মন খারাপ করি না।
— এইতো গুড বয়ের মতো কথা। আপনি আমার বন্ধু হবেন?
— বন্ধু?
— হ্যাঁ বন্ধু। যদিও আপনি আমার বড় হবেন মনে হচ্ছে। আপনি কীসে পড়েন গো? এসএসসি কত সালে?
— একসাথে এত প্রশ্ন করলে উত্তর দিব কীভাবে?  আমি এবার এইচএসসি দিলাম। আর এসএসসি…
— থাক বলতে হবে না। বুঝেছি। আমি সামনের বার এইচএসসি দিব। আপনি আমার এক ইয়ার সিনিয়র।  এক ইয়ার জুনিয়রদের সাথে বন্ধুত্ব করা যায়। আজ থেকে আমরা বন্ধু। ওকে?
— আচ্ছা।
শশীর সাথে বন্ধুত্ব হওয়ার পর আমরা প্রতিদিন দেখা করতাম। একসাথে ঘুরতাম আর কতশত গল্প করতাম। আমার আর মুনের সম্পর্কের শুরু কীভাবে, কীভাবে ভেঙে গেলো সব শেয়ার করলাম। দিন যেতে লাগলো আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরো গাঢ় হতে লাগলো। একসময় সম্পর্কটা আর বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। অন্তত আমার তরফ থেকে না। আমি শশীকে ভালবেসে ফেলি।
একদিন বলেই ফেলি “আপনি আমার সাথে প্রেম করবেন?”
ও উত্তর দেয় “ভালোভাবে পড়াশোনা করে কিছু একটা করে আমার পরিবারের কাছে প্রস্তাব নিয়ে আসলে আমি রাজী হব। প্রেমটেম করতে পারবো না বুঝলেন? আমি প্রেমে বিশ্বাসী না।”
শশী আমাকে সরাসরি ভালোবাসি না বললেও বুঝতে পারছিলাম ও আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে। আমি কী করছি, খেয়েছি কিনা, পড়েছি কিনা সব খোঁজ নিতে শুরু করলো। একদিন তো বলেই ফেলে,
— দেখুন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় আপনি অন্তত পাঁচ মিনিট আমার সাথে কথা বলবেন বুঝলেন?
— কেন?
— আমি বলছি তাই।
— আপনি বললেই শুনতে হবে?
— হ্যাঁ শুনতে হবে। কারণ আমি মুন না। আমি শশী আর শশীর কথা শুনতেই হবে।
— উহু আপনি চন্দ্রমুখী। আমার চন্দ্রমুখী।
এ কথা শুনে ও লজ্জায় লাল হয়ে দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকলো।
আমি বললাম,
— এত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই এটাই সত্যি।
এভাবে খুনসুঁটি করেই আমাদের দিন কাটতো। আমি সবসময় ওর পিছনে লাগতাম। কোনোভাবেই ও আমার সাথে পেরে উঠতে পারতো না।
— উফ!  আপনি এত কথা কোত্থেকে শিখলেন?
— শশীর কাছে থাকলে কথা আসমান থেকে আসে।
— হু আসমান থেকে আসে! আপনাকে দেখে বোঝার উপায় নেই এই লোকটা এত কথা বলতে পারে।
— শশীর সাথেই তো এত কথা বলি। আর কারো সাথে কি বলি?
— আচ্ছা এখন যদি মুন ফিরে আসে কী করবেন?
— ও আসবে না। ও অনেক খারাপ ব্যবহার করেছে আমার সাথে।
— তবুও ভয় হয়।
— কীসের ভয়?
— না কিছু না।
— আপনিও আমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন কিন্তু।
— না মোটেও না।


ও আমার প্রেমে পড়েছে কোনোভাবেই এ কথা স্বীকার করতো না।  প্রথম প্রথম ওর প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ থাকলেও যখন দেখলাম ও আমার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ধীরেধীরে আগ্রহ কমতে লাগলো। একদিন বলেই ফেললাম,
— দেখুন আমার প্রতি এত উইক হবেন না। এটা ভালো না।
— কেন? চিন্তা করছেন নাকি? না মানে, ছেড়ে যাওয়ার।
— এহ আমি মনে হয় থাকার জন্য আসছি। কথাটা খারাপ ভাবে নিবেন না, মেয়েদের উইকনেস দেখলে ছেলেদের আগ্রহ কমে যায়। আর এটাই সত্যি।
— আচ্ছা স্যরি। আর আগ্রহ দেখাবো না।
এই কথায় মেয়েটা আমাকে হারানোর ভয় পেয়েছিলো কিনা জানি না তবে আর আগের মতো আগ্রহ দেখাতো না। একসময় আমার এইচএসসি রেজাল্ট দিয়ে দিলো, কোচিংও শেষ হলো। শশীকে কোনোকিছু না জানিয়েই রাঙ্গামাটি চলে আসি। এসেই সিমকার্ডটা চেঞ্জ করে ফেলি। বুঝতে পারি শশীকে আমি ভালোবাসি না। ওটা আমার আবেগ ছিলো। তারপর থেকে শশীর সাথে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি।
সাত বছর কেটে গেছে। সাত বছরে কতকিছু বদলে গেছে। মুন আর আমার সম্পর্কটা আবার জোড়া লেগেছে। ভালো পদে চাকরি করি। মুনকে বিয়েও করেছি। শশীরও মনে হয় সংসার হয়েছে।
বাকি বইগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে ছোট একটা চিঠি পেলাম।
চিঠিতে লেখা,
” আপনি তো জানেন, একসময় মা হওয়ার খুব স্বপ্ন ছিলো। মনে মনে আপনার সন্তানের মা হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম। তা তো আর হলো না। তবুও আমি  মা হয়েছি। নিজের জন্ম দেয়া সন্তানের মা হতে না পারলেও এতিমখানার অসংখ্য বাচ্চাদের মা হয়েছি। ঠিকই ভাবছেন, আমি বিয়ে করিনি।  আপনাকে ছাড়া এ চন্দ্রমুখী আর কারো কাছে নিজেকে সঁপে দিতে পারবে না। ভালো থাকবেন। আর হ্যাঁ এতদিন যখন খোঁজ নেননি এখন আর আমাকে খোঁজার বৃথা চেষ্টা করবেন না। পাবেন না আমায়। “
ওকে খুঁজে না পাই অন্তত একটা স্যরি তো বলতে পারি। ময়লার ঝুঁড়ি থেকে কুরিয়ারের কাগজটা নিয়ে প্রেরকের নাম্বারে কল করি। একজন লোক কল রিসিভ করলেন। বললেন, উনি কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করেন। কোনো এক ভদ্রমহিলা এসে আমার ঠিকানায় নাকি পার্সেলটা পাঠিয়ে দিতে বলে। ফোন নাম্বার চাইলে বলে উনার কোনো ফোন নাই। তাই লোকটার নাম্বার দিতে বলে। যদি পার্সেলটা ফেরত আসে তাহলে লোকটাই যেন রেখে দেয়।
তিনদিন আগে যে আননোন নাম্বার থেকে কল এসেছিলো ওটা নিশ্চই শশীর হবে। দ্রুত মোবাইল নিয়ে ওই নাম্বারে কল করলাম। ওপাশ থেকে উত্তর এলো ” আপনার কাঙ্খিত নাম্বারে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩ এ ‘ষষ্ঠ’ স্থান অর্জনকারী গল্প >> আলোর পথে – মাহামুদা জামান

আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০১ এ ‘পঞ্চম’ স্থান অর্জন স্থান অর্জনকারী গল্প >> লাল জামা – আসিফ আহমেদ

লাল-জামা-আসিফ-আহমেদ-আত্মপ্রকাশ-নির্বাচিত-গল্প-lal-jama-asif-ahmed-attoprokash-selected-story
লাল-জামা-আসিফ-আহমেদ-আত্মপ্রকাশ-নির্বাচিত-গল্প

চন্দ্রমুখী । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প । লেখক পরিচিতি

লেখকঃ সুস্মিতা শশী
ছোটগল্পঃ চন্দ্রমুখী
গল্পের জনরাঃ রোমান্টিক, ভালোবাসার গল্প।
দেশের বাড়িঃ কুড়িগ্রাম, রংপুর।
পড়াশোনাঃ ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ডিপার্টমেন্ট, ষষ্ঠ সেমিস্টার (২০১৯)।

(লেখক ছবি দিতে ইচ্ছুক নন)

লেখকের কথাঃ ছোট থেকেই ছড়া, কবিতা লেখার অভ্যাস ছিল। মূলত বাবার অনুপ্রেরণায় লেখালেখির জগতে আসা। গল্প লেখাটা তেমনভাবে হয়ে ওঠে না তবে মাঝেমাঝে শখের বসে দুয়েকটা অখাদ্য কুখাদ্য লেখা হয়।

আত্মপ্রকাশ সম্পাদক

http://attoprokash.com

আত্মপ্রকাশে অপ্রকাশিত গল্প এবং বুক রিভিউ এবং প্রবন্ধ প্রকাশ করতে যোগাযোগ করুন (ইমেইল-attoprokash.blog@gmail.com) অথবা ফেইসবুক পেইজ ইনবক্স। সর্বনিম্ন ১০০০ শব্দ হতে যেকোনো ঊর্ধ্ব সীমার ছোট গল্প গ্রহণযোগ্য। আপনার গল্প আত্মপ্রকাশ বিচারকদের দ্বারা নির্বাচিত হলে আপনাকে জানানো হবে এবং তা সরাসরি প্রকাশ করা হবে আত্মপ্রকাশে। আপডেট জানতে ফেইসবুক গ্রুপে সক্রিয় থাকুন।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *