আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত ৭ টি ভালোবাসার গল্প । ভালোবাসা দিবস – ২০১৯
ভালোবাসা দিবস ২০১৯ কে কেন্দ্র করে আত্মপ্রকাশ ফেইসবুক গ্রুপে আয়োজন করা হয়েছিল আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩। যেখানে বিভিন্ন সাহিত্য গ্রুপের অ্যাডমিন, মোডারেটরগণ অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের রচিত অপ্রকাশিত ভালোবাসার গল্প নিয়ে। নির্বাচিত ৭ টি ভালোবাসার গল্প নিয়ে আত্মপ্রকাশের এই আয়োজন।
আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত ৭ টি ভালোবাসার গল্প । ভালোবাসা দিবস – ২০১৯
রচনার ভাগসমূহ
ভালোবাসা মানেই তা প্রেমিক-প্রেমিকা মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। ভালোবাসার গল্প হতে পারে বাবা-মার প্রতি, প্রকৃতির প্রতি, মানুষের প্রতি, এমনকি পালিত পশুর প্রতি। এমনি বেশ কিছু ভালোবাসার গল্প নিয়েই আয়োজন করা হয় প্রতিযোগিতাটি। আত্মপ্রকাশ বিচারকদের সহায়তায়, প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া বেশ কিছু গল্প থেকে ৭ টি ভালোবাসার গল্প নির্বাচন করে আত্মপ্রকাশ ব্লগে প্রকাশ করা হয় এবং লেখকদের পুরস্কৃত করা হয়। নির্বাচিত সেই ৭ টি ভালোবাসার গল্পকেই এখানে একত্রিত করা হয়েছে।
হৃদমাঝারে – তানভীর তুর্য । ভালোবাসার গল্প
“আমি সাব্বির ভাইকে কীভাবে যেন ভালোবেসে ফেলেছি। আমার চেয়ে প্রায় পনেরো ষোলো বছরের বড় সাব্বির ভাই যদি এ কথা জানতে পারেন তাহলে বোধহয় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাবেন। আমার পেছনে লাগার মাত্রাটাও আরও বেড়ে যাবে। ভাববেন আমার নিশ্চিত মাথা খারাপ হয়ে গেছে এবং অতি শীঘ্রই মানসিক ডাক্তার না দেখালে ভয়ংকর কিছু ঘটে যাবে। কিন্তু আমি অতকিছু বুঝি না। তাকে ভালোবেসে ফেলেছি এটাই বড় কথা।
সাব্বির ভাইয়েরা আমাদের দোতলায় বহু বছর ধরে ভাড়া থাকেন। তবে তাদের বাড়ির কাজ প্রায় শেষের পথে। খুব তাড়াতাড়ি হয়তো নিজেদের বাসায় চলে যাবেন। আমি ছোটবেলা থেকেই সাব্বির ভাইদের দেখে আসছি। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা মোটেও বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়ার মতো না। বাকি অংশ …
গল্প মেঘেরও ক্লেশ আছে – রুবী ফরায়েজী বিপুল । ভালোবাসার গল্প
১৪ই ফেব্রুয়ারি১৯৮৯সাল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।এখনকার মত প্রেমের এতো হিড়িক্কি নেই।তবুও ক্যম্পাসে প্রেম যুগলের সরব উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।কেউ হাতে হাত রেখে নিচুস্বরে প্রতিস্রুতি দিচ্ছে-নিচ্ছে, কেউ স্বপ্নে হারিয়ে গেছে প্রিয় মানুষের সঙ্গে, কেউ ফুল-গীটার নিয়ে বসে গেছে প্রেমিকার সামনে,কোনো জোড়া আবার পরিপূর্ণ ভালোবাসার খোঁজে বেরিয়ে পড়ছে প্রকৃতির নিরিবিলি পরিবেশে। ফুলের দোকানে বেশিরভাগ স্টুডেন্টদের ভীড়।আমি একনজরে দেখে নিলাম।
প্রেম বিষয়ে আমি বরাবরই উদাসীন।অন্য আর দশটা মেয়ের মতো সহজে কারোর সঙ্গে প্রেম জমে উঠেনি বা প্রেম আমাকে রাঙ্গাতে পারেনি।
ক্লাসমেট মাহিন গত পাঁচ বছর নিরলস ভাবে এই দিনটিতে প্রপোজ করেই যাচ্ছে। আমি জানি প্রতি বছরের মতো আজও সে কয়েকটি গোলাপি রঙের গোলাপ নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির হবে। পাঁচটি বছর ধরে দেখছি,মাহিন সাধারণ আর দশটা ছেলের মতো নয়। ক্যাম্পাসের জাম গাছটার নিচে বসলেও ওর হাতে থাকবে ভারী বই,চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা। গলার স্বর অনেকটাই গম্ভীর। ওকে আমার কখনোই প্রেমিক বলে মনে হয় নি। বাকি অংশ …
অন্তরালে ভালোবাসা – জান্নাতুল ফেরদৌস । ভালোবাসার গল্প
বসন্ত আসি আসি করছে। সকালে জানালা দিয়ে মিষ্টি বাতাস গায়ে লাগতেই ঘুম ভেঙে গেল। গতকাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এতদিন পরীক্ষার যন্ত্রণায় অন্যকিছু তো দূরে থাক, নিজের দিকেই তাকানোর সময় ছিল না। যতটা ভয় পাচ্ছিলাম, তার চেয়ে পরীক্ষা অনেক ভালো হওয়ায় মনটাও ফুরফুরে লাগছে। ফ্রেশ হয়ে চায়ের মগটা হাতে নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম। বারান্দার গ্রীলের সাথে ঝুলন্ত ফুল গাছের টবগুলো ভেজা দেখছি। তার মানে কেউ গাছের পরিচর্যা করেছে। এ বাড়িতে আমি ছাড়া আর একজনই গাছের দিকে খেয়াল করার মতো আছে; দাদু। কয়েক মাস থেকে ক্লাস, পরীক্ষা নিয়ে এত ব্যস্ত যে গাছের কথা মনে করার সময়ও ছিল না। নিশ্চয়ই দাদু গাছগুলোর যত্ন আত্তি করেছেন। আমি চায়ের মগটা হাতে নিয়ে দাদুর ঘরে গেলাম। দাদুর সাথে অনেকদিন কথা বলার সময়ও করতে পারিনি। কী এক ডাক্তারী পড়া নিয়ে জীবন জলাঞ্জলি দিচ্ছি! ভাবতেই বিরক্ত লাগে।
দাদুর ঘরটা বেশ বড়। ঘরে আগের আমলের সৌখিন কিছু আসবাবপত্র রাখা আছে। এগুলো দাদীমার শখের জিনিস। বাবা অনেকবার আসবাবপত্রগুলো বদলে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দাদীমা রাজি হননি। তার একটাই কথা, এসব জিনিস তার শ্বশুরের নিজ হাতে গড়া। এর মাঝে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে। আজ ছয় মাস হলো দাদীমা এখানে নেই। ছোট কাকা-কাকী দুজনেই সিলেটে সরকারী চাকুরি করেন। তাদের তিন বছরের মেয়েকে দেখাশোনার জন্য দাদীমাকে সিলেটে নিয়ে গিয়েছেন কাকা। এদিকে আমার ছোট ভাই তাসিনের সামনে এস.এস.সি পরীক্ষা। ইংরেজিতে খুবই দূর্বল তাসিন। দাদু তার আমলের বিএ পাস করা। তিনি ইংরেজিতে খুব ভালো বলে বাবা তাসিনকে ইংরেজি শেখানোর দায়িত্ব দাদুকে দিলেন। তাই দাদুর আর যাওয়া হলো না। দাদীমা সিলেটে চলে যাওয়ার পর দাদু নিজের মধ্যে কেমন যেন গুটিয়ে গেলেন। এটা কারও চোখে ধরা না পড়লেও আমি কিছুটা বুঝতে পারি। বাকি অংশ …
যাযাবর ভালোবাসা – সাবরীণ আক্তার তন্বী । ভালোবাসার গল্প
“মাঝরাত্রে সুপ্তির ঘরের জানালায় টোকা পড়ল।ও জানালা খুলে দিয়ে দেখে অতুল দাঁড়িয়ে।
ও প্রশ্ন করে উঠলো, “আপনে এত রাইতে যে প্রতিদিন আহেন, কেউ দেইখা নিলে কী হইবো?”
অতুল বলে উঠে, “তোরে না দেইখা যে থাকবার পারি না।কি করুম ক?একনজর দেহার লাগিই তো ছুইটা আহি এত রাইতে ঘুম বাদ দিয়া।”
সুপ্তির মুখের কোণে একচিলতে হাসি খেলে যায়। ও মনে মনে বলে ওঠে, “আপনারে না দেখলেও যে আমার রাইতের ঘুম হারাম হইয়া যায়।”
অতুল চাদরের নিচে থেকে হাত বের করে সুপ্তির দিকে এগিয়ে দেয়।হাত ভর্তি টসটসে কুল।
সুপ্তি এগুলো দেখে অনেক খুশি হয়। ও বাগানের ভেতর বসে সেদিন ওর সই পারুলকে বলেছিল, কুল খেতে ইচ্ছে হয়েছে ওর। মানুষটা সেদিন শুনে নিয়েছিলো। আজ নিজেই এতো রাতে বয়ে নিয়ে এসেছে ওর জন্য। কুলগুলো হাত বাড়িয়ে নিতে গিয়ে ও দেখলো অতুলের হাতে অনেকখানি চিঁড়ে গেছে।ও তাড়াতাড়ি কুলগুলো নিয়ে বিছানার উপর রেখে, ওর হাতের চোটের উপর হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো, ইশ! এত খানি চোট পাইলেন কেমনে? বাকি অংশ …
চন্দ্রমুখী – সুস্মিতা শশী । ভালোবাসার গল্প
আলোর পথে – মাহামুদা মিনি । ভালোবাসার গল্প
শহরের একেবারে শেষদিকে পতিতালয়ের একটা দুতলা বাড়ির নিচতলার একটা ঘরে হালকা আলো দেখা যাচ্ছে। পুরো এলাকা অন্ধকারে ঢেকে আছে গত দুঘন্টা যাবত কারণ বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকারে এলাকাটিকে আরও ভয়ানক লাগছে। যেন কোনো অশুভ ছায়া ঢেকে দিচ্ছে চারিদিক।
একটা মেয়ে আধো অন্ধকারে বসে ফোনের টর্চের আলোয় একটা সস্তা কলম দিয়ে দ্রুতগতিতে ডাইরিতে কিছু লিখে যাচ্ছে আর মাঝে মাঝে বামহাত দিয়ে চোখ মুছছে। মাঝে মাঝে দুচার ফোটা পানি টপটপ করে ডাইরির উপর পড়ে কালি লেপ্টে যাচ্ছে। তার সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই বিন্দুমাত্র।
ডালিয়া?
ও ডালিয়া? কই আছিস তুই?
আলেয়া বেগম তার ভারী শরীর নিয়ে নড়তে পারে না ঠিকমতো। তবুও ডালিয়াকে খুঁজতে সে বিছানা থেকে নেমেছে। সন্ধ্যা হয়েছে অনেকক্ষণ হলো অথচ ডালিয়া এখনও তার কাছে আসেনি। কী যে হলো মেয়েটার!
ডালিয়া পতিতা পল্লীতে থাকে। আলেয়া বেগম ২৫ বছর আগে তাকে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে বড় করেছে। আলেয়া একজন পতিতা ছিল। তাই ডালিয়া একটু বড় হতেই তাকেও যোগ দিতে হয়েছে দেহ ব্যবসায়। আলেয়ার দুতলা একটা বাড়ি। ১৩ টা মেয়ে তার বাড়িতে থাকে। সবগুলো মেয়েই ডালিয়ার মতো। যাদের কেউ নেই পৃথিবীতে। সন্ধ্যা হতেই ঝাঁকে ঝাঁকে খদ্দেররা আসতে থাকে। তাই সন্ধ্যা হতেই আলেয়ার হাকডাক শোনা যায়। মেয়েরা তৈরি হয়েছে কিনা দেখতে হয় তাকে। বাকি অংশ…
অভিভাবক – ঈশিতা জুবায়ের । ভালোবাসার গল্প
“চিত্রটা একটা রান্নাঘরের। একটা ডিম মাটিতে পড়ে ভেঙে পুরো পিচ্ছিল হয়ে আছে। ভাজার জন্য ফাটানো হচ্ছিলো বোধহয় অসাবধানতায় হাত ফসকে গেছে। আটার গুড়োতে চারপাশ পুরো সয়লাব। ঝুড়ির পেয়াজ-মরিচ সব এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা। তেল কৌটোর মুখ খুলে উপুড় হয়ে রয়েছে। গ্যাস বার্নারটাতেও কিছুতেই ম্যাচের কাঠিটা ধরানো যাচ্ছে না। আসলে অনভ্যস্ত হলে যা হয় আর কী! এদিকে আবার ঘড়ির কাটা জানিয়ে দিচ্ছে সময় লাফিয়ে-লাফিয়ে চলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। হাতে আর একদম সময় নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই সৌরভ কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়বে। ছেলেটাকে তো আর খালি পেটে বিদায় দেয়া যায় না। সারাদিন তো বাহিরের খোলা স্ট্রিট ফুডগুলো খেতে হয়, বাড়ি থেকে যে কোনো খাবার তৈরি করে দেয়া হবে সেটাও তো আর এখন সম্ভব না। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ পোড়া গন্ধ নাকে এসে লাগে। ইশশ! তাওয়া অতিরিক্ত গরম হয়েছে নাকি! রুটি ঝলসে ছাই! বাহিরের ঘর থেকে দুমদাম করে জুতো ঝাড়ার শব্দ আসছে। সৌরভ বোধহয় তৈরি হয়ে গেছে। একগাদা এটো থালাবাসনের স্তুপ ঠেলে বেসিনটাতে হাত ধুতে গিয়ে ঝনঝন শব্দে সব ছড়িয়ে পড়লো। কিন্তু এখন আর এসব কিছুই গ্রাহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না আসফাক সাহেবের। তড়িঘড়ি করে যেটুকু খাবার তৈরি হয়েছে সেটুকুই হাতে করে ডাইনিংয়ের দিকে লম্বা লম্বা পা চালান তিনি। বাকি অংশ …
এমনি করে আত্মপ্রকাশ ব্লগে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ভালোবাসার গল্প। সবগুলো ভালোবাসার গল্প পড়ে নিতে পারেন এক ট্যাগে >> ভালোবাসার গল্প