যাযাবর ভালোবাসা >> সাবরীণ আক্তার তন্বী । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প
সাবরীণ আক্তার তন্বী রচিত ‘যাযাবর ভালোবাসা’ রোমান্টিক ছোটগল্পটি ভালোবাসা দিবস-২০১৯ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ‘আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩’ এ চতুর্থ স্থান অর্জন করে এবং আহমদ ছফা রচিত ‘যদ্যাপি আমার গুরু’ এবং আরিফ মিলন রচিত ‘অকৃতজ্ঞ অমানুষ’ বইটি দুটি পুরস্কার হিসেবে জিতে নেয়।
“মাঝরাত্রে সুপ্তির ঘরের জানালায় টোকা পড়ল।ও জানালা খুলে দিয়ে দেখে অতুল দাঁড়িয়ে।
ও প্রশ্ন করে উঠলো, “আপনে এত রাইতে যে প্রতিদিন আহেন, কেউ দেইখা নিলে কী হইবো?”
অতুল বলে উঠে, “তোরে না দেইখা যে থাকবার পারি না।কি করুম ক?একনজর দেহার লাগিই তো ছুইটা আহি এত রাইতে ঘুম বাদ দিয়া।”
সুপ্তির মুখের কোণে একচিলতে হাসি খেলে যায়। ও মনে মনে বলে ওঠে, “আপনারে না দেখলেও যে আমার রাইতের ঘুম হারাম হইয়া যায়।”
অতুল চাদরের নিচে থেকে হাত বের করে সুপ্তির দিকে এগিয়ে দেয়।হাত ভর্তি টসটসে কুল।
সুপ্তি এগুলো দেখে অনেক খুশি হয়। ও বাগানের ভেতর বসে সেদিন ওর সই পারুলকে বলেছিল, কুল খেতে ইচ্ছে হয়েছে ওর। মানুষটা সেদিন শুনে নিয়েছিলো। আজ নিজেই এতো রাতে বয়ে নিয়ে এসেছে ওর জন্য। কুলগুলো হাত বাড়িয়ে নিতে গিয়ে ও দেখলো অতুলের হাতে অনেকখানি চিঁড়ে গেছে।ও তাড়াতাড়ি কুলগুলো নিয়ে বিছানার উপর রেখে, ওর হাতের চোটের উপর হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো, ইশ! এত খানি চোট পাইলেন কেমনে?
অতুল বলে উঠল, “আরে এইডা কিছু না। কুল পাড়তে গিয়ে কুলগাছের কাঁটার সাথে লাগছে। দুই দিনেই ঠিক হইয়া যাইবো।”
ওর চোখে জল ছলছল করে উঠলো। ও বললো, “আপনে একটু খারান আমি আইতাছি।”
বলেই ও নিঃশব্দে দরজার কপাট খুলে পা টিপে,টিপে রান্নাঘরের পেছনে ছাইগাদার কাছে গেলো।ওখানে বেড়ে ওঠা কিছু গাঁদা ফুল গাছ থেকে পাতা ছিঁড়ে নিলো। তারপর একছুটে বাড়ির পেছনের শালবাগানে চলে গেলো। অতুল দাঁড়িয়ে আছে, ওর গায়ে আবছা কুয়াশা মিশ্রিত চাঁদের আলো পড়ে ওকে অদ্ভুত রকম সুন্দর দেখাচ্ছে।
অতুল সুপ্তির কাছে গেলো।গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “এত রাইতে বাইরে আইছস কেন?তোর জানে কি একটুও ভয় ডর নাই?”
সুপ্তির নির্লিপ্ত জবাব, “না নাই। দেহি হাতখান দেহি।”
এই বলে ওর হাতটা টেনে নিলো ওর হাতের মাঝে।গাঁদা ফুল গাছের পাতা গুলো মুখে নিয়ে একটু চিবিয়ে ওর হাতের চোট পাওয়া জায়গায় লাগিয়ে দিল।
পাতার রসে জ্বালা ধরায় মুখটা বিকৃত করে ফেললো অতুল। তাই দেখে সুপ্তি ফুঁ দিতে লাগলো ওর হাতে, আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
অতুল হা করে তাকিয়ে রইলো ওর মুখের দিকে। একটা মানুষের কান্নাও এতটা সুন্দর হতে পারে? যেন দুগাল বেয়ে মুক্তোদানা টপটপ করে ঝরে পড়ছে। ও সুপ্তির চিবুকের নিচে হাত মেলে ধরলো। যেন মুক্তো দানাগুলো সব বিলীন হতে দেবে না এমন আকাঙ্ক্ষা। কোন কথা নেই দুজনের কারও মুখে।শুধু নিঃশ্বাসগুলো যেন আপন মনে ব্যক্ত করে চলেছে কতো অব্যক্ত কথন। কথার সাথে কথার সুনিপুণ গাঁথুনি যেন হয়ে চলেছে। হুঁশ ফিরলো নেড়িকুকুরের চিৎকারের শব্দে। এক দৌড়ে ঘরে ফিরে এসে দুয়ারে খিল এঁটে দিলো সুপ্তি। বুকের ভেতরে যেন তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে ঝড়ো হাওয়ার দাপটে। কিছুক্ষণ পর ওর মনে হলো এভাবে না বলে আসাতে মানুষটা বোধহয় কষ্ট পেয়েছে।মানুষটা হয়তো এখনও দাঁড়িয়ে আছে।জানালার কপাট খুলে দেখলো মানুষটা এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে ওর জানালার ধারে। ও হাত স্পর্শ করে বললো, “এখনো দাঁড়াইয়া আছেন? যান বাড়ি যান।”
অতুল বললো, “কাইল সাঁঝের বেলাত স্কুলঘরে যাত্রা আছে,আর বাগিচার ভেতরে মেলা। তুই মেলায় যাবি আমার লগে আমি তোর কোন বারণ শুনুম না কাইল।”
এই বলে উত্তরের প্রত্যাশা না করে হনহন করে বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো ও।
সুপ্তি অপলক ভাবে তাকিয়ে রইল ওর চলে যাবার পথের দিকে।
সুপ্তি মির্জা বাড়ির ছোট বউ। রহিম মির্জার ৬ নম্বর বউ ও। ষোড়শী এই মেয়েটার দিকে ষাটের অধিক এই ঘাটের মড়ার চোখ পড়ে। মা মরা মেয়েটার সৎ মা ঘরের আপদ বিদেয় করলেই যেন বাঁচে। তাই বিয়ে দিয়ে জঞ্জাল দূর করেছে।
অতুল ওর পাড়াপড়শি কাকাতো ভাই।ছোট থেকেই ওদের গলায়গলায় ভাব। কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারে না এমন। এখনও সেই ধারা অব্যাহত আছে।
শীতের সময় এই গ্রামে যাত্রাপালার আয়োজন করা হয়। যাত্রা উপলক্ষে বিরাট মেলা বসে গ্রামের সবচাইতে পুরানো বটগাছটার কাছে।
পুরো গ্রামের সবাই যায় এই যাত্রা দেখতে।রাত জেগে যাত্রা দেখে সব।মেয়েছেলেরা মেলায় গিয়ে বাহারি রঙের চুড়ি,ফিতা নেড়েচেড়ে দেখে পুলক অনুভব করে। হাত ভর্তি চুড়ি কিনে রিনঝিন শব্দের ঢেউ তুলে বাড়ি ফেরে। এ যেন খুশির এক অন্যরকম চিত্র।
যাত্রা শুরু হবার আগেই সবাই এসে ভীর জমাতে শুরু করে।আজকের যাত্রায় দেখানো হবে কমলার বনবসের করুণ কাহিনী।গ্রামবাসীর বসার জন্য মাটিতে চট পেতে দেওয়া আছে।শুধুমাত্র রহিম মির্জার জন্য পাতা আছে চেয়ার। রহিম মির্জা সেখানে বসে ঢুলুঢুলু চোখে যাত্রা দেখতে ব্যস্ত।ওদিকে সুপ্তি বসেছে ওর আর সব সতিনদের কাছে। পাশের সাড়িতে বসা অতুল ওকে চোখ দিয়ে ইশারা করে পুরানো বটগাছটার নিচে যাবার।
সুপ্তি ওর বড় সতিন আয়শা বানুকে বলল, “বুবুজান আমার পেটের মধ্যির ব্যথাডা বড়ই পীড়া দিচ্চে।আমি বাড়িত যামু।”
আয়শা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠল, “কিরে ফকির বাবার পানি ঠিকমতন খাইতাছোস না?খুব বেশি ব্যথা করতাছে? যামু তোর লগে?”
সুপ্তি পড়িমরি করে উত্তর দিলো, “না, না বুবুজান তোমার আইতে হইবো না আমি একলাই যাইতে পারুম।আর তুমি গেলে এইদিকে বাইচ্চা গুলান সামাল দিবো কিডা?তুমি থাকো এইহানে।”
আয়শা বানু বললো, “আইচ্ছা, নিজের খেয়াল রাহিস।আর কোন দরকার হলি খবর পাঠাইস।”
সুপ্তি কোনরকম ভাবে উত্তর দিয়ে উঠে চলে গেল। পুরানো বটগাছটার নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো অতুলের জন্য। হাঠাৎ করে ঘাড়ের উপর কারও গরম নিঃশ্বাসের ছোঁয়া পেয়ে চমকে পেছন ফিরলো, দেখলো অতুল দাঁড়িয়ে।
ও ভয় পাওয়া গলায় বলে উঠল, “আরে এমনে কেউ আহে চোরের মতন। ডর করে না বুঝি!”
অতুল বলে উঠলো, ডরাস কেন?তুই যেইখানে আমিও সেইখানে। ডরের কোন কারণ নাই।
সুপ্তি জিজ্ঞসার সুরে বললো, মেলায় নি নিয়া যাইবেন?
অতুল মুচকি হাসি দিয়ে ওর হাত ধরে মেলার দিকে পা বাড়ালো।ও বড় করে ঘোমটা টেনে নিলো।
মেলার ভেতরে গিয়ে ঘোমটার নিচ থেকে বিস্ফোরিত নেত্রে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। রঙ বেরঙের আলো চোখে ঘোর লাগিয়ে দেয় যেন! এক দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ওরা। অতুল ওকে জিজ্ঞাসা করলো, “কী নিবি, বল?”
সুপ্তি ঘাড় নেড়ে না সূচক অভিব্যক্তি জানিয়ে বললো কিছুই লাগবে না ওর।
অতুল কিছু বলতে যাবে তখনই ওর চোখ আটকে গেলো লাল রঙের রেশমি কাচের চুড়ির দিকে।
দোকানীকে বললো, “ভাইসাব চুড়িগুলান দেহান তো।”
দোকানী চুড়িগুলো এগিয়ে দিতেই সে হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে সুপ্তির হাতটা ধরে আলতো করে পরিয়ে দিতে লাগলো।
সুপ্তি হা করে তাকিয়ে রইল ওর নিষ্পাপ মুখের দিকে। দুই হাত ভর্তি করে চুড়ি পরিয়ে দিলো।চুড়িগুলো পরিয়ে দেবার পর সুপ্তি দুই হাত অতুলের সামনে নিয়ে নাড়া দিলো আর রিনঝিন শব্দ করে চুড়িগুলো বেজে উঠলো।
সেই শব্দের ঢেউ যেন অতুলের বুকের মধ্যেখানে কোথায় গিয়ে ঝড় তুলে দিলো।ও সুপ্তিকে লিপস্টিক,চুলের বাহারি ফিতে,আলতা আরো অনেক কিছু কিনে দিলো।সব ঘুরেফিরে দেখার শেষে ওরা এবার মেলা থেকে বের হতে লাগলো,হঠাৎ অতুলের কিছু একটা মনে হয়ে সুপ্তিকে বলল,তুই এখানে খাড়া আমি আইতাছি।এই বলে সে আবার মেলার মধ্যে ঢুকে গেলো।কিছুক্ষণ পর হাফাতে হাফাতে এসে বললো, চল বাড়ি দিয়া আসি তোকে।
দুজনে হাঁটতে লাগলো, কারো মুখে কোন কথা নেই শুধু মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা ভেদ করে সুপ্তির হাতের চুড়িগুলো রিনঝিন শব্দের ঢেউ তুলে বেজে উঠছে।বাড়ির কাছাকাছি চলে আসার পর সুপ্তি বললো,আইজ যানগা মেলা রাইত হইছে।
এই বলে ঘুরে দাঁড়িয়ে বাড়ির প্রবেশ দ্বারের দিকে পা বাড়ালো। হঠাৎ অতুল ডেকে উঠলো। সুপ্তি ঘুরে দাঁড়াতেই অতুল ওর কাছে এলো। ওর চোখে জিজ্ঞাসা।অতুল পকেট থেকে একটা কাগজের ঠোঙা বের করে ওর ভেতর থেকে একপাতা লাল টিপ বের করলো।সুপ্তি অপলক চোখে তাকিয়েই রইল।অতুল টিপের পাতা থেকে একটা টিপ নিয়ে ওর কপালে পরিয়ে দিলো। ইশশশ! এই একটা টিপ ওর সৌন্দর্য যেন হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।চোখ ফেরাতেই যেন পারছে না।কতক্ষণ যে দুজন দুজনের দিকে অপলক ভাবে তাকিয়ে ছিল কেউ বলতে পারবে না।সুপ্তিই নিরবতা ভেঙে বললো,আমি এহন যাই।অতুল সুপ্তির হাতে ঠোঙাটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,এতে আরো টিপ আর একটা নাকফুল আছে।কাইল রাইতে তুই মনের মতো কইরা সাজবি।আমি দেখমু তোরে পরাণ ভইরা।
সুপ্তি ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।অতুল কিছুক্ষণ ওর গমন পথে চেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্ধকার পথে পা বাড়ালো বাড়ির দিকে। যাত্রায় গান হচ্ছে অদূর থেকে ভেসে আসছে সেই গানের আওয়াজ…
কি স্বপন দেইখা আইলাম ভবে,
দয়াল ভবের মায়ায় রইলাম ডুবে।
আমার সেই স্বপন কি মিথ্যা হইতে পারে রে!
তুই সে আমার মন।
আমার মন তোরে পারলাম না বুঝাইতে রে,
তুই সে আমার মন।
গান শুনতে শুনতে সুপ্তি অতুলের দেয়া জিনিষগুলো বুকে নিয়ে একফোঁটা চোখের পানি ফেলে ঘুমিয়ে পড়লো।
পরেরদিন সারাটা সময় ছটফট করে কাটলো সুপ্তির। ঘরের কাজে একটুও মন বসাতে পারলো না ও। সন্ধ্যের দিকে গোসল করে লাল রাঙা একটা শাড়ি পড়ে নিলো।দুপা ভরে আলতা পড়লো খুব যত্ন করে।কপালে লাল টিপ,হাত ভর্তি চুড়ি পড়ে,লিপিস্টিক দিয়ে ঠোঁট রাঙিয়ে নিলো।এবার নাকে নাকফুল পড়লো ছোট্ট একটা পাথরের নাকফুল কি সুন্দর চকচক করছে রূপের শোভা যেন আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সারাদিনের কাজকর্মের ক্লান্তির পর রাতে তার প্রিয় মানুষটার জন্য অতি যত্ন নিয়ে ধৈর্যের সাথে সুনিপুণ ভাবে সাজগোজ করা এটা কেবল মেয়েদের দ্বারাই সম্ভভ।বিধাতা এই গুণটা মেয়েদের আলাদা ভাবেই দিয়েছে।
অবশেষে ওর জানালায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পাওয়া গেলো।ও আস্তে করে দরজা খুলে পা টিপে টিপে পেছনের বাগানে চলে গেলো।মনে মনে ভাবলো
পেছন থেকে গিয়ে অতুলকে চমকে দেবে কিন্তু তার আগেই অতুল পেছনে ঘুরলো। সুপ্তি বললো, ধুত্তুরি ভাবলাম আপনারে ডর দেখামু তা আর হইলো না। আপনে কেমনে বুঝেন আমি আইছি?
অতুল আলতো হেসে বললো, তোর নিঃশ্বাসের আওয়াজ ও যে আমি শুনতি পারি।
অতুল চাঁদের আলোয় ভালো করে ওর দিকে তাকালো।যেন কোন মানবী নয় স্বর্গের কোন পরী এসে দাঁড়িয়েছে ওর সামনে।
স্বর্গের কোন পরী দেখেনি অতুল কখনো, কিন্তু হলপ করে বলতে পারবে স্বর্গের পরীর থেকে কোন অংশে কম সুন্দর লাগছে না ওকে দেখতে।
সুপ্তির কথায় হুঁশ ফিরলো ওর,কি হইলো এমনে চাইয়া কি দেহেন?
ও উত্তর দিলো,পরী দেহি পরী,আমার পরী।
সুপ্তি লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে ফেললো।
অতুল বুকপকেট থেকে বকুল ফুলের মালা বের করে ওর খোঁপায় জড়িয়ে দিলো ।ফুলের গন্ধে ভরে উঠল চারপাশ।মাতোয়ারা হয়ে উঠলো দুজন।
হঠাৎ পেছন থেকে লাঠির বাড়ি পড়ে অতুলের মাথায়, ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটতে লাগল। রহিম মির্জা আর তার দেহরক্ষী আবুল এসে দাঁড়িয়েছে পেছনে। আবুলের হাতের লাঠিতে রক্ত মাখা।
রহিম মির্জা সুপ্তির চুলের গোছা ধরে চিৎকার করতে লাগলো,নষ্টা মাইয়ালোক! নষ্টামি করতাছোস রাইত দুপুরে।তোরে আইজকা আমি মাইরাই ফালামু।
এই বলে টেনেহিচরে বাড়িতে নিতে লাগলো। আবুলকে নির্দেশ দিলো,আবুইল্লা ওই হারামজাদারে মাইরা কাইটা গাঙে ভাসাইয়া দে।
আবুল লাঠি দিয়ে মারতে থাকে অতুলকে।সুপ্তি অনবরত চিৎকার করতে থাকে, আল্লাহর দোহাই লাগে হেরে ছাইড়া দেন।হের কোন দোষ নাই।
কিন্তু সেদিকে কান দিলো না রহিম। সুপ্তির চুড়ি ভেঙে হাত কেটে রক্ত পড়ছে।ও রহিম মির্জার হাতে কামড় বসিয়ে দিল।ব্যথায় মুখ বিকৃত করে রহিম সুপ্তির হাত ছেড়ে দিয়ে ওর নিজের হাত চেপে ধরলো।
ও দৌড়ে অতুলের কাছে গিয়ে ওর পাশে বসে যথাসম্ভব ওকে আড়াল করার চেষ্টা করলো। লাঠির বাড়িগুলো ওর পিঠে পড়তে লাগলো।আস্তে করে হাতের মুঠোয় কিছু বালি নিয়ে ছুঁড়ে দিলো আবুলের চোখে মুখে আবুল কিছুক্ষণের জন্য অন্ধ হয়ে গেলো।
সুপ্তি অতি কষ্টে অতুলকে তুলে নদীর দিকে ছুটতে লাগলো।পেছনে আসতে লাগলো রহিম মির্জার দলবল।ওরা একটা ঝোপের আড়ালে বসে পড়লো। ওদেরকে এদিক ওদিক পাগলের মতো খুঁজলো ওরা।কিন্তু ভাগ্যদেবী হয়তো আজ ওদের সহায় ছিলো।ওরা ওদের খুঁজে না পেয়ে চলে গেলো।
ওরা চলে যাবার পর আস্তে আস্তে হেঁটে ওরা ঘাটে পৌঁছালো। একটা নৌকা বাঁধা ছিলো ঘাটে। কোন রকমে ওটার বাঁধন খুলে সুপ্তি ওতে অতুলকে অতি কষ্টে তুলে নিল।নৌকায় তুলে নৌকা যতটা পারে ঠেলে ভাসিয়ে দিলো।
অতুল তার দুর্বল হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো, জলদি নৌকায় উঠি আয়।
সুপ্তি দৃঢ় কন্ঠে বললো,তা হয় না।সমাজের শক্ত বেড়াজালে যে আটকা পইড়া আছি।এই জাল ছিঁড়া যাবার যে সাধ্যি নাই আমার।অন্যের ঘরের বউ আমি।এই সত্য অস্বীকার করুম কেমনে কন?আপনে যেইখানেই থাইকেন ভালো থাইকেন। এইজনমে না পাই আপনারে পরজনমে আল্লার কাছে ঠিকি চাইয়া নিমু।
অতুল পাগলের মতো বলে উঠল, ওরা তোরে মাইরা ফালাইবো পাইলে।
ও মুচকি হেসে জবাব দিলো, যাই হইয়া যাক না সমাজের বেড়াজাল ভাইঙ্গা আপনার সাথে জীবন বাঁধবার পারুম না আমি।আইজ গাঙের জলে আমার ভালোবাসাও ভাসাইয়া দিলাম।
কারো মুখে আর কোন কথা নেই,মনের ভেতরে হাজারো কথার ঝুড়ি ফেটে উপচে পড়তে চাচ্ছে কিন্তু কে যেন মুখের ভাষা কেড়ে নিয়েছে।
চাঁদের আবছা আলোতে,ঝিরি ঝিরি বাতাসে নৌকা চলতে লাগলো এক অজানার পথে। কারো জানা নেই এই পথ কোথায় গিয়ে শেষ হবে?শুধু জানে ভালোবাসার মানুষটা কাছে না থাক অস্তিত্ব জুড়ে আছে।এটাই যেন পরম প্রাপ্তি। এই ভালোবাসার নির্দিষ্ট কোন স্থান নেই,নেই কোন গতি,স্বীকৃতি নেই সমাজের,শুধু গুমরে গুমরে ঘুরে ফেরে। তবুও এটা ভালবাসা,যাযাবর ভালোবাসা।”
আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩ এ ‘পঞ্চম’ স্থান অর্জনকারী গল্প >> চন্দ্রমুখী – সুস্মিতা শশী
আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০১ এ ‘চতুর্থ’ স্থান অর্জনকারী গল্প >> উপঢৌকন – আরিফ মিলন
যাযাবর ভালোবাসা । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প । লেখক পরিচিতি
লেখকঃ সাবরীণ আক্তার তন্বী
ছোটগল্পঃ যাযাবর ভালোবাসা
গল্পের জনরাঃ রোমান্টিক, ভালোবাসার গল্প।
দেশের বাড়িঃ ঢাকা।
(লেখক ছবি দিতে ইচ্ছুক নন)
1 Comment
[…] […]