হৃদমাঝারে >> তানভীর তুর্য । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প

তানভীর তূর্য রচিত হৃদমাঝারে ছোটগল্পটি ভালোবাসা দিবস – ২০১৯ উপলক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩ এ প্রথম স্থান অর্জন করে।  শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘দেনা পাওনা’  এবং আরিফ মিলনের ‘সন্ধি বিচ্ছেদ’ উপন্যাসটি পুরষ্কার হিসেবে জিতে নেয় গল্পটি।

“আমি সাব্বির ভাইকে কীভাবে যেন ভালোবেসে ফেলেছি। আমার চেয়ে প্রায় পনেরো ষোলো বছরের বড় সাব্বির ভাই যদি এ কথা জানতে পারেন তাহলে বোধহয় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবেন। আমার পেছনে লাগার মাত্রাটাও আরও বেড়ে যাবে। ভাববেন আমার নিশ্চিত মাথা খারাপ হয়ে গেছে এবং অতি শীঘ্রই মানসিক ডাক্তার না দেখালে ভয়ংকর কিছু ঘটে যাবে। কিন্তু আমি অতকিছু বুঝি না। তাকে ভালোবেসে ফেলেছি এটাই বড় কথা।

সাব্বির ভাইয়েরা আমাদের দোতলায় বহু বছর ধরে ভাড়া থাকেন। তবে তাদের বাড়ির কাজ প্রায় শেষের পথে। খুব তাড়াতাড়ি হয়তো নিজেদের বাসায় চলে যাবেন। আমি ছোটবেলা থেকেই সাব্বির ভাইদের দেখে আসছি। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা মোটেও বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার মতো না। তারা আমাদের পরিবারের মতোই। সাব্বির ভাইয়ের মা সুরমা আন্টি আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন। তিনি প্রায়ই বলেন, “তুই আমার আরেকটা লক্ষ্মী মেয়ে।” সাব্বির ভাইয়ের বাবা রহমান আংকেল তো বাইরে থেকে আসার সময় আমার জন্য চকলেট চিপস কিছু না কিছু নিয়েই আসেন। এটা তার অভ্যাস। ছোটবেলা থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে। এত বলি, “আংকেল, আমি তো এখন বড় হয়ে গেছি।” তিনি হাসতে হাসতে বলেন, “আমার কাছে তো হোস নি। যেদিন আমার কাছে বড় হয়ে যাবি সেদিন থেকে আর আনবো না।” সাব্বির ভাইয়ের বোন সাবিহা আপু বলেন, “আমার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর বাবা মায়ের সব আদর তুই খেয়ে নিচ্ছিস। আমার খুব হিংসে হয় রে, তিতলি।” এভাবেই উনারা স্নেহ আদর ভালোবাসা দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রাখেন। আর সাব্বির ভাইয়ের কথা কী বলব। আমার পেছনে লাগাটা উনার দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই পড়ে। আমাকে না জ্বালালে বোধহয় তার ভাত কেন কোনো কিছুই হজম হয় না।

সাব্বির ভাই আমাকে ডাকেন ভেংচি বুড়ি বলে। ছোটবেলায় আমাকে যখন রাগিয়ে দিতো তখন শুধু ভেংচি কাটতাম বলে এই নাম আবিষ্কার করেছেন। সারাদিনে বেশ কয়েকবার তার সাথে দেখা হয়। দেখা হলেই তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলবেন, “কী রে ভেংচি বুড়ি, দিনদিন তো দেখছি গোলআলু হয়ে যাচ্ছিস। দেখিস, গোলআলু থেকে মিষ্টি কুমড়া হয়ে যাস না যেন।”

আমিও চোখ কটমট করে বলি, “আমি মিষ্টি কুমড়া নাকি বরবটি হচ্ছি তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। নিজেও তো দিনদিন জলহস্তির বড় খালু হচ্ছেন, সেদিকে নজর দিন।” সাব্বির ভাই বিরক্তিকর একটা হাসি দিয়ে চলে যান।

একটা সময় সাব্বির ভাইকে প্রচণ্ড অসহ্য লাগতো। তাকে দেখলেই এঁড়িয়ে যেতাম। সাব্বির ভাই খুব ভালো করেই জানতো যে আমি তাকে সহ্য করতে পারি না। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমার পেছনে জোঁকের মতো লেগে থাকতো। নতুন উদ্যমে আমাকে বিরক্ত করা শুরু করতো। এই চুল টেনে দিচ্ছে বা চিমটি কেটে দিচ্ছে কিংবা ভয় দেখাচ্ছে। কত কী বলে গালি দিলেও সে খিক খিক করে হেসে মেজাজ আরও খারাপ করে দিতো। কতরকম দুষ্টুমি যে আমার সাথে করেছে তার ইয়ত্তা নাই। এখন সেই মাত্রা কিছুটা কমেছে হয়তো একটু বড় হয়েছি বলে।

সেই অসহ্য বিরক্তিকর সাব্বির ভাইকেই আমার ভালো লাগতে শুরু করলো। ভাবলেই মনে হয় পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে গেছে। আমার যেদিন এসএসসির রেজাল্ট হলো সেদিন সাব্বির ভাই অফিসে ছিলেন। তিনি ব্যাংকের একজন বড় কর্মকর্তা। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর আমি দৌড়ে গিয়ে বললাম, “সাব্বির ভাই, আমি গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছি।” সাব্বির ভাই ভাবলেশহীন ভাবে বললেন, “ভালো তো। আমি তো ভেবেছিলাম তোর দ্বারা সম্ভব না। সারাদিন তো শুধু ধিতিং ধিতিং করে বেড়াস।” এই কথা শুনে রাগে আমার গায়ে যেন আগুন ধরে গেল। ইচ্ছে করছিল ছাদে নিয়ে গিয়ে ধাক্কা মেরে ফেলে দিই। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিলাম।

হঠাৎ রাত প্রায় এগারোটার দিকে আমি আর আপা গল্প করছি এমন সময় মা এসে বললেন, “চল তো ছাদে। সাব্বির সবাইকে ডাকছে।” আমি তো কিছুতেই যাব না। এমনিতেই মেজাজ খারাপ হয়ে আছে তারপর আবার উনার বকবক শুনলে মাথা আরও খারাপ হয়ে যাবে। মা আর আপার জোরাজুরিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও ছাদে গিয়ে প্রচণ্ড অবাক হলাম। গোটা ছাদ ফুল আর বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। একটা বড় কেক রাখা হয়েছে টেবিলে যাতে লেখা ‘কংগ্রেচুলেশনস তিতলি’। কেকের চারপাশে আমার পছন্দের সব চকলেট আর টেডি বিয়ার রাখা। জীবনে প্রথমবার এতটা অবাক হয়েছিলাম। আমাকে দেখেই সাব্বির ভাই আমার হাত ধরে কেকের সামনে নিয়ে এসে বললেন, “নে, তাড়াতাড়ি কেটে ফেলে আমাকে উদ্ধার কর। সন্ধ্যা বেলায় যেভাবে তাকাচ্ছিলি মনে হচ্ছিলো চোখ দিয়েই ভস্ম করে ফেলবি।” কেন যেন আমার চোখে পানি চলে আসছিল। অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছি পানি আটকাবার। সাব্বির ভাই যদি একবার দেখে ফেলেন তাহলেই মহা সর্বনাশ! সবার সামনেই আমাকে ক্ষ্যাপানো শুরু করবে।

ছাদের সব আয়োজন শেষ করে যখন চলে যাচ্ছিলাম তখন সাব্বির ভাই আমাকে আলাদা ডেকে নিয়ে বললেন, “এই সারপ্রাইজটুকু দিব বলেই তখন ওরকম করেছিলাম। আমি অতটাও খারাপ নই রে ভেংচি বুড়ি। দোয়া করি জীবনে অনেক বড় হ।” এই প্রথম সাব্বির ভাইকে আমার অসহ্য লাগলো না। খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো সাব্বির ভাইয়ের হাত ধরে বলি, “অসংখ্য ধন্যবাদ সাব্বির ভাই। এই রাতটা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় রাত হয়ে থাকবে।”



কিন্তু আমি তা করলাম না। করলেই সাব্বির ভাই আরও ভালোভাবে মাথায় চেপে বসবে। এমনি তো বসেই আছে নামানামির লক্ষণ নাই। আমি শুকনো একটা হাসি দিয়ে চলে আসি। যা খুশি ভাবুক।

রাতের বেলায় ঘুমানোর আগে আমি বারবার সাব্বির ভাইয়ের উপহারগুলো নাড়াচাড়া করতে থাকলাম। আপা দেখে মুচকি হেসে বলল, “সূর্য আজ উত্তর দিকে উঠেছে বোধহয়, নাকি আমিই ভুল দেখছি রে তিতলি! তুই সাব্বির ভাইয়ের দেয়া জিনিস এত আগ্রহ সহকারে দেখছিস ভাবতেই পারছি না।”

আমি কিছু না বলে শুয়ে পড়লাম। অনেক রাত পর্যন্ত আমার ঘুম আসলো না। অন্যরকম এক অনুভূতি আমাকে গ্রাস করতে থাকলো। এই অনুভূতির উৎস কোথায় তা আমার জানা ছিল না।

এরপর কলেজে প্রথম দিন আমাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বাবার। হঠাৎ বাবার কী একটা কাজ পড়ে যাওয়াতে যেতে পারলো না। আমাকে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পড়লো সাব্বির ভাইয়ের ওপর। অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে নামিয়ে দিবেন আর বাবা যেয়ে নিয়ে আসবেন। এ কথা জেনে তো মাথা বনবন করে ঘুরতে লাগলো। সারা রাস্তা বকবক করে কানের পোঁকা বের করে ফেলবে। কী সব বলে মেজাজ গরম দিবে দিয়ে কলেজের প্রথম দিনটাই মাটি। কিছু করার নাই।

অগত্যা আমি আর সাব্বির ভাই রিকশায় উঠলাম। উনি উনার মতো জগতের যাবতীয় কথার ঝুড়ি খুলে বসলেন। আমি ওদিকে কান না দিয়ে চারপাশের কার্যক্রম দেখায় মনোযোগ দিলাম। কলেজ মোড়ে পৌঁছার পর রিকশা থেকে যেমনই নেমেছি ঠিক তখনই একটা ছেলে আমার দিকে ইঙ্গিত করে বিশ্রীভাবে শিষ দিলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখি সাব্বির ভাই এগিয়ে গিয়ে ছেলেটার কলার ধরে কষে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছে। ছেলেটা কোনোরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এক দৌঁড়ে পালিয়ে গেল।

সাব্বির ভাই আমাকে বললেন, “বাইরে যা কিছু হবে আর যে যা করবে সব এসে আমাকে বলবি। একটাকেও আস্ত রাখবো না।”

আমার এত ভালো লাগলো যে বলে বুঝানো সম্ভব না। মনে হলো সিনেমার কোনো দৃশ্যে অভিনয় করছি। আমি নায়িকা আর সাব্বির ভাই নায়ক হয়ে গুণ্ডাদের শায়েস্তা করছে। তারপর থেকে সাব্বির ভাইয়ের ওপর আমার রাগ, অভিমান, বিরক্ত লাগা, অসহ্য লাগা সব কোথায় যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। সাব্বির ভাইকে ভালোবাসতে শুরু করলাম।

সবাই বলে এ বয়সে নাকি এরকম একটু আধটু হয়। কিন্তু আমি শুধু এটাই জানি যে সাব্বির ভাইকে ছাড়া আমার চলবে না। আমি তাকে পাগলের মতো ভালোবাসি। এ কথা সবাই যদি জানতে পারে তাহলে কী যে হবে জানি না। এমনকি সাব্বির ভাই জানলেও তার অনুভূতি ঠিক কী হবে তাও জানি না। এখন সাব্বির ভাইয়ের সবকিছুই আমার ভালো লাগে। তাকে না দেখলে কেমন যেন অশান্তি অশান্তি লাগে। তার জন্য আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি কিনা কে জানে! এখন তিনি যা ই করেন না কেন আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। এক সময় সাব্বির ভাইয়ের যে হাসি দেখলে গা পিত্তি জ্বলে যেত এখন সেই হাসি দেখলে মনে হয় এর চেয়ে সুন্দর হাসি বোধহয় আর কেউ হাসতে পারবে না। তিনি রোজ রাতে ঘুমানোর আগে ছাদে উঠে লুকিয়ে লুকিয়ে সিগারেট খান। আমিও বাহানা দিয়ে ছাদে গিয়ে লুকিয়ে তার সিগারেট খাওয়া দেখি। তিনি যখন ঠোঁট দিয়ে ধোঁয়া ছাড়েন তখন মনে হয় ধোঁয়াগুলো এসে আমাকে বলছে, “এই মেয়ে এভাবে লুকিয়ে আছো কেন? লুকিয়ে থাকলে তো তাকে ছোঁয়া যাবে না। যাও ধরা দাও। আমরা তোমাদের ঘিরে রাখবো। কেউ জানবে না।” আমি ধরা দিতে পারি না। লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখে আবার নিচে নেমে আসি। আমার দেখা শেষ হতে চায় না। মনে হয় সামনে বসিয়ে তাকে দেখতেই থাকি।

এই তো সেদিন সকালবেলা মা আমাকে কী যেন আনতে পাঠিয়েছেন। আমার মনে তো খুশি আর ধরে না এই ভেবে যে সকালবেলা সাব্বির ভাইয়ের সাথে একটু দেখা হয়ে যাবে। এরপর একদম সন্ধ্যা ছাড়া আর দেখার উপায় নেই। গিয়ে দেখি সাব্বির ভাই গলায় গরম পানি দিয়ে অদ্ভুত শব্দ করে গড়গড়া করছেন। সম্ভবত ঠাণ্ডা লেগেছিল। আগে হলে হয়তো ইচ্ছে করতো তার গলা চেপে ধরে বলি, “নেন, জন্মের মতো গড়গড়া করেন। আমাকে দেখে ইচ্ছে করেই এমন শব্দ করছেন, তাই না? অসহ্য।” কিন্তু আমি মুগ্ধ হয়ে সেই দৃশ্য দেখতে থাকলাম। সাব্বির ভাই দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে বলে উঠলেন, “কী রে, মনে হচ্ছে এলিয়েন দেখছিস আর ভাবছিস এ হঠাৎ পৃথিবীতে এসে এরকম শব্দ করছে কেন?” আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। কিন্তু বুঝতে না দিয়ে বললাম, “ধুর! আপনার ওই বিরক্তিকর কার্যকলাপ দেখার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই। আমি আন্টির কাছে এসেছি।”

আমি সাব্বির ভাইকে এসবের কিছুই বুঝতে দিই না। ভান ধরে থাকি যে এখনও তার ওপর আমি চূড়ান্ত বিরক্ত এবং সবসময়ই তাকে আমার প্রচণ্ড অসহ্য লাগে।

তবে আমি তাকে আমার অনুভূতিগুলো জানাবো। যা হবার হবে। ভালোবাসা কখনও লুকিয়ে রাখা যায় না। কোনো ভয় কিংবা সংশয় কিছুই আর কাজ করছে না। আগামী পরশু সাবিহা আপার ছেলে ফারহানের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। আমাদের বাড়িতে এটাই হয়তো সাব্বির ভাইদের শেষ অনুষ্ঠান। এরপর তারা নিজেদের বাড়িতে চলে গেলে তার সাথে দেখা হওয়াটাও একদম কমে যাবে। তখন নিশ্চিত আমি তাকে দেখতে না পেয়ে অন্ধ হয়ে মারা যাব। তাই ঠিক করেছি সেইদিনই সাব্বির ভাইকে সব বলে দিব। তবে মুখে বলবো না। তার জন্য একটা চিঠি লিখে রেখেছি। চিঠিটা পড়লেই সাব্বির ভাইয়ের কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। চিঠিটা এরকম-

প্রিয় সাব্বির ভাই,
আপনি কি জানেন আপনার ভেংচি বুড়ি আপনাকে কেমন করে যেন ভালোবেসে ফেলেছে। নিশ্চয় এই মুহূর্তে আপনার প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে। তাহলে আগে হেসে নিয়ে আবার পড়া শুরু করুন। মিথ্যা মিথ্যি না সত্যি সত্যিই আমি আপনাকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। কতটা জানেন? যতটা ভালোবাসলে ভালোবাসার মহাসমুদ্রে ভাসতে ভাসতে বহুদূর ভেসে যাওয়া যায়। বুকের মধ্যে ভালোবাসার সাহসটুকু একটু একটু করে বেড়েছে বলেই আমি বিশ্বাস করি একদিন আমার আর আপনার বিয়ে হবে। বিয়ের রাতে হাহাকার করা জোছনায় থৈ থৈ করবে চারপাশ। জানালা গলে চাঁদের আলো এসে স্পর্শ করবে আমাদের দুজনকে। আপনি আমার হাত ধরে বলবেন, “এই ভেংচি বুড়ি, বাইরে চল। বাইরের থৈ থৈ করার জোছনায় আজ ডুব দেব।” তারপর দুজনে মিলে হাতে হাত ধরে সেই জোছনায় ডুব দিয়ে অদেখা কোনো জগতে হারিয়ে যাব। রাত বাড়বে। হৃদমাঝারে একটু একটু করে ডুবে যাওয়ার রাত।

সাব্বির ভাই, আপনার কি কখনও এমন বিশ্বাস জন্মাবে?
সমাপ্তিতে
আপনার ভেংচি বুড়ি।



সন্ধ্যা হয়েছে বোধহয়। হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে আছি। সব হাসপাতালেই কেমন যেন একটা দুঃখ দুঃখ গন্ধ থাকে। মনে হচ্ছে সেই গন্ধ এখন আমার নাক দিয়ে প্রবেশ করে মগজের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে। পাশেই মা বসে থেকে কোনো একটা পত্রিকা পড়ছেন। মাঝে মাঝে আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছেন যেন আমি রোস্টের মুরগি, যেকোনো মুহূর্তেই কড়াইয়ে তোলা হবে। মা যে আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছেন তাতে মোটেই অবাক হচ্ছি না। গত রাতে ফারহানের জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলাকালীন যা ঝড় উঠিয়েছিলাম তাতে এভাবে দৃষ্টিপাত করাটা অতি স্বাভাবিক ব্যাপার।

গতকাল সন্ধ্যায় খুশি খুশি মন নিয়ে অনুষ্ঠানের আসরে বসে আছি। পরনে ছিল সাব্বির ভাইয়ের পছন্দের সবুজ রঙের শাড়ি।   একের পর এক অতিথি আসছে কিন্তু আমার সেদিকে মন নাই। আমি শুধু সাব্বির ভাইকে খুঁজছি আর ভাবছি কখন সাব্বির ভাইকে একটু ডেকে নিয়ে তার হাতে চিঠিটা ধরিয়ে দিব। অবশেষে সাব্বির ভাইকে দেখতে পেলাম। তিনিও সবুজ রঙের একটা পাঞ্জাবি পরে আছেন। দেখে তো আমি চোখ ফিরাতেই পারি না। তবে তাকে না দেখার ভান করে বসে থাকলাম। মনে মনে চাচ্ছিলাম সাব্বির ভাই নিজে থেকেই আমার কাছে এসে কিছু বলুক। একটু পরই সাব্বির ভাই কাছে এসে দাঁত কেলিয়ে বললেন, “বাব্বা! তোকে তো আমার নানি নানি লাগছে। বুঝাই যাচ্ছে বড় হয়ে গেছিস। যাই হোক, সুন্দর লাগছে কিন্তু।” এ কথা শুনে খুশিতে ইচ্ছে করছিল মাইক হাতে নিয়ে বলি, “এই যে সবাই শোনেন, সাব্বির ভাই আমার প্রশংসা করেছেন। এখন আমি সাব্বির ভাইকে একটু জড়িয়ে ধরবো।” কিন্তু আমি রাগী রাগী গলা করে বললাম, “সর্বনাশ! আমি তো আকাশ থেকে পড়ে পাতালে ঢুকে যাচ্ছি সাব্বির ভাই। আপনি কিনা আমার প্রশংসা করছেন! আর হ্যাঁ, আপনাকে একটা জিনিস দেয়ার ছিল। ওদিকটাই একটু যাবেন?”

সাব্বির ভাই রহস্যময় ভঙ্গীতে বললেন, “একটু অপেক্ষা কর, যাচ্ছি। তার আগে তোকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।” বলেই তিনি চলে গেলেন। আমি ভাবলাম কোনো বন্ধু টন্ধু হবে হয়তো। কিছুক্ষণ পরই দেখি এক রূপবতী মেয়ে আসলো। তার মুখটা কেমন গম্ভীর। সে যে বিরক্ত হয়ে আছে বুঝাই যাচ্ছে। তাকে দেখা মাত্রই সাব্বির ভাই তাড়াতাড়ি তার কাছে যেয়ে কিছু একটা বললেন। মেয়েটি হাসার চেষ্টা করলো। আমার মনে নানা প্রশ্ন। কে হতে পারে ওইটা? চিন্তা করতে করতেই হঠাৎ সাব্বির ভাই আমাকে হাত ইশারায় ডাক দিলেন। আমি যেতেই মুচকি হেসে বললেন, “তিতলি, কে বল তো এটা?” অনেকগুলো প্রশ্ন চিহ্ন নিয়ে সাব্বির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। ঠিক কতদিন পর সাব্বির ভাই আমার নাম ধরে ডাকলেন হিসেব করতে লাগলাম। তারপর দেখি মেয়েটা উগ্র স্বরে বলল, “এত নাটক করার কী আছে, সাব্বির? সরাসরি বলেই দিলেই তো হয় যে আমরা একটা রিলেশনে আছি। কয়দিন পরই আমাদের বিয়ে হবে।” আমি হতভম্ভ হয়ে একবার সাব্বির ভাইকে দেখি আর একবার মেয়েটাকে। সাব্বির ভাই মুচকি হেসে বললেন, “ও দিশা। তোর হবু ভাবী। আর দিশা, এ হলো তিতলি। তোমার হবু ছোট্ট ননদ।”

আমি তখন ঠিক কী করবো বা কী বলবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। খুব রাগ হচ্ছিল সাব্বির ভাইয়ের ওপর। মনে হচ্ছিলো আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে আর বুকের ওপর কেউ কয়েকশো কেজি ওজনের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। ইচ্ছে করছিল চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলি, “এমন তো হওয়ার কথা ছিল না, সাব্বির ভাই।” আমি ওদের কিছুই বুঝার সুযোগ না দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে এক দৌড়ে আমার ঘরে চলে আসি। চিঠিটা ছিঁড়ে ফেলতে যেয়েও পারি না। ওই চিঠির প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে আমার টুকরো টুকরো আবেগ আর অনুভূতিদের বাস। ভাঁজ করে টেবিলের ওপরেই রেখে দিই। এরপর রাগে ক্ষোভে কষ্টে কোনো একটা কীটনাশক রাখা ছিল ঘরে সেটা এক নিঃশ্বাসে খেয়ে ফেলি। প্রচণ্ড যন্ত্রনায় কুঁকড়ে যেতে থাকি। চোখ ঝাপসা হতে হতে আর কিছুই মনে পড়ে না একসময়।

সকালে যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি চারপাশে কুয়াশার ধুম্রজাল। কিছুই দেখতে পাই না। শুধু বুঝতে পারি বেশ কয়েকজোড়া চোখ আমাকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। একটু পর সবকিছু পরিষ্কার হতেই দেখলাম বাবা মা আর আপা একরাশ উদ্বেগ এবং উৎকণ্ঠা নিয়ে আমাকে ঘিরে বসে আছে। সবাইকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। আমার জন্য সবার উপর দিয়েই বেশ বড়সড় একটা টর্নেডো বয়ে গেছে। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতেই মা অত্যন্ত রাগী রাগী গলায় বেশ কিছু কথা শুনিয়ে দিলেন। এসব কেলেঙ্কারির মানে কী, কারও কথা ভাবলাম না কেন, বড় কোনো দুর্ঘটনা যদি ঘটতো, সাব্বির ভাইদের কাছে মুখ দেখানো যাবে না, সবাই সবকিছু জেনে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার চুপচাপ শুনে যাওয়া ছাড়া কিছুই করার ছিল না।

কেউ বাইরে থেকে নক করছে। মা উঠে যেয়ে দরজা খুলে দিলেন। সাব্বির ভাই দরজায় দাঁড়িয়ে। মা সাব্বির ভাইকে দেখে প্রচণ্ড লজ্জা পাচ্ছেন। সাব্বির ভাই থমথমে মুখে ভেতরে ঢুকে বললেন, “খালাম্মা, আমি একা ওর সাথে একটু কথা বলতে চাই।”

মা দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন। সাব্বির ভাই আমার দিকে তাকালেন কিন্তু হাসলেন না। এই প্রথম বোধহয় এরকম ঘটনা ঘটলো। আমার উঠে বসার শক্তিটুকুও অবশিষ্ট নেই। উনি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে আমার কাছে বসলেন। কোনো কথা বলছেন না। অদ্ভুত নিস্তব্ধতা আমাদের দুজনকে ঘিরে আছে। আমি শুধু তার শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি কিন্তু তার দিকে তাকাতে পারছি না। অন্যদিকে তাকিয়ে আছি। চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে যাচ্ছে। মুছতে ইচ্ছা করছে না।

সাব্বির ভাই নীরবতা ভেঙে বললেন, “এই পাগলামি কেন করলি, ভেংচি বুড়ি? আমার কতটা কষ্ট হয়েছে জানিস? তুই এখনও অনেক ছোট। এই সময়ে এরকম হাজার হাজার উদ্ভট ভাবনার উদয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হ। তখন দেখবি আমার থেকে কত ভালো ভালো ছেলে তোর পেছনে ঘুরছে। এসব চিন্তা আর কখনও মনে আনবি না। তোর চিঠিটা আমার কাছেই আছে। যত্ন করে রেখে দেব। আগামীকাল আমরা চলে যাচ্ছি। ভালো থাকিস।”

সাব্বির ভাই চলে গেলেন। তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না বলে পাশ ফিরে মনে মনে বললাম, “আপনিও সব ভালোগুলো নিয়ে ভালো থাকবেন সাব্বির ভাই।”

সত্যিই সময় থেমে থাকে না। সময়ের দোলনায় দুলতে দুলতে তিনটা বছর কেটে গেছে। তিন বছর পর এই মধ্যরাতে আমি এখন বউ সেজে তার জন্য অপেক্ষা করছি। আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে গেছে।

গত মাসে আপার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর হঠাৎ করেই আমার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। পাত্রটি কে, কার সাথে বিয়ে হচ্ছে এসবের কিছুই আমাকে জানানো হয়নি এমনকি আমিও কাউকে একবারের জন্যও জিজ্ঞেস করিনি। সে অধিকার হয়তো তিন বছর আগের এক ঘটনার জন্য হারিয়ে ফেলেছি। দগদগে ক্ষত শুকিয়ে যাওয়ার মতো করে সাব্বির ভাইয়ের ভূতও মাথা থেকে ধীরে ধীরে নেমে গেছে। কিন্তু আজ বিয়ের আসরে যখন দেখি বর সেজে স্বয়ং সাব্বির ভাই তার চিরচেনা দাঁত ক্যালানো হাসি হাসছেন তখন তো আমি পুরাই হতভম্ভ। এটা কীভাবে সম্ভব হলো তা কিছুতেই আমার মাথায় ঢুকলো না এমনকি এখন পর্যন্ত ঢুকেনি। বিয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এখনও ঘোরের দোলাচলে দুলছি।

সাব্বির ভাই ঘরে প্রবেশ করেছেন। সম্বিত ফিরে ফেলাম। তিনি হো হো করে হাসছেন। আমি অবাক হয়ে তাকে দেখছি। আমার সবকিছু গুলিয়ে যাচ্ছে। তিনি হাসতে হাসতেই বললেন, “তুই যে আমার বউ এটা এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না রে ভেংচি বুড়ি। আমার পিচ্চি বউ।”



আমি চোখ কটমট করে বললাম, “ভালো হচ্ছে না কিন্তু সাব্বির ভাই। একদম হাসবেন না তো। গা জ্বলে যাচ্ছে। আর হ্যাঁ, এসব কী? আমি তো কিছুই বুঝছি না।”

সাব্বির ভাই যথারীতি তার দ্যন্ত বিকশিত করে বললেন, “এই, বর কে কেউ ভাই বলে? আর আমার হাসি যে তোর খুব পছন্দ সেটা আমি ভালো করেই জানি। এই হাসি দেখেই তো ভালোবেসে ফেলেছিলি। অযথা মেজাজ দেখিয়ে লাভ নেই। হা হা হা।”

আমিও ঠোঁট উল্টিয়ে বললাম, “ওরে আমার বর রে! বউকে বুঝি কেউ ভেংচি বুড়ি বলে? আর বললেই হলো যে আপনার হাসি পছন্দ করি। হাসি তো না যেন দাঁতের উদ্যান। হি হি হি। যায় হোক, সব পরিষ্কার করে বলুন তো।”

সাব্বির ভাই হাসি থামিয়ে বললেন, “আমি বালির ঘরের মতো ঠুনকো একটা সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলাম রে। শেষ পর্যন্ত ভেবে দেখলাম, আমাকে তোর মতো ভালো আর কেউই বাসতে পারবে না। তোকেই আমার বড্ড প্রয়োজন। আর তোকে চমকে দেয়ার জন্য বিয়ের গোটা ঘটনাটাই আমার প্ল্যান ছিল।”

একরাশ ভালো লাগা নিয়ে আমি যেন অন্য জগতে চলে যাচ্ছি। আমার চোখ ছলছল করছে। সাব্বির ভাই দেখে ফেললেই আবার কী না কী শুরু করবে। সাব্বির ভাই এসে আমার খুব কাছে বসে আমার হাত ধরলেন। সাব্বির ভাইয়ের স্পর্শ পেয়ে আমি কেঁপে উঠলাম। যেন এই স্পর্শের জন্য বহুকালের অপেক্ষা জমে ছিল। কেউ কোনো কথা বলছি না। নীরবতার মাঝেই সরবতার ভাষা খুঁজে নিচ্ছি। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো গলে আমাদের গায়ে পড়ছে।

হঠাৎ সাব্বির ভাই বললেন, “এই ভেংচি বুড়ি, বাইরে চল। বাইরের থৈ থৈ করার জোছনায় আজ ডুব দেব।” আমি চমকালাম। তিন বছর আগে আমার ছেলেমানুষি কিছু আবেগ দিয়ে তৈরি করা কাল্পনিক দৃশ্যপট আজ সত্যি হয়ে আমার কাছেই ফিরে এসেছে। প্রকৃতি কী অদ্ভুত খেলাই না খেলে!

হাহাকার করা জোছনায় দুজন হাতে হাত ধরে বসে আছি। আমি সাব্বির ভাইয়ের কাঁধে মাথা রেখে মনে মনে বললাম, “জমিয়ে রাখা সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আমি আমার হৃদমাঝারে আপনাকে আগলে রাখবো।”

রাত বাড়ছে। হৃদমাঝারে একটু একটু করে ডুবে যাওয়ার রাত। ”

‘আত্মপ্রকাশে নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা ০২‘ এর প্রথম গল্প >> মাসুদ রানা ও তার দল – আরিফ মিলন

‘আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩’ এ দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী গল্প >> গল্প মেঘেরও ক্লেশ আছে – রুবী ফরায়েজী

হৃদমাঝারে । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প । লেখক পরিচিতি

রচনার ভাগসমূহ

লেখকঃ তানভীর তূর্য
ছোটগল্পঃ হৃদমাঝারে
গল্পের জনরাঃ ভালবাসার গল্প
দেশের বাড়িঃ কাদিরগঞ্জ, রাজশাহী।
পড়াশোনাঃ বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং সমাপ্ত করে এখন জব প্রিপারেশন। পাশাপাশি মাস্টার্সে ভর্তি হতে ইচ্ছুক (২০১৯)।

tanvir-turzo-attoprokash-writter-তানভীর-তূর্য-আত্মপ্রকাশ-নির্বাচিত-গল্প-লেখক
লেখক- তানভীর তূর্য

লেখকের কথা

একটা সময় মনে হতো কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি। নিজেকে আর খুঁজে পাচ্ছি না। নিজেকে আবার খুঁজে পাওয়ার  অদম্য ইচ্ছা থেকেই লেখালেখির শুরু। মনের তৃপ্তির জন্যই লেখালেখি করি। পড়তেও অসম্ভব ভালোবাসি। আমি মূলত ছোট গল্প লিখি। গল্পের মধ্য দিয়েই আমি আমাদের চারপাশের গল্প, জীবনের গল্পগুলোর প্রতিচ্ছবি আঁকতে চেষ্টা করি।

মোঃ ওয়ালীউল্লাহ অলি

http://enlightentricks.com

সমসাময়িক একজন মানুষ। রক্তে মিশে থাকা লেখালেখি থেকেই ব্লগিং এর অনুপ্রেরণা। লিখতে ভালোবাসি। প্রচুর লিখতে হবে, বাঁচতে হলে লিখতে হবে। এই ব্রত মাথায় নিয়েই লিখে চলেছি। বাংলার পাশাপাশি ইংলিশেও ব্লগিং করছি Enlighten Tricks ওয়েবসাইটে।

4 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *