ধাঁধা সম্ভার । কিশোরগঞ্জ জেলায় প্রচলিত এবং জনপ্রিয় ধাঁধাসমূহ
কিশোরগঞ্জ জেলার গ্রামাঞ্চলে এককালে সকল শ্রেণির মানুষের মুখে মুখে শিলুক বা ধাঁধা প্রচলন ছিল। বিশেষ করে মহিলারা শিলুক বলায় পারদর্শী ছিলেন। তারা কথায় কথায় এককালে শিলুক বলতে পারতেন। এ যুগে এখন আর খুব একটা শিলুক উচ্চারিত হতে দেখা যায় না। সে এক সময় গেছে যখন গ্রামের বাড়ির দাদা-দাদী, নানা-নানী, মা-চাচীরা বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে শ্লোকের ঝাঁপি খুলে বসতেন।
হাজারো ঢঙের বৈচিত্রপূর্ণ শ্লোক সাধারণ জ্ঞান বুদ্ধি ঝালাইয়ের জন্য অর্থাৎ মগজ ধোলাইয়ের জন্য খুবই সহায়ক হতো। কে কতো বুদ্ধিমান অথবা কার মাথায় কত বুদ্ধি আছে তার তাৎক্ষণিক প্রমাণ পাওয়া যেত এ সকল শ্লোক বা ধাঁধার প্রশ্ন উত্তর প্রদানের মধ্য দিয়ে। যেমন- শুভংকরের ফাঁকি ছয়ত্রিশ থেকে তিনশ চলে গেলে, কত থাকে বাকি? এর উত্তর দিতে হয়- ৩৩ (তিন’শ অর্থাৎ শ,ষ ও স)। একটি শিলুকে এক মহিলাকে প্রশ্ন করে তার স্বামীর নাম কী জানতে চাইলে উত্তরে স্ত্রীর মুখে স্বামীর নাম উচ্চারণ করে না, তাই কথা বলে শিলুকে-
“তিন তের দিয়া বার
নয় দিয়া পূরণ কর
গাজী-বলে ডাহে হগলে
হুন মিয়া ভাই বলে
আমার স্বামীর এই নাম।
পার কইয়া দেও, নাইওর যাম”।
উত্তর : ১৩ X ৩ = ৩৯ + ১২ = ৫১ + ৯ = ৬০ অর্থাৎ নাম তার ষাইডাগাজী।
ধাঁধার ভিতরে কখনো কখনো কোন প্রচ্ছন্ন গল্প-কাহিনি-কিংবদন্তিও থাকে। তাকে বুদ্ধি দিয়ে খুঁজে বের করতে হয়। কোনো কোনো শিলুক হাস্য রসিকতায় থাকে ভরপুর। তবে কোন কোন ধাঁধার উত্তর দেওয়া খুব কঠিন কাজ। যেমন-
“তিন অক্ষরে নাম তার
জলে বাস করে
মধ্যের অক্ষর ছেড়ে দিলে আকাশে উড়ে”।
বহুল প্রচলিত এই ধাঁধার উত্তর- চিল।
“দুই হাতে টিপা টিপি
এক হাতে ঢালা
ভিতরে গেলে
তোমারও ভালা আমারও ভালা”।
এই হাস্যরসাত্মক ধাঁধার উত্তর – হাতে চুড়ি পরানো।
“অষ্টচরণ, ষোল হাঁটু
খাবার ধরতে চলে গোলাটু
শুকনা ডাঙ্গায় পাতে জাল
তাতে খাবার খায়, চিরকাল”।
এই ধাঁধাটির উত্তর হবে – মাকড়সা।
“বিয়া হইল না বাপের
আড়াই হাত মোছ হলো ছেলের
কও দেখি ভাই, কেবা পারো
ঘুরে যায় মাথা পণ্ডিতেরও”।
জটিল এই ধাঁধাটির উত্তর হবে – রসুন।
“জঙ্গলবাড়ি হতে বাহির হইল টিয়া
সোনার পুটুলি মাথায় দিয়া”।
এই ধাঁধাটির উত্তর হবে – কলাগাছ। জঙ্গলবাড়ি, কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী এলাকার নাম। জঙ্গলবাড়ি ঈশা খার বাড়ি নামেও পরিচিত।
“হাতে লইয়া হাতে থাপা দিলে
বাদ্য বাজে টেম্ টেম
অ-মিয়া, দাম কত দেম”।
মজার এই ধাঁধাটির উত্তর হবে – মাটির পাতিল।
“একটুখানি পুষ্টুনি খান
কইয়ে ভূর ভূর করে
রাজা আইলে প্রজা আইলে
সবাই তুইল্যা সালাম করে”।
কিশোরগঞ্জ অঞ্চলে প্রচলিত এই শিলুকের উত্তর – হুক্কা।
“দুই ঠ্যাং ফাগাইয়া
মাইজখানঅ লাগাইয়া
ফরিংয়ের রাজায় কয়
যাঁতা দিলে সিদ্ধি অয়”।
মজার এই ধাঁধার উত্তর – সুপারি কাটার চরতা বা যন্ত্র।
“যাঁতার উপরে যাতা
আড়ুর উপরে ভর।
কমরে কমরে লাগাইয়্যা
গলার মধ্যে ধর”।
উত্তর- জল ভরা কলস।
“আত্তির দাত ময়ুরের পাখ
এই শিলুক না ভাঙ্গাইতে পারলে
গাধার জাত”।
একটু ঠেশ দিয়ে বলা শিলুকটির উত্তর- মূলা।
কিশােরগঞ্জ অঞ্চলে সংগৃহীত মজার ধাঁধা সমূহ
রচনার ভাগসমূহ
অতীতে কিশােরগঞ্জের নারীদের বিয়ের কালে শিলুক বা ধাঁধা জানে কিনা তা প্রশ্ন করা হতো। বলতে পারলে বিয়ে হতে কোন অসুবিধা হতাে না। কারণ তাতে বর পক্ষের বিশ্বাস ছিল যে, যে পল্লিবালা এত সুন্দর ‘শিলুক’ বলতে বা বানাতে পারে সে বুদ্ধিমতি না হয়ে পারে না, তাকে বৌ করে নিতেই হবে। এককালে কিশােরগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে এই বিশ্বাস বা ধারণা প্রচলিত ছিল, এখনও তা অব্যাহত আছে। এদিক থেকে বিচার করলে পল্লির নর-নারীর মুখের ভাষাগুলাে এক একটি ভাব জগৎ, চিন্তা-চেতনার সম্পদের পরিচয় বহন করে। কিশােরগঞ্জ জেলার নামকরণ নিয়েও একটি স্থানীয় ধাঁধা রয়েছে।

“বলুন তাে- কিশাের নামটি তার
রয়েছে গঞ্জের পাশে
এ নামে কোন স্থান আছে” ?
স্থান ভিত্তিক এই ধাঁধা উত্তর- কিশােরগঞ্জ, বৃহত্তর ময়মনসিংহ।
“ছােটকালে জটা ধারী
জোয়ান কালে উলঙ্গ
বুড়াকালেও জটাধারী
মধ্যে মধ্যে সুড়ঙ্গ”।
সুন্দর এই ধাঁধার উত্তর – বাঁশগাছ।
“এক অঙ্গ, দুই অঙ্গ, তিন অঙ্গ জোড়া
দৈবে তার মাথা গেল পােড়া।
ভাবে বােঝা যায় তার পেটে করে রাও
মুখে এত স্বাদ তারে চুষে চুষে খাও”।
এই মজার ধাঁধাটির উত্তর – হুক্কায় তামাক খাওয়া।
“এককানি ক্ষেতের দুইকানি মাথা
ভঁইষ মারে লাতালুথা
মরা ভঁইষে যুদ্ধ করে
এই শিলুক কে ভাঙ্গাইতে পারে”।
এই জটিল শ্লোকটির উত্তর – মই।
“রাস্তা দিয়া দুটি মেয়ে যায় হাঁটিয়া
একই দামের একই শাড়ি দুইজনে পরিয়া।
কত দামের শাড়ি এবং তাদের সম্বন্ধ কি হয়
এক কথায় বল দেখি, দাম ও পরিচয় ?”
এই গানিতিক ধাঁধা উত্তর হবে – ২০৩ (অর্থাৎ ওরা দুই সতিন)।
“ক’ দিয়ে নাম তার
আঁঠাল যুক্ত আঁশ
শরীর জুড়ে কাটা তার
তবু করি চাষ।
উত্তর- জাতীয় ফল কাঁঠাল।
“ইন্দ্র নয়, তবু তার সহস্র নয়ন ।
লােহানয়, তামানয়, তামাটে বরন
মােরগ নয়, ময়ুরী নয়, শিরে মােহন চূড়া।
তারে খেলে খুশি হয় ছেলে পুলে বুড়া”।
এই সূক্ষ্ম ধাঁধা উত্তর হবে- আনারস।
“চামড়ার তলে তলে পড়তে পড়তে ছানি
কোন দেশে দেখিয়াছ গাছের আগায় পানি।
এই সহজ ধাঁধা উত্তর- ডাব।
“মাটির তলে থাকে বেটি।
কাপড় পিন্ধে আঁটি আঁটি
কেউনা ছোঁয়, কেউ না থােয়
তবু কত পরিষ্কার রয়”।
উত্তর- রসুন।
“উড়িতে ঝিকিমিকি পড়িতে ধান্ধা
আদার করিতে তার লেঙ্গরে বান্দা”।
উত্তর- কনুই জাল।
“এমন একটা অখাদ্য সর্ব লােকে খায়
ছুডু মানুষ খাইলে পরে কান্দিয়া বেড়ায়
বড় লােকে খাইলে পরে বুহে ব্যথা পায়
জোয়ান মানুষ খাইলে পরে এম্মে এম্মে চায়”।
এই মজার ধাঁধা উত্তর- আছাড়।
“আঁতুর বাড়াল বাইশটা
চুরে নিল তিনডা, বাকি রইল তার কয়ডা?
উত্তর- একটিওনা । কারণ এগুলাে ছিল তিনটি যন্ত্রের নাম যা কাঠ মিস্ত্রি ব্যবহার করে।
“তুমি থাক জলে, আমি থাকি ডালে।
তােমার আমার দেখা হবে দু’জন-দুজনে মরণের কালে”।
উত্তর- মাছ ও লেবু। কিশোরগঞ্জ ছাড়াও এই ধাঁধা প্রায় সব জায়গায় প্রচলিত।
“প্রথম অক্ষর দিলে বাদ, সর্ব লােক খায়
মাঝের অক্ষর বাদ দিলে, বাজনা বাজায়”।
উত্তর- বিছানা। এটিও সারা দেশে প্রচলিত ধাঁধা।
“আজব এক জিনিস, দেইখ্যা আইলাম ভাই।
আট পাও তার, দুই হাঁটু, লেজ আছে পিঠে।
লড়ে চড়ে, উপরে নিচে পড়ে, চোখ তার নাই”।
উত্তর- দাড়িপাল্লা।
“দেইখ্যা আইলাম মিয়া সাহেবের হাটে।
এক ছেলে দুই মায়ের পেটে”।
উত্তর- দরজার খিল।
“চামড়া সুন্দর কুমড়ার বাখল
না খায় সাধু গেরানে (ঘ্রাণে) পাগল”।
উত্তর- তাল।
“উচু উচু বুক টান
এক বেটার চার কান”।
উত্তর- চৌচালা ঘর।
“ছােট্ট-খাট্ট ছেলেডা, রাঙা কোর্তা গায়
হাটু দিয়া বন্দুক মারে, দালান চিড়া খায়”।
উত্তর- বজ্রপাত।
“রহিমুদ্দি কলিমুদ্দি
সবাই মিল্লা ডাহে,
তবু বেটা ফিরা নাহি চাহে”।
গভীর ভাবার্থের এই ধাঁধা উত্তর- সময়।
“দুই অক্ষরে নাম মাের,
বাঁশের কাঠের তালি
বেঁধে রাখলে আটজন চোর,
দোড়াই একা মুই ছেড়ে দিলে লুজ,
মুই কিছুই নাহি জানি”।
উত্তর- মই।
“আছে ফল দেশে নাই।
খাই ফল তার যে গা (ছাল) নাই”।
উত্তর- শিলাবৃষ্টি।
“হাত আছে পা নাই।
মাথা তার কাড়া
আস্ত মানুষ গিলে খায়।
বুক তার কাড়া”।
উত্তর- জামা।
“আমি থাকি খালে, তুমি থাক ডালে
আখেরের দিনে মইত একখানে”।
উত্তর- মাছ ও মরিচ।
“এস্তুন মাইল্লাম ছুরি
ছুরি গেল পাতালপুরী”।
উত্তর- কেঁচো।
“গুল গুল লােহার পাও
কান্দ লইয়া দিমু দউড় পাও কিনা পাও”।
উত্তর- মটরগাড়ি।
“আল্লার কি কুদরত
লাঠির ভিতর শরবত”।
বহুল প্রচলিত ধাঁধাটির উত্তর- ইক্ষু।।
“পাঁচ বেড়া তুইল্যা দিল, বত্রিশ বেড়ার ঘাড়ে
দুয়ারে আছে কুটনাবুড়ি টাইন্যা নেয় ঘরে”।
উত্তর- আঙ্গুল, দাঁত ও জিহ্বা।
“তিন কুনা মধ্যে গাতা
ফালদু ফালদা মারে যাতা”।
উত্তর- পেলুন (এক প্রকার মাছ ধরার যন্ত্র)।
“নাকে বসে কানে ধরে”।
উত্তর- চশমা।
“হাত নাই পাও নাই দেশে দেশে ঘুরে
তার অভাব হলে লােকে অনাহারে মরে”।
উত্তর- মুদ্রা।
“গাতার ভিতর পাতা নড়ে, |
না করলে আরও নড়ে। অথবা।
বত্রিশটি ডালে একটি পাতা”।
উত্তর- জিহ্বা।
“তুমি আমি একজন দেখিতে একরূপ
আমি কথা কই, তুমি কিন্তু চুপ”।
উত্তর- ছবি।
“নহি আমি গাছ তবু শাখা আছে মাের
সব সময় থাকি আমি মাথার উপর”।
উত্তর- হরিণের শিং।
“দিনগুনি, সপ্তাহগুনি, আর গুনি
এমনি করি কাটাই আমিবারটি মাস”।
উত্তর- ক্যালেন্ডার।
“তিন অক্ষরে নাম যার আছে এশিয়াতে,
প্রথম অক্ষর বাদ দিলে বড় ঝাল খেতে”।
উত্তর- শ্রীলংকা।
“গলা আছে তলা নাই
পেট আছে উজুরী নাই”।
উত্তর- পলাে (মাছধরার যন্ত্র)।
“আইল দিয়া যা
উইক্কা উইক্কা (উঁকি) চা”।
উত্তর- পুঁই।
“আমার একটি পাখি আছে
যা দিই তা খায়
জল দিলে মারা যায়। অথবা
যা কিছু পায়- গিলে খায়”।
উত্তর- আগুন।
“একশ ঘরের দু’শ দুয়ার
এক মারুলে ঘর তৈয়ার”।
উত্তর- তছবিহ ছড়া।
“এক হাত গাছটা
ফুল ধরে পাচটা”।
উত্তর- হাতের আঙ্গুল।
“মা রইল নানীর পেটে
আমি গেলাম বাবুর হাটে”।
উত্তর- কলা।।
“পানির নীচে হিজল গাছ
কাটতে লাগে বার মাস”।
উত্তর- ছায়া।
“বিনা সুতার মােহনমালা- কেউ দেখে না তারে
ইহার এমন নির্যর ধারা- সারা করে ছাড়ে”।
উত্তর- প্রেম।
“ছােট ছোট পােলাপান দুধ ভাত খায়
বড় বড় গাছের সাথে যুদ্ধ করতে চায়”।
উত্তর- কুঁড়াল।
“তিন টক্কর লােহা লক্কর
আমার কাছে নাইকো ফক্কর”।
উত্তর-ঘড়ি।
“ঘষা দিলে মিটে আশা
নইলে পরে সব নিরাশা”।
উত্তর- দিয়াশলাই।
“দুই পা ধরিয়া |
আপন কাজ করিয়া
পরে দেয় ছাড়িয়া”।
উত্তর- ছরতা (সুপারি কাটার যন্ত্র)।
“মাসে মাসে আসে যায়
দিনে খায় না, রাতে খায়”।
উত্তর- রােজা।
“এক ফকিরের এক দাঁত
রাত পােহালে গােল-ভাত”।
উত্তর- পাঁচন।
“কোঠার কোঠা নব্বই কোঠা
বেত লাগে আশি মােঠা
সােনার কামলা ভাই
কোঠাতে কেন বান নাই”।
উত্তর- মৌমাছির বাসা।
“টিপ দিলে কথা কয়
না দিলে না কর”।
উত্তর : রেডিও।
“কালাে গাছের তলে
কালাে হরিণ চলে”।
উত্তর : উকুন।
“লাল লাল জামা গায় ।
মেমসাহেবরা হাটে যায়”।
উত্তর : টমেটো।
“জমি সাদা বীজ কালাে যায় বহুদুর।
তার বচনে মনটি হয় যেন মধুর চেয়ে মধুর।
উত্তর : চিঠি।
“বাগানে এক শব্দ হইল, শুনল দুইজনে,
সেইজনে গেল না, গেল অন্য দুইজনে।
সেইজনে দেখল না, দেখল অন্য দুইজনে
সেইজনে আনল না, আনল অন্য দুইজনে।
সেইজনে খাইল না, খাইল অন্য একজনে”।
উত্তর : কান, পা, চোখ, হাত ও মুখ।
“হাত নাই পা নাই পেটটা কেবল সার
সারা জনমে একবার করেছে আহার”।
উত্তর : বালিশ।
“অর্থের লোেভ তার যত পারে নেয়। |
আবার চাইলে সব অর্থ ফেরত দেয়”।
উত্তর : ব্যাংক।
“সমুদ্রে জন্ম আমার থাকি সবার ঘরে।
একটু পানির পরশ পেলে তখন যাই মরে”।
উত্তর : লবণ।
“দেখিতে গােল গা।
পেটের ভিতর হাত পা চলে কিন্তু নড়ে না।
এটা কি তা বল না”।
উত্তর : ঘড়ি।।
“লতা নয়, পাতা নয়, তবু লতিয়ে লতিয়ে যায়
সর্ব অঙ্গ ছেড়ে শুধু চক্ষু দুইটি খায়”।
উত্তর : ধুয়া।
“ডাল নেই, পালা নেই, আছে শুধু পাতা
নাক নেই, মুখ নেই, কয় তবু কথা”।
উত্তর : বই।
“অকুল সমুদ্রে মেরু, জল তাতে নাই
রাশি রাশি স্থলভাগ, ঘর-বাড়ি নাই”।
উত্তর : মানচিত্র।
“এপাড়ে শােয়া শিয়াল
ঐ পাড়ে শােয়া শিয়াল ক’টি শিয়াল?”
উত্তর : ২টি।
“সাগরে জন্ম নয়, জন্ম হইলে খালে
এমন আশ্চর্য বস্তু পরিয়ে সকলে
রাশির মিনতি হলে টপকে উঠে গালে”।
উত্তর : জুতা।
“পা, পিষ্ঠ, মাথাটা, কুড়ি আঙ্গুল তার নাকটা
চক্ষু কর্ণ নাই তার এ কোন জীব”?
উত্তর : মানুষ।
“কালা কালা বকরি কালা ঘাস খায়
আলে ঠোট মুছে গর্তে ঢুকে যায়”।
উত্তর : ক্ষুর।
কিশােরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চল থেকে সংগৃহীত ধাঁধা সমূহ
কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চল ধাঁধার জন্য বরাবরই বিখ্যাত। হাওর অঞ্চলের সহজ সরল মানুষগুলো বেশ রসিক হয় এবং তাঁরা ধাঁধাঁর মাধ্যমে কথা বলতে পছন্দ করেন। নিচে কিশোরগঞ্জ হাওর অঞ্চলে প্রচলিত বেশ কিছু ধাঁধা দেওয়া হলো।

“তুমি ডাক যারে
সে নাই ঘরে
তােমার শ্বশুর বিয়ে করেছে।
আমার শাশুড়ি মারে”।
এই সৃজনশীল ধাঁধা উত্তর – জামাই ও শ্যালকের বউ।
“শাখাহাতি ছােলাদাতি
পােলা দোয়াছ কার নাতি?
পােলার বাপ যার শ্বশুর
তার বাপ আমার শ্বশুর”
সুন্দর ও সৃজনশীল শিলুকটির উত্তর – ভাই ও বোন।
“একটি গাছে যদি এক ঝাঁক পাখি জোড় জোড় করে বসতে চায়- তখন একটি ডাল খালি থাকে, আর যদি পাখিগুলি একা একা বসতে চায় তখন একটি পাখি উড়ালে থাকে, কয়টি পাখি ও কয়টি ডাল?”
এই গাণিতিক ধাঁধা উত্তর হবে – ৪টি পাখি ও ৩টি ডাল।
“চিড়ার সের পয়সা পয়সা, গুড়ের সের তিন পয়সা, আগে গেলে আগে পাবেন, চিনির সের ছ’আনা, আড়াই সের কিন ভাই, চার আনায় কতটুকু পাবেন।
এই গানিতিক ধাঁধা উত্তর : ১ সের চিড়া, ১ সের গুড় ও আধা সের চিনি।
এক কথায় সংগৃহীত ধাঁধা সমূহ
“কোন ধানে চাল নেই ?”
উত্তর : অভিধানে।
“কোন ইস্টেশনে গাড়ি থাকে না?
উত্তর : রেডিও স্টেশনে।
“কোন ড্রাইভার গাড়ী চালায় না?
উত্তর : স্ক্রু ড্রাইভার।
“কার ছাতা সবচেয়ে ছােট?”
উত্তর : ব্যাঙের ছাতা।
“কোন শহর খুলতে মানা?”
উত্তর : খুলনা।
“ধর্ম ধলা কর্ম কালা/মাথাত লেজুড়/পুটকিত মালা।”
এই মজার ধাঁধা উত্তর : খাইস্যা জাল।।
“ঘর আছে দুয়ার নাই/মানুষ আছে রাউ(কথা) নাই।”
উত্তর : কবর।
“লাইলের তলে মরা গাই/ সাতবার তাতে দুয়াতে যাই।”
উত্তর : মাছ ধরার চাই।
“মাথার উপর মাথা/তার উপর তিন মাথা।”
উত্তর : মানুষ।
“দুই বুক দিয়া পারা/মাঝখানে তারা।”
উত্তর : চোখ।
“দুটো ঠ্যাং টাইনা মাঝানে লাগাইয়া/আমার কাজ কিরয়া/ তুমারে দিলাম ছাড়িয়া।”
এই প্রাপ্তবয়স্ক ধাঁধাঁ উত্তর : সুপারি কাটার সরতা।
“থইল্যা দিলে মেইল্যা যায়। বিত্তে গেলে আরাম পায়।”
উত্তর : ছাতা।
“উহু উহু দুকু পাই তাে আমি খয়ালাই। দিতে লইছ আরেকটু দাও/ তুমারাে ভালা আমারাে ভালা”।
এই প্রাপ্তবয়স্ক ধাঁধাঁ উত্তর : চুড়ি।
“হাতে ধইরা টিপাটিপি/ মুখখান করে কালা/ দিয়া সারলে তুমারাে ভালা আমারাে ভালা”।
উত্তর : চুড়ি।
“গলায় গলা কুমরে কুমরে লাগাইয়া/গলায় ধরে আড়াইয়া”।
উত্তর : কলসি।
“অতবড় উঠানডা ফুরায়া নাই/অত ফুল ফুইট্যা রইছে? তুলয়া নাই”।
উত্তর : আকাশের তারা।
“এই দেকলাম এই নাম বেত গরুর গাই নাই”।
উত্তর : বিজলী।
“মামুরা বাড়িতে গেছলাম/চুলার পাড়েত শুইয়া রইলাম”।
উত্তর : বিড়াল।
“মামুর বাড়ির পাশে/ঘাড় ভাঙ্গা শেয়ালে নাচে”।
উত্তর : কলার ছড়ি।
“নানীর বাড়িত গেলাম/ঘাটের তলে শুইয়া রইলাম”।
উত্তর : রাস্তা।
“নানীর বাড়িত গেলাম/ঘাটের তলে শুইয়া রইলাম।
উত্তর : পিপড়া।
“চারটা কলস জিনিস ভরতি/ নিজ দিকে পইরা রইছে পরে না”।
উত্তর : গাইয়ের ওলান।
“পেড়ে খায় পিডে চলে”।
উত্তর : স্টিমার।
“পিড কুঁজ বুক টান/ কুনাত তীর চারখান”।
উত্তর : ঘর।
“একটা জীবের পাঁচচল্লিশটা নাম”।
উত্তর : পাঁচকড়ি পােকা।
“আমার একডা খাসি আছে/
বট পাতা খায়/
নির ধরইরা টিপ মারলে উইক্যা উইক্যা যায়”।
এই মজার ধাঁধাঁ উত্তর : পেঁকি।
“লেড়বেড় ছ্যাপ দেয় খাড়া হয়/ টিপ দেওয়া হামায়া দেই”।
উত্তর : সুঁই-সুতা।
“রাত হইলে আগৃগুয়া/ দিন হইলে বাইট্যা”।
উত্তর : দরজা।
“পথে ঘাটে দেখছি যারে
বুঝি না তার কথা
কাটলে মাথায়, বুঝায় বুলি
কেমন ধারার প্রথা”।
উত্তর : কাবুলিওয়ালা।
“পেট কাটলে হয় কালী বরণ/ লেজ কাটলে হয় কার
এ জীবের চিনতে পারলে/শাবাশ বলি বাবু”।
উত্তর : কাবুলিওয়ালা।
তথ্যসূত্র : উল্লেখিত কিছু সংখ্যক ধাঁধা কথক –
১. উষা রাণী ভৌমিক, বয়স: ৮৬, পেশা: গৃহিনী, ঠিকানা: বৌলাই, কিশােরগঞ্জ
২. দুলাল চন্দ্র দাস, বয়স: ৪৫, পেশা গায়ক, ঠিকানা: নগুয়া, কিশােরগঞ্জ
৩. মজিবুর রহমান, বয়স: ৪৭, পেশা: ব্যবসা, ঠিকানা: নাজিরহাজির বাড়ি, |বৌলাই, কিশােরগঞ্জ
৪. বয়াতি চান মিয়া, বয়স: ৫০, পেশা বয়াতি, ঠিকানা: বৌলাই, কিশােরগঞ্জ
৫. সলিমুদ্দিন, বয়স: ৪৫, পেশা: সেল্যন ব্যবসা, ঠিকানা: বৌলাই, কিশােরগঞ্জ
এছাড়াও এই আর্টিকেলটির ধাঁধা সমূহ বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা’ কিশোরগঞ্জ অংশ থেকে সংগৃহীত।