টমাস আলভা এডিসনের উক্তি । অনুপ্রেরণা ও জীবনবোধ
মার্কিন উদ্ভাবক এবং ব্যবসায়ী টমাস আলভা এডিসন ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আবিষ্কারের তালিকা বেশ দীর্ঘ। তন্মধ্যে রয়েছে গ্রামোফোন, বৈদ্যুতিক বাতি, ভিডিও ক্যামেরাসহ অনেক আবিষ্কার রয়েছে। তাঁর এসকল আবিষ্কার বিংশ শতাব্দীতে আলোড়ন ফেলেছিল এবং জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। তাঁর নামে ১০৯৩টি মার্কিন পেটেন্ট রয়েছে। এছাড়াও ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিতেও তাঁর পেটেন্ট রয়েছে। যোগাযোগ এবং টেলিযোগাযোগ খাতে তাঁর অনবদ্য অবদান ও আবিষ্কারগুলোর জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। ধারণযোগ্য সংগীত ও ছবি, স্টক স্টিকার, ভোট ধারণকারী যন্ত্র, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারিসহ বিদ্যুত উৎপাদন ও বণ্টনের ধারণা এবং প্রয়োগ এডিসনের হাত ধরে এসেছে। তিনি শুধুমাত্র আবিষ্কারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না, নামীদামি ব্যবসায়ীও ছিলেন। গুণী এডিসন ১৯৩১ সালে মৃত্যুগ্রহণ করেন। জীবন, সাফল্য ও প্রেরণা নিয়ে ট্মাস আলভা এডিসনের উক্তি ও বাণী নিয়ে আত্মপ্রকাশের আজকের আয়োজন।
টমাস আলভা এডিসনের উক্তি ও বাণী সমাবেশ
টমাস আলভা এডিসন তাঁর যুগের জন্য যেসব যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছিলেন, তা বর্তমানের জীবন ব্যবস্থাকে সহজ ও সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর আবিষ্কারের হাত ধরেই তা আরও উন্নত হবে। তাঁর জীবন চলার পথে তিনি নানা কথা বলেছেন, যেগুলো উক্তি আকারে এসেছে। সেসব টমাস আলভা এডিসনের উক্তি ও বাণী নিম্নরুপ।
রচনার ভাগসমূহ
টমাস আলভা এডিসনের উক্তি ও জীবনবোধ
টমাস আলভা এডিসনের জীবন সরল ছিল না। তিনি সংগ্রামের মাঝেই বড় হয়েছেন। তাঁর সেই আঁকা বাঁকা জীবনের নানা অভিজ্ঞতাই উক্তিতে ফুটে উঠেছে। টমাস আলভা এডিসনের বাণী ও উক্তিগুলো নিম্নরুপ।
“জীবনে অসফল হওয়া এমন অনেক মানুষই আছেন যারা এই জিনিসটা বোঝেননা যে, যখন তারা হার মেনে নিয়েছিল তখন তারা সফলতার কতটা কাছে ছিলো।”
“ব্যস্ত থাকার অর্থ সর্বদা, বাস্তবে কাজ করাকে বোঝায় না।”
“যদি আমরা সেইসব প্রত্যেকটা জিনিসকে করি; যেগুলো আমরা করতে সক্ষম, তাহলে আমরা সত্যিই নিজেকে বিস্মিত করে দেবো।”
“অহিংসা, উচ্চ নৈতিকতার দিকে পরিচালিত করে । যেটা ক্রমিক বিকাশের একমাত্র লক্ষ্য । যতদিন না আমরা সবাই সকল জীবিত প্রানীদের ক্ষতি করা না ছাড়ব, ততদিনই আমরা জংলি থাকবো।”
“আমি আমার জীবনে একদিনও কাজ করিনি, এইসবই মনোরঞ্জন ছিলো।”
“ব্যাকুলতা হলো অসন্তোষে, আর অসন্তোষ হলো প্রগতির ক্ষেত্রে প্রথম আবশ্যক জিনিস । আপনি আমাকে যেকোনো সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট ব্যক্তিকে দেখান আর আমি আপনাকে একজন অসফল ব্যক্তি দেখিয়ে দেবো।”
“আপনার মূল্য এটার মধ্যে যে, আপনি কি আছেন নাকি এটার মধ্যে, আপনার কাছে কি আছে।”
“আমি এই তথ্যে গর্বিত যে, আমি কখনো হত্যা করানোর জন্য অস্ত্রের আবিষ্কার করেনি।”
“সবথেকে ভালো চিন্তা, নির্জনে করা সম্ভব আর সবথেকে বেকার চিন্তা, অশান্ত পরিবেশে।”
“শরীর, নিজের অসংখ্য কোষ বা বাসিন্দাদের দ্বারা তৈরী একটা সম্প্রদায়।”
“কোনো চিন্তার মুল্য, সেটার ব্যবহারে নিহিত আছে।”
“আপনি যেইরকমের, সেটাই আপনার কাজের মধ্যে দিয়ে প্রদর্শিত হবে | আপনাকে আলাদা করে কিছুই বলতে হবেনা।”
“মহান বিচার, মাংসপেশীতে উৎপন্ন হয়।”
“আমি জানি, এই দুনিয়া অনন্ত জ্ঞান দ্বারা শাসিত হয় | আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে আর যেইসবের অস্তিত্ব আছে, এটা প্রমান করে যে এর পিছনে অসংখ্য নিয়ম আছে | এই তথ্যকে অস্বীকার করা যায়না | এর নিজের সঠিকতা, গাণিতিক প্রকৃতির।”
“আমরা কোনো জিনিসের, এক শতাংশের ১০ লক্ষ্য ভাগের সম্বন্ধেও কিছুই জানিনা।”
“যতটা মানুষের ক্ষমতা আছে, তার থেকে অধিক সুযোগ আছে।”
“বেশিরভাগ মানুষ, যারা কোনো চিন্তাকে বিকাশ করতে থাকে | তারা ততক্ষণ অবধিই কাজ করে, যতক্ষণ না সেটা অসম্ভব বলে মনে হয় | এরপর তারা হতাশ হয়ে যায় – এটা সেই জায়গা নয়, যেখানে হতাশ হওয়া উচিত।”
“৫ শতাংশ মানুষ চিন্তা করেন, ১০ শতাংশ মানুষ এটা চিন্তা করে যে তারা চিন্তা করে | আর বাকি ৮৫ শতাংশ লোক, চিন্তা করার থেকে মরতে বেশি পছন্দ করে।”
“সমস্ত জিনিসের জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে।”
“মাথায় বুদ্ধি কম ছিলো কিন্তু অসংখ্যবার ভুল করার কারণে তা বেড়ে অসংখ্য গুণ হয়ে গিয়েছে।”
“কাল আমার পরীক্ষা। কিন্তু এটা আমার কাছে বিশেষ কোন ব্যাপারই না, কারন শুধুমাত্র পরীক্ষার খাতার কয়েকটা পাতাই আমার ভবিষ্যৎ নির্ধারন করতে পারেনা।”
“আমি এটা অনুসন্ধান করি যে, দুনিয়ার কি প্রয়োজন | তারপর আমি আগে এগোই আর সেটার আবিষ্কার করার চেষ্টা করি।”
“প্রকৃতি বাস্তবে ভীষন অদ্ভুত, শুধু মানুষই বাস্তবে বেইমান হয়।”
“আমি নেতিবাচক পরিণামও প্রাপ্ত করতে চাই | এটাও ইতিবাচক পরিণামের মতো মূল্যবান হয়ে থাকে | আমি সবথেকে ভালো কাজের বস্তু ততক্ষণ পাবোনা, যতক্ষণ না আমি সেইসব বস্তুকে খুঁজে না পাবো যেগুলো কাজকে ভালোভাবে করতে দেয়না।”
“ যে সংগীত ভালোবাসে, তার জীবনে নিঃসঙ্গতা থাকে না। ”
“বেশিরভাগ মানুষ সুযোগকে নষ্ট করে দেয়, কারণ এটা অদৃশ্য অবস্থায় থাকে আর কাজের মত দেখায়।”
“শরীর, নিজের অসংখ্য কোষ বা বাসিন্দাদের দ্বারা তৈরী একটা সম্প্রদায়।”
জীবন ও জীবনবোধ সম্পন্ন অন্যান্য মনীষীদের উক্তি ও বাণী নিম্নরুপ।
সাফল্য নিয়ে এডিসনের উক্তি
সাফল্য নিয়ে তিনিই কথা বলতে পারেন যিনি সফল। এডিসন এক্ষেত্রে মানবজাতির সফলতা নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি সত্যিকারের যোগ্যতা রাখেন। সাফল্য নিয়ে টমাস আলভা এডিসনের উক্তি ও বাণী নিম্নরুপ।
“যেকোনো জিনিস যেটা বেচা যাবেনা, সেটাকে আমি আবিষ্কার করতে চাইব না। সেটার বিক্রি হওয়া উপযোগিতার প্রমান, আর উপযোগিতাই হলো সাফল্য।”
“আমি কোনো কিছুই দুর্ঘটনাবশত করিনি, না আমার কোনো আবিষ্কার দুর্ঘটনার বশে হয়েছে সেগুলো কাজের মাধ্যমে এসেছে।”
“আমি সবচেয়ে বড় খুশি আর নিজের উপহার পাই সেই কাজে, যাকে দুনিয়া সফলতা বলে।”
“দূর্বল মানুষরা, প্রত্যেক কাজকে অসম্ভব বলে মনে করে কিন্তু বীরেরা সেটা সাধারণ বলে মনে করে।”
“আমাদের সব থেকে বড় দুর্বলতা হলো, পরাজয়কে স্বীকার করে নেওয়া | সফল হওয়ার সবথেকে নিশ্চিত উপায় হলো, সর্বদা আরো একবার প্রয়াস করো।”
“অনেক মানুষ ব্যর্থ হয়েছে শুধু হার মেনে নেয়ার কারণে। অনেকেই হার মেনে নেয়ার সময়ে বুঝতেও পারেনি তারা বিজয়ের কতটা কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।।
সাফল্য নিয়ে অন্যান্য সফল মনীষীদের উক্তি নিম্ন্রুপ লিংকে।
প্রেরণা ও উপদেশ সম্পর্কিত এডিসন উক্তি
সফলতার একটা পর্যায়ে তিনি তাঁর বিভিন্ন ভাষণে মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। পাশাপাশি উপদেশ দিয়েছেন জীবন গড়ার। টমাস আলভা এডিসনের উপদেশ নিম্নরুপ।
“আমি অসফল হয়নি, আমি শুধু ১০০০০ এমন সব উপায় খুঁজে বার করেছিলাম যেটা কাজ করেনা।”
“প্রতিভা, এক শতাংশ প্রেরণা আর নিরানব্বই শতাংশ পরিশ্রমের দ্বারা গঠিত।”
“জীবনে যেকোনো কিছুকে অর্জন করতে গেলে, এই তিনটে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের প্রয়োজন – কঠোর পরিশ্রম, দৃঢ়তা এবং সাধারণ জ্ঞান।।
“উদ্ভাবনের জন্য, আপনার একটা ভালো কল্পনা আর অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপের প্রয়োজন হবে।”
“কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প হয়না।”
“আমি সেখান দিয়ে শুরু করি, যেখান দিয়ে শেষ ব্যক্তি ছেড়েছিলেন।।
“একটা মহান Idea যদি পেতে চাও তাহলে প্রচুর idea-এর ব্যাপারে ভাবো।”
“যখন আপনি সব সম্ভাবনাকে শেষ করে দিয়েছেন | তখনও আপনি মনে রাখবেন – আপনি তা করেননি।”
“সর্বদা একটা Better উপায় থাকেই”
“ কারো অতীত জেনোনা, বর্তমানকে জানো এবং সে জানাই যথার্থ।”
“সমস্যা সর্বদা, একবার সমাধান পেয়ে যাওয়ার পর সরল হয়েই যায়।”
“তারা সব কিছুই প্রাপ্ত করতে পারে, যারা অপেক্ষা করার বদলে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কাজ করে যেতে পারে।”
টমাস আলভা এডিসন, যার নামে মানব সভ্যতার উন্নতির শিখা জ্বলেছিল। তিনি তাঁর জীবনকে জটিলতায় ভরিয়ে রাখেননি। চিন্তা করেছেন সহজ সরলভাবেই, কিন্তু তাঁর গভীরে পৌছেছেন। টমাস আলভা এডিসনের উক্তি ও বাণী যুগ যুগ ধরে মানুষকে আলোর পথ দেখাবে সেই আশাই রইলো।