নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে ভয়ানক ক্রাইম জোন হিসেবে পরিচিত একটি জায়গা হলো “হ্যামিলটন সেন্ট্রাল”। কেবল ২০১৪-২০১৬ বর্ষে ৫১৮৭ টি বিভিন্ন দূর্ঘটনার শিকার হয়। তবে এদের মধ্যে প্রায় ৫৭ জন ব্যক্তির নামে নিউজিল্যান্ডের পুলিশের কাছে কেস করা হয়। তবে বর্তমানে, এই ২০১৮ সালের মধ্যে ৫৩ জন সাজাপ্রাপ্ত হয়। ২ জন মারা গিয়েছে। অার একজন বর্তমানে সিরিয়ায় অাছে। কিন্তু বাকি একজন। হ্যাঁ মাত্র একজন ব্যক্তি এখনো বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যার হাতে প্রায় ৫৬ জন মেয়ে, যাদের মধ্যে ৪-৭ বছরের মেয়ে অাছে ২৯ জন, ৮-১২ বছরের মেয়ে ১৭ জন, এবং কলেজের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বয়সী ১০ জন মেয়েকে নৃশংসভাবে ধর্ষন ও গোপনাঙ্গ, স্তন কেটে ফেলেছে। অনেক মেয়ের দেহের চোখ, ঠোট, নিতম্ব, গোপনাঙ্গের পুরো অংশ, এবং স্তন দেহ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ভাবে পাওয়া যেতো কোনো জলাশয় কিংবা কোনো লেকের পাড়ে। তবে প্রত্যেকের দেহে নতুন পোশাক ও পরিষ্কার দেহে পাওয়া যেতো। মনে হতো মাত্র গোসল করে উঠেছে। তাছাড়া বিভিন্ন বয়সের যুবক, কিশোর খুন হয়েছে প্রায় ১০০ এর কাছাকাছি। অনেকের বুকের অঙ্গ থাকতোনা। অনেকের চোখ, কিডনি, এমনকি অনেক কিশোরের দেহে প্রচন্ড অাঘাতের দাগ এবং লিঙ্গ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া যেতো। অনেককে ইলেকট্রিক শকের মাধ্যমে পুরো কালো, পুড়ে যাওয়া দেহ কোনো ডাস্টবিনে পাওয়া যেতো। তবে অনেক ক্ষেত্রে তাদের ধর্ষণ করা হতো।
একবার না, কয়েকবার সরকারি বিভিন্ন সংস্থা এই মানসিক বিকৃত, সেক্সুয়াল মানসিক বিকারগ্রস্থ সাইকো কে ধরিয়ে দেবার জন্য পুরষ্কারের ঘোষণা করে। কিন্তু সমস্যা এই যে, এই ঘটনা ছড়ানোর পর অনেক পরিবার বরং আরো ভয় এবং ঘাবড়ে গিয়েছে। এতে করে আরো বেশি খুন হতে লাগলো। তবে সমস্যা হলো বিকার গ্রস্থ পশুটা পুরো নিউজিল্যান্ডেই চষে বেড়ায়। যার জন্য কে কোন জায়গায় তার টার্গেট হবে, কেউই বুঝতে পারেনা। তবে কেউ মিল খুজে পেলে সর্বোচ্চ বুঝতে পারে এতুটুকই যে পশুটা কেবলই তাদের ধরে যারা নিজেদের নিয়ে খুবই খুশি এবং বাবা মা এর কাছে প্রচুর অত্যাচারিত। অর্থাৎ যারা বাবা মা এর কাছে, অত্যাচারিত হবার পরেও নিজেদের নিয়ে খুব খুশি। প্রতিটি দিনের জন্য তারা প্রস্তুত। এমন কেউই হয়ে উঠে পশুটার শিকার। ২০০৭ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ সে রহস্য। ২০১৮ এর জুন মাসে সে সর্বশেষ খুন করে। এখন সে নতুন কিছু খুজছে। তার নাম ব্রাসি লুকো।
সাইকো মানে টুটুল এখন খুজছে নিজের কিছু বাকি জীবন রহস্য। সে এখানে এসেছে এক বাগানের মালির জন্য। যে কিনা একসময় উইলস সেন্ট ক্যামব্রিজ টি এস ই, উইলিংটন এর বাগানের প্রধান মালি হিসেবে কাজ করতো। তবে হ্যাঁ সে কোনো সাধারণ মানুষ নয়। তার আরেকটি পরিচয় হলো সে হচ্চে একজন অতি উচ্চ পদস্থ এক্স-গোপন এফ.বি.আই সদস্য। গত ২৬ বছর ধরে এই জায়গায় বাস করছেন। নিজের ডিপার্টমেন্টের সবচেয়ে সিনিয়র সদস্যের নিকৃষ্ট প্ল্যানিং জানার পর চাকরী ছেড়ে পালিয়ে চলে অাসেন। তাদের প্রধান লক্ষ্য মুসলিম দেশগুলোতে তাদের এজেন্টদের পাঠিয়ে দেয়া হয়। অামেরিকার বিভিন্ন জায়গায় তারা নিজেরাই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষ্ফোরণ ঘটিয়ে তাদের নিজেদের হাজার খানেক নিরীহ মানুষ মারবে। তাপর টার্গেট করা মুসলিম দেশের থেকে তাদের এজেন্টরা দুইটি ভিডিও মিডিয়ায় প্রকাশ করবে। এবং তাদের ধরতে হামলা চালানো হবে সেই দেশে। তারপর শেষ করা হবে মুসলিম জনপদ।
কিন্তু যখন সে সিরিয়ায় যায়, তখন সেখানকার এক বোমা হামলায় সে আহত হয়। এক মুসলিম পরিবার তাকে নিজস্ব সর্বোচ্চ দিয়ে সেবা করে। তখন সে জানতে পারে তাদের ধর্মে কখনো কোনো অসুস্থকে ফিরিয়ে দেবার নীতি নেই। সেদিন থেকে সে মুসলিমদের ব্যাপারে জানতে থাকে। ৫ মাসের মধ্যে রাসুল (স) এবং ইসলামের অনেক কিছু জানার পর সে সরাসরি হেড কোয়ার্টারে জানিয়ে দেয়, সে মুসলিমদের কোনো ক্ষতি করতে পারবেনা। তারপরেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। এবং দেশদ্রোহী সিল লাগিয়ে তাকে হত্যার হুকুম করা হয়। তখন থেকেই সে পালিয়ে বেড়ায়। তার বাবা একজন উদ্ভিদবিজ্ঞানী ছিলো। তাই ছোটো থেকেই গাছপালার ব্যাপারে ভালো অাগ্রহ তার। তাই গাছের দিক থেকে কোনো সমস্যা হয়নি।
যাই হোক, মূল ঘটনায় অাসি। তার সাথে দেখা করতে এসেছে সাইকো। তার জীবনের রহস্য জানতে। স্বপ্নে বাবা দুইবার এসেছিলো সাইকোর। কারণ সাইকোর মধ্যে রয়েছে কিছু প্রকৃতি প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা। সে স্বপ্নে বাস্তব দেখতে পারে। সেখানে তার বাবা এফ.বি.আই এর সদস্যের কথা বলেছিলো। তার কাছে গেলে সে জানতে পারবে এক গোপন কথা। তবে সেটা তার জীবন রহস্য। মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখতে হবে তাকে। মারতে হবে তার মতোই কোন পাপাত্মাকে। সে অাছে নিউজিল্যান্ডে। সেই পাপাত্মার বাসকৃত ভূমিতে। তারপরেই সাইকো চলে এলো এখানে।
(৩)
বর্তমানো সাইকো আর মোহাম্মদ রহিম রহমান অর্থাৎ সেই এফ.বি.অাই সদস্য ((পূর্বে তার নাম ছিলো টমাস মোরলে লুসিফার)) একটি রুমে বসে অাছে। সাইকোই শুরু করলো।
সাইকোঃ আপনি কি জানেন? জীবন রহস্য কি? তাতে কে অাছে এমন পাপাত্মা যার ভয় এই ভূমিতে প্রতি রাতে মানুষের অন্তরের মাঝে জেগে উঠে?
রহিমঃ তেমন অনেকেই অাছে। তোমার কাকে চাই?
সাইকোঃ এমন একজন যাকে এখনো কেউ ধরতে পারেনি। যাকে খুজে বেড়াচ্ছে সমগ্র জাতি!
রহিমঃ বলতে পারবোনা। অনেক খুন, গুম, ধর্ষণ হয় এখানে। এই দেশের ৬৮% বাচ্চা জারজ। প্রতি ১ সেকেন্ডে ৯ টি খুন, ৫ টি ডাকাতি হয়। এর মধ্যে কাকে চাইছো তা জানিনা। এবং কেউই বলতে পারবেনা।
সাইকোঃ তার জন্ম এই দেশের “দ্যা নাইবারহুড” নামক এক জায়গায়। তার মূল রহস্য সে এখনো মানুষের বাহিরের কেউ। তাকে পেতে হলে পিশাচ হতে হবে। তাকে অনেকে খুজছে! সে নাকি মানুষই নয়। সে একজন সাইকো।
রহিমঃ সে কি মেয়ে, ছেলে খুন, ধর্ষণ করেছে? গোপনাঙ্গ বিচ্ছিন্ন করেছে? সে কি এখনো তোমার কাছে ধোয়াশা?
সাইকোঃ জ্বি!
রহিমঃ তবে তার ব্যাপারে শুনো। তার নাম ব্রাসি লুকো। তার অনেক কিছুই মানুষ জানেনা। শুধু জানি সে একটা যৌনবিকৃত জানোয়ার। তাকে কেউ সঠিকভাবে দেখেনি। আসলে যারাই দেখেছে তাদের মধ্যে ৩ জন ব্যতীত কেউই বেঁচে নেই। তবে তাদের সবাই জীবিত থেকেও মৃত। কেবল একটি ছেলে বেঁচে অাছে। তার মৃত্যুর সময় কোনো কারণে বাড়ির মেইন লাইনে অাগুন লাগে। সে কারেন্টের শক থেকে বেঁচে যায়। সে শুধু মাত্র তার চেহারার খানিকটা বলতে পেরেছিলো। তারপর চিৎকার দিয়ে কোমায় চলে যায়। তবে তাকে দেখলে মনে হয় না সে এতো নিকৃষ্ট। হয়তো উত্তম ব্যক্তিত্ব তার!
সাইকোঃ ধন্যবাদ। অার কিছু কি জানেন?
রহিমঃ হ্যা। তবে নিশ্চিত নই। যতদূর জানি সে তার নিজের বাড়িতে প্রতি ক্রিসমাসে ঘুরতে যায়। প্রতি ডিসেম্বরে সে তার বাবা মা এর স্মৃতিগুলোকে দেখতে যায়।
সাইকোঃ যথেষ্ট। অসংখ্য ধন্যবাদ। তবে একটা প্রশ্ন! এতো কিছু জানার পরেও তাকে কোনো পুলিশ ধরতে পারছেনা কেনো?
রহিমঃ কারণ পুলিশের কাজ সরকারের সেবা দেয়া। এই সাইকো সরকারের কিছু মন্ত্রীর কাজ করে তাই। আর তাছাড়া তার গোপনীয়তার ব্যাপারে মানুষের কেবল ধারণাই অাছে। সঠিক তথ্য নেই। ২০১৫ তে তার বাড়ি প্রায় ১০০ জন গোয়েন্দা ঘিরে রেখেছিল প্রায় পুরো নভেম্বর, ডিসেম্বর মাস। তবুও কেউ তার হদিস পায়নি। ক্রিসমাস শেষ হবার পরেরদিন দুইজন অফিসার যখন সেই বাড়িতে ঢুকে, দেখে সেখানে কেক, ক্যান্ডেল, গিফট অার একটা কাগজ পড়েছিলো। যাতে লিখা গিফটটি তোমাদের জন্য। যখন গিফট খোলে তখন দেখে দুইটি কাটা মাথা। মাথা দুটি হলো যারা এই বাড়ির খবর দিয়েছিলো তাদের। আর বক্সে লিখা ছিলো। “তোমরা পারবেনা ধরতে। ধারণার থেকে বের হও। খবরের কথায় বিশ্বাস করোনা। আমি মারণ নেশার বাদশাহ। আমার মতো কেউ আসলে তবেই ধরতে পারবে আমায়।”
তারপর রহিম বলে উঠলো। এরপর অনেক গোপনীয় সংস্থা মাথা নাড়া দিলেও কোনো এক বাধার কারণেই তারা দমে যেতো। কিছু কিছু পুলিশ ব্যক্তিগত রাগ মেটাতে একা নামলেও তাদের অবস্থা সেই কিশোরদের মতো হতো। এরকম সংখ্যাও নেহাত ৪০ এর কম নয়।
তবে তুমি অাসবে, তা অামি স্বপ্নে দেখেছিলাম। হয়তো যে এসেছিলো সে তোমার বাবা। তোমার জন্য এই আমেরিকান ৯ মি.মি. রিভলবারটি তুলে রেখেছিলাম। এটা নেও
সাইকো কিছু না বলে একটা ৯মি.মি. রিভলবারটি হাতে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে।
(৩)
বর্তমানে সাইকো এক প্রাইভেট মহিলা গোয়েন্দার সামনে বসে অাছে। তার নাম স্যামিরো অলিভ। বয়স সাইকোর চেয়ে বেশি গেলে ৬/৭ বছরের বড় হয়তো।
সাইকো কে, বা কি তার উদ্দেশ্য কেউ জানেনা। কারণ সে সবকিছুতেই গোপনীয়তা রেখেছে। সে জানেনা এই দেশ, শহরের ব্যাপারে। তার নেই কোনো উপদেষ্টা। যেমনটা একসময় ছিলো গডফাদার। কিন্তু এখন সে একা সব করছে। তাই সাইকো হয়েও সে শিকার খুজে বেড়ায় মানুষের সাহায্য নিয়ে।
অলিভের সাথে একটা জিনিস নিয়ে আলোচনা করতে চায় সাইকো।
তা হলো সে সাইকোকে কেবল এতটুকু বের করে দিবে, সেই পশুটার সমস্ত খুনের লিস্ট, জায়গা, ব্যক্তিদের নাম।
সাইকো এই কাজ নিজে করতে পারবে। তবে প্রচুর সময় লাগবে। তাই সে অলিভের মতো একজনকে কাজে লাগাচ্ছে, যার কিনা পুরো দেশে শ খানেক গোয়েন্দা খদ্দের অাছে। অলিভের যেমন রয়েছে অপ্রতিভ সুন্দর দেহ, তেমনি তার বক্ষ,নিতম্বের জুড়ি যেনো এই গোটা শহরে নেই।
ব্রাসি লুকোর যৌন পিপাসার্ত ব্যক্তিত্বকে নাড়া দিয়ে অলিভ ব্রাসি লুকোকে নিজের দিকে টেনে অানবে।
অলিভ ব্যক্তিগতভাবো জড়াতে চায়নি। কিন্তু সাইকোর চোখের মায়া ছাড়াতে পারেনি। তাই করে দিতে হবে। সে ভালো করেই জানে, এমন করা মানে নিজের বিপদ নিজে দাওয়াত দেয়া। তবুও সাইকোর চোখের ক্ষমতা উপেক্ষা করতে পারেনি।
অলিভ ১০ দিন সময় চায়। অাজকে ডিসেম্বরের ১৯ তারিখ। সে ২৯ তারিখ পর্যন্ত সময় চাইছে। সাইকো বলে উঠলো ৭ দিন। এর বেশি না।
এই বলে চলে গেলো সে।
এরপর নিজের হোটেলে ফিরে সে অপেক্ষা করতে লাগলো। কিছু জিনিস গোছাতে লাগলো। সে কি করছে? সে তো পুলিশ নয়, যে এসব করবে খুবই দক্ষতার সাথে। সে তো শুধু করেই যাবে। মৃত্যু তার কিছু করলে করবে। সেটা সে ভয় পায়না।
সাইকো ভালো করেই জানে অলিভের মতো বাচ্চা গোয়েন্দা কিছুই জানতে পারবেনা। অলিভ কেবলই এই মরণ খেলার এক মহরা। পশুটাকে খুজতে তাকেই সব করতে হবে।
সে ভাবছে তার নাম জানতে পারাটাও জয়ের প্রথম ধাপ। অলিভ সব খবর দিতে পারবেনা। বরং বিপদে পড়বে সাইকো সেটা ভালো করেই জানে। সাইকো চায় ও বিপদে পড়ুক। কেননা অাজকে রাতের পর সাইকো অলিভের বাড়ির উল্টো পাশের একটা বাড়ি ভাড়া করেছে। সে জানতে ও বুঝতে চায়। তাই সব হবে। এবার সে গুছিয়ে নিলো সব।
কালকের সূর্য উঠার অপেক্ষা।
(৪)
২৯-১২-২০১৮
দ্যা নাইবারহুডের একটি পুরোনো বাগান বাড়ির মধ্যে পড়ে রয়েছে দুটি দেহ। যেখানে প্রত্যেকটি দেহের চোখের দিকে তাকালেই মনে হয় যেনো এখনো পুরো জীবিত। তবে বাস্তবে একটি লাশ ও একটি অর্ধমৃত অাহত ব্যক্তি বসে আছে। তবে লাশটিকে দেখলে মনে হয় এখনি উঠে বসবে অার তান্ডব চালাবে। জানোয়ারটার বুকে মধ্যে ৪ টি বুুলেট পাওয়া যাবে। হাতের বিভিন্ন জায়গায় চাকুর দাগ, দেহে মোট ১৮ টি কোপ পড়েছে। ডান চোখ উপড়ো গিয়েছে। বাম পা এর হাটুর নিচে জয়েন্ট অালাদা হয়ে গেছে। মাথার ঠিক মধ্যিখানে থেকে এখনো রক্ত বের হচ্ছে। দুটি বুলেট ঢুকে গিয়েছে। গলার স্বর যেখান থেকে বের হয় সেই ভোকাল যন্ত্রটি কাটা। আর অন্যদিকে দেয়ালে পিঠ ঠেস দিয়ে বসে অাছে সাইকো। তার দেহের অন্তত ১০ টি হাড় ভেঙ্গে গেছে। সাথে তার বুকের বাশ পাশে প্রায় ১০ টি অাঙ্গুল গর্ত করে ফেলেছে এমন অবস্থা। তার হাতে রডের বাড়ির দাগ। হাড়টা ভেঙ্গে গিয়েছে। টেবিলের ভাঙ্গা কাচের টুকরো বাম কানের লতি থেকে গাল পর্যন্ত ঢুকে রয়েছে। রক্ত পড়ছে। সে ক্লান্ত বড্ড বেশি ক্লান্ত। পিঠে ৩ টি চুরির পোচের আঘাতের দাগ, যেগুলো থেকে রক্তের চিহ্ন দেয়ালে বসে যাচ্ছে। সাইকো চোখ খুলে শুধু দেখছে। সে পেরেছে। পাপাত্মাটাকে মারতে। তবে তার ইচ্ছা ছিলো জানোয়ারটাকে তার অাগের শিকারের মতো মারতে। অবশ্য জানোয়ারটা সাইকোর মতোই। এই শালাও একটা সাইকো। তবে ও আসল সাইকো। হতে পারে?
(৫)
গত ৫ দিন পার হয়ে গিয়েছে। কোন খবর পায়নি তেমন! সাইকো ঘরে বসে শুধু নিজের হাতের স্প্রিং চাকু শুটার যন্ত্রটি ধার দিচ্ছে। সে অপেক্ষায় অাছে। কখন খুনের সমগ্র তথ্য পাবে। অার নাম। হঠাৎ কি একটা তার মাথায় এলো। সে দ্রুত কাপড় পাল্টে বের হয়ে গেলো। “নাইবারহুডের” দিকে যাচ্ছে। পুরো এলাকাটা প্রায় ১৭ বর্গকিলোমিটার জুড়ে অাছে। সেখান থেকে একটি বাড়ি যেখানে প্রতি ক্রিসমাসে পশুটা যায়। সাইকো ভালো করেই বুজতে পারে একটা বিকারগ্রস্থ মানুষ কেমন পরিবেশ পছন্দ করবে। তারা প্রধানত দুই প্রজাতির।
প্রথম জাত, যারা মানুষের কোলাহলের মধ্যেই থাকবে কিন্তু এমনভাবে যাতে কেউ সন্দেহ না করে। যেমনটি ছিলো “টেড বান্ডা”।
দ্বিতীয় হলো “জ্যাক দ্যা রিপার”। সমাজ বিচ্ছিন্ন।
পশুটা যেহেতু পুরো দেশের বিশাল অংশে শিকার করে, তাই সে বিচ্ছিন্ন নয়। সে কোলাহলের মাঝে থেকেই সব করে। সে শুধু এতটুকু বুঝতে চায় কোথায় সে এমন বাড়ি পাবে যেখানে রাত হলে সব অমাবস্যার সৃষ্টি হয়। সেখানেই খুজে পাবে।
তাই সে বর্তমানে নাইবারহুডের পুলিশের কাস্টমসের প্রধানের বাড়িতে গেলো। সেখানে সে নিজেকে একজন গোয়েন্দা হিসেবে পরিচয় দেয়। সাইকো জানায় তাকে মূলত একজন সরকারদলীয় লোক ব্যক্তিগতভাবে ঠিক করেছে। সে অনুসন্ধান করে যতটুকু জেনেছে নাইবারহুডে পশুটার বাড়ি।
কাস্টমস প্রধান এমন কথা শুনে ভাবতে লাগলো, যেহেতু সরকার দলীয় ভাবে একজন গোয়েন্দা ঠিক করেছে, এবং সে এতকিছু জানে, সুতরাং নিশ্চয়ই অত্যন্ত বড় মাপের গোয়েন্দা সে। তাই তাকে সে সাহায্য করলে হয়তো তার প্রমোশন পাক্কা। তাই সে নির্ভীকভাবে বলতে লাগলো।
জ্বি। আপনার সাহায্য করতে পারি। তবে তার জন্য অফিসে যেতে হবে। সেখানে ফাইলে হয়তো তার তথ্য অাছে।
সাইকোঃ তাহলে চলুন। এবার অনেকদিন পর সাইকোর চোখে সেই মৃত্যুর সুশীতল চাহনি ভেসে উঠলো। সে পুলিশের ডেটাবেস থেকে ব্রাসি লুকোর ৫ টি ফাইল নিলো। নাইবারহুডে বিভিন্ন মর্মান্তিক, নৃশংস খুনের কেস এসেছে প্রায় ৩২ টি। প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে কিছু একটা মিল পাওয়া যায়। তবে সন্দেহজনক থেকেই যায়।
সাইকো জিজ্ঞেস করলো লুকোর কেস নিয়ে অর্থাৎ তার সমস্ত খুনের তথ্য একসাথে কারো কাছে পাওয়া যাবে কিনা?
কাস্টমস অফিসার বললো, যতদূর জানি গত দুই বছর অাগে একজন যুবক পুলিশ অফিসার লুকোর কেসটার প্রায় অনেক কিছুই সংগ্রহ করে খোলাসা করে। তবে তা প্রমাণ ও লুকোকে ধরার অাগেই সে নিহত হয়। তার দেহ তার বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন টুকরো ও খন্ড খন্ড ভাবে পাওয়া যায়। সেই দৃশ্য দেখে পরিবারের সদস্যরা সেই শহর ছেড়ে চলে যায়। তার বাসা এখান থেকে ২৬ কিঃমিটার দূরে নর্থ ক্যারোলিন ব্লকের ১৩ নম্বর বাড়ি। এখান থেকে যেতে প্রায় ৩০ মিনিটের মতো লাগবে!
সাইকোঃ ধন্যবাদ। তবে ব্যাপারটা গোপন থাকলেই অাপনি সুরক্ষিত থাকবেন। যদি লুকো জেনে যায়, তবে বুঝতেই পারছেন।
অফিসারঃ বুঝতে পেরেছি। অামি পুরো ব্যাপারটি সামলে নেবো।
সাইকো ফাইলগুলো গাড়িতে নিয়ে চললো সেই তরুণ পুলিশের বাড়িতে।
অাধ ঘন্টা পর সে বাড়ির সামনে এসে দাড়ালো। হুমম। দেখলেই বুঝা যায়,দুই বছর ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে অাছে বাড়িটি। আশেপাশের অনেক বাড়ি খালি। বাড়ির ভেতরে ঢুকে সাইকো সরাসরি বুঝতে পারলো কেউ এসেছিলো। কারণ তার সামনে তরতাজা রক্ত ভর্তি ব্যাগ, ও রয়েছে অলিভের কাটা দেহের বিভিন্ন টুকরো এবার বুঝতে বাকি নেই। লুকো খুব দ্রুতই সামনে অাসতে চলেছে। সাইকো পৈশাচিক হাসি দিয়ে উঠলো। সেখানে কিছু তথ্য দেয়া। যেখানে একটি ঠিকানা দেয়া ও রয়েছে ডাইরি। তাতে লেখা জীবনের গল্প।
সাইকো বুঝলো, চারদিন পর এক মৃত্যুযজ্ঞের ভয়ানক যুদ্ধ হবে। প্রস্তুতি বড় হবেনা।
(৬)
গত ৬ দিন অাগে ব্রাসি লুকো তার শহর দ্যা নাইবারহুডে ফিরেছে। সে জানতে পেরেছে বাইরের কোনো এক গোয়েন্দা তার পিছু নিয়েছে বহুদিন পর। সে রক্তের ঘ্রাণ নিতে ব্যাকুল হয়ে উঠেছে কেননা বহুদিন রক্তের অার কামনার স্বাদ পায়নি। এবার পাবে। তবে এবার মাংসগুলো রেখে দিবে। শিকারগুলোকে ধীরে ধীরে মারতে পারেনা। সবগুলো খুব দ্রুত মরে যায়। কেবল জোয়ান ছেলে, অার পুলিশ ছোকরাগুলো শক্তি সামর্থ্য দিয়ে টিকতে পারে। তাদের মেরে মজা পায়। লুকো খবর পেয়েছে তাকে মারতে বাংলাদেশ থেকে কেউ এসছে। এবার তাহলে বাহিরের স্বাদ পাবে। গত ৬ বছর রাজনৈতিক নেতাদের কাজ করতে করতে নিজের সব চাহিদা বঞ্চিত হয়েছে। এবার এটাকে নিজের জন্য মারবে। তারপর তার দেহের সব অঙ্গ, মাংস খুটিয়ে খুটিয়ে খাবে। গাছের খাল, বাকল দিয়ে পেটাবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই রোবটের মতো ঘাড়টাকে ঘুরাতে লাগলো। আর জিহবাটা চাটতে লাগলো।
তবে প্রথমে সেই মহিলা গোয়েন্দাটাকে মারবো। কেননা সে তার ভাতারদের দিয়ে অামাকে খুজছে।
ব্রাসি মনে মনে বলে উঠলো, কেউ অামাকে অন্যের কাছে না খুজে শয়তানের কাছে অাবেদন করলেই পারে। আমি শয়তানের মতো তার কাছে পৌছে তাকে অামার দেখা দিবো।
অামি শয়তান।
আয়নায় নিজের চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেলো ব্রাসি লুকো। এই চেহারার জন্যই তো তার মা বাবা তাকে পেটাতো। কুকুরের সাথে খেতে দিতো। তার প্রতিবেশি সেই মেয়ে যাকে সে খুব ভালোবাসতো তার সাথে মিশতে দিতোনা। তাকে শয়তান বলতো সবাই। বলতো সে নাকি কাপুরুষ, অলক্ষূণে। সে নাকি তার মা এর জারজ শয়তান পুত্র। তার মা পিশাচ সিদ্ধ। শয়তানের সাথে মিলন ঘটিয়েই নাকি তার জন্ম। প্রতি মুহূর্তে মানুষের সেই কথা এখনো লুকোর কানে বাজে। তাই তো নিজের শয়তানী শক্তি দিয়ে সবার অাগে সেই মেয়েকে সে খুন করে। তারপর পালিয়ে যায়। যাবার আগে সে দেখে তার মা দরজায় দাড়িয়ে তার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে অাছে। সেই তাকানোতে অার্তনাদ নয়, বরং ছিলো বেঁচে থাকার আশা।
পালিয়ে যাবার পর দুইদিন সে এক ডাস্টবিনের ময়লা খেয়ে ছিলো। তারপর এক বিড়াল তাকে দেখে মিয়াও মিয়াও করতে থাকে প্রচন্ড শব্দে। লুকোর মনে হয় বিড়ালটি তাকে শয়তান, অাগ্রাসী বলে তাকে ডাকছে। লুকোর মাথায় রক্ত চেপে যায়। সে তার হাতের কাছে থাকা টিনের বক্স নিয়ে বিড়ালের পেটে ঢুকিয়ে দেয়। তারপর একের পর এক কোপাতে থাকে। নিজের আগ্রাসী ভাব মিটাতে বিড়ালের সাথে যৌনতা ঘটায়। তারপর বিড়ালের দেহ থেকে মাংস কেটে খায় পেটের ক্ষুধা অার মনের রাগ মেটাতে। তখন সে অার সাধারণ নয়। সে হয়ে উঠে মাংসলোভী তাজা রক্তের এক ভয়ানক পিশাচ। এক সাইকো।
এখনও প্রতিরাতে সে অসহ্য যন্ত্রনায় ভোগে। সে যখন কোনো মানুষকে অপমানিত হয়েও সুখী থাকতে দেখে, সহ্য হয়না। সে পারেনি, তারা কেনো পারবে। তাই সে খুন করে। মেয়েদের সে ভয় পায়, ঘৃণা করে। কারণ তার জীবনে সবচেয়ে বড় অভিশাপ তার মা। তার মা তাকে জন্ম দিয়ে এই সমাজে সত্যিটা বলেনি। সে বাড়ি থেকে পালানোর ২ বছর পর যখন সে তার নিজ বাড়িতে ফিরে যায়। তখন তার মা দিব্যি তার নতুন স্বামীর সাথে সংসার করছে। তাদের ঘরে রয়েছে তাদের অনাগত মেয়ে সন্তান। বাচ্চাটা সত্যিই অমায়িক। কিন্তু লুকোর সহ্য হলোনা। সে তাদের বাসায় ঢুকলো। পিছনের দরজা দিয়ে। ঢোকার অাগে যেই কুকুরের ঘরে তাকে বেধে রাখতো, সেটি নেই। সেখানে পুরোনো জিনিস রাখার রুম হয়েছে। কুকুরটি একমাত্র তাকে পছন্দ করতো। যখন কুকুরকে মাংস দিতো, কুকুরটি সেখান থেকে কিছুটা লুকোকে দিতো। সুন্দর করে রুমে ঢুকে যায়। কেউ টের পায়নি। এবার সে তার মা এর রুমে ঢুকে দেখে তারা স্বামী স্ত্রী বাচ্চাটার দোলনা ঘিরে খেলছে বাচ্চাটার সাথে। এবার তার কান্না পেলো। ভয়ানক কান্না। তবুও সে চুপ রইলো। কিছুক্ষণ পর লুকোর মা রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ালো। এই সুযোগে লুকো রুমে ঢুকে হাতের ধারালো চাকু দিয়ে তার সৎ বাবার গলাটা কেটে দেয়। গরগর করে রক্ত পড়তে থাকে। তারপর বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে দুই পা ধরে টান দিয়ে চিড়ে ফেলে দেয়। দুই টুকরা করে ফেলে। তারপর অপেক্ষা করে তার মা এর ফিরে অাসার। ১০ মিনিট পর তার মা ফিরে এসে এসব দেখে শকড হয়ে যায়। তারপর ধড়াম করেরে মাথার পিছনে কিছু একটার অাঘাত অনুভব করে। অজ্ঞান হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে দেখে চেয়ারে বাধা। তার মাথার উপরে বাচ্চা অার স্বামীর দেহ ঝুলছে। রক্ত পড়ছে টপটপ করে। এটা দেখে রাগে লুকোর মা এর সমগ্র রাগ লুকোর দিকে গিয়ে পড়লো। মুখ থেকে থুতু বের করে মারলো। তারপর বললো এখনও অামার জীবন নরক করতে কেন বেেঁচে অাছিস? লুকো ঠান্ডা মাথায় শুধু চেয়ে রইলো।
তারপর লুকো জিজ্ঞাসা করলো তার মাকে?
লুকোঃ কেন, কেন আমাকে এত অত্যাচার কষ্ট দিলে? আমি কি অপরাধ করেছিলাম? কেন আমাকে দুনিয়া শয়তান, অভিশপ্ত বলে? তোদের পাপের জন্য অামি কেন অাজ পিশাচের জীবন পাচ্ছি?
ধীর গলায় বললো, উত্তর দেও!
মাঃ বলছি। শোন তাহলে! তুই আমার গর্ভের নিকৃষ্ট পাপের ফসল। তোকে অামি জন্ম দিতে চাইনি। তোকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। তোর বাপের ছিলো অগাধ সম্পত্তি। যতদিন পর্যন্ত তোর বাপের সাথে ছিলাম। তোর বাপ অামার দেহটাকে কুড়ে কুড়ে খেত। কেবলই টাকার জন্য ছিলাম তোর বাপের কাছে। এহ ন্যাকা ছিলো। ভালোবাসি তোমায়। বাল চাল কথা বলতো। বিরক্ত লাগতো। পুরুষ মানুষ হবে পশুর মতো। কিন্তু তোর বাপ ছিলো হিজড়া। দেহের কোনো কাজে অাসেনি। শুধু টাকার জন্যই পড়ে ছিলাম। এরপর তুই দুনিয়াতে আসার খবর শুনে তোর বাপ কি খুশি। সে কি জানতো যে তার মতো হিজড়ার বাপ হবার ক্ষমতা নেই। আমিও সন্তান চাইতাম না। কিন্তু তখন আমার প্রেমিক জনসন ম্যালির অসাবধানতার কারণে অামার পেটে জন্ম দেয় তোকে। কিন্তু বাচ্চা হলে সেই সম্পদ বাচ্চা পাবে যতদিন না ১৮ বছর বয়স হয়। তার মানে আমার আর তোর বাপের সম্পদ পাওয়া হবেনা। তাই তোকে এবোরেশন করাতে যাই। কিন্তু ডাক্তার বলে তুই শূয়োরের বাচ্চা অামার পেটে এমন ভাবে অাছিস, যে কোনো অপারেশন করলে আমি মারা যাবো। তাই তোকে দুনিয়াতে আনতে হয়। তাও দুনিয়াতে এলি শূয়োরের মতো মুখ নিয়ে। দেখলেই গা ঘিন ঘিন করে!
লুকোঃ তাহলে আমার বাবা কই?
মাঃ সে বাইঞ্চুতকে সম্পদ নিয়ে খুন করেছি। আর আমার আসল পুরুষকে বিয়ে করেছি। দেখেছিলি আমার বাচ্চা কি দারুণ ছিলো? কিন্তু তুই তাকে মেরে ফেললি। তোর ভালো হবেনা।
লুকোঃ ভালো তো কোনোদিনই হয়নি। তবে তোর দেহের জ্বালা যাতে কোনোদিন না উঠে। তাই তোর সেই ব্যবস্থাই করছি।
এই বলে লুকো চাকু হাতে তার মা এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তার মা আর্তনাদ করছে তাকে ছেড়ে দিতে।
লুকা অার কিছু বলতে না দিয়ে গলায় চাকুটা ঢুকিয়ে দেয়। গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে। তারপর সে তার দেহের কাপড়গুলো চাকু দিয়ে মাংস সহ কাটতে থাকে। তারপর তার মা এর স্তন, গোপনাঙ্গ সব খুবই নৃশংস ভাবে কুপিয়ে কাটতে থাকে। আর বলতে থাকে তোর এতো জ্বালা, নে মিটা তোর জ্বালা। কত ক্ষমতা তোর দেখবো এই জায়গায়। তারপর তার দেহে পেট্রোল ঢেলে অাগুন ধরিয়ে দেয়। বাচ্চাটাকেও জ্বালিয়ে দেয়। অার স্বামীকে বাথটাবে পানিতে চুবিয়ে ইলেকট্রিক তার বাথটাবে ছেড়ে দেয়।
এরপর থেকেই লুকোর শুরু হয় জীবনের সমগ্র নৃশংসতা।
(৭)
সাইকো, অলিভের অঙ্গগুলো নিয়ে চুপচাপ তার ঘরে চলে যায়। সেখান থেকে বিভিন্ন অস্ত্র তার দেহের কাটা অঙ্গে বসিয়ে বসিয়ে মাপ নিয়ে দেখে কোন ধরণের অস্ত্র দিয়ে খুন করেছে। সে খুজে পায় তিন ধরণের অস্ত্রের মাপ। তারপর সাইকো সেগুলো নিয়ে নেয়। এবার সে তার টিক কিট ব্যাগ থেকে বের করে সেই স্প্রিং শূটিং, কিছু ক্লোরোফর্ম, অার ৯ মি.মি. রিভলবার যা কিনা রহিম দিয়েছিলো। সাথে পড়ে নেয় তার জামা। যা কিনা বুলেট প্রুফ। সাথে কিছু ড্রোন, যাতে মাইক্রোচিপ অাছে। যেই চিপগুলো ঘাড়ে শক্ত হয়ে বসে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মেরে ফেলে।
সাইকো প্রস্তুত। সে তার ঠোটের কোণায় সেই নিঃস্তব্দ মৃত্যু কুহেলিকার হাসি দিয়ে উঠলো। চোখ যেনো পুরো শার্প। যেনো চোখের দৃষ্টি দিয়েই পুরো যুদ্ধের দলকে ঘায়েল করতে পারে।
সে যাত্রা শুরু করলো দ্যা নাইবারহুডের ১৩ নং বাড়ির দিকে।
(৮)
৪০ মিনিট পর সাইকো বাড়ির সামনে দাড়ালো। তার মুখে জোকারের মুখোশ। এখন রাত ১:৩০। তার পরনে রয়েছে বিশার বড় কোর্ট, জোকারের মুখোশ, হাত গ্লাভস, পায়ে বুট জুতো। সে জানে লুকো পালাবেনা। সে দোতলায় বসে থাকবে। কারণ সাইকো ঠিক তাই করতো। টুটুল ভাবনা চিন্তা কম করে দোতলায় উঠে গেলো। তার ধারণা সঠিক প্রমাণ করে দোতলার রুমে চিমনিতে অাগুন জ্বালিয়ে সিগারেট খাচ্চিলো লুকো। তার বসার চেয়ারের সামনে একটি কাচের টেবিল, তার অপরপাশে বসার অন্য চেয়ার। সাইকো চুপ করে বসলো। তাদের উভয়েই মরণ নেশার খেলোয়ার। এবার সাইকো বলে উঠলো,
সাইকোঃ কি করতে চাও? মৃত্যু না যুদ্ধ?
লুকোঃ তুমি যা করতে, অামিও তাই করবো!
এবার দুজনের ঠোটেই এক ভয়ানক কুৎসিত হাসি ফুটে উঠলো। লুকো নরখাদকের মতো তার বিশাল জিহবাটা ঠোটে চাটা দিতে দিতেই নিজের মাথা ঢেকে রাখার কালো কাউ বয় টুপি সরায়। অার তার বীভৎস্য চেহারাটা দৃশ্যমান করে। সাইকোও উঠে দাড়ায়। তারপর মুখোশ খুলে ফেলে। হঠাৎই চেয়ারের পিছন থেকে লুকো তার হাটার স্টিক বের করে এবং তা একটা বাটন চাপ দিয়েই বিশাল ধারালো চাকুর মতো কিছু হয়ে উঠে। সেটা দিয়েই অাঘাত করতে যায় সাইকোকে। সাইকো নির্বিকার ভাবে সরে গিয়ে তার পা দিয়ে কাচের টেবিলে লাথি মারে। তারপর এক মুহূর্তেই নিজের পকেট থেকে একটা চাকু বের করে লুকোর বুকে ঢুকিয়ে দেয়। লুকো ব্যাথায় একটু চিন করে উঠে। তারপরেই তার স্টিক দিয়ে ধাম করে একটা বাড়ি দেয় সাইকোর হাতে। স্টিলটি এতোটাই মজবুত অার দৃঢ় যে, এক বাড়িতেই সাইকোর হাতের হাড় ফেটে যায়, এমন অবস্থা। তারপরেও নির্বিকার ভাবে সাইকো উঠে দাড়ায়। সে গিয়ে তার হাতের কাছে একটা ফুলদানি তুলে নেয়। সেটা ফিক্কা মারে লুকোর মুখ বরাবর। লুকো মাথা নুইয়ে ফুলদানি থেকে বাচলেও সাইকোর হাতের ঘুষি থেকে বাঁচতে পারেনি। মৃত্যুর পথযাত্রী যখন কেউ হয়, তখন সব বাঁচার পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাই লুকোর হাত থেকে তার স্টিক পড়ে যায়। সাইকো এই সুযোগে লুুকোর বুকের উপর এলোপাথাড়ি লাথি, পাড়া, দিতে থাকে। তার পকেট থেকে একটা চাকু বের করে যেই লুকোর বুকে বসাতে যাবে। লুকো পিছনে থেকে পা উঠিয়ে লাথি মেরে সাইকোকে ফেলে দেয়। তারপর তার স্টিক তুলে নিয়ে সরাসরি সাইকোর পিঠের মধ্যে দুইটা পোচ দেয়। ভাঙ্গা টেবিলটা উঠিয়ে ধাম করে সাইকোর বুকের উপরে ফেলে দেয়। তারপর নিজের হাটু দিয়ে সটাং করে সাইকোর মুখের ঝামি বরাবর খুবই সজোরে লাথি মারে। লাথির চোটে সাইকো মাথা গিয়ে দেয়ালের সাথে বাড়ি খায়। তারপর লুকো তার বিশাল হাত মুঠ করে খুব জোরে সাইকোর বুকের পাজর বরাবর এক ঘুষি মারে। এক ঘুষিতেই সাইকোর ৪ টি বুকের হাড় ভেঙ্গে যায়। তারপর সাইকোর অন্ডকোষ ও লিঙ্গে দুই তিনটা লাথি মারে। ভাঙ্গা টেবিলের পা খুলে সাইকোর ডান হাতের ব্যাথার জায়গায় অারো দুইটা বাড়ি মারে। হাতটা ভেঙ্গেই যায় সাইকোর। তারপর তার রাগ মেটাতে তাকে উল্টো করেরে শুইয়ে চেয়ারটা তুলে নেয় মাথা ছেচে দেবার জন্য। কিন্তু ততক্ষণে দেহের ব্যাথা সহ্য হয়ে যায় সাইকোর। উঠে দাড়ায় সে। তারপর পকেট থাকা এন্টিকাটার চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি লুকোর পিঠে কোপাতে থাকে। ততক্ষণে প্রায় ১৮ টি কোপ দিয়ে ফেলেছে। লুকো পড়ে যায়। কিছু সময় পর লুকো ধীর পায়ে উঠে দাড়ায়। এবং সে চিমনির ভেতরে থেকে একটা জ্বলন্ত কাঠ তুলে নিয়ে ঘুরে দাড়ায়। কিন্তু তা দিয়ে মারতে পারেনি। ততক্ষনে তার বুকের ভেতর দিয়ে ৪ টি গুলি ভেদ করে চলে যায়। লুকো মাটিতে পড়ে যায়। সাইকো এবার চেয়ারে ভর দিয়ে উঠে দাড়ায়। লুকোর সামনে গিয়ে তার মুখের দিকে তাকায়। হঠাৎই চোখ খুলে উঠে এবং সাইকো মানে টুটুলের মুখে ঘুষি মেরে উঠে। তারপর সাইকোর বুকের উপর উঠে নিজের দশ অাঙ্গুল দিয়ে সাইকোর বুকে গেথে দেয়। যেন হাতের অাঙ্গুল দিয়েই তার বুকের মাংস তুলে নেবে। টুটুলের বুকে ১০ টা অাঙ্গুল ঢুকে হাড়ের স্পর্শ পাচ্ছে সে। সাইকো দুই হাত দিয়ে কোনোমতে ফেলে দেয় লুকোকে। লুকো অাবার হাতের কাছে সাইকোর চাকুটা পেয়ে যায়। সেটা নিয়ে উঠেই পোচ দিয়ে বসে সাইকোর পিঠে। ব্যাথায় টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যায়। অার তখনি ভাঙ্গা কাচের টুকরো কানের লতি অার গাল কেটে ঢুকে যায়। সেখানে থেকে তা একটু বেশি ঢুকলে চোখটা নষ্ট হয়ে যেতো। তারপর লুকো অাবার দৌড়ে মারতে অাসলে সাইকো হাতের স্প্রিং শুটার দিয়ে একটা তীর শ্যুট করে। তীরটি লুকোর বাম চোখ বেধ করে বেড়িয়ে যায়। চোখের ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ে যায় লুকো। তারপর হাতড়ে থাকা রিভলবার নিয়ে লুকোর ঠিক কপালের মধ্যিখানে গুলি চালায় সাইকো। গুলি খাবার পরেও কিছু সেকেন্ড তড়পাতে তড়পাতে মরে যায়। তবে তার ডান চোখটা দেখলে মনে হবে সে জীবিত। মুখে যেন হঠাৎ উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে লুকোর। ঠোটের কোণে যেনো তৃিপ্তর হাসির রেখা দেখতে পাচ্ছে। ব্যাথায় অার কোনোদিকে খেয়াল করলোনা সাইকো। পড়ে রইলো দেয়ালে পিঠ ঠেস দিয়ে।
(৯)
দুইদিন পর,
অাজ ৩১ ডিসেম্বর। সাইকো প্লেনে বসে অাছে। তার হাতে ব্রাসি লুকোর জীবনের ডায়েরি। যাতে তার সব কিছু লেখা। তার জীবনে মোট অন্যায় হয়েছে ২১৩ টি। সব লেখা। কেনো সে এমন তাও লেখা।ডায়েরিটা হাতে নিয়ে সিটে হেলান দিলো টুটুল।
বর্তমােন একটাই খবর সমগ্র টিভি, সংবাদে। ভয়ানক সিরিয়াল কিলার ব্রাসি লুকোর মৃত দেহ পাওয়া গিয়েছে তার নিজের বাড়িতে। তবে ভয়ানক ব্যাপার এই যে তার লিঙ্গ ও জিহবাটি কাটা ছিলো।
তবে আশ্চর্যজনক ব্যাপার এই যে তার চামড়ার উপরে খুবই ভয়ানক ভাবে লেখা সাইকো!!!!!!!!!
তারপর পুরো দেহে অাগুন জ্বালানো, বিভিন্ন জায়গায় ইলেকট্রিক শকের দাগ।
শুধু চেহারাটি খুব সুন্দর করে পরিষ্কার করে ধোয়া। যেনো কোনো পবিত্র মুখ।
তবে বুকের ভেতরে হৃদপিন্ডে, কলিজা ও ফুসফুসের মধ্যে সবাই চামড়ার লেখাটা পড়লো। তখন বুঝলো, শয়তানের মৃত্যু শয়তানই করেছে। সেই শয়তানের নাম সাইকো।
সাইকো বনাম ব্রাসি লুকো । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প । লেখক পরিচিতি
লেখকঃ মোঃ টুটুল ইসলামের
ছোটগল্পঃ সাইকো বনাম ব্রাসি লুকো
গল্পের জনরাঃ থ্রিলার/রহস্য গল্প
দেশের বাড়িঃ চাঁদপুর
পড়াশোনাঃ ঢাবি অধিভুক্ত ৭ কলেজে পড়াশোনা করছি, ২০১৮।
লেখকঃ মোঃ টুটুল ইসলাম
নিজের ব্যাপারে বলতে গেলে বলবো। খুবই নিছক সাধারণ মানুষের মতো থাকতে খুবই ভালোবাসি। নিজেকে কখনোই জাকজমকতায় পছন্দ করিনা। শখের বশে জাদু করি। এবং মাঝে মাঝে কি বোর্ডে কিছু অক্ষর লিখি। এই বেঁচে থাকতে হবে বলেই বেঁচে থাকা।
1 Comment
[…] […]