ক্যালিগ্রাফি কি? ক্যালিগ্রাফির সাতসতেরো । রুপ এবং ইতিহাস

মুক্তো ঝরানো হাতের লেখার প্রতি দূর্বলতা কার নেই বলুনতো? আর সেই লেখা যখন হয়ে যায় অক্ষর  শিল্প? জ্বী, বলছিলাম ক্যালিগ্রাফির কথা। প্রসঙ্গত আপনাকে যদি প্রশ্ন করি ক্যালিগ্রাফি আসলে কি? অনেকেই বলবেন তারা জানেন, ক্যালিগ্রাফি কি কিন্তু সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবেন না। অবাক হবার কিছু নেই কারণ আধুনিক প্রিন্টারের যুগে ক্যালিগ্রাফি তার সঠিক পরিচয় ও জনপ্রিয়তা  হারাবে না এ আর এমন কি। প্রিন্টিং মেশিন ব্যবহার শেখার পর মানুষ চায় সস্তা ও কম সময়ের মাঝে সবচেয়ে ভালো লেখা পেতে সেখানে ক্যালিগ্রাফি করতে বেশি সময় ও খরচতো রয়েছেই। যাই হোক ইতিহাসে ক্যালিগ্রাফি একটি শিল্প হিসেবে পরিচিতি পাবার অনেককাল আগে থেকেই  এর ব্যবহার রয়েছে।
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে, আমরা সবার আগে স্পষ্টভাবে জানবো ক্যালিগ্রাফি কি এবং কোনটিকে আমরা ক্যালিগ্রাফি বলবো না।

বাংলা-ক্যালিগ্রাফি-bangla-caligraphy
বাংলা-ক্যালিগ্রাফি

ক্যালিগ্রাফি কি? কোনটিকে আমরা ক্যালিগ্রাফি বলবো, কোনটিকে নয়।

রচনার ভাগসমূহ

ডিকশনারী ঘাটলে ক্যালিগ্রাফির যে সহজ সংজ্ঞা পাওয়া যায় তা এমন –

ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে সুন্দর হাতের লেখা অথবা চমৎকার করে লেখার একটা রুপ।

যদিও এই সংজ্ঞা ক্যালিগ্রাফির সঠিক পরিচয় দেয় না। এই শিল্প সুন্দর হাতের লেখার চেয়েও অনেক বেশি আলাদা এবং শিল্পবহুল। লেখা বা হাতের লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অল্প সময়ের মাঝে সহজ ও সুন্দরভাবে লেখা, যা বোধগম্য ও যোগাযোগ করতে সক্ষম। ব্যক্তিগতভাবে শিল্প ও সৌন্দর্য  এর প্রধান উদ্দেশ্য না৷ ক্যালিগ্রাফির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন অক্ষর বা শব্দকে  সুশৃঙ্খল ও সুসজ্জিতরুপে ফুটিয়ে তোলা।

তাই সুন্দর হাতের লেখা মানেই ক্যালিগ্রাফি না অথবা সুন্দর হাতের লেখাই ক্যালিগ্রাফির একমাত্র বিষয়বস্তু নয়।

তবে ক্যালিগ্রাফি কারা?

Caligraphy শব্দটি দুটি গ্রিক শব্দ Kallos এবং Graphein সহযোগে গঠিত। এদের অর্থ হচ্ছে সুন্দর লেখা।

ক্যালিগ্রাফি এমন শিল্পকে বলা হয়, যাতে চমৎকার সব প্রতীক হাতের মাধ্যমে রচনা করা ও সেগুলোকে নিখুঁত ও সুন্দর করে সাজানো হয়। এটা শব্দ ও হরফের অবস্থান ও লেখায় দক্ষতা ও কৌশলের এমন সমাহার; যাতে অখন্ডতা, সাদৃশ্য, ক্যালিগ্রাফির ঐতিহ্য, ছন্দ ও সৃজনশীল স্ফুলিঙ্গ প্রকাশ পাবে।

বর্ণের  নিয়মানুগ ব্যবহার ও আনুপাতিক বিন্যাসে তৈরি ক্যালিগ্রাফি দেখে নিঃসন্দেহে রুচিশীল শিল্প হিসেবে আখ্যা দেওয়া যায়। কখনো কখনো ক্যালিগ্রাফির লেখা পড়তে বা বুঝতে আপনার কষ্ট হতেই পারে কিন্তু  ক্ষতি পুষিয়ে দেবে তাঁর দৃষ্টিনান্দনিকতা।

ক্যালিগ্রাফির রুপ

ক্যালিগ্রাফির এখন দুটো রুপ প্রচলিত।

  • ট্রেডিশনাল ধারা
  • পেইন্টিং বা চিত্রকলা

হরফকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলাই ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফির মুখ্য বিষয়। ট্রেডিশনাল ক্যালিগ্রাফি দু ধরনের হয়।

  • স্ক্রীপ্ট ক্যালিগ্রাফি
  • ভিজ্যুয়াল ক্যালিগ্রাফি

স্ক্রীপ্ট ক্যালিগ্রাফি হলো বইপত্র, নথি,ফরমান,মানপত্র ইত্যাদি কাগজে হরফের সাহায্যে যেই ক্যালিগ্রাফি করা হয়।
ভিজ্যুয়াল ক্যালিগ্রাফি মূলত শুধু কয়েকটি হরফ, বাক্য বা বাণীর সাহায্যে কম্পোজিশন করে ছবির মত তৈরি করা। এতে শুধুমাত্র কালি ও ক্যালিগ্রাফি কলম ব্যবহার করা হয়। লেখার উপযোগী করে তোলা হয় কাপড় কাগজ বা ক্যানভাস। যাকে বলা হয় ক্যালিগ্রাফি।

লেটারিং, ক্যালিগ্রাফি এবং টাইপোগ্রাফির পার্থক্য

এই তিন শব্দের মধ্যে সূক্ষ্ম থেকে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। যা আমরা তাদের সংজ্ঞা থেকেই জানতে পারবো।

লেটারিং:

একাধিক বর্ণের একটি পূর্ণাঙ্গ সংকলন, যেটা হাতে-কলমে কিংবা ডিজিটাল মাধ্যমেও তৈরি করা যায়। লেটারিং আর ক্যালিগ্রাফির মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে লেটারিং অনেকটা ইলাস্ট্রেশন বা আঁকার মত, আর ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে একদম বিশুদ্ধ লেখা। লেটারিং এর অপর নাম “faux calligraphy”।

টাইপোগ্রাফি:

অক্ষর সাজানোর কৌশলকেই টাইপোগ্রাফি বলে। সেটা হতে পারে, খুব সাধারণ ভাবে অক্ষরগুলোকে সাজানো অথবা চোখ ধাধানো পেঁচান‌ো অক্ষরে লেখা লোগো। লেটারিং এবং ক্যালিগ্রাফি মূলত একধরনের টাইপোগ্রাফি। তবে অনেক সময় লেটারিং এর ক্ষেত্রে বর্ণমালা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আকার-আকৃতি এবং অন্যান্য সাজ সজ্জার উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে কিন্তু টাইপোগ্রাফি হচ্ছে একদম খাঁটি বর্ণমালার স্টাইল এবং বিন্যাস।

এক্ষেত্রে টাইপোগ্রাফি একটি পুনঃপুন প্রক্রিয়া, যেখানে ডিজিটাল মাধ্যমে ফন্টের সাহায্যে বারবার ব্যবহার করা হয়। যা ক্যালিগ্রাফি থেকে ভিন্ন। ক্যালিগ্রাফির সাথে কলমের বল পয়েন্ট এবং কালির সম্পর্ক থাকবে। সেখানে টাইপ্রোগ্রাফি একটি ডিজিটাল আর্ট মাধ্যম।

ক্যালিগ্রাফির ইতিহাস এবং শুরুর কথন

ধারণা করা হয় ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার বর্ণমালা সভ্যতার শুরু থেকে।  ক্যালিগ্রাফির ব্যবহার এসেরীয় কিংবা ব্যাবিলনীয় কিউনিফর্ম এবং পরবর্তীতে ফিনিশীয়দের বর্ণমালা সভ্যতার স্রোতে নতুন গতি এনে দেয় এবং তাঁদের থেকেই গ্রহণ করে গ্রিক- রোমানরা। সেখানে চার্চের অধীনে এক শ্রেণী দ্বারা বাইবেল সংরক্ষণের জন্য অনুলিপির কাজ করানো হলো। মূলত এভাবেই শিল্প হিসেবে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে জায়গা করে নেয় ক্যালিগ্রাফি। একইভাবে ইহুদিদের হিব্রুগ্রন্থ, ভারতের সংস্কৃত সাহিত্য থেকে অন্যান্য সাহিত্যে ক্যালিগ্রাফির উত্থান ঘটে।

যদিও প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক সময় অব্দি ক্যালিগ্রাফির চর্চাকারী হিসেবে চীন জাপান এবং মুসলিম দেশগুলো দাবি করতে পারে। কিন্তু ক্যালিগ্রাফির পেছনে আছে বিস্তীর্ণ ইতিহাস, ধর্ম রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা।

আরব ক্যালিগ্রাফি

ক্যালিগ্রাফিকে সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে যাবার পেছনে আরবদের অবদান রয়েছে সবচেয়ে বেশি।

৭ম ও ৮ম শতকে আটলান্টিক উপকূল হতে সিন্ধু নদ অধিকার করে নেয় মুসলিমরা। সময়ের সাথে সাথে ব্যাপকতা লাভ করে আরবি ভাষা।  বিভিন্ন ভাষার সাথে মিশে এবং ডান থেকে বামে লেখার মত কিছু বৈশিষ্ট্যের জন্য নান্দনিকতা পেয়েছে আরবি ভাষা। প্রাত্যাহিক প্রয়োজনে পরিচিত টানা পদ্ধতির পান্ডুলিপি। অন্যদিকে ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার হতো কুফি লিপি। ইরাকের স্থাপিত শহর কুফার নাম থেকে কুফি নামের উদ্ভব।

দশম শতকের দিকে নাসখী লিপি নামে নতুন এক পদ্ধতি সামনে আসে। আরব বিশ্বে সবথেকে জনপ্রিয় এই লিপির অগ্রগতির সাথে দুজন ইরাকীর নাম জড়িত। ইবনে মুকলাহ এবং ইবনে আল বাওয়াব। ডাবলিনে চেস্টার বেটি লাইব্রেরিতে রক্ষিত কোরআনের পাণ্ডুলিপি এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। স্পেনে উদ্ভব ঘটে মাগরিবি লিপির। উত্তর আফ্রিকায় কোরানের পাণ্ডুলিপিতে এ লিপির ব্যবহার ছিল একচেটিয়া। মূলত কুফি লিপি থেকেই কিছুটা বিবর্তিত হয়ে এর আবির্ভাব।

আরবি-ক্যালিগ্রাফি-arabic-caligraphy
আরবি-ক্যালিগ্রাফি [image source: https://favpng.com/]
পারস্য এবং তুর্কিও ক্যালিগ্রাফিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। উভয়ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাব লক্ষ্যণীয়। ত্রয়োদশ শতকের দিকে ইরানে তা‘লিক লিপির আবির্ভাব ঘটে। এই রীতিতে প্রত্যেকটি শব্দ তার পূর্ববর্তী শব্দ থেকে নিচে সরে আসে। বিখ্যাত ক্যালিগ্রাফার মীর আলি তাবরিজী নাসখী এবং তালিক লিপির মিশেল ঘটিয়ে নতুন এক লিপির সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। নাস্তালিক নামের এই লিপি ব্যাপক ব্যবহৃত হয়েছে ফারসি সাহিত্যে। দিওয়ানী নামে এক ধরনের লিপি অটোম্যান দফতরে দেখা যেত। বর্ণমালা ছিল বিশেষভাবে সজ্জিত, মাঝে মাঝে পড়তে বেগ পেতে হত। সিংহাসনে আসীন সুলতানের নাম আকর্ষণীয় ও মুগ্ধকর সংকেতের মতো করে লেখার একটা রীতির সাথেও পরিচিত ছিল অটোম্যানরা। একে বলা হতো তুঘরা। প্রত্যেক সুলতানের জন্য পৃথক তুঘরা, এবং তা অঙ্কনের জন্য থাকতো অভিজ্ঞ নিশানি (ক্যালিগ্রাফার)। সোজা কথায় বললে, মুসলিম বিশ্বে ক্যালিগ্রাফি বিশেষভাবে সমাদৃত হয়ে এসেছে। আরবি ভাষার লেখাকে দান করেছে বৈচিত্র্য।

চীন এবং জাপানের ক্যালিগ্রাফি

চার হাজার বছর আগে ছাঙ চিয়েহ নামের জনৈক ঋষি। অবসরে বালিতে পাখির পায়ের ছাপ দেখতেন আর তাদের মধ্যকার প্যাটার্ন খুঁজে বের করতেন। এই সাঙ চিয়েহকে মনে করা হয় চীনা লেখার উদ্ভাবক। বর্ণমালা না, চিত্র হিসাবে জন্ম লাভ করেছে এই ভাষা। প্রথমদিকে তাই বাক্য না, খণ্ড খণ্ড ভাব প্রকাশ পেত। শাঙ আমলে (১৭৬৬-১১২২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) এবং তৎপরবর্তী চৌ আমলে (১১২২-২২১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) লেখারীতির অগ্রগতি ঘটে। ২২১ খ্রিস্টপূর্বে চিন সাম্রাজ্যের উত্থানের সাথে সাথে ভাষা লেখাকে সহজীকরণ করা হয়। চীনের বাক্যাংশগুলো প্রথম দিকেই অভিযোজিত করে নেয়া হয় জাপানে। জাপানের প্রথমদিককার কবিতাগুলো চীনা ভাষার সাথে একীভূত। পরে জাপানীরা তাদের ভাষাকে সংক্ষিপ্ত, সহজ, উচ্চারণযোগ্য এক সিলেবল বিশিষ্ট্য ভাষায় রূপান্তরিত করে। আর চীনারা এগিয়ে যায় বহু সিলেবল বিশিষ্ট্য কথ্য ভাষার দিকে। ক্যালিগ্রাফির উদ্ভবও অনেকটা এভাবেই বৈচিত্র্য পেয়েছে।

japanese-caligraphy-জাপানিজ-ক্যালিগ্রাফি
জাপানিজ-ক্যালিগ্রাফি [image source: www.invaluable.com]
চীনে তাং আমলে (৬১৮-৯০৭) সরকারি চাকুরিতে নিয়োগের জন্য হাতের লেখা সুন্দর করাকে প্রাধান্য দেয়া হত। সরকারি অধ্যাদেশ ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে নাগরিককে। চীনা ভাষার প্রখ্যাত দুজন ক্যালিগ্রাফার ওয়াঙ শি চি এবং তার পুত্র ওয়াঙ শিয়াঙ চি। চতুর্থ শতকের এই দুই পণ্ডিতের লিপি অনুকরণ করেছে পরবর্তী ক্যালিগ্রাফাররা। চীনা অক্ষর জাপানে কানজি নামে পরিচিত। জাপানে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ তাদের লেখার উপর অবদান রাখে। জেন বৌদ্ধরা লেখার জন্য যে রীতি অনুসরণ করত, তা পরিচিত বকুসেকি নামে। হিরাগানা নামে নিজস্ব লিপিরও বিস্তার ঘটতে থাকে দ্রুত। বর্তমান সময়েও জাপানে ক্যালিগ্রাফির কদর ঢের ভালো।

ক্যালিগ্রাফিতে আধুনিক যুগ

উনিশ এবং বিশ শতকে ক্যালিগ্রাফি নবপ্রাণে উজ্জীবিত হয়। উইলিয়াম মরিসের মতো ইংরেজ শিল্পীগণ মনোযোগ দেন এদিকে। মরিস ১৮৯১ সালে প্রতিষ্ঠা করেন কেমস্কট প্রেস। পরবর্তীতে এডওয়ার্ড জন্সটনের মতো আরো অনেকে এগিয়ে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগেই ইংলিশ ও জার্মান ক্যালিগ্রাফির প্রভাব পড়ে আমেরিকায়। শিকাগোতে আর্ট ইনস্টিটিউট এবং নিউ ইয়র্কে কুপার ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বযুদ্ধের পর এই শিল্প আরো বিস্তার লাভ করে। জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে সাধারণের মাঝেও। জাপানে ক্যালিগ্রাফারকে উচ্চ বেতনে চাকুরি দেয়া হয়। শুধুমাত্র ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক ধারণার অনুপ্রেরণা নয়। শিল্পের জন্য শিল্প হিসেবেও ক্যালিগ্রাফি স্থান পেয়ছে। যদিও আধুনিক প্রযুক্তির দৌরাত্মে কোণঠাসাও হয়ে থাকছে কখনো কখনো। ইদানিং মুসলিম দেশগুলোও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে ক্যালিগ্রাফি নিয়ে।

বাংলায় ক্যালিগ্রাফির ব্যাবহার

বাংলা অক্ষর নিয়ে বাঙালীদের ঐতিহ্য চিন্তা ভাষার প্রথম পথচলা থেকেই শুরু। এরপর শুধু প্রয়োজন নয় মিশে আছে আবেগ ও আকুতির সাথে। প্রাচীন পুথি-পত্রে লেখাকে সুন্দর আর অলঙ্কার মন্ডিত করে তোলার প্রয়াস মধ্যযুগে দেখা যায়। মূলত বাংলা ক্যালিগ্রাফির সৃষ্টিও এখান থেকেই শুরু। হাতে লেখা বইয়ের প্রচ্ছদে ব্যবহার হতো বাংলা হরফের শিল্পিত ব্যবহার তারপর ছাপার হরফে বই আসার পর এখনো রয়ে গেছে এর জনপ্রিয়তা। কিন্তু বাংলা হরফ দিয়ে ক্যালিগ্রাফি একেবারেই হাল আমলের। বাংলা চারুকলার ইতিহাসে লিপিকলা বা ক্যালিগ্রাফির কোন ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমান সময়ে বাংলা ক্যালিগ্রাফির যে চিত্র পাওয়া যাত তাতে দুটো ব্যাবহার চোখে পরে।

  • এক- বইপত্রের প্রচ্ছদ এবং ইলাস্ট্রেশন।
  • দুই – লিপিকলা

বইয়ের প্রচ্ছদে ক্যালিগ্রাফি স্টাইলে লেখায় যিনি অগ্রনায়ক তিনি হচ্ছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী। এছাড়াও রয়েছেন শিল্পী হাশেম খান যার তুলির টানে রয়েছে গ্রামীণ ও সরলতা ফুটিয়ে তোলার আলাদা বৈশিষ্ট্য। লিপিকলার ব্যবহার দেখা যায় বেশিরভাগ দেখা যায় হাতে লেখা সাইনবোর্ড ও দেয়াল লিখনগুলোতে। যদিও দুইদশক আগে দেয়াল লিখন আর সাইনবোর্ডের চমৎকার শৈল্পিকতা দেখা গেলেও বর্তমানে সেটা খুবই কম চোখে পরে।স্বাধীনতার আগে থেকে বর্তমান সময়ে বাংলা ক্যালিগ্রাফির চর্চা ও ব্যাবহার হলেও  সময়ের সাথে সাথে পাল্টে গেছে এর ব্যবহার। আধুনিক বাংলা ক্যালিগ্রাফির পেছনে অদম্য পরিশ্রম ও চর্চা করে চলেছেন এমন শিল্পীর সংখ্যাও এখন কম নয়।

Sanjida Sathi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *