হুমায়ূন আহমদের জনপ্রিয় প্রেম ও ভালবাসার উক্তি সমূহ । আত্মপ্রকাশ
জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। বাংলা সাহিত্যে বাস্তবিক সরল কথার বরপুত্র হুমায়ূন আহমদের বিংশ শতাব্দীর জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক তিনি। বাস্তবিক সংলাপ, সাহিত্যকে রসবোধ তাঁর লেখাওকে করেছে অনবদ্য। ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে জন্ম নিয়ে ১৯ জুলাই, ২০১২ সালে তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে, রচিত চরিত্র ও উক্তির মাধ্যমে। আজকের আয়োজনে প্রেম ও ভালবাসা নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উক্তি গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
হুমায়ূন আহমদের প্রেমের উক্তি সমূহ । জনপ্রিয় বাণী
রচনার ভাগসমূহ
হুমায়ূন আহমেদের প্রেমের উক্তি গুলো বুঝার গভীর সাহিত্য জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। বাস্তবিক জ্ঞানই যথেষ্ট। তাঁর সহজ সরল ভাষায় প্রেমের উক্তি গুলো মানুষের অভ্যন্তরে থাকা মনের ভাবকে বের করে আনে আপন সত্ত্বায়। বিভিন্ন বই থেকে সংগৃহীত তাঁর জনপিয় প্রেমের উক্তি গুলো নীচে দেয়া হলো-
“প্রেমের ক্ষেত্রে দৈব কখনোই সহায় হয় না। গল্পে, সিনেমায় হয়। জীবনটা গল্প-সিনেমা নয়। জীবনের নায়িকারা নায়কদের সঙ্গে রাস্তায় দেখা হলেও চিনতে পারে না”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘বহুব্রীহি’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“চট করে কারও প্রেমে পড়ে যাওয়া কোনো কাজের কথা না। অতি রূপবতীদের কারও প্রেমে পড়তে নেই। অন্যরা তাদের প্রেমে পড়বে, তা-ই নিয়ম”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘দেয়াল’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“গভীর প্রেম মানুষকে পুতুল বানিয় দেয়। প্রেমিক প্রেমিকার হাতের পুতুল হয় কিংবা প্রেমিকা হয় প্রেমিকের পুতুল। দুজন একসঙ্গে কখনও পুতুল হয় না। কে পুতুল হবে আর কে হবে সূত্রধর তা নির্ভর করে মানসিক ক্ষমতার উপর । মানসিক ক্ষমতা যার বেশি তার হাতেই পুতুলের সুতা”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘মিসির আলি! আপনি কোথায়?’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ছেলে এবং মেয়ে বন্ধু হতে পারে, কিন্তু তারা অবশ্যই একে অপরের প্রেমে পড়বে। হয়তো খুবই অল্প সময়ের জন্য, অথবা ভুল সময়ে। কিংবা খুবই দেরিতে, আর না হয় সব সময়ের জন্য”।
“যুদ্ধ এবং প্রেমে কোনো কিছু পরিকল্পনামতো হয় না”।
“বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় কুসংস্কারের নাম প্রেম”।
“মেয়েদের বোঝা খুব কঠিন। একটি মেয়েকে কখনও পুরোপুরি বুঝতে গেলে হয় আপনি পাগল হয়ে যাবেন নয়তো আপনি মেয়েটির প্রেমে পড়ে যাবেন”।
“এই পৃথিবীতে প্রায় সবাই তার থেকে বিপরীত স্বভাবের মানুষের সাথে প্রেমে পড়ে”।
“প্রেমে পড়া মানে নির্ভরশীল হয়ে পড়া। তুমি যার প্রেমে পড়বে সে তোমার জগতের একটা বিরাট অংশ দখল করে নেবে। যদি কোনো কারণে সে তোমাকে ছেড়ে চলে যায় তবে সে তোমার জগতের ঐ বিরাট অংশটাও নিয়ে যাবে। তুমি হয়ে পড়বে শূন্য জগতের বাসিন্দা”।
“রাগ থেকে প্রেম হয়, ঘৃণা থেকে প্রেম হয়, অপমান থেকে প্রেম হয়, লজ্জা থেকে হয়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘হিমু এবং একটি রাশিয়ান পরী’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“অল্পবয়েসি মেয়ের প্রেম যুক্তিনির্ভর না, আবেগনির্ভর । Disability তার চোখে পড়বে না। তার চোখে পড়বে লোকটির Mental Ablity, লোকটির মানসিক সৌন্দর্য”।
“প্রেম আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, সেটা যদি One sided হয় তাহলে তার গুরুত্ব আরও বেশি”।
“মেয়েদের তৃতীয় নয়ন থাকে। এই নয়নে সে প্রেমে পড়া বিষয়টি চট করে বুঝে ফেলে”।
“ভালোবাসা আর ঘৃণা আসলে একই জিনিস। একটি মুদ্রার এক পিঠে ভালোবাসা আরেক পিঠে লেখা ঘৃণা। প্রেমিক প্রেমিকার সামনে এই মুদ্রা মেঝেতে ঘুরতে থাকে। যাদের প্রেম যত গভীর তাদের মুদ্রার ঘূর্ণন তত বেশি। এক সময় ঘূর্ণন থেমে যায় মুদ্রা ধপ করে পড়ে যায়। তখন কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় ভালোবাসা লেখা পিঠটা বের হয়েছে, কারও কারও ক্ষেত্রে ঘৃণা বের হয়েছে। কাজেই এই মুদ্রাটি যেন সবসময় ঘুরতে থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঘূর্ণন কখনও থামানো যাবে না”।
“প্রেমের ক্ষমতা যে কী প্রচণ্ড হতে পারে প্রেমে না পড়লে তা বোঝা যায় না”।
“প্রেম এবং করুণা এক ব্যাপার নয়। প্রেম সর্বগ্রাসী ব্যাপার । প্রেমের ধর্ম হচ্ছে অগ্নি। আগুন যেমন সব পুড়িয়ে দেয়, প্রেমও সব ছারখার করে দেয়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘তন্দ্রাবিলাস’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“সাধারণ মেয়েরা ছালবাকল নেই ছেলের প্রেমে কখনও পড়বে না। তারা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার খুঁজবে। টাকা-পয়সা খুঁজবে। ঢাকায় বাড়ি আছে কি না দেখবে । কিন্তু অতি বিত্তবান মেয়েরা ছালবাকল নেই ছেলেদের প্রতি এক ধরনের মমতা পোষণ করবে। অসহায়ের প্রতি করুণা। সেই করুণা থেকে প্রেম”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘তোমাদের এই নগরে’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ক্লাস টেনের মেয়েরা পাত্রী হিসেবে সর্বশ্রেষ্ঠ হয়। কারণ এই বয়সে মেয়েরা প্রথম পুরুষের ব্যাপারে কৌতূহলী হয় এবং প্রেম করার জন্য ছোঁক ছোঁক করে । বিয়ের পর হাতের কাছে স্বামীকে পায় বলে প্রথম প্রেমটা স্বামীর সঙ্গে হয়। আর এই প্রেম দীর্ঘস্থায়ী হয়”।
“কোনো মেয়ে যদি সত্যি সত্যি কোনো ছেলের প্রেমে পড়ে, সে তখন এই ছেলের আশেপাশের সব কিছুর প্রেমে পড়ে”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘দিঘির জলে কার ছায়া গো’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“প্রেম করার জন্য মেয়েরা স্মার্ট ছেলে খোঁজে, বিয়ে করার জন্য পছন্দ করে শান্তশিষ্ট ভদ্র ছেলে। সেই সব ভদ্র ছেলেদের পোশাক হবে পাজামা, পাঞ্জাবি, স্যান্ডেল । এরা হাঁটবে মাটির দিকে তাকিয়ে। হাসবে লাজুক ভঙ্গিতে । নিজের স্ত্রী ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাবে না”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘ছায়াবীথি’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“পুরুষের হচ্ছে ভাবাসালো ভালোবাসা খেলা। মেয়েদের ব্যাপার অন্যরকম, তাদের কাছে ভালোবাসার সঙ্গে খেলার কোনো সম্পর্ক নেই। একটা মেয়ে যখন ভালোবাসে তখন তার ভালোবাসার সাথে অনেক স্বপ্ন যুক্ত হয়ে যায়। সংসারের স্বপ্ন, সংসারের সঙ্গে শিশুর স্বপ্ন। একটা পুরুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন সে শুধু তার প্রেমিকাকেই দেখে আর কাউকে নয়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘সে আসে ধীরে’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“প্রেম নিতান্তই জৈবিক ব্যাপার । নীলপদ্ম বলে একে মহিমান্বিত করার কিছু নেই”।
“পৃথিবীর সব মেয়েদের ভেতর অলৌকিক একটা ক্ষমতা থাকে। কোনো পুরুষ তার প্রেমে পড়লে মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে তা বুঝতে পারে। এই ক্ষমতা পুরুষদের নেই। তাদের কানের কাছে মুখ নিয়ে কোনো মেয়ে যদি বলে শোনো আমার প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। আমি মরে যাচ্ছি।’ তারপরেও পুরুষ মানুষ বোঝে না। সে ভাবে মেয়েটা বোধহয় এপেন্ডিসাইটিসের ব্যথায় মরে যাচ্ছে”।
“মেয়েদের বোঝা খুব কঠিন। একটি মেয়েকে কখনও পুরোপুরি বুঝতে যাবেন না। পুরোপুরি বুঝতে গেলে হয় আপনি পাগল হয়ে যাবেন নয়তো আপনি মেয়েটির প্রেমে পড়ে যাবেন”।
“প্রেমের বহিঃপ্রকাশ হলো চুমো খাওয়া । শুধু যে মানুষই চুমো খায় তা কিন্তু না। পশু-পাখি, বিড়াল, শিম্পাঞ্জিসহ আরও অনেকেই চুমো খায়। এতে মন হালকা হয়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘লীলাবতী’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“মদ না খেয়েও মানুষ মাতাল হতে পারে। একটি ভালো কবিতা পড়ে মাতাল হতে পারে, একটি সুন্দর সুর শুনে মাতাল হতে পারে, প্রেমে পড়েও মাতাল হতে পারে”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘দিনের শেষে’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ভদ্র ছেলেদের জন্য মেয়েদের মনে কখনও প্রেম জাগে না । যা জাগে সেটা হলো সহানুভূতি”।
“হুট করে প্রেম হয় কনজারভেটিভ ফ্যামিলিগুলোতে। ঐ সব ফ্যামিলির মেয়েরা পুরুষদের সঙ্গে মিশতে পারে না, হঠাৎ যদি সুযোগ ঘটে যায়—তাহলেই বড়শিতে আটকে গেল”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘আকাশ জোড়া মেঘ’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“একটা মেয়ের জন্য তোমাকে পারফেক্ট হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ মেয়েরা কখনোই পারফেক্ট ছেলেদের সাথে প্রেম করে না”।
“ভাসিয়ে দেবার প্রবণতা প্রকৃতির ভেতর আছে । সে জোছনা দিয়ে ভাসিয়ে দেয়, বৃষ্টি দিয়ে ভাসিয়ে দেয়, তুষারপাত দিয়ে ভাসিয়ে দেয়। আবার প্রবল প্রেম, প্রবল বেদনা দিয়েও তার সৃষ্ট জগৎকে ভাসিয়ে দেয়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘হরতন ইশকাপন’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
ভালোবাসা নিয়ে হুমায়ূন আহমদের উক্তি সমূহ
ভালবাসা নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। একই নৌকায় তাঁরা দুই আরোহী। তবে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে তাঁরা ভিন্ন ভিন্নভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। হুমায়ূন আহমদের ভালবাসার উক্তি গুলো নীচে দেয়া হলো।
“হে মানব সন্তান। তুমি তোমার ভালোবাসা লুকাইয়া রাখিও। তোমার পছন্দের মানুষদের সহিত তুমি রূঢ় আচরণ করিও। যেন তোমার স্বরূপ বুঝতে না পারে। মধুর আচরণ করিবে দুর্জনের সঙ্গে। নিজেকে অপ্রকাশ রাখার এই প্রথম পাঠ”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘হিমুর বাবার কথামালা’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ভালোবাসাবাসির ব্যাপারটা হাততালির মতো। দুটা হাত লাগে। এক হাতে তালি বাজে না। অর্থাৎ একজনের ভালোবাসায় হয় না”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘রূপা’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“যে জিনিস চোখের সামনে থাকে তাকে আমরা ভুলে যাই। যে ভালোবাসা সব সময় আমাদের ঘিরে রাখে তার কথা আমাদের মনে থাকে না। মনে থাকে হঠাৎ আসা ভালোবাসার কথা”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘বহুব্রীহি’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ভালোবাসা একটা পাখি। যখন খাঁচায় থাকে তখন মানুষ তাকে মুক্ত করে দিতে চায়। আর যখন খোলা আকাশে তাকে ডানা ঝাপটাতে দেখে তখন খাঁচায় বন্দি করতে চায়”।
“অল্প বয়সের ভালোবাসা অন্ধ গণ্ডারের মতো । শুধুই একদিকে যায়। যুক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, আদর দিয়ে এই গণ্ডারকে সামলানো যায় না”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘পাথর’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ভালোবাসা ও ঘৃণা দুটোই মানুষের চোখে লেখা থাকে”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ভুল করে ভালোবেসে ফেলা যায় তবে ভুল করে কখনও ভুলে যাওয়া যায় না”।
“মানুষের জন্মই হইল অপাত্রে ভালোবাসা দান করার জন্য। যাদেরকে ভালোবাসার কোনো যোগ্যতা নাই তাদেরকেই মানুষ ভালোবাসে”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘কোথাও কেউ নেই’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“সারাজীবনে কখনও ভালো না বেসে থাকার চেয়ে একবার ভালোবেসে তাকে হারানো উত্তম”।
“ব্যবহার করা কপালের টিপটার আঠা নষ্ট হলেও মেয়েরা সেটা যত্ন করে রেখে দেয়। একজোড়া কানের দুলের একটা হারিয়ে গেলেও অন্যটা ফেলে না। পুরাতন শাড়িটা, ভাঙা চুড়িটা কাজে লাগবে না জেনেও তুলে রাখে, কারণ হলো মায়া। মেয়েরা মায়ার টানে ফেলনা জিনিসও ফেলে না। অসংখ্য কষ্ট, যন্ত্রণা পেয়েও মেয়েরা মায়ার টানে একটা ভালোবাসা, একটা সম্পর্ক, একটা সংসার টিকিয়ে রাখতে চায়। এই জন্য মেয়েরা মায়াবতী আর মায়াবতীর কোনো পুরুষবাচক শব্দ নেই”।
“পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দময় জিনিসগুলির জন্যে কিন্তু টাকা লাগে না। বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যেমন জোছনা, বর্ষার দিনের বৃষ্টি, মানুষের ভালোবাসা”।
“মানুষকে ঘৃণা করার অপরাধে অতীতে কাউকে কখনও মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়নি। কিন্তু মানুষকে ভালোবাসার অপরাধে অতীতে অনেককেই হত্যা করা হয়েছে, ভবিষ্যতেও হয়তো হবে”।
সম্রাট
“অপেক্ষা হলো শুদ্ধতম ভালোবাসার একটি চিহ্ন। সবাই ভালোবাসি বলতে পারে কিন্তু সবাই অপেক্ষা করে সেই ভালোবাসা প্রমাণ করতে পারে না”।
“ভালোবাসা ব্যাপারটাই ধোঁয়াটে । প্রকৃতির এক খেলা। যার উদ্দেশ্যে মানব সৃষ্টির নিরাপত্তা”।
“পুরুষের হচ্ছে ভালোবাসা ভালোবাসা খেলা। মেয়েদের ব্যাপার অন্যরকম, তাদের কাছে ভালোবাসার সঙ্গে খেলার কোনো সম্পর্ক নেই। একটা মেয়ে যখন ভালোবাসে তখন তার ভালোবাসার সাথে অনেক স্বপ্ন যুক্ত হয়ে যায়। সংসারের স্বপ্ন, সংসারের সঙ্গে শিশুর স্বপ্ন। একটা পুরুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন সে শুধু তার প্রেমিকাকেই দেখে আর কাউকে নয়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘সে আসে ধীরে’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ভালোবাসা আর ঘৃণা আসলে একই জিনিস। একটি মুদ্রার এক পিঠে ভালোবাসা আরেক পিঠে লেখা ঘৃণা । প্রেমিক প্রেমিকার সামনে এই মুদ্রা মেঝেতে ঘুরতে থাকে। যাদের প্রেম যত গভীর তাদের মুদ্রার ঘূর্ণন তত বেশি। এক সময় ঘূর্ণন থেমে যায় মুদ্রা ধপ করে পড়ে যায়। তখন কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় ভালোবাসা লেখা পিঠটা বের হয়েছে, কারও কারও ক্ষেত্রে ঘৃণা বের হয়েছে । কাজেই এই মুদ্রাটি যেন সবসময় ঘুরতে থাকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। ঘূর্ণন কখনও থামানো যাবে না”।
“বেশিরভাগ মানুষের স্বভাব হচ্ছে বিড়ালের মতো। তারা সুখের সময় পাশে থাকে। দুঃখ-কষ্ট যখন আসে তখন দুঃখ-কষ্টের ভাগ নিতে হবে এই ভয়ে চুপি চুপি সরে পড়ে। তাদের কোনো দোষ নেই। আল্লাহ মানুষকে এমন করেই তৈরি করেছেন। তারপরেও কিছু কিছু মানুষ আছে যারা দুঃখ-কষ্টের সময় পাশে এসে দাঁড়ায়। দুঃখ-কষ্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার মতো বড় কোনো অস্ত্র তাদের হাতে থাকে না। তাদের থাকে শুধু হৃদয় পূর্ণ ভালোবাসা”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘এপিটাফ’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“মানুষের স্বভাব হলো, কেউ যখন ভালোবাসে তখন নানান কর্মকাণ্ড করে সেই ভালোবাসা বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে, আবার কেউ যখন রেগে যায় তখন তার রাগটাও বাড়িয়ে দিতে ইচ্ছা করে”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘আঙুল কাটা জগলু’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে না হওয়াটাই বোধ হয় ভালো। বিয়ে হলে মানুষটা থাকে ভালোবাসা থাকে না। আর যদি বিয়ে না হয় তাহলে হয়তো বা ভালোবাসাটা থাকে, শুধু মানুষটাই থাকে না। মানুষ এবং ভালোবাসা এই দুয়ের মধ্যে ভালোবাসাই হয়তো বেশি প্রিয়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘কোথাও কেউ নেই’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“যে ভালোবাসা না চাইতে পাওয়া যায়, তার প্রতি কোনো মোহ থাকে না”।
“দরিদ্র পুরুষদের প্রতি মেয়েদের একপ্রকার মায়া জন্মে যায়, আর এই মায়া থেকে জন্মায় ভালোবাসা”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“হয়তো আমরা আমাদের চারপাশের সবার কাছে থেকে প্রচুর ভালোবাসা পেয়ে থাকি, কিন্তু কোনো ভালোবাসা পিতামাতার ভালোবাসার মতো নয়”।
“পাওয়া ভালোবাসাগুলো সব সময় সত্যি মনে হয়, পাবার পর কত জন মূল্য দিতে পারে?”
“একটা মেয়ের ভালবাসাকে আমি যুদ্ধের ট্যাংকের মতো মনে করি। সত্যিকার প্রেমিক-প্রেমিকা ট্যাংকের কঠিন বর্মের ভেতর থাকে। কোনো চরাই-উত্রাই ট্যাংককে আটকাতে পারে না”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘দিঘির জলে কার ছায়া গো’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“করুণাও এক ধরনের ভালোবাসা, তবে তা ক্ষতিকারক ভালোবাসা। এই ভালোবাসা মানুষকে অসুস্থ করে দেয়”।
“যখন কেউ কারও জন্য কাঁদে, সেটা হলো আবেগ। যখন কেউ কাউকে কাঁদায়, সেটা হলো প্রতারণা। আর যখন কেউ কাউকে কাঁদিয়ে নিজেও কেঁদে ফেলে, সেটাই হলো প্রকৃত ভালোবাসা”।
“ভালোবাসার মাঝে হালকা ভয় থাকলে সেই ভালোবাসা মধুর হয়। কেননা হারানোর ভয়ে প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়ে যায়”।
“মানুষ তার এক জীবনে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি শোনে তা হচ্ছে তার নিজের নাম। যতবারই শোনে ততবারই তার ভালো লাগে। পৃথিবীর মধুরতম শব্দ হচ্ছে নিজের নাম। পৃথিবীর দ্বিতীয় মধুরতম শব্দ খুব সম্ভবত ভা্লোবাসি”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘হিমুর হাতে কয়েকটি’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“প্রত্যেক ভালোবাসায় দুইজন সুখী হলেও তৃতীয় একজন অবশ্যই কষ্ট পাবেই, এটাই হয়তো প্রকৃতির নিয়ম”।
“পৃথিবীর সব থেকে কঠিন ভাষা হলো চোখের ভাষা, এই ভাষা পড়ার জন্য মনে গভীর ভালোবাসার দরকার হয়”।
“মানব জাতি অপেক্ষা পছন্দ করে না। তবু তাকে অপেক্ষা করতে হয় । ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা, ঘৃণার জন্য অপেক্ষা, মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা, আবার মুক্তির জন্য অপেক্ষা”।
“বুদ্ধিমতীরা নিজেকে ভালোবাসে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না। ভালোবাসার ভান করে”।
“যার রাগ বেশি সে নীরবে অনেক ভালোবাসতে জানে, যে নীরবে ভালোবাসতে জানে তার ভালোবাসার গভীরতা বেশি, আর যার ভালোবাসার গভীরতা বেশি তার কষ্ট অনেক বেশি”।
“যারা সুখী হয় তাদের মধ্যে সুখী হবার বীজ থাকে। জল, হাওয়া এবং ভালোবাসায় সেই বীজ থেকে গাছ হয়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘এইসব দিনরাত্রি’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“আল্লাহতালা মেয়েগুলিকে এত সুন্দর করে পাঠিয়েছেন কেন কে জানে? মেয়েদের সবই সুন্দর। এরা রাগ করলেও ভালো লাগে, অপমান করলেও ভালো লাগে । ভালোবাসার কথা বললে কেমন লাগবে কে জানে?”
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘জনম জনম’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“বাস্তবতা এতই কঠিন যে কখনও কখনও বুকের ভিতর গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু ভালোবাসাও অসহায় হয়ে পড়ে”।
“কাউকে ভালোবাসলে বেশি কাছে যাবার চেষ্টা করতে নাই। তাতে করে কাছে যাবার আকুতি দেখে সে হয়তো দূরে চলে যেতে পারে। কেননা মানুষ সোজা পথের চেয়ে বাঁকা পথে হাঁটতে আনন্দ পায় বেশি। কিন্তু সব কিছু হারিয়ে সোজা পথেই আসতে হয়। সেই সময়ে নতুন করে ভালোবাসার ইচ্ছাটা আর থাকে না”।
“কাউকে প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসার মধ্যে এক ধরনের দুর্বলতা আছে। নিজেকে তখন তুচ্ছ এবং সামান্য মনে হয়। এই ব্যাপারটা নিজেকে ছোট করে দেয়”।
“যখন মানুষের খুব প্রিয় কেউ তাকে অপছন্দ, অবহেলা কিংবা ঘৃণা করে তখন প্রথম প্রথম মানুষ খুব কষ্ট পায় এবং চায় যে সব ঠিক হয়ে যাক। কিছুদিন পর সে সেই প্রিয় ব্যক্তিকে ছাড়া থাকতে শিখে যায়। আর অনেকদিন পরে সে আগের চেয়েও অনেক বেশি খুশি থাকে যখন সে বুঝতে পারে যে কারও ভালোবাসায় জীবনে অনেক কিছুই আসে যায় কিন্তু কারও অবহেলায় সত্যিই কিছু আসে যায়”।
“যে ভালোবাসা না চাইতে পাওয়া যায়, তার প্রতি কোনো মোহ থাকে না”।
“যাকে ভালো লাগে তাকে চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু ভালোবাসার মানুষেরা সবাই চোখের আড়ালে চলে যায়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘এই মেঘ, রৌদ্রছায়া’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“সত্যিকারের ভালোবাসার একটা বড় লক্ষণ ভালোবেসে সুখ পাওয়া যায় না, কখনও না”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘পাখি আমার একলা পাখি’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ভালোবাসাবাসির জন্যে অনন্তকালের প্রয়োজন নেই, একটি মুহূর্তই যথেষ্ট”।
“ভালোবাসা যদি তরল পানির মতো কোনো বস্তু হতো, তাহলে সেই ভালোবাসায় সমস্ত পৃথিবী তলিয়ে যেত। এমনকি হিমালয় পর্বতও”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘এপিটাফ’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“ভালোবাসার মানুষদের খুব কাছে কখনও যেতে নেই!”
“মানুষ তার আবেগ, ভালোবাসা, ঘৃণার জন্ম ও অবস্থানের জন্যে যে স্থান নির্ধারিত করেছে সেটা হলো হৃৎপিণ্ড-হার্ট”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘কবি’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“একঘেয়ে কোনো আকর্ষণই আকর্ষণ থাকে না। মায়ের প্রতি মানুষের অন্ধ ভালোবাসা ফিকে হয়ে আসে একঘেয়েমির জন্যেই”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘অচিনপুর’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“এই পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষ খুন হয়। প্রবল ঘৃণার মানুষ এবং প্রচণ্ড ভালোবাসার মানুষ”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘নবনী’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“অভিমান ভালোবাসার মতো, কখনও দীর্ঘস্থায়ী হয় না”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘অনন্ত অম্বরে’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা এই ব্যাপারগুলি আসলেই খুব অদ্ভুত। কোনো জাগতিক নিয়ম-কানুনের ভেতর এদের ফেলা যায় না”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘অপেক্ষা’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“I love you যত সহজে বলা যায়, আমি তোমাকে ভালোবাসি’ অত সহজে বলা যায় না। মুখের কাছে এসে আটকে যায়। ভালোবাসাবাসির কথা বলার জন্যে অন্য একধরনের ভাষা থাকলে ভালো হতো। সাইন ল্যাংগুয়েজের মতো কোনো ল্যাংগুয়েজ। যে ল্যাংগুয়েজে শুধু চোখ ব্যবহার করা হবে”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘কবি’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালোবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনও কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘বলপয়েন্ট’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“মোটামুটি ধরনের ভালোবাসা নিয়ে চল্লিশ বছর পাশাপাশি বাস করার চেয়ে তীব্র ভালোবাসা নিয়ে চার বছর জীবনযাপন করা অনেক ভালো”।
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘‘উঠোন পেরিয়ে দুই পা’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
“পুরুষ মানুষ শরীরের ভালোবাসার জন্যে কাতর হয়ে থাকে।“
উপরোক্ত হুমায়ূন আহমেদের উক্তি তাঁর রচিত ‘কুহক’ গল্প বই হতে সংগৃহীত।
প্রেম ভালবাসা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। সবই হয়ত তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত। তাঁর প্রতিটি লেখায় তিনি প্রেম ভালবাসার স্বরুপ এঁকেছেন। প্রেম ভালবাসাকে পাশ কাটীয়ে কোনো লেখকের পক্ষেই হয়ত লেখা সম্ভব নয়। তবে হুমায়ূন আহমদের বিশেষত্ব এই যে, এত সহজ সরল কথায় কেউ পাঠকের মনে এত গভীর ভাবে দাগ কাটতে পারেনি। ওপাড়ে ভালো থাকুক ভালবাসার হুমায়ূন আহমেদ।
1 Comment
[…] […]