শেষ পর্বের শুরু বুক রিভিউ । মিনহাজ মজুর । রিভিউয়ার – আবির হাসান হাসান
মিনহাজ মঞ্জুর রচিত ‘শেষ পর্বের শুরু’ বইটির রিভিউ নিয়ে, আবির হাসান হাসান ‘নহলী গ্র্যান্ড রিভিউ প্রতিযোগিতা‘য় অংশ নিয়ে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। আবির হাসান হাসাম ‘শেষ পর্বের শুরু বুক রিভিউ’ টি নিয়েই আত্মপ্রকাশের এই আয়োজন।
বই: শেষ পর্বের শুরু
লেখিকা: মিনহাজ মঞ্জুর
পৃষ্ঠা: ১৬০
মুদ্রিত মূল্য: ৩০০ টাকা
বর্তমান বিক্রয় মূল্যঃ ১৬০/- (৪৩% ছাড়) (এপ্রিল, ২০১৯)
অনলাইন প্রাপ্তিস্থান: নহলী বুকস
রিভিউয়ারঃ আবির হাসান হাসান
শেষ পর্বের শুরু বুক রিভিউ । মিনহাজ মজুর । কাহিনী সংক্ষেপ
রচনার ভাগসমূহ
পড়ালেখার পাট চুকিয়ে আর দশটা ছেলের মতই আজাদ মোটামুটি বেকার দিনাতিপাত করতে থাকে । বাবা চাকুরীর জন্য নিয়মিত উঠে পড়ে লাগাতে বাধ্য হয়ে এক সময় চাকুরীর বাজার নেমে পড়তে হয় । কিন্তু রেজাল্ট তেমন একটা আহামরি না হওয়াতে চাকুরীটা আর হয় না । এর মাঝেই বন্ধু সামসু’র মাধ্যমে খান প্রোপার্টিজের মালিক আলমাস খানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে একটা চাকুরী পেয়ে যায় । এরপর না চাইতেই বিশাল এক ক্ষমতা এসে যায় তার হাতে । ছোট একটা মিথ্যের কারণে ধীরে ধীরে সে-ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ে ।
ভেতরের দৃশ্যপটে বেরিয়ে আসল এমপি সমশের আলী,কানা সিরাজুল,খুনী রাম দা কালাম,দারোযান শের আলী,ফাইয়াজ সহ আরও অনেকে । গভীর রাতে আজাদের বাড়িতে হামলা হয় । দিনে দুপুরে তারা দুই বন্ধুর ওপর আক্রমণ করে বসে মুখোশধারী একদল সন্ত্রাসী । আলমাস খানের মৃত্যুর জন্য কেউ একজন উঠে পড়ে লেগেছে, কিন্তু ক্যানো? শেষ পর্যন্ত আজাদ কি অপরাধ জগৎ থেকে ফিরে আসতে পারবে ? এই রকম অনেক গুলো টুইস্ট ছড়িয়ে রয়েছে পুরো উপন্যাস জুড়ে ।
শেষ পর্বের শুরু বুক রিভিউ । পাঠ প্রতিক্রিয়া
‘মিথ্যা’ শব্দটা শুনতে যতটা ছোট্ট আর হালকা লাগে আসলে কিন্তু শব্দটার ওজন অনেক অনেক বেশি । একবার ‘মিথ্যে’ নামক শব্দের বেড়াজালে আটকে গেলে সেখান থেকে বের হওয়া বেশ মুসকিল । মিথ্যেকে সত্য বলে জাহির করতে হলে একের পর এক অনর্গল মিথ্যা বলে যেতেই হয় । কিন্তু কথায় আছে না ‘সত্য কখনো চাপা থাকে না’। ঠিক একটা সময় সত্য প্রকাশিত হয়ই । ঠিক তাই, আজাদও সেই মিথ্যেকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করেও সফল হয় নি । উল্টো ব্লাক মেইলের স্বীকার হয়ে অনেকগুলো অন্যায়ে নিজেকে ছড়িয়ে নিয়েছে ।
বইটা পড়ার সময় একটা টান অনুভব করছিলাম । যে টান উপেক্ষা করার ক্ষমতা হয়তো কোন পাঠকের নাই । যত চরিত্র বেড়েছে গল্পের প্রতি তত আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে । যত এগিয়েছি ভাললাগা দ্বিগুণ হারে বেড়েছে । পুরো উপন্যাস জুড়ে হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য থমকে গিয়ে কয়েক মুহূর্ত শুধু ওই জায়গাটাতে চোখ বুলানোর মত তেমন কোন পয়েন্ট না থাকলেও একটা পর্ব শেষের পর পাঠককে পরের পর্বে টেনে নেওয়ার মত যথেষ্ট টুইস্ট ছিল । পুরো উপন্যাস জুড়েই টুইস্টের ছড়াছড়ি ।
সত্য কথা বলতে এই উপন্যাস পড়ার আগে মরণোত্তর অর্গান দানের ব্যাপারে আমি কিছুই জানতাম না । নিঃসন্দেহে এটি ভাল একটি কাজ । আমাদের আশেপাশেই কত শত মানুষ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর অভাবে কত কষ্টের জীবনযাপন করতে । কারো হয়তো কিডনি সমস্যা,কারো হার্টের সমস্যা, লিভার, কর্ণিয়া সহ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ গুলোর অভাবে অনেক মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না । অন্যদিকে এসব চিকিৎসা বেশ ব্যয় বহুল হওয়াতে মধ্য আয়ের একটা দেশের সিংহ ভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই চিকিৎসার কথা ভাবা অনেকটা দুষ্কর । সেখানে আলমাস খানের পরিকল্পনাকে সাধুবাদ জানাতেই হয় । যিনি কিনা অর্গান দানের পাশাপাশি ট্রান্সফারের সমস্থ খরচ নিজে বহন করেছন । আমাদের সমাজে উনার মত মানুষের ভীষণ প্রয়োজন ।
আজাদ ও সামসুর বন্ধুত্বটা দেখে সত্যি বলতে একটু হিংসে হচ্ছিল বাস্তব জীবনে আমার এরকম কোন বন্ধু নাই বলে । একটু কষ্টও হচ্ছিল । সামসু যেভাবে আলমাস খানের সামনে বসে একের পর এক মিথ্যের দোকান খুলে বসেছিল এই জায়গা ক্যানো জানি খুব ভাল্লাগছে ! ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করে কানা সিরাজুলকে সরিয়ে দেবার প্ল্যানটুকুও ভাল ছিল । যদিও তা অপরাধের আওয়াভুক্ত,তারপরও !! আমাদের বাস্তবিক জীবনেও সিরাজুল কিংবা রাম দা কালামের মত মানুষের অভাব নেই ।
একক থিমের গল্প কখনও সার্থক উপন্যাস হয়ে ওঠে না । এই বোধ থেকেই হয়তো গল্পে প্রিয়ন্তি চরিত্রের আর্বিভাব । লেখক সাহেব যেভাবে বর্ণনা করে গেছেন তাতে যে কেউ প্রিয়ন্তির উপর ক্রাশ খেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না । কোন এক শীতের কুয়াচ্ছন্ন সকালে শিশির ভেজা পথে পা ভিজিয়ে কিছুটা পথ হেঁটে প্রিয়ন্তির দিকে লাল গোলাপ বাড়িয়ে দিয়ে হাত ধরে বাকিটা পথ চলার স্বপ্ন দেখাটা কি খুব বেশি অন্যায় হবে ?
‘শেষ পর্বের শুরু’ বইটা দারুণ একটা প্যাকেজ ছিল আমাদের জন্য । ধন্যবাদ ‘নহলী’ এবং মিনহাজ মঞ্জুর ভাইকে ।
মুদ্রিত মূল্য: ৩০০ টাকা
বর্তমান মূল্যঃ ১৬০/- টাকা (৪৩% ছাড়ে)
প্রাপ্তিস্থান: নহলী বুকস