হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তি । অমূল্য উপদেশ ও বাণী সমাবেশ
হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন মুসলিমদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহনকারী এবং ইসলামের প্রথম খলিফা। তিনি মক্কা নগরীতে ২৭ অক্টোবর ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পুর্ব নাম ছিল আব্দুল্লাহ বিন আবি কুহাফা। পরে তিনি হযরত আবু বকর (রাঃ) নামে পরিচিত হন। তাঁর পিতার নাম উসমান ইবন আমির (রাঃ)। তাঁর মাতা সালমা উম্মুল খাইর।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) শুধু ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রেই প্রথম ছিলেন না। তিনি ইসলামের দাওয়াত, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা, গোলাম আজাদ করা, ইবাদত-বন্দেগী, নবীজির খেদমতসহ প্রতিটি ভাল কাজেই প্রথম ছিলেন। তাছাড়া তিনি শ্রেষ্ঠ সাহাবী ও প্রথম খলীফা। সর্বপ্রথম ঈমান আনায়নকারী পুরুষ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চির সহচর। তাছাড়া তিনি ছিলেন ছিলেন হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর শ্বশুর ছিলেন। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) যখন মৃত্যু বরণ করেন তারপর তিনি খলিফা হন এবং ইসলামের নেতৃত্ব দেন। মিথ্যা নবুওয়াতের দাবীদারদের মূলোৎপাটন এবং যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর উপর অগাধ বিশ্বাস থাকার জন্য তাকে সিদ্দিক উপাধি প্রদান করা হয়। তিনি তার উঠতি বয়সে একজন বণিক ছিলেন। ব্যবসার কারনে তিনি অনেক সম্পদশালী হয়ে উঠেন এবং তাঁর গোত্রের একজন নেতা হয়ে উঠেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর খিলাফত পাওয়ার পর উনার শাসনকাল ছিল দু-বছরের কিছু বেশি সময়। তিনি ২২ আগস্ট ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে ৬১ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর শেষকথাটি ছিল,
“প্রভু হে, ইসলামের উপর আমার মরণ দাও, মুসলিম হিসেবে আমার মৃত্যু হোক এবং আমাকে সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত কর। এ বাক্যটি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তার পবিত্র রূহ তার স্রষ্টার সান্নিধ্যে পৌঁছে যায়।”
আত্মপ্রকাশের আজকের আয়োজনে থাকছে ইসলাম বিশ্বের প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর বিশ্বস্ত সহচর হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তি ও অমূল্য বাণীসমূহ।
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তি ও বাণী সম্ভার
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তি ও অমূল্য বাণীসমূহকে তিনটি ভাগে নিম্নে উপস্থাপন করা হয়েছে।
রচনার ভাগসমূহ
পরকাল নিয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তি
পরকাল নিয়ে আমাদের প্রত্যেকে অসীম কৌতুহল রয়েছে। যেখানে রয়েছে আশা এবং চিরশান্তির কথা। পাশাপাশি অন্যায়কারীদের জন্য অসহনীয় অশান্তি এবং শাস্তি। পরকাল নিয়ে হযরত আবু বকর (রাঃ) এর অমূল্য উক্তি ও বাণীসমূহ নিম্নে।
“ইবাদত একটি ব্যবসার মত। এর দোকান হলো নির্জনতা,পুঁজি হলো তাকওয়া, লাভ্যাংশ হল জান্নাত।”
“মৃত্যুকে খুঁজো (অর্থাৎ, সাহসী হও) তাহলে তোমাদেরকে জীবন দান করা হবে।”
আলোচ্য হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তি, লা তাহযান – ড আইয আল কারনি, পৃ ১৫০ হতে চয়ণ করা হয়েছে।
“সেই ব্যক্তিই অভিশপ্ত যে মরে যায় অথচ তার খারাপ কাজগুলো পৃথিবীতে রয়ে যায়।”
“যে লোক পরকালের জন্য এ দুনিয়াকে একেবারে ছেড়ে দেয়, সে লোক উত্তম নয়। বরং উত্তম সে লোক যে লোক দুনিয়া এবং আখিরাত উভয়টির হক্ব রক্ষা করে চলে।”
“যে কোন কর্ম করার আগে পৃথিবী এবং আখিরাত এ দু জগতের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই তা করবে।
শতকরা আড়াই টাকা তো কৃপণ এবং দুনিয়াদারদের জন্য যাকাত। আর সিদ্দীকগণের যাকাত হল তাঁর সম্পূর্ণ ধন-সম্পদ আল্লাহ তায়ালার রাস্তায় বিলিয়ে দেয়া।”
“যারা সাময়িক স্বার্থের লোভে পড়ে পরকালকে ভুলে যায়, কোনদিনও তাঁরা ভাল হতে পারে না। প্রকৃত ভাল বলা যায় তাদেরকেই যারা দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জীবনে স্বার্থের চিন্তা করে কর্ম করে।
আল্লাহ্ ভীরু তাই সত্যিকারের মর্যাদা লাভের কারণ। মহান আল্লাহ্ তায়ালার উপর ভরসা রেখেই ধন-সম্পদ লাভ করা যায়। আর নম্র এবং বিনয় মানুষকে নেতৃত্বের আসনে উপবিষ্ট করে।”
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তির পাশাপাশি, পরকাল এবং ইসলামিক উপদেশ জানতে পড়ে নিতে পারেন নিমোক্ত ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের উক্তি ও বাণী।
হযরত আব্দুল কাদির জিলানির উক্তি । চমৎকার জীবনবোধ । ধর্মীয় অনুশাসন
মাওলানা তারিক জামিলের উক্তি ও উপদেশ । জীবন সম্পর্কিত অমূল্য জ্ঞান সম্ভার
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উপদেশ
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উপদেশ আমাদের চলার পথকে সুগম করবে। তাঁর অমূল্য উপদেশসমূহের কিছু অংশ নিম্নরুপ।
“তাওবা বৃদ্ধের জন্য একটা প্রশংসনিয় কাজ,তবে যুবকের তাওবা সর্বাপেক্ষা প্রশংসনীয়।”
“মন্দ লোকের সাহচর্য থেকে একাকিত্ব এবং একাকিত্বের চেয়ে সত লোকে সাহচর্য উত্তম।”
“পরীক্ষার মুখোমুখি হয়ে সবর করার চেয়ে পরীক্ষা থেকে সুরক্ষিত থেকে কৃতজ্ঞ হওয়া আমার কাছে বেশি পছন্দের।”
উপরোক্ত হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তি, ইবনে বাত্তাল, ড বিলাল ফিলিপস – সূরা বুরুজ তাফসির হতে চয়ণ করা হয়েছে।
“স্মরণ রাখবে, যে লোক মহান আল্লাহ্ তায়ালার কর্মে লিপ্ত থাকে। সে লোকের কর্মে স্বয়ং আল্লাহ্ লিপ্ত হয়ে যান। আমল ব্যতীত আলেমের পথ চলা হলো এ ধরনের,
যেরুপ দৃষ্টিশক্তি বিহীন কোন লোক খুব অন্ধকারে রাতে হাতের বাতি নিয়ে পথ চলে।”
“আসল বদান্যতা হল মহান আল্লাহ্ তায়ালার সৃষ্টি কষ্ট হতে বাঁচাবার জন্য নিজে কষ্ট সহ্য করে যাওয়া। সেবা এবং আল্লাহ্ তায়ালার আদেশ-নিষেধকে ভবিষ্যৎ দিনের জন্য বন্ধ করে রেখ না।
খারাপ লোকের সাথে চলার চেয়ে নিজে একা একা চলাই সর্বত্তোম। আর ভাল লোকের সঙ্গে চলা একা একা চলার চেয়ে উত্তম।”
“যে তোমার সাথে শত্রুতা করে তাকে ভালোবাসো।”
অন্যান্য হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উপদেশের পাশাপাশি, অন্যান্য ইসলামিক সাধক ও গুণীদের উপদেশ জেনে নিতে পারেন নিম্নরুপ।
শেখ সাদীর উক্তি ও উপদেশ বাণী সমূহ । বদলে যাবে জীবন দর্শন
সুফী, দার্শনিক ইমাম গাজ্জালীর উক্তি । জ্ঞান-অন্বেষী জীবনমুখী উপদেশ বাণীসমূহ
হযরত আবু বকর (রাঃ) এর অন্যান্য উক্তি ও বাণী
হযরত আবু বকর (রাঃ) ছিলেন বিজ্ঞ এবং চমৎকার জীবনবোধের অধিকারী। তিনি তার জীবনে বহু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। তাঁর জীবন থেকে প্রাপ্ত এমন কিছু অভিজ্ঞতাই আজ উক্তি হিসেবে এখানে উপস্থাপিত হবে। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তি ও অমূল্য বাণীসমূহ নিম্ন্রুপ।
“অপরের কষ্ট দূর করার জন্য কষ্ট করার মাঝে রয়েছে মহত্বের প্রকৃত নির্যাস।”
“যুদ্ধের ময়দানে কাফিরদের সঙ্গে জিহাদ করা জিহাদে আসগর’ অথবা খুব ছোট জিহাদ, আর তোমার নিজের নফসের সাথে যুদ্ধ করা সবচেয়ে বড় জিহাদ বা জিহাদে আকবর।”
“যারা বড় লোকদের পেছনে ঘুরে সেসব আলেম মহান আল্লাহ্ তায়ালার সবচেয়ে বড় শত্রু। আর সে সব বড়লোক আল্লাহ্ তায়ালার করুনার ভাজন,
যারা আলিমগণের সহচর্যে গমন করে। ইলম ছাড়া আমলকে ব্যাধি জ্ঞান করে আর আমলহীন ইলমকে নিরর্থক মনে করে।”
“প্রভু হে, ইসলামের উপর আমার মরণ দাও, মুসলিম হিসেবে আমার মৃত্যু হোক এবং আমাকে সৎলোকদের অন্তর্ভুক্ত কর। ”
এ বাক্যটি শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তার পবিত্র রূহ তার স্রষ্টার সান্নিধ্যে পৌঁছে যায়।
জীবনের অন্তিম সময়ে হযরত উমর (রাঃ) ও অন্যান্য সাহাবির সম্মুখে হযরত আবু বকর (রাঃ) এই উক্তিটি ব্যক্ত করেন।
হযরত আবু বকর (রাঃ) তাঁর পুরো জীবন ন্যায় এবং নীতির মাঝে কাটিয়েছেন। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদের প্রিয় সহচর হিসেবে তাঁর বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন এবং ইসলামকে সেবা করে গিয়েছেন। তিনি তাঁর চলতি পথে আমাদের জন্য স্মৃতিস্বরুপ রেখে গিয়েছেন কিছু উক্তি ও বাণী, যা আমাদেরকে আল্লাহর পথে চলতে সাহস যোগাবে। হযরত আবু বকর (রাঃ) এর উক্তির মাধ্যমে আমরা ইসলাম এবং জীবনকে সুন্দরভাবে উপলব্দি করতে পারি।