অপরাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি সমূহ । জনপ্রিয় ও আলোচিত বাণী সমাবেশ
‘অপরাজেয় কথাশিল্পী’ হিসেবে খ্যাত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম জনপ্রিয় এবং বাংলা ভাষায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। খ্যাতিমান বাঙ্গালী লেখক ও ঔপন্যাসিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৮৭৬ সালে তৎকালীন হুগলী জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৬ জানুয়ারি, ১৯৩৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।। তাঁর ডাক নাম ছিল ন্যাড়া। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর লেখা অসংখ্য উপন্যাস, ভারত বর্ষের বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত বিখ্যাত উপন্যাস গুলোর মধ্যে রয়েছে-বড়দিদি(১৯১৩), পল্লীসমাজ(১৯১৬), দেবদাস(১৯১৭), চরিত্রহীন(১৯১৭), শ্রীকান্ত(চারখন্ড ১৯১৭-১৯৩৩), দত্তা(১৯১৮), গৃহদাহ(১৯২০), পথের দাবী(১৯২৬), পরিণীতা(১৯১৪), শেষ প্রশ্ন(১৯৩১) ইত্যাদি। তিনি তাঁর কালজয়ী উপন্যাস, গল্পে নানা উক্তি করে গিয়েছেন যা আজো আমাদের পাথেয়। অপারাজেয় কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি ও বাণী নিয়েই আত্মপ্রকাশের আজকের আয়োজন।
জীবনবোধ ও জীবন নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি সমূহ
রচনার ভাগসমূহ
অন্যান্য লেখক, ঔপন্যাসিক থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনবোধ ছিল অনেক বেশি গাঢ় এবং প্রাকৃত। তাঁর সাহিত্য গুণে সে সময়ের জীবন ও জীবনবোধ এত সুন্দর করে ফুটে উঠেছে যে, যেকোনো চরিত্রের মাধ্যমে তা খুব সহজেই উপলব্দি করা সম্ভব। জীবন ও জীবনবোধ নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি ও বাণীর মাধ্যমে সহজ সরল জীবনের ছবি এঁকেছেন অত্যন্ত নিপুন হাতে। নিম্নে তন্মধ্যে কিছু শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি উল্লেখ করা হলো-
“টিকিয়া থাকাই চরম সার্থকতা নয়, এবং অতিকায় হস্তী লোপ পাইয়াছে কিন্তু তেলাপোকা টিকিয়া আছে”।
“ অতীত মুছে ফেলার শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে স্থান পালটানো ”।
“ সৃষ্টির কালই হল যৌবনকাল ”।
“পক্ষপাতহীন বিচারকই ন্যায় বিচার করতে পারে ”।
“যাকে তাকে গছিয়ে দেওয়ার নামই বিবাহ নয় ! মনের মিল না হলে বিবাহ করাই ভুল”।
“কোনো বড় ফলই বড় রকমের দুঃখভোগ ছাড়া পাওয়া যায় না”।
“তিক্ততার মধ্য দিয়ে সংসার ছেড়ে শুধু হতভাগ্য লক্ষ্মীছাড়া জীবনই যাপন করা চলে, কিন্তু বৈরাগ্য সাধন হয় না”।
“যাহার প্রাসাদতুল্য অট্টালিকা নদীগর্ভে ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে,সে আর খান কতক ইট বাঁচাইবার জন্য নদীর সহিত কলহ করিতে চাহে না”।
আলোচ্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি তাঁর রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“মানুষের দীর্ঘ-জীবনে তাকে অনেক পা চলতে হয়,দীর্ঘ পথটির কোথাও কাদা, কোথাও পিছল,কোথাও উঁচু-নীচু থাকে, তাই লোকের পদস্থলন হয়; তারা কিন্তু সে কথা বলে না,শুধু পরের কথা বলে|পরের দোষ,পরের লজ্জ্বার কথা চীৎকার করে বলে,সে শুধু আপনার দোষটুকু গোপনে ঠেকে ফেলবার জন্যই|”
আলোচ্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাণী তাঁর রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
রাজার আইন, আদালত, জজ, ম্যাজিস্ট্রেট সমস্ত মাথার উপরে থাকিলেও দরিদ্র প্রতিদ্বন্দ্বীকে নিঃশব্দে মরিতে হইবে।
উপরোক্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি তাঁর রচিত ‘পল্লীসমাজ’ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ জনপদ ভস্মসাৎ করে ফেলে, আয়তনে সে কতটুকু জানো? ”
“দীপের যে অংশটা শিখা হইয়া লোকের চোখে পড়ে, তাহার জ্বলার ব্যাপারে কেবল সেইটুকুই তাহার সমস্ত ইতিহাস নহে”।
উপরোক্ত উক্তিটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধায়ের বাণী তাঁর রচিত ‘স্মৃতিকথা’ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“যারা আপনার মুখের অন্ন পরনের বসন জোগায়, সেই হতভাগা দরিদ্রের এই সব গ্রামেই বাস। তা’দিগকে দুপায়ে মাড়িয়ে থেঁৎলে থেঁৎলে আপনাদের উপরে ওঠার সিঁড়ি তৈরী হয়”।
উপরোক্ত উক্তিটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘পন্ডিতমশাই’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“সংসারে সকল বড় কার্যই কাহারো না কাহারো ক্ষতিকর হয়; যাহারা এই কার্যভার স্বেচ্ছায় গ্রহণ করেন,তাঁহারা অনেকের মঙ্গলের জন্য সামান্য ক্ষতিতে ভ্রুক্ষেপ করিবার অবসর পান না। সেইজন্য অনেক স্থলেই তাঁহারা নিরদয় নিষ্ঠুর বলিয়া জগতে প্রচারিত হন”।
উপরোক্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি তাঁর রচিত ‘দত্তা’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“মন্দ তো ভাল’র শত্রু নয়, ভাল’র শত্রু তাঁর চেয়েও যে আরও ভাল…সে”।
উপরোক্ত উক্তিটি ‘শেষ প্রশ্ন’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ, তোমারা দেশের গুণী ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদিগকে সর্বদা সম্মান দিতে কোনদিন যেন কার্পণ্য না করো। এই কথাটা সবসময় মনে রেখো যে, এতে কেবল তা’দিগকে সম্মান করা হয় মাত্র নয়, পরন্তু এইরুপ সম্মান প্রদর্শনে দেশের ব্যক্তিদিগের গুণের সমাদর করা হয়। আর দেশবাসীকে তাঁহার গুন সম্বন্ধে সচেতন করবার সুযোগ ঘটায়”।
উপরোক্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি তাঁর ৫২ তম জন্মদিনে স্কটিশ চার্চ কলেজে প্রদত্ত ভাষণ হতে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“আত্মরক্ষার ছলেও মানুষের অসম্মান করা আমার ধাতে পোষায় না। দেখো না লোকে বলে আমি পতিতাদের সমর্থন করি। সমর্থন আমি করিনে, শুধু অপমান করতেই মন চায় না। বলি তাঁরাও মানুষ, তাঁদের নালিশ করতে মন চায় না। বলি, তাঁরাও মানুষ, তাঁদের নালিশ জানাবার অধিকার আছে, এবং মহাকালের দরবারে এদের বিচারের দাবী একদিন তোলা রইলো।
উপরোক্ত উক্তিটি ‘শেষ প্রশ্ন’ সম্পর্কে শ্রীমতি সেনকে লিখিত।
“বুঝি, ছোঁয়াছুঁয়ি-আচার-বিচারের অর্থ নেই, তবুও মেনে চলি; বুঝি, জাতিভেদে মহা অকল্যাণকর। তবুও নিজের আচরণে তাকে প্রকাশ করিনে। বুঝি ও বলি, বিধবা বিবাহ উচিত। তবুও নিজের জীবনে তাকে প্রত্যাহার করি। জানি খদ্দর পরা উচিত, তবু বিলাতি কাপড় পরি। একেই বলি আমি অসত্যাচার”।
আলোচ্য উক্তিটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘সত্যাশ্রয়ী’ বিবিধ প্রবন্ধ বই থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“ভালকে ভাল মন্দকে মন্দ বলায় কোন art-ই কোন্দিন আপত্তি করে না। কিন্তু দুনিয়ায় যা কিছু সত্যই ঘটে নির্বিচারে তাকেই সাহিত্যের উপকরণ করলে সত্য হতে পারে, কিন্তু সত্য-সাহিত্য হয় না”।
“সংসারে অনেক ঘটনার মধ্যে বিবাহটাও একটা ঘটনা, তার বেশি নয়; ওটাকেই নারীর সর্বস্ব বলে যেদিন মেনে নিয়েছেন, সেইদিনই শুরু হয়েছে মেয়েদের জীবনের সবচেয়ে বড়ো ট্রাজিডি। … চাটুকারের নানা অলংকারের গায়ে জড়িয়ে দিয়ে যারা প্রচার করেছিল মাতৃত্বের নারীর চরম স্বার্থকথা, সমস্ত নারীজাতিকে তারা বঞ্চনা করেছিল”।
উপরোক্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শেষ প্রশ্ন’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
জীবন ও জীবনবোধ নিয়ে সমরেশ মজুমদারের উক্তিসমূহ >> সমরেশ মজুমদারের জনপ্রিয় উক্তি সমাবেশ
প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি সমূহ
যুগে যুগে যত কবি, সাহিত্যিক ছিল বা আছে, সকলের মাঝের প্রেমের বিস্তার ছিল বেশ গাঢ়। বলা যায় প্রেমের মাধ্যমেই সকল কবি সাহিত্যিকের সাহিত্যে বিচরণ। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও তাঁর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাঁর প্রেম নিয়ে করা উক্তিগুলো বেশ গভীর অনুভূতি সম্পন্ন। প্রেম নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি সমূহের কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
“বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলে দেয়”।
“শ্রদ্ধা ও স্নেহের অভিনন্দন মন দিয়ে গ্রহণ করতে হয়, তার জবাব দিতে নেই”।
“যেদিন বুঝবে রুপটাও মানুষের ছায়া, মানুষ নয় – সেইদিনই শুধু ভালবাসার সন্ধান পাবে”।
আলোচ্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধায়ের চরিত্রহীন উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“সমাজের মধ্যে যাকে গৌরব দিতে পারা যায় না, তাকে কেবলমাত্র প্রেমের দ্বারাই সুখী করা যায় না। মর্যাদাহীন প্রেমের ভার, আলগা দিলেই দুর্বিষহ হইয়া উঠে”।
উপরোক্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তিটি হরিদাস শাস্ত্রীকে লেখা তাঁর চিঠি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে মাওলানা জালালউদ্দিন রুমির উক্তি >> জালালউদ্দিন রুমির প্রেম বাণী
মানুষ ও মনুষ্যত্ব নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি
সাহিত্যে মানুষ এবং মনুষ্যত্বের বেশ বড়সড় একটা ভূমিকা রয়েছে। এই অংশ ব্যতিরেকে কোনো সাহিত্যই হয়তো পরিপূর্ণতা পেত না। রুপকথার অনেক গল্পেও দেখা যায়, অন্যান্য রুপক চরিত্রেও মনুষ্যত্ব দেয়ার চেষ্টা করা হয়। মানুষকে বুঝা যেকোনো সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজসাধ্য নয় যতটা সহজভাবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বুঝেছিলেন। নিম্নে মানুষ ও মনুষ্যত্ব নিয়ে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি সমূহের কিছু অংশ দেয়া হলো-
“এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সমস্তটাই পরিপূর্ণ সত্য। মিথ্যার অস্তিত্ব যদি কোথাও থাকে, তবে সে মনুষ্যের মন ছাড়া আর কোথাও না”।
আলোচ্য শরৎচন্দ্রের চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি তাঁর রচিত ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“মানুষের দুঃখটাই যদি দুঃখ পাওয়ার শেষ কথা হত, তার মূল্য ছিল না। সে একদিকের ক্ষতি আর একদিকের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে পূর্ণ করে তোলে”।
উপরোক্ত উক্তিটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শেষ প্রশ্ন’ উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“মানুষের মরণ আমাকে বড় আঘাত করে না, করে মনুষ্যত্বের মরণ দেখিলে”।
“রাজারা তাদের নামের আগে পিছে কতকগুলি নিরর্থক বাক্য নিয়ে শ্রী জুড়ে তবে অপরকে উচ্চারণ করতে দেয়; নইলে তাদের মর্যাদা নষ্ট হয়”।
“মহত্ত জিনিসটা কোথাও ঝাঁকে ঝাঁকে থাকে না। তাকে সন্ধান করে খুঁজে নিতে হয়”।
“যে দুঃখকে ভয় … তারই দিয়ে আবার তারও চেয়ে বড় আদর্শ জন্মলাভ করবে; আবার তারও যেদিন কাজ শেষ হবে, মৃতদেহের সার থেকে তার চেয়েও মহত্তর আদর্শের সৃষ্টি হবে, এমনি করেই সংসারে শুভ শুভতরের পায়ে আত্মবিসর্জন দিয়ে আপন ঋণ পরিশোধ করে। এই তো মানুষের মুক্তির পথ”।
উপরোক্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘শেষ প্রশ্ন’ উপন্যাস থেকে রচিত।
“তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ, তোমারা দেশের গুণী ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদিগকে সর্বদা সম্মান দিতে কোনদিন যেন কার্পণ্য না করো। এই কথাটা সবসময় মনে রেখো যে, এতে কেবল তা’দিগকে সম্মান করা হয় মাত্র নয়, পরন্তু এইরুপ সম্মান প্রদর্শনে দেশের ব্যক্তিদিগের গুণের সমাদর করা হয়। আর দেশবাসীকে তাঁহার গুন সম্বন্ধে সচেতন করবার সুযোগ ঘটায়”।
উপরোক্ত উক্তিটি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ৫২ তম জন্মদিনে স্কটিশ চার্চ কলেজে প্রদত্ত ভাষন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
পথের দাবী উপন্যাস থেকে সংগৃহীত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি সমূহ
“সমস্ত ধর্মই মিথ্যা, আদিম যুগের কুসংস্কার। বিশ্ব মানবতার এত বড় শত্রু আর নাই”।
“যে সমাজে কেবলমাত্র পুত্রার্থের ভার্যা গ্রহণের বিধি আছে…তাকে তো আমি শ্রদ্ধার চোখে দেখতে পারিনে…সতীত্ব তো শুধু দেহেই পর্যবসিত নয়,…মনেরও তো দরকার…কায়মনে ভাল্বাস্তে না পারলে তো ওর উচ্চস্তরে পৌঁছানো যায় না। মন্ত্র পড়ে বিয়ে দিলেই যেকোনো মেয়ে যেকোনো পুরুষকে ভালবাসতে পারে? এ কি পুকুরের জল যে, যেকোনো পাত্রে ঢেলে মুখ বন্ধ দিলেই কাজ চলে যাবে?”
“সত্য পালনের দুঃখ আছে, তাকে আঘাতের মধ্য দিয়ে বরঞ্চ একদিন পাওয়া যেতে পাড়ে কিন্তু বঞ্চনা প্রতারণার মিষ্ট পথ দিয়ে সে কোনদিন আনাগোনা করে না”।
“হৃদয়ের দুর্মূল্য বস্তু, কিন্তু চৈতন্য কে আচ্ছন্ন করতে দিলে এতবড়ো শত্রু আর নেই”।
“মানুষের চামড়ার রঙ ত তার মনুষ্যত্ব মাপকাঠি নয়। কোণ একটা বিশেষ দেশে জন্মানোই ত তার অপরাধ হতে পারে না!…ধর্মমত ভিন্ন হলেই কি মানুষে হীন প্রতিপন্ন হবে? এ কোথাকার বিচার!”
গৃহদাহ উপন্যাস থেকে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাণী সমূহ
“যারা মহৎপ্রাণ, তাঁদের যেকোন অবস্থাতেই, পরের বিপদে নিজের বিপদ মনে থাকে না।”
“আজ তাহার কেউ নাই; তাহাকে ভালবাসিতে, তাহাকে ঘৃণা করিতে, তাহাকে রক্ষা করিতে, তাহাকে হত্যা করিতে, কোথাও কেহ নাই; সংসারে সে একেবারেই সঙ্গ-বিহীন!”
“অচলা দৃপ্তস্বরে কহিল, নেমকহারাম উনি। তাই বটে! কিন্তু যাকে এক সময় বাঁচানো যায়, আর এক সময়ে ইচ্ছে করলে বুঝি তাকে খুন করা যায়?”
“ক্ষমার ফল কি শুধু অপরাধীই পায়, যে ক্ষমা করে, সে কি কিছুই পায় না?”
“মানুষ তো দেবতা নয়-সে যে মানুষ!”
তার দেহ দোষে -গুণে জড়ানো ;
কিন্তু তাই বলে তো তার দুর্বল মুহূর্তের উত্তেজনাকে তার স্ভাব বলে ধরে নেওয়া চলে না” ।
মানুষ ও মনুষ্যত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের উক্তি সমূহ >> রবীন্দ্রনাথের হৃদয়গ্রাহী উক্তিসমূহ
চরিত্রহীন উপন্যাস থেকে সংগৃহীত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উক্তি
“যা সত্য, তাকেই সকল সময় সকল অবস্থায় গ্রহণ করবার চেষ্টা করবে। তাতে বেদই মিথ্যা হোক, আর শাস্ত্রই মিথ্যা হয়ে যাক। সত্যের চেয়ে এরা বড় নয়, সত্যের তুলনায় এদের কোন মূল্য নেই। জিদের বশে হোক, মমতায় হোক, সুদীর্ঘ দিনের সংস্কারে হোক, চোখ বুঝে অসত্যকে সত্য বলে বিশ্বাস করায় কিছুমাত্র পৌরুষ নেই”।
“মিথ্যে দিয়ে ভুলিয়ে সত্য প্রচার হয় না। সত্যকে সত্যের মত করেই বলতে হয়। তবেই মানুষ যে যার বুদ্ধির পরিমাণে বুঝতে পারে। আজ না পারে ত কাল পারে। সে না পারে ত আর একজন পারে। না-ও যদি পারে, তবুও তাকে মিথ্যার ভূমিকা দিয়ে মূখরোচক করার চেষ্টার মত অন্যায় আর নেই। … মিথ্যা পাপ, কিন্তু মিথ্যায়-সত্যে জড়িয়ে বলার মত পাপ সংসারে অল্পই আছে”।
“মন্দের বিরুদ্ধে অত্যন্ত ঘৃণা জাগিয়ে দেওয়াও নাকি কবির কাজ। কিন্তু ভালর ওপর অত্যন্ত লোভ জাগিয়ে দেওয়া কি তাঁর থেকে ঢের বেশি কাজ নয়। তাছাড়া পাপ কে যতদিন না সংসার থেকে সম্পূর্ণ বিসর্জন দেওয়া যাবে, যতদিন না মানুষের হৃদয় পাথরে রুপান্তরিত হবে। ততদিন এ পৃথিবীতে অন্যায়, ভুল ভ্রান্তি থেকেই যাবে…”।
“কবি যে শুধু সৃষ্টি করে তা নয়, কবি সৃষ্টি রক্ষাও করে। যা স্বভাবতই সুন্দর, তাকে যেমন আরও সুন্দর করে প্রকাশ করা তার একটা কাজ, যা সুন্দর নয়, তাকেও অসুন্দরের হাত থেকে বাঁচিয়ে তোলা তারই আর একটা কাজ”।
নারীর মূল্য উপন্যাস থেকে সংগৃহীত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাণী।
“প্রতিষ্ঠিত নিয়ম পালনের মধ্যে মানুষ যখন একান্ত মগ্ন হইয়া থাকে, চোখের দৃষ্টিও তখন তাঁহার রুদ্ধ হইয়া যায়। সে কোনমতেই দেখিতে পায়না কোনটা ধর্ম, কোনটা অধর্ম”।
“নারীত্বের মূল্য কি? অর্থাৎ কি পরিমাণে তিনি সেবাপরায়ণা, স্নেহশীলা, সতী এবং দুঃখকষ্টে মৌনা। অর্থাৎ তাহাকে লইয়া কি পরিমাণে মানুষের সুখ ও সুবিধা ঘটিবে এবং তিনি কি পরিমাণে রুপসী অর্থাৎ পুরুষের লালসা ও প্রবৃত্তিকে কতটা পরিমানে তিনি নিবদ্ধ ও তৃপ্ত রাখিতে পারিবেন। দাম কষিবার এছাড়া যে আর কোন পথ নাই”।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর বিভিন্ন উক্তি বাণীর মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন সে সময়ের সমাজ, জীবন ও মনুষ্যত্ব এবং ভালোবাসার বিভিন্ন দিক। সেইসব শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তি ও বাণী, আজকের সমাজেও সমানভাবেই খাপ খেয়ে যায় এবং আমাদের জন্য অনুসরণীয় রয়ে গেছে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বেঁচে থাকবেন তাঁর উক্তি ও বাণী, বিভিন্ন উপন্যাসের চরিত্র এবং নানাবিধ জীবনমুখী সংলাপের মাধ্যমে। উপরোক্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উক্তিগুলো তাঁর রচিত বিভিন্ন উপন্যাস, গল্প বই, অনলাইন ব্লগ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
2 Comments
Your site has superb material. I bookmarked the site
[…] […]