সন্ধি বিচ্ছেদ ও অকৃতজ্ঞ অমানুষ রিভিউ । আরিফ মিলন রচিত দুইটি অসাধারণ উপন্যাস
বাংলা সাহিত্য তাঁর ধারা বজায় রেখে এগিয়ে চলেছে দূর্বার গতিতে। আমাদের পূর্বজ লেখকরা তাদের নিজ সাহিত্য প্রতিভা এবং শ্রম দিয়ে সমৃদ্ধ করে গেছেন বাংলা সাহিত্যকে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২১ শতকের বাংলা সাহিত্যিকরা, তাদের নিজস্ব স্বত্ত্বায় এগিয়ে নিয়ে চলেছেন ঐতিহ্যবাহী বাংলা সাহিত্যকে। নতুন সাহিত্যিকগণ তাদের নিজস্ব মনন ও মেধায় সে সাহিত্যে যোগ করছেন নতুন পালক। আত্মপ্রকাশের আজকের আয়োজনে এমনি একজন নতুন লেখকের সাথে পরিচয় ঘটিয়ে দেয়া হবে।
আরিফ মিলন, লেখার মাধ্যমে সামাজিক অসংগতিগুলো তুলে নিয়ে আসাই আরিফ মিলনের মূল লক্ষ্য। তাঁর মতে-
“সঠিক সামাজিক পরিবর্তনের জন্য হাস্যরসাত্বক বিনোদন নির্ভর নয়, সঠিক বোধ এবং রস সম্পন্ন সাহিত্য সংস্কৃতির পরিচর্যা করা আবশ্যক”।
অমর একুশে বই মেলা ২০১৯ উপলক্ষ্যে আরিফ মিলন নিয়ে এসেছেন দুইটি অসাধারণ সামাজিক উপন্যাস। বই দুটি নিয়ে সমালোচক প্রভাষক আব্দুল লতিফ সাহেব এবং সাহিত্য সমালোচক প্রফেসর আব্দুল জলিল সাহেব যে মন্তব্য করেছেন, তাই তুলে ধরা হয়েছে নিমোক্ত অংশে।
- সন্ধি বিচ্ছেদ
- অকৃতজ্ঞ অমানুষ
অকৃতজ্ঞ অমানুষ – আরিফ মিলন । বুক রিভিউ

বইয়ের ভূমিকায় সাহিত্য সমালোচক প্রভাষক আব্দুল লতিফ সাহেব লিখেছেন- আরিফ মিলন ঔপন্যাসিক হিসেবে নতুন তবে প্রতিশ্রুতিশূল। আমাদের সমাজের নানা রকমের অসঙ্গঁতি এবং বাহিরের পরিপাটি রূপের অন্তরালে যে অন্তঃসলিলা কদর্য দিক রয়েছে সেটির উন্মোচনে তিনি সিদ্ধহস্ত। একই সাথে তার দুটি উপন্যাস ‘সন্ধি বিচ্ছেদ’ এবং ‘অকৃতজ্ঞ অমানুষ’ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছেন। তবে তিনি ‘অকৃতজ্ঞ অমানুষ’ বইটিকে তার দ্বিতীয় উপন্যাস হিসেবে আখ্যায়িত করতে চান। পাকিস্তান আমলে এ দেশের সিংহভাগ সম্পদ নির্দিষ্ট কয়েকটি পরিবারের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ, অসৎ ব্যবসায়ী এবং অর্থলোভী সরকারী আমলার আবির্ভাব ঘটে যারা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যায়। ‘অকৃতজ্ঞ অমানুষ’ উপন্যাসের নায়ক মেহের সাহেব এরকমই এক ছোট খাটো সরকারী চাকুরিজীবি। সে সরকারী কলেজের একজন কেরানী হয়েও হাজার রকমের দূর্নীতির মাধ্যমে বিরাট অর্থ সম্পদের মালিক বনে যায়। দূর্নীতিতে সিদ্ধহস্ত মেহের সাহেব একজন চরিত্রহীন লোকও বটে। একাধিক বিয়ে করার মাধ্যমে লেখক তার চরিত্রহীনতার নিখুত বর্ণনা দিয়েছেন। অর্থের জোরে স্ত্রী, পুত্র কন্যাদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা তার সুখের সংসারে একদিন অনিবার্য পরিণতিতেই হানা দেয় তার কৃত পাপের ফল। কলেজের আলমিরা ভেঙে সাড়ে চার লাখ টাকা চুরির সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অপরাধে তাকে আটক করা হলে বেরিয়ে আসে তার জীবনের সকল অবৈধ সম্পদ অর্জনের স্বীকারোক্তি। দশ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হয় মেহের সাহেব তথা এককালের মোহর মিয়া। জেলখানার নির্জন কক্ষে বসে অবশেষে মেহের সাহেব বিগত জীবনের হিসেব কষে অঙ্কের শেষে শুধু বড় একটা শূন্য ছাড়া আর কিছুই দেখতে পেলেন না। এই অংশের বর্ণনায় লেখকের অন্তঃদৃষ্টির প্রখরতা অনুধাবন করা যায়। যে লাভের আশায় মানুষ নির্দ্বিধায় অন্যায় বা নিষ্ঠুরতা করে তা যে মিথ্যা মরিচিকা ছাড়া কিছু নয় তার প্রতি লেখকের ইঙ্গিঁত সুস্পষ্ট এবং শৈল্পিক রূপে উপন্যাসের শেষ ভাগে ফুটে উঠতে দেখা যায়। একটি ভিন্ন পটভূমি নিয়ে রচিত ‘অকৃতজ্ঞ অমানুষ’ উপন্যাস। তবে লেখক তার লেখায় সকল বয়সের পাঠকদের আকৃষ্ট করতে পারবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমি উত্তোরত্তর তার সাফল্য কামনা করি।
ধরনঃ সামাজিক উপন্যাস
লেখকঃ আরিফ মিলন
প্রকাশকঃ শামীমা আলম শিউলি (অগ্রজ প্রকাশনী)
প্রচ্ছদঃ নিসা মাহজাবিন
গায়ের মূল্যঃ ১২৫ টাকা ( ছাড় মূল্য ১০০ টাকা)। অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি পাওয়া যাবে অর্জন প্রকাশন এর ষ্টলে। ষ্টল নং ৫৫৭ (সোরোওয়ার্দী উদ্যান)।
সন্ধি বিচ্ছেদ – আরিফ মিলন । বুক রিভিউ

বইয়ের ভূমিকায় সাহিত্য সমালোচক প্রফেসর আব্দুল জলিল সাহেব লিখেছেন- লেখক আরিফ মিলন এর কিশোর বয়স থেকেই লেখালেখির প্রতি ছিল প্রবল আকর্ষন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও সাময়িকীতে তিনি নিয়মিত লিখে থাকেন। ঔপন্যাসিক হিসেবে ‘সন্ধি বিচ্ছেদ’ লেখকের প্রথম প্রচেষ্টা হলেও তা যথেষ্ট যত্নবান ও প্রতিশ্রুতিশীল। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘সন্ধি বিচ্ছেদ’ বাংলার গ্রামীণ সমাজের মধ্যবিত্ত এক পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। আশির দশক থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক পর্যন্ত সমাজ ব্যবস্থা, পরিবার, পরিস্থিতির পরিবর্তন সুদক্ষ হস্তে ফুটিয়ে তুলিয়েছেন। উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে দৃঢ়হস্তে নিখুঁতভাবে তুলির আচরে প্রানবন্ত করে তুলেছেন। যা কিশোর, যুবক, বয়োবৃদ্ধসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের কাছে এর আবেদন মনোমুগ্ধকর এবং হৃদয়গ্রাহী। মমতাময়ী মায়ের কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং দূরদর্শী দিক নির্দেশনায় তাঁর সন্তানকে মানুষ করে গড়ে তোলার আপ্রাণ প্রচেষ্টা প্রতিফলিত হয়েছে। উপন্যাস পাঠে অগ্রসর হলে পাঠক বাধন ও নিক্তির কিশোর বয়সের নিটোল প্রেমের যৌবনদীপ্ত প্রেমরসের অফুরন্ত আনন্দ উপভোগ করবেন। মাতৃ¯েœহের কাছে বাবার চোখের রূঢ় বাস্তবতা যেন ম্লান হয়ে গেছে। উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র বাধনের মা রেণু বেগম। ছেলেকে মানুষ করাই ছিল যার জীবনের একমাত্র ব্রত। কিন্তু বাবা শমসের বাবুর মৃত্যুর পর অসীম ¯েœহ ভালবাসায় গড়ে তোলা সন্তান বাধন, বাধনহারা হয়ে যায়। এক অসহায় মায়ের সন্তানের কাছে লতাপাতার মত জড়িয়ে থাকতে চাওয়ার বাসনা নিষ্ফল আশায় পর্যবসিত হয়। অবশেষে তাঁর আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। একবিংশ শতাব্দীর যান্ত্রিক জীবনের এ রূঢ় পৃথিবীতে আমরা কতটা মায়া মমতাহীন যন্ত্রমানব হতে চলেছি সে বার্তাটি অকুণ্ঠচিত্তে ঔপন্যাসিক আমাদের সামনে মেলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। লেখক তার প্রথম উপন্যাস যে প্রেক্ষাপটে রচনা করেছেন এবং সুদীর্ঘ কাহিনীর অবতারণা করে হৃদয়গ্রাহী করে সমাপ্তি টেনেছেন, সেজন্যে তিনি প্রশংসার দাবী রাখেন। পাঠক উপন্যাসটি পাঠমাত্র তা অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন বলে আশা রাখি। আমি তাঁর উত্তোরত্তর সাফল্য কামনা করছি।
ধরনঃ উপন্যাস
লেখকঃ আরিফ মিলন
প্রকাশকঃ শামীমা আলম শিউলি (অগ্রজ প্রকাশনী)
প্রচ্ছদঃ নিসা মাহজাবিন
বই মূল্যঃ ২৪৫ টাকা (ছাড় মূল্য ১৮৫ টাকা) অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইটি পাওয়া যাবে অর্জন প্রকাশন এর ষ্টলে। ষ্টল নং ৫৫৭ (সোরোওয়ার্দী উদ্যান)। এ ছাড়াও লেখকের পারসোনাল ফেইসবুক পেইজ থেকে বইটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন।