সুফী, দার্শনিক ইমাম গাজ্জালীর উক্তি । জ্ঞান-অন্বেষী জীবনমুখী উপদেশ বাণীসমূহ

ইমাম গাজ্জালি, পুরো নাম আবু হামিদ মোহাম্মদ ইবনে মোহাম্মদ আল গাজ্জালি। মহান এই দার্শনিক জন্মগ্রহণ করেন ইরানের খোরসান প্রদেশের তুশ নগরীতে। ১০৫৮ খ্রিস্টাব্দ অনুযায়ী ৪৫০ হিজরী সনে তিনি জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল মোহাম্মদ এবং দাদার নাম আহমদ। বংশানুক্রমে তাঁরা সুতা ব্যবসায়ী ছিলেন। গাজল অর্থ সূতা, নামকরণের এই সামাঞ্জস্যতা বজায় রেখেই তাঁর বংশ গাজ্জালি নামে পরিচিতি পায়। আবার কেউ মনে করেন, গাজাল অর্থ হরিণ; আর তিনি হরিণের চোখের ন্যায় সুন্দর ছিলেন বলেই তাকে গাজ্জালী বলে ডাকা হত।
সমসাময়িক শিক্ষা শেষে তিনি নিজেকে ধর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলেন। জীবনকে গভীরভাবে উপলব্দি করে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মাঝেই জীবনের সব সুর খুঁজে পান। দর্শন শাস্ত্রে পান্ডিত্য অর্জন করা এই সুফী সাধক তাঁর সমসাময়িক দার্শনিকদের থেকে কয়েকগুণ এগিয়ে ছিলেন তাঁর সৃষ্টিকর্তার সাথে নিবিড় সম্পর্ক এবং গভীর জীবনবোধের কারণে। তিনি তাঁর জীবনদশায় উপহার দিয়ে গেছেন অসংখ্য বই। যা থেকে আমরা পেয়েছি অসংখ্য কালজয়ী উক্তি। যা হাজার বছর ধরে মনুষ্য হৃদয়কে শীতল করে তুলছে। আত্মপ্রকাশের আজকের আর্টিকেলে থাকছে ইমাম গাজ্জালির উক্তি এবং কালজয়ী বাণীর সমাবেশ। মহান এই ইসলামিক দার্শনিক মৃত্যুবরণ করেন ১১১১ সনে।

ইমাম গাজ্জালীর উক্তি ও হৃদয় ছোঁয়া বাণী সমাবেশ।

ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) বিচরণ করেছেন জীবন এবং সৃষ্টিকর্তার সন্ধিক্ষণে। জীবনকে দেখেছেন অন্য সকলের চেয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে। তাঁর উক্তিগুলোকে জীবন, ধর্ম এবং উপদেশ এই তিনভাগে ভাগ করে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে।

রচনার ভাগসমূহ

 

জীবন বোধ নিয়ে ইমাম গাজ্জালীর উক্তি


চমৎকার জীবনবোধ এবং জীবনকে সুনিপুণভাবে উপলব্দি করায় ইমাম গাজ্জালীর উক্তিতে জীবনের যে পরশ পাওয়া যায়, তা অমৃত। নিচে জীবনবোধ নিয়ে ইমাম গাজ্জালীর উক্তিগুলো ক্রমান্বয়ে উপস্থাপন করা হলো।


জীবনবোধ-নিয়ে-ইমাম-গাজ্জালির-উক্তি-বাণী-imam-gazzali-life-quotes-bangla-bani-ukti-1-1
জীবনবোধ নিয়ে ইমাম গাজ্জালির উক্তি

“তিনটি বস্তু মানুষকে ধ্বংস করে দেয়,
লোভ
হিংসা ও
অহংকার।’


 


“মানবজীবনের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে তার ‘মন এবং জবানকে’ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সমর্থ হওয়া।”


 


“লোকের প্রশংসায় আনন্দিত হতে এবং লোকের নিন্দায় দুঃখিত হতে আপনার অন্তরকে প্রশ্রয় দিবেন না।”


“দুই ধরনের মানুষ কখনও তৃপ্ত হতে পারে না জ্ঞানের অম্বেষী, সুতরাং জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেকের জন্য আবশ্যক। সম্পদের লোভ, যা মানুষকে ধ্বংসের দারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। সুতরাং সম্পদের লোভ থেকে বিরত থাকা।”


ইমাম-গাজ্জালীর-জীবনবোধ-বাণী-উক্তি-imam-gazzali-life-quotes-bangla-bani-ukti-2
জীবনবোধ নিয়ে ইমাম গাজ্জালির উক্তি

“দুনিয়াতে সবচেয়ে বোকা ও নির্বোধ সে, যে নিজের পবিত্রতা দাবী করে এবং নিজেই নিজের প্রশংসা করে।”


“যে ব্যক্তি ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করে তার ধৈর্য, সহানুভূতি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থাকতে হবে।”


“নরম-কোমল কথামালা পাথরের চাইতে কঠিন হৃদয়কেও কোমল করে দেয়, কর্কশ-কঠিন কথাবার্তা রেশমের চাইতে কোমল হৃদয়কেও কঠিন করে দেয়।”


“যদিও মানুষের হয়ত জ্ঞান রয়েছে, কিন্তু সেই জ্ঞান তাদের জন্য অর্থহীন যতক্ষণ তাতে বুদ্ধিমত্তার সংযোগ না ঘটবে।”


“আপনি যা ভালোবাসেন তা অর্জন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার অপছন্দের বিষয়টিতে ধৈর্যধারণ করতে হবে।”


জীবনবোধ-নিয়ে-ইমাম-গাজ্জালীর-বাণী-উক্তি-imam-gazzali-life-quotes-bangla-bani-ukti-2
জীবনবোধ নিয়ে ইমাম গাজ্জালির উক্তি

“যে ব্যক্তি অন্যের খারাপ চরিত্র নিয়ে অভিযোগ করলো,সে নিজের চরিত্রের খারাপ দিকটি প্রকাশ করে দিলো।”


“ক্রোধ মনুষ্যত্বের আলোকশিখা নির্বাপিত করে দেয়।”


“দুনিয়াতে সবচেয়ে বোকা ও নির্বোধ সে, যে নিজের পবিত্রতা দাবী করে এবং নিজেই নিজের প্রশংসা করে।”

উপরোক্ত মাম আল গাজ্জালীর বানী, [বিদায়াতুল হিদায়াহ, প্রকাশক: দারুল কিতাব, পৃ-১১৫] থেকে সংগৃহীত।

“মানুষের মধ্যে যতগুলি মারাত্নক দোষের সমাবেশ ঘটে, এর মধ্যে কার্পন্য দোষটি উল্লেখযোগ্য।”


“যে ব্যক্তি ভালো কাজের আদেশ দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করে তার ধৈর্য, সহানুভূতি, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থাকতে হবে।”

উপরোক্ত ইমাম গাজ্জালি রাহিমাহুল্লাহ উক্তিটি,
[ইউসুফ আল-কারাদাওয়ি, ইসলামি পুনর্জাগরণ সমস্যা ও সম্ভাবনা, পৃ:১২৯] হতে সংগৃহীত।

ইমাম-গাজ্জালী্র-জীবন-সমর্কিত-উক্তি-বানী-imam-gazzali-life-uotesbangla-aniক্তি-বাী-
জীবনবোধ নিয়ে ইমাম গাজ্জালির উক্তি

জীবন ও জীবনবোধ নিয়ে মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির উক্তিগুলো পড়ুন উক্ত লিংকে – মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির জীবনবোধ উক্তি


ইমাম গাজ্জালীর ধর্মীয় উক্তি


সৃষ্টি এবং এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি তাঁর ঝোক ছিল অপরিসীম। তিনি আল্লাহকে খুঁজে বেরিয়েছেন ভিন্ন উপায়ে। খুঁজে পেয়েছেন অন্তরের অন্তঃস্থলে। সৃষ্টিকর্তার প্রতি অপরিসীম প্রেম, ভক্তি এবং বিশ্বাস থেকে তিনি করে গিয়েছেন অসংখ্য কালজয়ী উক্তি। ধর্ম এবং সৃষ্টিকর্তা নিয়ে ইমাম গাজ্জালির উক্তি সমূহই নিচে উপজীব্য।


“তিনটি অভ্যাস মানুষের কল্যাণ ডেকে আনে,
আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা,
বিপদের সময় দু’হাত তুলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া,
যে কোনো সংকটে ধৈর্য ধারণ করা।


“আজকালকার যুগের তথাকথিত পন্ডিতদের দেখা যায় যে, বাদানুবাদ ও যুক্তিতর্ক তাদের স্বভাবকে খুবই প্রভাবিত করে রেখেছে এবং নিশ্চুপ থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। কেননা, পান্ডিত্যের দাবীদার অসৎ বিদ্বানেরা তাদেরকে বুঝিয়েছে যে, এই বিতর্ক একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং এর দ্বারা মানুষের নিকট মর্যাদা পাওয়া যায়। খবরদার! এমন লোকদের থেকে তুমি ছুটে পালাও যেমন সিংহ দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তুমি পালাবে। জেনে রাখো, বাদানুবাদ যেমন মানুষের মনে ঘৃণার উদ্রেক করে, তেমনি এটি আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও রোষেরও কারণ হয় বটে!”


ইসলাম-নিয়ে-ইমাম-গাজ্জালীর-উক্তি-বানী-imam-gazzali-islamic-quotes-bangla-bani-ukti-2
ইমাম গাজ্জালীর ধর্মীয় উক্তি

“উপকারী জ্ঞান তো সেটাই যা আপনার মাঝে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করবে, আপনার সীমাবদ্ধতার ব্যাপারে আপনাকে সচেতন করবে, দুনিয়ার প্রতি আসক্তি কমিয়ে দিবে, আখিরাতের প্রতি আকাঙ্ক্ষা বাড়াবে এবং আপনার কাজের ত্রুটিগুলোর ব্যাপারে আপনার চোখকে উন্মুক্ত করে দিবে যেন আপনি সেগুলো সংশোধন করতে পারেন।”


“আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা যেন সেই শিশুটির মতন যে খুব ভালো করে জানে সে যদি মাকে না-ও ডাকে তবু মা তার ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন এবং সঠিকভাবেই তার দেখাশোনা করছেন।”


“যখন কোনো শিশুকে দেখ, তখন বলবে–এই শিশু আল্লাহর কোন নাফরমানী করে নাই; কিন্তু আমি করেছি, অতএব, সে আমার চেয়ে ভাল। কোন বয়ঃবৃদ্ধ লোককে দেখে বলবে–এই ব্যক্তি আমার আগে থেকেই আল্লাহর বন্দেগী করে আসছে, অতএব, সে অবশ্যই আমার চেয়ে ভাল। যদি কোনো আলেম ব্যক্তিকে দেখ, তাহলে বলবে–সে যা কিছু পেয়েছে, আমি তা পাই নাই; সে যে মর্যাদায় পৌঁছেছে, আমি সেখানে পৌঁছাতে পারি নাই; সে বিদ্বান, আমি মূর্খ; তাহলে কি করে আমি তাঁর সমকক্ষ হতে পারি? যদি সে মূর্খ হয়, তাহলে বলবে–এই লোকটি না-ফরমানী করে থাকলে অজ্ঞতাবশতঃ করেছে, আর আমি আল্লাহর না-ফরমানী করেছি জেনে শুনে, সুতরাং আল্লাহর শাস্তি আমার ক্ষেত্রে অধিকতর প্রযোজ্য; আমি জানিনা, শেষ পরিণতি কার ভাল হয়; আমারই না তার। যদি তুমি কোন কাফির ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত কর, তাহলে বল; আমি জানিনা, হয়তো বা সে মুসলমান হয়ে যাবে এবং তার জীবনাবসান নেক আমলের মধ্য দিয়ে হবে এবং ইসলাম গ্রহণের ওসীলায় তার সকল পূর্ব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে… আর আমি–খোদা না করুন–গোমরাহ হয়ে যেতে পারি, যার ফলে কুফর-শিরক ও পাপে লিপ্ত হয়ে আমার মৃত্যু হতে পারে; সুতরাং পরিণামে সে হয়তঃ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে আর আমি শাস্তি ভোগকারীদের দলভুক্ত হয়ে যাব।”


ইমাম-গাজ্জালির-ধর্মীয়-বানী-উক্তি-imam-gazzali-islamic-quotes-bangla-bani-ukti-৩
ইমাম গাজ্জালীর ধর্মীয় উক্তি

“দ্বীনি ইলমই হচ্ছে একমাত্র বিদ্যা যা তোমার অন্তরে খোদাভীতি সৃষ্টি করবে, নিজের দোষ-ত্রুটি উপলব্ধি করার জ্ঞান বাড়াবে, সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার পরিচয় করিয়ে দিবে। দুনিয়ার মোহান্ধতা হ্রাস করে আখিরাতের প্রতি শওক ও আগ্রহ বৃদ্ধি করবে, পাপকার্যের কুফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করবে। ফলে, পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার মন-মানসিকতা গড়ে উঠবে, শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক করবে।”


“আল্লাহ তা’আলা জুলুম-অত্যাচারের কারণে যেমন হাজ্জাজের প্রতিশোধ নিবেন, তেমনি হাজ্জাজের প্রতি কেউ জুলুম বা যবান-দরাযী করলে সেটারও বিচার করবেন।”

জনৈক ব্যক্তি হাজ্জাজের (বিখ্যাত জালেম) বিরূপ সমালোচনা করলে এক বুযুর্গ এই উক্তিটি করেছিলেন, যা ইমাম গাজ্জালী (রঃ) মুখে শোনা যায়।

ইমাম-গাজ্জালীর-ধর্মীয়-উক্তি-বানী-imam-gazzali-islamic-quotes-bangla-bani-ukti-2
ইমাম গাজ্জালীর ধর্মীয় উক্তি

শেখ সাদীর ধর্মীয় উক্তিগুলো পড়ুন উক্ত লিংকে > শেখ সাদীর জনপ্রিয় উক্তি


ইমাম গাজ্জালির উপদেশ বাণীসমূহ


ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) তাঁর পাঠক, অনুসারীদেরকে তাঁর বইয়ের বিভিন্ন অংশে সতর্ক করে গিয়েছেন জীবন এবং সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে। সেইসব ইমাম গাজ্জালীর উপদেশ এবং বানীসমূহ নিচে উপস্থাপন করা হলো।


“জেনে রাখো — যে কোন ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহর কোন মাখলুকের তুলনায় উত্তম মনে করবে, সে-ই দাম্ভিক; অহংকারী। বস্তুতঃ তোমার এ কথা মনে রাখা উচিত, যে ব্যক্তি আখিরাতের জীবনে আল্লাহর কাছে ভালো, সে-ই প্রকৃত ভালো। আর এটা এমন এক বিষয়, যা অদৃশ্য এবং জীবনের শেষ মূহুর্তের উপর নির্ভরশীল। অতএব, তোমার নিজেকে অন্যের তুলনায় উত্তম মনে করা নিতান্ত মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়।”

আলোচ্য ইমাম আবু হামিদ আল-গাজ্জালীর উক্তি, ‘বিদায়াতুল হিদায়াহ : ইমাম আল-গাজ্জালী , প্রকাশক: দারুল কিতাব, পৃ-৯৫” থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

“সাফল্যের অপর নামই অধ্যবসায়।”


“আপনার অবশ্যই নিজেকে বুঝিয়ে সন্তুষ্ট রাখতে হবে এই বলে যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আপনার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটাই আপনার সবচাইতে সঠিক এবং সর্বাধিক কল্যাণকর।”


ইমাম-গাজ্জালির-উপদেশ-বানী-ধর্মীয়-উক্তি-imam-gazzali-islamic-advice-bangla-bani-ukti-4
ইমাম গাজ্জালীর উপদেশ বাণীসমূহ

“আয়নায় নিজের চেহারা দেখ, যদি সুদর্শন হও
তবে পাপের কালিমা লেপন করে ওকে কুৎসিত
করো না! আর যদি কালো-কুশ্রী হয়ে থাক, তবে
ওকে পাপ-পঙ্কিলতা মেখে আরও বীভৎস করে তুলো
না।”


“শক্ত কথায় রেশমের মতো নরম অন্তরও পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।”


“আজকালকার যুগের তথাকথিত পন্ডিতদের দেখা যায় যে, বাদানুবাদ ও যুক্তিতর্ক তাদের স্বভাবকে খুবই প্রভাবিত করে রেখেছে এবং নিশ্চুপ থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। কেননা, পান্ডিত্যের দাবীদার অসৎ বিদ্বানেরা তাদেরকে বুঝিয়েছে যে, এই বিতর্ক একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং এর দ্বারা মানুষের নিকট মর্যাদা পাওয়া যায়। খবরদার! এমন লোকদের থেকে তুমি ছুটে পালাও যেমন সিংহ দেখে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে তুমি পালাবে। জেনে রাখো, বাদানুবাদ যেমন মানুষের মনে ঘৃণার উদ্রেক করে, তেমনি এটি আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও রোষেরও কারণ হয় বটে!”

উপরোক্ত ইমাম গাজ্জালির উক্তি, [বিদায়াতুল হিদায়াহ : ইমাম আল-গাজ্জালী , প্রকাশক: দারুল কিতাব, পৃ-৮৩]​ হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।

ইমাম-গাজ্জালির-উপদেশ-বানী-ধর্মীয়-উক্তি-imam-gazzali-islamic-advice-bangla-bani-ukti-5
ইমাম গাজ্জালীর উপদেশ বাণীসমূহ


“যদি কোন আলেমকে অন্য আলেমদের নামে মন্দ কথা বলতে দেখেন, তাকে এড়িয়ে চলুন।”


“ইলম ও জ্ঞানচর্চার দ্বারা যদি তোমার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে আত্মগৌরব ও বড়াই-অহংকার করা, সমকালীন লোকদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করা, আপন প্রভাব ও প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্ববাসীর নিকট প্রিয়পাত্র অথবা ভক্তিভাজন হওয়া, পার্থিব গৌরব অর্জন করা এবং রকমারী ধন-সম্পদ কুক্ষিগত করা, তাহলে জেনে রাখো– এই জ্ঞান অর্জনের দ্বারা তুমি তোমার দ্বীন ও ঈমান ধ্বংস করছ, স্বীয় মূল্যবান জীবন বিনষ্ট করছ। নশ্বর এই পৃথিবীর বিনিময়ে আখিরাতের অনন্ত জীবনকে বিক্রয় করে দিচ্ছ। নিঃসন্দেহে এটা অত্যন্ত গর্হিত ও ক্ষতিকর কাজ। এই ব্যবসায় তোমার বৃহৎ লোকসান ছাড়া লাভের কিছু অবশিষ্ট থাকছে না।”

আলোচ্য ইমাম গাজ্জালির বাণী, [বিদায়াতুল হিদায়াহ : ইমাম আল-গাজ্জালী , প্রকাশক: দারুল কিতাব, পৃ-১১]​ হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।

“আল্লাহর প্রত্যেকটি ফয়সালাই ন্যায়বিচারের ওপর ভিত্তিশীল। সুতরাং কোন অবস্থাতেই অভিযোগের ভাষা যেন তোমার মুখে উচ্চারিত না হয়।”


“দ্বীনি ইলমই হচ্ছে একমাত্র বিদ্যা যা তোমার অন্তরে খোদাভীতি সৃষ্টি করবে, নিজের দোষ-ত্রুটি উপলব্ধি করার জ্ঞান বাড়াবে, সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তার পরিচয় করিয়ে দিবে। দুনিয়ার মোহান্ধতা হ্রাস করে আখিরাতের প্রতি শওক ও আগ্রহ বৃদ্ধি করবে, পাপকার্যের কুফল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করবে। ফলে, পাপাচার থেকে বেঁচে থাকার মন-মানসিকতা গড়ে উঠবে, শয়তানের ধোঁকা ও প্রতারণা সম্পর্কে সতর্ক করবে।”

উপরোক্ত ইমাম গাজ্জালীর বাণী, [বিদায়াতুল হিদায়াহ : ইমাম আল-গাজ্জালী , প্রকাশক: দারুল কিতাব, পৃ-৪৬] থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

ইমাম-গাজ্জালির-উপদেশ-বানী-ধর্মীয়-উক্তি-imam-gazzali-islamic-advice-bangla-bani-ukti-৩
ইমাম গাজ্জালীর উপদেশ বাণীসমূহ

“যখন কোনো শিশুকে দেখ, তখন বলবে–এই শিশু আল্লাহর কোন নাফরমানী করে নাই; কিন্তু আমি করেছি, অতএব, সে আমার চেয়ে ভাল। কোন বয়ঃবৃদ্ধ লোককে দেখে বলবে–এই ব্যক্তি আমার আগে থেকেই আল্লাহর বন্দেগী করে আসছে, অতএব, সে অবশ্যই আমার চেয়ে ভাল। যদি কোনো আলেম ব্যক্তিকে দেখ, তাহলে বলবে–সে যা কিছু পেয়েছে, আমি তা পাই নাই; সে যে মর্যাদায় পৌঁছেছে, আমি সেখানে পৌঁছাতে পারি নাই; সে বিদ্বান, আমি মূর্খ; তাহলে কি করে আমি তাঁর সমকক্ষ হতে পারি? যদি সে মূর্খ হয়, তাহলে বলবে–এই লোকটি না-ফরমানী করে থাকলে অজ্ঞতাবশতঃ করেছে, আর আমি আল্লাহর না-ফরমানী করেছি জেনে শুনে, সুতরাং আল্লাহর শাস্তি আমার ক্ষেত্রে অধিকতর প্রযোজ্য; আমি জানিনা, শেষ পরিণতি কার ভাল হয়; আমারই না তার। যদি তুমি কোন কাফির ব্যক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত কর, তাহলে বল; আমি জানিনা, হয়তো বা সে মুসলমান হয়ে যাবে এবং তার জীবনাবসান নেক আমলের মধ্য দিয়ে হবে এবং ইসলাম গ্রহণের ওসীলায় তার সকল পূর্ব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে… আর আমি–খোদা না করুন–গোমরাহ হয়ে যেতে পারি, যার ফলে কুফর-শিরক ও পাপে লিপ্ত হয়ে আমার মৃত্যু হতে পারে; সুতরাং পরিণামে সে হয়তঃ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবে আর আমি শাস্তি ভোগকারীদের দলভুক্ত হয়ে যাব।”

উপরোক্ত ইমাম আল গাজ্জালীর উক্তি, [বিদায়াতুল হিদায়াহ, অনুবাদ: মুফতী মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ, প্রকাশক: দারুল কিতাব, পৃষ্ঠা ৯৫] হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।

মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির সৃষ্টিকর্তা বিষয়ক উক্তিগুলো পড়ুন উক্ত লিংকে > সৃষ্টিকর্তা নিয়ে রুমির উক্তি


ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) তাঁর জীবনের বড় অংশই কাটিয়েছেন জ্ঞান অন্বেষণ করে। জ্ঞানের মাঝেই তিনি সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজেছেন। সৃষ্টিকর্তাকে তিনি গভীরভাবে উপলব্দি করেছিলেন। তাঁর প্রত্যেকটি ধর্মীয় রচনায় তিনি আল্লাহ এবং তাঁর সৃষ্টির বর্ণনা করেছেন। অনুসারীদের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন কিভাবে সৃষ্টিকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে, তাঁর আনুগত্য স্বীকার করতে হবে। ইমাম গাজ্জালীর উক্তি এবং বানী আমাদের সকলের চলার পথ সুগম করবে।

মোঃ ওয়ালীউল্লাহ অলি

http://enlightentricks.com

সমসাময়িক একজন মানুষ। রক্তে মিশে থাকা লেখালেখি থেকেই ব্লগিং এর অনুপ্রেরণা। লিখতে ভালোবাসি। প্রচুর লিখতে হবে, বাঁচতে হলে লিখতে হবে। এই ব্রত মাথায় নিয়েই লিখে চলেছি। বাংলার পাশাপাশি ইংলিশেও ব্লগিং করছি Enlighten Tricks ওয়েবসাইটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *