বিরহের কবি হেলাল হাফিজের উক্তি । হৃদয়ছোঁয়া বাণী সমাবেশ
আধুনিক কবি হেলাল হাফিজকে প্রেম ও বিরহের কবি বলেও অনেকে চিনে থাকেন। স্বল্পপ্রজ এই কবি ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ১৯৮৬ সালে তাঁর প্রথম কবিতা সংকলন ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত হবার পরপরই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় কবমধ্যে রয়েছে – নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়, যার দুটি পঙক্তি কালের বির্বতণে অমর- ‘‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়, এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’’ এছাড়াও ফেরিওয়ালা, অশ্লীল সভ্যতা সহ বেশ কিছু কবিতার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের কবিতামোদীদের মুখে মুখে চলে আসেন। এরপর বেশ কিছু দিন কোনো কবিতার বই বের করেননি। দীর্ঘ ২৬ বছর পর ২০১২ সালে প্রকাশ করেন তাঁর দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতা একাত্তর’। তিনি কর্মজীবনে সাংবাদিকতার পাশাপাশি করেছেন সাহিত্য সম্পাদনা। ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। প্রেম ও বিরহের এই স্বল্পপ্রজ কবি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তাঁর কবিতায়, পঙ্কিতে এবং নানা বাণীতে। হেলাল হাফিজ উক্তি ও বাণী নিয়েই আত্মপ্রকাশের এই আয়োজন।
হেলাল হাফিজ উক্তি ও হৃদয়ছোঁয়া বাণী সমাবেশ
রচনার ভাগসমূহ
হেলাল হাফিজের উক্তি ও বাণিগুলোকে ৫ টি ভাগে ভাগ করে এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি উক্তি ও বাণী পাঠক হৃদয়ে আলোড়ন ও সারা দিতে সক্ষম।
- প্রেম ও ভালোবাসা
- বিরহ নিয়ে উক্তি
- জীবন ও জীবনবোধ
- মানুষ ও মনুষ্যত্ব
- কষ্ট নিয়ে উক্তি
- কথা নিয়ে উক্তি
- নারী নিয়ে উক্তি
প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে হেলাল হাফিজের উক্তি
প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে উক্তি বা বাণী দিয়ে যাননি এমন কবি সাহিত্যিক খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। অন্য সকল কবি, সাহিত্যিক থেকে কিছুটা ব্যতিক্রম বোধ থাকায়, হেলাল হাফিজের প্রেম ও ভালোবাসা বিষয়ক উক্তিগুলো এত জনপ্রিয়।
“কোনদিন, আচমকা একদিন
ভালোবাসা এসে যদি হুট করে বলে বসে,
“চলো”, যেদিকে দু’চোখ যায় চলে যাই,
যাবে?”
“বোকা উদ্ভিদ তবে কি
মানুষের কাছে প্রেম চেয়েছিলো?
চেয়েছিলো আরো কিছু বেশি ”
“আছি।
বড্ড জানান দিতে ইচ্ছে করে, – আছি,
মনে ও মগজে
গুন্ গুন্ করে
প্রণয়ের মৌমাছি ”
“আমাকে পাবে না খুঁজে, কেঁদে-কেটে, মামুলী ফাল্গুনে”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘আমার কী এসে যাবে’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“তাবিজ! এ কেমন তাবিজ করেছো সোনা, ব্যথাও কমে না, বিষও নামে না!”
“ হয় তো কেটেছে তার মায়া ও মমতাহীন সজল শৈশব
অথবা গিয়েছে দিন
এলোমেলো পরিচর্যাহীন এক রঙিন কৈশোর,
নাকি সে আমার মত খুব ভালোবেসে
পুড়েছে কপাল তার আকালের এই বাংলাদেশে।
বোকা উদ্ভিদ তবে কি
মানুষের কাছে প্রেম চেয়েছিলো?
চেয়েছিলো আরো কিছু বেশি। ” – ক্যাকটাস
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘ক্যাকটাস’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“তুমি আমার নিঃসঙ্গতার সতীন হয়েছ !”
উপরোক্ত উক্তিটি ‘অচল প্রেমের পদ্য – ১৩’ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“তুমি কি জুলেখা, শিরী, সাবিত্রী, নাকি রজকিনী?
চিনি, খুব জানি
তুমি যার তার, যে কেউ তোমার,
তোমাকে দিলাম না – ভালোবাসার অপূর্ব অধিকার।”
“ভালোবেসেই নাম দিয়েছি ‘তনা’
মন না দিলে
ছোবল দিও তুলে বিষের ফণা”
“হয় তো কেটেছে তার মায়া ও মমতাহীন সজল শৈশব
অথবা গিয়েছে দিন
এলোমেলো পরিচর্যাহীন এক রঙিন কৈশোর,
নাকি সে আমার মত খুব ভালোবেসে
পুড়েছে কপাল তার আকালের এই বাংলাদেশে ”
“ব্যর্থ হয়ে থাকে যদি প্রণয়ের এতো আয়োজন,
আগামী মিছিলে এসো
স্লোগানে স্লোগানে হবে কথোপকথন”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘ঘরোয়া রাজনীতি’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“আকালের এই কালে সাধ হলে পথে ভালোবেসো,
ধ্রুপদী পিপাসা নিয়ে আসো যদি
লাল শাড়িটা তোমার পড়ে এসো”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ বাণী, তাঁর রচিত ‘ঘরোয়া রাজনীতি’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“তবু ফেরে, কেউ তো ফেরেই,
আর জীবনের পক্ষে দাঁড়ায়,
ভালোবাসা যাকে খায় এইভাবে সবটুকু খায়”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘প্রত্যাবর্তন’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“তোমার জন্য সকাল, দুপুর
তোমার জন্য সন্ধ্যা
তোমার জন্য সকল গোলাপ
এবং রজনীগন্ধা ”
“যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুষে মানুষে
ভেঙে সেই কালো কারাগার
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ বাণী, তাঁর রচিত ‘অস্ত্র সমর্পণ’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে >> রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ উক্তি সমূহ
বিরহ নিয়ে হেলাল হাফিজ উক্তি
প্রেম ও ভালোবাসাকে এক এক কবি এক ভাবে উপস্থাপন করেছেন। প্রেম, ভালোবাসার উল্টো পিঠে যে বিরহ রয়েছে, তা নিয়ে খুব কম কবিই এত উচ্চমার্গীয় পঙতি এবং উক্তির সৃষ্টি করেছেন। অনন্য বিরহবোধ, হেলাল হাফিজ উক্তি সমূহকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।
ইস্! করছো কি? বসো না লক্ষ্মীটি,
ক্ষমার রুমালে মুছে সজীব ক্ষতেই
এন্টিসেপটিক দুটো চুমু দিয়ে দেই”
“এক বুক সুখ নিয়ে ঘুমিয়ে গেলে নাকি?
আমি বরাবরই তোমার থেকে আলাদা।
এক বুক দুঃখ নিয়ে সারারাত জেগে থাকি।”
“দুই ইঞ্চি জায়গা হবে?
বহুদিন চাষাবাদ করিনা সুখের।”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘ভূমিহীন কৃষকের গান’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“হয়তো তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি
নয় তো গিয়েছি হেরে
থাক না ধ্রুপদী অস্পষ্টতা
কে কাকে গেলাম ছেড়ে ”
“এক জীবনে কতোটা আর নষ্ট হবে,
এক মানবী কতোটা আর কষ্ট দেবে!”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘প্রস্থান’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“আমাকে উস্টা মেরে দিব্যি যাচ্ছো চলে,
দেখি দেখি
বাঁ পায়ের চারু নখে চোট লাগেনি তো;
“যদি যেতে চাও, যাও
আমি পথ হবো চরণের তলে
না ছুঁয়ে তোমাকে ছোঁব
ফেরাবো না, পোড়াবোই হিমেল অনলে।”
“ইচ্ছে ছিল রাজা হবো
তোমাকে সাম্রাজ্ঞী করে সাম্রাজ্য বাড়াবো,
আজ দেখি রাজ্য আছে
রাজা আছে
ইচ্ছে আছে,
শুধু তুমি অন্য ঘরে”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘ইচ্ছে ছিলো’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“জলের আগুনে পুড়ে হয়েছি কমল,
কী দিয়ে মুছবে বলো আগুনের জল।”
“ধ্রুপদী আঙিনা ব্যাপী
কন্টকিত হাহাকার আর অবহেলা,
যেন সে উদ্ভিদ নয়
তাকালেই মনে হয় বিরান কারবালা।”
“কোনো প্রাপ্তিই পূর্ণ প্রাপ্তি নয়
কোনো প্রাপ্তির দেয় না পূর্ণ তৃপ্তি
সব প্রাপ্তি ও তৃপ্তি লালন করে
গোপনে গহীনে তৃষ্ণা তৃষ্ণা তৃষ্ণা।”
“একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতোটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজম্ন ভেতরে আমার”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি, তাঁর রচিত ‘তুমি ডাক দিলে’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“তোমার হাতে দিয়েছিলাম অথৈ সম্ভাবনা
তুমি কি আর অসাধারণ? তোমার যে যন্ত্রনা
খুব মামুলী, বেশ করেছো চতুর সুদর্শনা
আমার সাথে চুকিয়ে ফেলে চিকন বিড়ম্বনা।”
“নিউট্রন বোমা বোঝ
মানুষ বোঝ না !”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি, তাঁর রচিত ‘অশ্লীল সভ্যতা’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“উথাল পাথাল করে সব কিছু ছুঁয়ে যাই
কোনো কিছু ছোঁয় না আমাকে,
তোলপাড় নিজে তুলে নিদারুণ খেলাচ্ছলে
দিয়ে যাই বিজয় তোমাকে”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি, তাঁর রচিত ‘অহংকার’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“আমার যত শুভ্রতা সব দেবো,
আমি নিপুণ ব্লটিং পেপার
সব কালিমা, সকল ব্যথা ক্ষত শুষেই নেবো”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি, তাঁর রচিত ‘উপসংহার’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
আরো পড়ে নিতে পারেন >> রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জনপ্রিয় উক্তিসমূহ
জীবন ও জীবনবোধ নিয়ে হেলাল হাফিজ উক্তি
সব কবিরাই জীবনটাকে অন্য দশ জন সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা চোখে দেখেন। তাঁদের জীবন হয় অন্য মাত্রার, যা আমাদের জীবনকে বুঝতে শেখায়, জানতে শেখায়, অনুধাবন করতে শেখায়। কবি হেলাল হাফিজের উক্তির মাধ্যমেও অনন্য জীবনবোধ খুঁজে পাই।
“যুক্তি যখন আবেগের কাছে অকাতরে পর্যুদস্ত হতে থাকে, কবি কিংবা যে
কোনো আধুনিক মানুষের কাছে সেইটা বোধ করি সবচেয়ে বেশি সংকোচ আর সঙ্কটের সময়।”
“পাখিকে জিজ্ঞেস করো নিরিবিলি,
পক্ষপাতহীন পাখি বিস্তারিত সংবাদ জানাবে
কী কী ব্যথা এবং আর্দ্রতা
রেখেছে দখল করে আশৈশব আমার একালা,
আমি কতো একা,
কতোখানি ক্ষত আর ক্ষতি নিয়ে
বেদনার অনুকূলে প্রবাহিত আমার জীবন।”
“বৃক্ষ হারালে তার সবুজ পিরান, মৃত্তিকার ফুরালে সুঘ্রাণ,
কষ্টের ইস্কুল হলে পুষ্পিত বাগান, আমি আহত হবো না”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘কবিতার কসম খেলাম’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“আজন্ম মানুষ আমাকে পোড়াতে পোড়াতে কবি করে তুলেছে
মানুষের কাছে এওতো আমার এক ধরনের ঋণ।
এমনই কপাল আমার
অপরিশোধ্য এই ঋণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।”
“এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“কবির জীবন খেয়ে জীবন ধারণ করে
কবিতা এমন এক পিতৃঘাতী শব্দের শরীর,
কবি তবু সযত্নে কবিতাকে লালন করেন,
যেমন যত্নে রাখে তীর
জেনে-শুনে সব জল ভয়াল নদীর”
“আমার কষ্টেরা বেশ ভালোই আছেন, মোটামুটি সুখেই আছেন।
প্রিয় দেশবাসী;
আপনারা কেমন আছেন?”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ বাণী, তাঁর রচিত ‘ইদানিং জীবন যাপন’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“আমি ছেড়ে যেতে চাই, কবিতা ছাড়ে না।
বলে,–’কি নাগর
এতো সহজেই যদি চলে যাবে
তবে কেন ঘর বেঁধেছিলে উদ্ধাস্তু ঘর,
কেন করেছিলে চারু বেদনার এতো আয়োজন”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ বাণী, তাঁর রচিত ‘যুগল জীবনী’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুখী নই,
দুঃখ তো সুখের মতো নীচ নয়, যে আমাকে দুঃখ দেবে।
আমার একেকটি দুঃখ একেকটি দেশলাই কাঠির মতন,
অবয়ব সাজিয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দরের কালো কালো অগ্নিতিলকে,
পাঁজরের নাম করে ওসব সংগোপনে
সাজিয়ে রেখেছি আমি সেফ্টি-ম্যাচের মতো বুকে।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘আমার সকল আয়োজন’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“জলের আগুনে পুড়ে হয়েছি কমল,
কী দিয়ে মুছবে বলো আগুনের জল।”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘কোমল কংক্রিট’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
জীবন ও জীবনদর্শন নিয়ে >> জালালউদ্দিন মুহাম্মদ রুমির জনপ্রিয় উক্তিসমূহ
মানুষ ও মনুষ্যত্ব নিয়ে হেলাল হাফিজের বাণী
মানুষ এবং মনুষ্যত্ববোধই পারে একজন কবিকে প্রকৃত কবি করে তুলতে। মনুষ্যত্ববোধ সম্পন্ন কবিই পারে সমাজে মানুষের প্রকৃতি তুলে ধরতে। হেলাল হাফিজ উক্তি, মানুষের প্রকৃতিকে সহজবোধ্য করে তুলেছে।
“আমি আর কতোটুকু পারি ?
কতোটুকু দিলে বলো মনে হবে দিয়েছি তোমায়,
আপাতত তাই নাও যতোটুকু তোমাকে মানায়।
ওইটুকু নিয়ে তুমি বড় হও,
বড় হতে হতে কিছু নত হও
নত হতে হতে হবে পৃথক পাহাড়,
মাটি ও মানুষ পাবে, পেয়ে যাবে ধ্রুপদী আকাশ।
আমি আর কতোটুকু পারি ?
এর বেশি পারেনি মানুষ।”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি দুটো, তাঁর রচিত ‘ পৃথক পাহাড়’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“আগুন পোড়ালে তবু কিছু রাখে
কিছু থাকে,
হোক না তা শ্যামল রঙ ছাই,
মানুষে পোড়ালে আর কিছুই রাখে না
কিচ্ছু থাকে না,
খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি দুটো, তাঁর রচিত ‘মানবানল’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো
চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত,
তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি দুটো, তাঁর রচিত ‘ উৎসর্গ’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
মানুষ ও মনুষ্যত্ব নিয়ে >> কাজী নজরুল ইসলামের হৃদয়ছোঁয়া বাণী সমূহ
কষ্ট নিয়ে হেলাল হাফিজের উক্তি
মানব জীবনের চিহ্ন আছে; অথচ কষ্ট নেই, তা হতে পারেনা। মানুষের কষ্ট ফুটিয়ে তুলাও কোনো কাঁচা হাতের পুতুল গড়াও নয়। কষ্ট নিয়ে হেলাল হাফিজ উক্তি সমূহ কষ্টকে অন্যভাবে বুঝাতে এবং অনুধাবক করতে বাধ্য করে।
“কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘একটি পতাকা পেলে’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ বাণী, তাঁর রচিত ‘ফেরিওয়ালা’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“ঘরের কষ্ট পরের কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট
দাড়ির কষ্ট
চোখের বুকের নখের কষ্ট,
একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট ”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘ফেরিওয়ালা’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“আর কে দেবে আমি ছাড়া
আসল শোভন কষ্ট,
কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন
আমার মত ক’জনের আর
সব হয়েছে নষ্ট,
আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট ”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘ফেরিওয়ালা’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
কথা নিয়ে হেলাল হাফিজ বাণী
কথা নিয়ে হেলাল হাফিজের উক্তিগুলো প্রায় সবকটিই তাঁর রচিত একটি পতাকা পেলে কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।”
উপরোক্ত হেলাল হাফিজ উক্তি, তাঁর রচিত ‘একটি পতাকা পেলে’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।”
“কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুতে-ভাতে”।
“কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,
সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ
সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে”।
“কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তিগুলো, তাঁর রচিত ‘একটি পতাকা পেলে’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
পড়ে নিতে পারেন >> সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় উক্তিগুলো
নারী নিয়ে হেলাল হাফিজ উক্তি
নারী নিয়ে লিখেননি এমন কবি খুঁজে পাওয়া যাবে না। নারী মন বুঝা যতটা দায়, তাকে নিয়ে লেখা ফুটিয়ে তুলাও কষ্টসাধ্য কাজ। নারী নিয়ে হেলাল হাফিজ উক্তি সমূহ নারীর স্বরুপ বুঝাতে সমর্থ।
“নারী কি নদীর মতো
নারী কি পুতুল,
নারী কি নীড়ের নাম
টবে ভুল ফুল”।
“নারী কি বৃক্ষ কোনো
না কোমল শিলা,
নারী কি চৈত্রের চিতা
নিমীলিত নীলা”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি দুটো, তাঁর রচিত ‘অনির্ণীত নারী’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“মানব জন্মের নামে হবে কলঙ্ক হবে
এরকম দুঃসময়ে আমি যদি মিছিলে না যাই,
উত্তর পুরুষে ভীরু কাপুরুষের উপমা হবো
আমার যৌবন দিয়ে এমন দুর্দিনে আজ
শুধু যদি নারীকে সাজাই”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি দুটো, তাঁর রচিত ‘দুঃসময়ে আমার যৌবন’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
“আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।
অলৌকিক কিছু নয়,
নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি
তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার”।
উপরোক্ত হেলাল হাফিজের উক্তি দুটো, তাঁর রচিত ‘দুঃখের আরেক নাম’ কবিতা থেকে চয়ন করা হয়েছে।
আরো পড়ে নিতে পারেন>> সমরেশ মজুমদারের জনপ্রিয় উক্তিসমূহ
কবি হেলাল হাফিজ তাঁর সারাটা জীবন নিঃসঙ্গতার সাথে কাটিয়ে দিয়েন। স্বল্পপ্রজ এই কবি লিখেছেন খুব অল্প, কিন্তু তাতেই পাঠক মনে জায়গা করে নিয়েছেন বিশাল। প্রেম, ও বিরহের কবি হেলাল হাফিজ বেঁচে থাকবেন যুগ যুগ ধরে তাঁর উক্তিতে, বানীতে।
হেলাল হাফিজের উক্তিসমূহ তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থ সহ, বিভিন্ন বাংলা ব্লগ এবং ফেইসবুক থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
3 Comments
[…] […]
[…] দুঃখ ও বিরহের কবই হেলাল হাফিজের মনোমুগ্ধকরে উক্তিগুলো পড়ে নিন >> হেলাল হাফিজের জনপ্রিয় উক্তি […]
[…] হেলাল হাফিজের প্রেমের উক্তি […]