আলুর ক্ষেতে ইশ্বর । হাসনাত সৌরভ । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প

হাসনাত সৌরভের লেখা ‘আলুর ক্ষেতে ইশ্বর‘ ছোটগল্পটি আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ১ এ তৃতীয় স্থান অর্জন করে এবং জিতে নেয় নিমাই ভট্টাচার্যের বিখ্যাত ‘মেমসাহেব’ উপন্যাসটি।

“গোয়ালটার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফস করে বেরিয়ে এলো। দ্রুত ঘাটের পানে রাতের এঁটো বাসনগুলোর কাঁড়ি নিয়ে এগোয় বুলির মা। পুব দিক ফরসা হতে ঢের দেরী। ঝিঁঝিঁর ডাক এখনও থামেনি। গরুটা এই সময়ই ধড়মড় করে উঠে দাঁড়াত। এঁটো বাসন ঘাটে ফেলে কাছে গেলে গরুটা মাথা নাড়াত। বাঁধা বাছুরটাকে কয়েক মুহূর্ত ছেড়ে দিলে মায়ে পোয়ে আদর খাওয়া খাই হোত।…… সব গরু গিয়ে ওই একটিতেই ঠেকেছিল। তাও গেল।
ঘাটে হাঁড়ির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে ঘুঁটের ছাই দিয়ে মাজতে মাজতে বুলির মা ভাবছিল, এর পর ঘুঁটে কিনতে হবে। এখনও ক বস্তা আছে বটে। তা, সে আর কদিন।

আলুর চাষে এত ফলন কোনদিন হয়নি এ অঞ্চলে। “আলুর ফলনডা দেখিচ ইবারে মইদুল! বেপারী যা দাম বলতিছে, আলু মাঠে ফেলি দিতে হবে পেরায়।” দুলাল হাতির চা দোকানে গরম চা এর গ্লাসটা নিতে নিতে বলল অমর মাস্টার। মইদুল দোকানের সামনে উবু হয়ে বসে বিড়ি টানছিল। লিজের জমিতে বিঘে দুই আলুর চাষ মইদুলের। সার, ওষুধ, আলুর বীজ সব মহাজনের কাছে ধার বাকীতে পড়ে। রাতের ঘুম গেছে। অভ্যাসবশে চা দোকানে সকালে আসা। দুদিন চা খায়নি। আজও চা দিতে চেয়েছিল দুলাল। না করেছে মইদুল। অমর মাস্টারের কথায় দোকানের উঠোন ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে সে। হন হন করে বাড়ীর পানে হাঁটা দিল আলুচাষী মইদুল।

সকালের রোদ পিঠের ওপর পড়ে চিড়বিড় করছে। আরও কাঠা ছয়েক আলু খুঁড়তে বাকী। লাল প্লাস্টিকের বস্তায় আলু ভরে ফেলছে বুলি। বাপ মেয়েতে সকাল থেকে লেগেছে। সবজে হলুদ গাছগুলো কদিন আগে পর্যন্ত ডগমগে সবুজ হয়ে ছিল মাঠ জুড়ে। দক্ষিণের আলের বাবলা গাছটার তলায় ছাগল ছানা কোলে বুলি বসে বসে চেঁচকুয়া ঘাসের ডাঁটি ফাটাতে ফাটাতে কত কথা ভাবত। ফিঙ্গেগুলো টুই টুই উড়ে উড়ে পোকা ধরে খেত। “বুলি চল ইবার, দুটা পান্তা খেয়া নেই। তুর খিদা লাগে নাই?” বুলি কষে বস্তার মুখটা বাঁধতে বাঁধতে বাপের পানে তাকায়। মাথা ঝাঁকিয়ে হেসে বলে, “দমে খিদা পাইছে। কাঁচা লঙ্কা নাই বইলে আইজ মায়ে লুকায়ে শুকনা লঙ্কা আনছি। মোকে মাইরবে আইজ মায়ে।” বাপ কথা না কয়ে বাবলা গাছের পানে হাঁটা দেয় ফাঁপরি কোদাল হাতে। বুলি ময়লা ফ্রকের ঘেরে হাত মুছতে মুছতে পিছু পিছু চলে। এ্যালুমিনিয়ামের ডেকচিতে গতরাতের জলঢালা ভাত, থ্যাবড়া বাটিতে একপাশে একথাবা আলুমাখা, দুটো আধলা পেঁয়াজ আর নুন। প্লাস্টিকের বোতলের জলে হাত ধুয়ে, ডেকচির ঢাকনায় বুলির জন্য পান্তা, আলুমাখা, পেঁয়াজ আলাদা করে রাখতে রাখতে বুলির বাপ ভাবছিল মহাজনের ঋণের কথা। ব্যাপারী যে দাম দিচ্ছে তাতে হাজার পঁচিশেক টাকা উঠবে কিনা সন্দেহ। দেনা আছে হাজার চল্লিশেক। খোরাকীর ধানে হাত পড়লে বাকী দিনগুলো খাবে কি? সার আর ওষুধের দাম এই দিই ওই দিই করে এতদিন ঠেকিয়ে রাখলেও, শেষতক আর পারা গেল না। সাধের গরুটা বিক্রি করে দিতেই হল গেল হপ্তায়। তার থেকে কিছু টাকা হাতে আছে। কিন্তু, এত ভালো ফলনেও যদি এই হাল হয়, তবে দিন চলে আর! বুলি প্লাস্টিকের মোড়ক খুলে শুকনো লঙ্কা আর আমের আচারের ডেলা বের করে হাসিমুখে। মেয়েটার মুখে সর্বদা হাসি লেগে আছে যেন। বুলির বাপ শত চিন্তার মধ্যেও হেসে লঙ্কা তুলে দাঁতে কাটে। “আচার কুথায় পেলি রে, হতভাগী? তুর মা জানলি আস্ত রাখবেনি তুর।” ঘাসে থেবড়ে বসে, ডেকচির ঢাকনা একহাতে ধরে খেতে খেতে বুলি মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “হুঁ, বকলিই হইল নাকি! ই আচার ত সেজ কাকীর কাছ থেইকে চেইয়া আনছি। কাকীর জ্বালন কুচাই দিছি না সেদিন”। কপালের চুল হাত দিয়ে সরিয়ে ডাগর চোখে রাগ ফুটিয়ে বাপের পানে তাকায় বুলি। “আচারটা খাইতে কিন্ত বেশ, না বাবা?”



সাধন দাস আগল ঠেলে ঢুকল। পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে একবার কোমরে হাত দিয়ে চারদিকটা দেখে নিল। পুকুরটা বেশ। হেলা খেজুরের তলার ছায়ায় একটা দেড়ে শোল স্থির হয়ে ভেসে আছে। সাধনের দিকেই তাকিয়ে যেন। এ বর্ষার বাচ্চা নয় এটা। মাঝারী সাইজের গেরামভারী মাছ। শালা, শিকারী মাছ, ভয়ডর নাই। সাধন বাড়ীর পানে হাঁটা দেয়। উঠোনে আলুর বস্তাগুলো ডাঁই করে রাখা একপাশে। দাওয়ায় পাতা হেঁসাতির চাটাইয়ে বসে হাঁক পাড়ে সাধন। “কই গ জনার্দনদা, আছ নাকি হে”। আসার সময় দেখেই এসেছে জনার্দন দুলাল হাতির চা দোকানে বসে আছে। ভেতর থেকে বুলির মা আওয়াজ দেয়, “কে? উনি বাড়ী নাই গো। বাইরে বেইরোলেন ত।”
” আমি সাধন গো, বৌদি। তা, দাদা আইসবে কখন কে?” কথা এগোয় সাধন।
আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বাইরে বেরিয়ে আসে বুলির মা। “কে জানে, কখনকে আইসে। আলুর বাজার খ্যারাপ বইলে মন মেজাপ খুব খ্যারাপ। কি কইতে হবে কয়ে যান।”
-“না, তেমন কিছু না। দেখা হইলে আমি নিজে কয়ে দিব দাদারে।… একটু জল খাবো গ বৌদি। গলাটা শুকায়ে গেল যেন।” বুলির মা ভেতরে গেল। এত বেলায় শুধু জল দেওয়া যায়! ঠাকুরের আস্থানে দুটো বাতাসা আছে। রেকাবিতে দুটো বাতাসা দিয়ে কলসী থেকে জল গড়িয়ে বুলিকে ডেকে বলল, “দিয়ে আয় ত উঠানে।” বুলি এতক্ষণ উনান ধারে বসে হুলোটার মাথা থাবড়াচ্ছিল। বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকাল সে। বাড়ীর মধ্যে শুধু কামিজ পরে আছে সে। উঠে একটা গামছা লুঙ্গির মত পরে নেয়। তারপর জলের গ্লাস আর রেকাবি নিয়ে চলে। সাধন চাঁটাইয়ের কোণা ধরে খুঁটছিল। বুলিকে দেখে তার বুক ঢিপ ঢিপ করতে শুরু করল। জনার্দনদার মেয়েটাকে দেখলেই তার যেন গলা শুকিয়ে যায়। কত আর বয়স হবে মেয়েটার। এই সেদিনও মাঠে ঘাটে ঘুরত খালি গায়ে। এখন দেখতে হলে ঘরে আসতে হয়। গানের দলে একে নামাতেই হবে। সারা শরীরটা শিরশির করে ওঠে সাধনের। মিষ্টি হেসে মেঝের একটা জায়গা দেখিয়ে বলে, “ওখানে রাখ।” বুলি সামনে ঝুঁকে জলের গ্লাস আর রেকাবিটা রাখে। সাধনের তেষ্টা বেড়ে যেন গলায় আটকে যায়।

সাইকেলে হাওয়া নাই। শালা, পুরানো লজঝড়ে সাইকেল একখান। চড়ে আর কদিন, গড়ায় তো বেশী। কবিগানের দলটার বায়না বাড়লে, শালা একটা মোটর সাইকেলই কিনে নেবে। এমন কি ব্যাপার নাকি! নতুন মোটর সাইকেলে গেরামের মাঝ দিয়ে শালা ধুলা উড়িয়ে যখন যাবে, তখন সব চোখ ট্যারা হয়ে যাবে। পিছনে কাকে বসাবে। দীনু ভক্তের নাতনীটাকে, নাহ্ ওর শালা হেবি দেমাক। জনার্দন বেরার মেয়েটারেই বসাবে। ওহ্ , বুলি রে! কি সোন্দর হাসে মেয়েটা, মাইরি দিল ফেটে যায়। একলাথে সাইকেলটাকে পুকুরে ফেলে দিতে ইচ্ছা যায় সাধনের। বুলির মামাকে প্রায় পটানো হয়েই গেছে। শালা, বিলাতী খাওয়ালে সব শালা নেড়ী কুত্তা হয়ে যায়।

“মেয়ে মোর গান শিখেনি। আর উসব লাইনে গেইলে বিয়া থাওয়া দিতি পারা যাবে? তুর ভাইরে কয়ে দিস, ফের যদি সাধনের দলে নামার কথা কইতে আইসে, ঠ্যাং ভেইঙে দিব চ্যালা কাঠ দিয়া। শালা মাতাল কুথাকরা।”
-“গান ত গাইবেনিক। কচি শুধু দাড়াইয়া দাড়াইয়া মুখ নাড়বে। গান ত মিশিনে হবে। রিয়ারশাল করি লিবে। এক নাইটে পাঁচশ টাকা দিবে। মোর গোরুটা ফেরত হইয়াত। মুই ত সঙ্গে যাব, যেদিন গান হবে। মুই কথা কইয়া লিছি গো।”
-“তুই সঙ্গে যাবি মানে!! তুই সঙ্গে যাবি মানে কি রে? ডাং দেখচু। তনে ভাবচু কি! মোর চাষে লাভ হউ লুকসান হোউ, তনকে মাগছি আমি? একবারে চুপ কইরা থাকবি। ফের যদি শুনছি ইসব, ত তোর একদিন কি মোর একদিন। বলে দিলম।” রাগে গরগর করতে করতে বুলির বাপ বেরিয়ে যায়। উনানশালে বসে বুলির ভীষণ রাগ হচ্ছিল মা এর ওপর, মামার ওপর। ঐ সাধনটা তার দুচোখের বিষ। লোকটা এমন তাকায়, তার গা রি রি করে ওঠে। তার দলে সে নাকি কবিগান করবে! কি আব্দার! বাবা বেশ করেছে, ঠিক বলেছে। হুলোটাকে থাবড়ায় বুলি। ঘড়ঘড় করে চোখ বোজে হুলো।

দোলপূর্ণিমার মেলাটা জমজমাটই হয় বুলির মামা বাড়ির পাশে। দিদিমার সাথে মামাবাড়ি যেতে তাই বাপ আর না করেনি। বাপ আর মা যাবে সন্ধ্যা বেলায়, বুলি চলল সকাল সকাল। পাশাপাশি গ্রাম। হেঁটে গেলে কুড়ি মিনিটও লাগে না। তবু বুলি সাজে। এখন একটু সাজগোজ করতে মন চায়। সস্তার নেলপালিস, লিপস্টিক; দামী কিছু কেনার পয়সা কই? গতপূজোয় শঙ্করী বস্ত্রালয় থেকে কেনা সালোয়ার কামিজটা এতদিন ঢলঢল করত। এখন আর করে না। কোণ ভাঙা আয়নায় এদিক ওদিক থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল নিজেকে। দিদিমা তাড়া লাগায়, “ও বুলি, আর দেরী করাস নি। তোর মামী আবার রাগ করি করি উনুন ধরাইবেনিক। গোরু, ছ্যাগল সব লিয়া সে ভারী এ্যান্দর পেন্দর করবে রে। চ মা তাড়াতাড়ি চ।”

মেলায় আলোয় আলো চারিধার। বাচ্চা কাঁখে বৌরা হরেক মাল বিশটাকায় খরিদ করছে। ওদিকে তেলেভাজার দোকানে বেজায় ভীড়। বেগুনী, আলুর চপ, ডিমের চপ সব গপাগপ সাঁটাচ্ছে। চ্যাংড়া ছেলেরা সিগারেট আঙ্গুলে ধরে ফুঁকছে। কেউ ফিল্টারের দিকে কায়দা করে ধরাতে গিয়ে দোকানীর বকুনি খাচ্ছে। দোলমঞ্চের ডাইনের মাঠে বসেছে যাত্রার আসর। সেখানে বুলির দিদিমা, মা, মামীমা সব জায়গা দখল করে বসে। রাজ্যের গল্প হচ্ছে। বাড়ীর মুড়ি পলিথিনের মধ্যে নিয়ে এসেছে দিদা, সঙ্গে মেলার বেগুনী। যাত্রা শুরু হতে আর বেশী দেরী নাই। বুলি দিদিমার পিঠে ঠেস দিয়ে শোনে, ঝোটনমামার বউ কেমন করে লুকিয়ে মাছ খায়, স্বপন খামারীর বেটা ফুঁসলে কেমন করে বলাই সামন্তর মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে, এই সব। তারপর, হঠাৎ ঠং ঠং করে যাত্রার ঘন্টা পড়ল। সবাই নড়ে চড়ে বসল। যাত্রা হল শুরু। সম্পূর্ণ সামাজিক যাত্রাপালা, ‘নতুন বউ এর সতীন কাঁটা’।

বুলির এদিকে বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। অনেকক্ষণ হয়ে গেল, পেচ্ছাপ পেয়েছে। কি যে করে! চারিদিকে লোক ঘিরে। বেরোতে গেলে লোকে দুটো কথা শোনাবে। তবুও মাকে খোঁটায় সে। মা শোনে, ভ্রু কোঁচকায়। বলে, ” যা, উই ত মাঠে নেইমে কইরে চলি আয়। চারিদিকে চক্ষা আলো, ভয় কিটা?” দিদা জিগায়, “মুই যাব, কচি? চ, দুজনে যাই।” বলে দিদা আর বুলি উঠে পড়ে। নুয়ে নুয়ে কিনারে আসে লোক ডিঙ্গিয়ে ডিঙ্গিয়ে। চারিদিকে লোক, গিসগিস করছে। দুজনে দোলমঞ্চের পেছনের দিকে এগোয়। ওদিকটা একটু অন্ধকার অন্ধকার। তারপর ঝোপও আছে। একটু ঠান্ডা ঠান্ডা পড়েছে, তাই সাপের ভয় নাই মনে হয়। পেছন থেকে দিদি বলে, “আর এগোস নি কচি…” কথা শেষ হয় না। একটা ধপ্ করে আওয়াজ হয়, কেউ যেন গোঁগাতে গিয়ে থেমে যায়। বুলি পেছনে তাকাতেই কেউ ওর মুখ চেপে ধরে, পাঁজাকোলা করে শূন্যে তুলে নেয়।



ওর মুখে কাপড় গোঁজা। ল্যাম্পের আলো জ্বলছে ওর পায়ের দিকে। এটা কোন ঘর নয়। ওপরে তারা দেখা যাচ্ছে। নীচে ঘাস ফুটছে। ওর হাত পা বাঁধা। ওর দিকে পেছন ফিরে তিনটে মূর্তি কিছু খাচ্ছে। কটূ গন্ধে নাক জ্বলে যাবে যেন। ” শালীর জ্ঞান ফিরল কিনা দেখিস।” বলে একজন খ্যাক খ্যাক করে হাসল। গলাটা শুনে ওর বুক ঢিপ ঢিপ করতে লাগল। এই ত সেই লোকটা। সাধন। ওর মাথা কাজ করছে না। চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে। কিন্তু মা নেই, বাপ নেই। দিদার কি হল!! ওর আতঙ্কে যেন সারা শরীরে কাঁপুনি শুরু হল। এরা কেন তাকে ধরে এনেছে! কি চায় এরা?

মইদুলের চোখে ঘুম নাই। গেরস্থালীর চিন্তায় সারা রাত এপাশ ওপাশ করেই পুব দিক ফরসা হয়ে যায়। উঠোন লাগোয়া বারান্দার মেঝেয় ও শোয়। মাঠের পাশেই ওর একটেরে ছোট্ট বাড়ী। মশারীর মধ্যে থেকে নারকেল গাছের ফাঁক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ও ভাবে, গরীবের জন্য আল্লাহ্ কত পরীক্ষা যে রেখেছেন! লিজের টাকা মিটিয়ে সব দেনা শোধ করতে ওর এখন কম করে তিরিশ হাজার টাকা লাগবে। কি করে যে সে টাকার যোগাড় হবে, সে চিন্তাই এখন ঘুন পোকার মত কুরকুর করে চলেছে রাতদিন ওর মাথায়। ভাইটা বোম্বাইয়ে সোনার কাজে গেছে। ফোনে বলেছে চিন্তা না করতে। কিছু ব্যবস্থা সে করবে। বাচ্চা ছেলের কথায় ভরসা কিসের! নাহ্ মশারী তুলে উঠোনে নেমে আসে মইদুল। পেচ্ছাপ করতে রাস্তায় বেরিয়ে আসে ও। আরে! ওটা কি? মাঠের মাঝে, ওর আলু ক্ষেতের পেছনে জোড়া খেজুর গাছের আড়ালে একটা আলো জ্বলছে না মিচ মিচ করে। কি ব্যাপার? ওর তেলতেলে বাঁশের লাঠিটা বিছানার পাশ থেকে তুলে ও এগোয়। “শালা আলুচোর” দাঁতে দাঁত চিপে নুয়ে নুয়ে তাড়াতাড়ি দৌড়য় মইদুল।

” শালী, আলুচাষীর বেটি তুর এত বাড়। মোকে লাথ মারলি। তুর আইজ কি করি, দেখ। ওই গনশা, শালীর পা দুটো ধর। লালু হাতদুটো…..আঁক…ওরে বাপরে….ও মাগো…”
ধপা ধপ বাঁশের লাঠি ঠ্যাঙ্গানোর শব্দ শুধু। ঠাঁই ঠাঁই, দমাদ্দম। ” শালারা, আবাগীর পুত সব… আলুচাষীর বেটির ইজ্জত নাই…আলুচাষী সস্তা পাইচিস… হারামীর বাচ্চা, শয়তানের ছাওয়াল সব….আমার মারে মাঠে শুয়াইছিস…তারে কষ্ট দিস কুন সাহসে…ইবলিসের জাত শালা কুত্তা .. মর শালা মর…”

দুহাতে চোখ ঢেকে বুলি শুধু কাঁদে। মইদুল চাচা আজ তার ঈশ্বর।”

আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ১ এ চতুর্থ স্থান অর্জনকারী ‘উপঢৌকন’ সামাজিক ছোটগল্পটি পড়তে ক্লিক করুন>>> উপঢৌকন । আরিফ মিলন । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প

আলুর ক্ষেতে ইশ্বর । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প । লেখক পরিচিতি

লেখকঃ হাসনাত সৌরভ
ছোটগল্পঃ আলুর ক্ষেতে ইশ্বর
গল্পের জনরাঃ সামাজিক
দেশের বাড়িঃ চট্টগ্রাম
পড়াশোনাঃ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ( বাণিজ্য বিভাগ থেকে অনার্স, মাস্টার্স)।
চাকুরীঃ বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সিনিয়র কর্মকর্তা হিসবে কর্মরত আছেন।

হাসনাত-সৌরভ-hasnat-showrov-attoprokash-writter-min
লেখক – হাসনাত সৌরভ
বাংলা ভাষাকে ভালোবাসি। বই পড়া ও লেখালেখিকে প্রধান কাজ বলে মনে হয়।
স্কুলের গণ্ডি পেরানোর পর থেকে সাহিত্যের সাথে জড়িত। কবিতা, গল্প এবং নিরেট গদ্যে লিখতে ভালোলাগে। এদিকে নিজেকে আরো গভীরে নিতে চাই।
ছোটকাগজ “সমরেখ” সম্পাদক।
ভালোবাসি ঘ্রাণ, নিশ্বাস ও মানুষের নিজস্ব যাপন।

আত্মপ্রকাশ সম্পাদক

http://attoprokash.com

আত্মপ্রকাশে অপ্রকাশিত গল্প এবং বুক রিভিউ এবং প্রবন্ধ প্রকাশ করতে যোগাযোগ করুন (ইমেইল-attoprokash.blog@gmail.com) অথবা ফেইসবুক পেইজ ইনবক্স। সর্বনিম্ন ১০০০ শব্দ হতে যেকোনো ঊর্ধ্ব সীমার ছোট গল্প গ্রহণযোগ্য। আপনার গল্প আত্মপ্রকাশ বিচারকদের দ্বারা নির্বাচিত হলে আপনাকে জানানো হবে এবং তা সরাসরি প্রকাশ করা হবে আত্মপ্রকাশে। আপডেট জানতে ফেইসবুক গ্রুপে সক্রিয় থাকুন।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *