দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ বুক রিভিউ । অনুবাদক- বদরুল মিল্লাত । রিভিউয়ার – তানজিনা তানিয়া

ইনিড ব্লাইটন রচিত বদরুল মিল্লাত বাংলা অনুবাদিত  ‘দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ’ বইটির রিভিউ নিয়ে, তানজিনা তানিয়া  ‘নহলী গ্র্যান্ড বুক রিভিউ প্রতিযোগিতা‘য় অংশ নিয়ে ১৩ তম স্থান অর্জন করেন। তানজিনা তানিয়ার ‘দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ বুক রিভিউ’ টি নিয়েই আত্মপ্রকাশের এই আয়োজন।

বই: দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ
লেখক: ইনিড ব্লাইটন
অনুবাদক: বদরুল মিল্লাত
পৃষ্ঠা: ১২৮
মুদ্রিত মূল্য: ২৫০/- (হার্ডকভার), ২২০/- (পেপারব্যাক)
বর্তমান বিক্রয় মূল্যঃ হার্ডকভার ১৩৫/- (৪৬% ছাড়), পেপারব্যাক ১০০/- (৫৫% ছাড়)(এপ্রিল, ২০১৯)।
অনলাইন প্রাপ্তিস্থান: নহলী বুকস
রিভিউয়ারঃ তানজিনা তানিয়া

দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ বুক রিভিউ । ইনিড ব্লাইটন। অনুবাদক- বদরুল মিল্লাত । কাহিনী সংক্ষেপ

রচনার ভাগসমূহ

আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার ‘দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ’ বইটিতে লেখক ইনিড ব্লাইটন অসাধারণ দশটি গল্প ফুঁটিয়ে তুলেছেন। রূপকথা আর শিশুতোষ এ্যাডভেঞ্চার এই বইটি কেবল শিশুদের নয়, বড়দের মন জয় করতেও সক্ষম। অসাধারণ এই বইটির দশটি গল্প হচ্ছে, দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ, জাদুর বাক্স, যে ট্রেন কখনো থামে না, মিস্টার উইগলির কেঁচি, উইলির কুকুর, জাদুর রুমাল, বিস্কুটের গাছ, এক হাজার ইচ্ছা পূরণ, প্রিকলির পরিবার, টেরিডিডল টাউন৷ প্রত্যেকটি গল্প যেমন সুন্দর তেমনি অনুবাদের মানও খুব সুন্দর। মনে হচ্ছিলো যেন অনুবাদ নয়, কোনো মৌলিক বই পড়ছি।

“দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ “গল্পটি তীব্র কুয়াশায় পথ হারিয়ে ফেলা উইলিয়ামের। সে পথ হারিয়ে একটি অদ্ভুতুড়ে বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে গিয়ে সে এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়।
“জাদুর বাক্স” গল্পটি একটি চমৎকার রূপকথার গল্প। গল্পটি দুটি পাজি ভূতকে কেন্দ্র করে।
“যে ট্রেন কখনো থামে না” গল্পটিও অনেকটা জাদুর বাক্স গল্পটির অনুকরণে। এই গল্পটি দুটি পরীর, যারা এক রাজকন্যার ট্রেন চুরি করে নিয়ে যায়। কিন্তু ট্রেনটি থামাতে গিয়েই বাঁধে যত বিপত্তি।
“মিস্টার উইগলির কেঁচি” গল্পটি একজন দর্জি আর এক ডাইনির। উইগলির কেঁচিটি অন্য কোনো সাধারণ কেঁচির মতো নয়। এই অসাধারণ কেঁচিটি ডাইনির হাতে পড়ার পর শুরু হয় গল্পের মূল মজা।
“জাদুর রুমাল” গল্পটিতে বিলি এক ডাইনির কাছ থেকে পাওয়া একটি জাদুর রুমাল এবং তারপরের অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনা নিয়ে লেখা।
স্পয়লার এড়াতে আর কোনো গল্প সম্পর্কে এখানে বললাম না।

দ্য-হাউজ-ইন-দ্য-ফগ-বই-ইনিড-ব্লাইটন-ইটন-অনুবাদ-বদরুল-মিল্লাত-The-House-in-the-Fog-book-Enid-Blyton
দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ – ইনিড ব্লাইটন



দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ বুক রিভিউ । পাঠ প্রতিক্রিয়া

সাধারণত শিশু বয়স পার হয়ে গেলে শিশুদের গল্প ভালো লাগে না। কিন্তু তবুও আমার হুমায়ূন আহমেদের ছোটদের জন্য লেখা গল্পগুলো এই বয়সেও খুব ভালো লাগে৷ এর আগে বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ পড়লেও শিশুতোষ অনুবাদ গ্রন্থ পড়লাম এই প্রথম। এত এত এত ভালো লেগেছে বইটা যা বলে বুঝাতে পারবো না। ছোট থেকে বহু রাক্ষস কোক্ষস, দৈত্য দানব আর ডাইনি বুড়ির গল্প পড়েছি। কিন্তু এমন স্বাদ যেন কোনো গল্পেই ছিল না। এই বয়সে এসে রূপকথা ভালো লাগার ব্যাপারটা সত্যি আশ্চর্যজনক। বইয়ের প্রত্যেকটি গল্প এমন ছিল যে, তারপর কি হবে তারপর কি হবে জানার জন্য মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠছিলো। গল্পদের তো এমনই হতে হয়। একটা গল্প শুরু করে সেটা শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত যদি মনে ছটফটানি না থাকে, তবে তো সে গল্প স্বার্থক গল্প নয়। পাঠকের ভালো লাগা বা অভিভূত হওয়াতেই তো গল্পের স্বার্থকতা৷ বইতে কোনো গল্পের চেয়ে কোনো গল্পকে হেয় করে দেখার সুযোগ নেই। তবুও আমি সবসময় যে কথাটা বলি সেটাই আবারও বলছি, সেরাদেরও সেরা হয়।

বইয়ে আমার প্রিয় গল্প ‘দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ’ ও বিস্কুটের গাছের গল্পটা। একজন দরিদ্র মানুষের বিস্কুট খেতে চাওয়ার আকাঙ্খা এবং খেতে না পারার কারণে আমার যেমন মন খারাপ হয়েছে তেমনি তার বিস্কুটের গাছ পেয়ে যাওয়াতে খুব মজা পেয়েছি। ছোটকাল থেকে শুনে এসেছি দৈত্য এসে মানুষের তিনটি ইচ্ছে পূরণ করে। কিন্তু “এক হাজার ইচ্ছাপূরণ” গল্পে তিনটি নয় ছেলেটি অনেকগুলো ইচ্ছা পূরণের সুযোগ পায়। শিশুতোষ এই গল্পটি আমার মতে প্রাপ্তবয়স্ককেও রোমঞ্চিত করে তুলেছিল। প্রিকলির গল্পটিকে আমার অন্যরকম একটি শিক্ষামূলক গল্প মনে হয়েছে। হঠাৎ করে উড়ে এসে কেউ জুড়ে বসলে যে বুকে সাহস সঞ্চার করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয় সেটির শিক্ষা পাওয়া যায় প্রিকলি তথা সজারুটির গল্পে। অন্যদিকে টেরিডিউল টাউন গল্পটিও একইসাথে চমৎকার ও শিক্ষামূলক ছিল। বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে পড়লে দিশা না হারিয়ে বুদ্ধি দিয়ে কাজ করার শিক্ষা মিলে গল্পটিতে৷

এক কথায় বলতে গেলে প্রত্যেকটি গল্পই মনোমুগ্ধকর। অন্য ভাষায় লেখা বইগুলো আমি পড়ি না। কেবল বাংলা সাহিত্যের প্রতিই রয়েছে আকর্ষণ। বইটি পড়ার সময় লেখক, অনুবাদক বদরুল মিল্লাত স্যারের প্রতি হিংসা হচ্ছিলো৷ স্যার জীবনের এত ব্যস্ততা পায়ে ঠেলেও কত ভালো ভালো বই না জানি পড়েছেন! হয়তো সব বই অনুবাদ করার সুযোগ উনি পাননি। আর অনুবাদ বইয়ের প্রতি আমার বিশেষ একটা অ্যালার্জি আছে। আর সেটা হচ্ছে অনুবাদের মান খারাপ হওয়া। কিছু কিছু অনুবাদ পড়ার সময় মনে হয়ে গুগল ট্রান্সলেটর দিয়ে পড়ছি বুঝি। কিন্তু বদরুল মিল্লাত স্যারের অনুবাদের মান যে ভালো সেটা ওনার “অনলি লাভ” পড়েই বুঝেছিলাম। এই বিশ্বাস আরও পাকাপোক্ত হলো ‘দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ’ পড়ে।

নহলীর এতগুলো বই পড়লাম। সবগুলো বই-ই চমৎকার ছিল। এই ২০১৯ মেলায় প্রকাশিত একমাত্র অনুবাদটিও শেষমেষ ভীষণভাবে আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। ডাইনি, ভূত, পরী, প্রাণি প্রভৃতির আদলে লেখক একইসাথে যোগান দিয়েছে শিক্ষা এবং বিনোদনের। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো এইসব ডাইনি, পরী প্রভৃতির আদলে লেখক ফুঁটিয়ে তুলেছে সমাজের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক। অসাধারণ বই ‘দ্য হাউজ ইন দ্য ফগ’ আমার মতো অসীম চাহিদাসম্পন্ন পাঠকমনকে তৃপ্ত করতে ব্যর্থ হয়নি। ব্যক্তিগত রেটিং ৪.৯৯/৫।

বই সম্পর্কিত তথ্য:

পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১২৮
মুদ্রিত মূল্য ২৫০/- (হার্ডকভার), ২২০/- (পেপারব্যাক)
বিক্রয় মূল্য : হার্ডকভার ১৩৫/- (৪৬% ছাড়), পেপারব্যাক ১০০/- (৫৫% ছাড়)
প্রাপ্তিস্থান : নহলী বুকস

আত্মপ্রকাশ সম্পাদক

http://attoprokash.com

আত্মপ্রকাশে অপ্রকাশিত গল্প এবং বুক রিভিউ এবং প্রবন্ধ প্রকাশ করতে যোগাযোগ করুন (ইমেইল-attoprokash.blog@gmail.com) অথবা ফেইসবুক পেইজ ইনবক্স। সর্বনিম্ন ১০০০ শব্দ হতে যেকোনো ঊর্ধ্ব সীমার ছোট গল্প গ্রহণযোগ্য। আপনার গল্প আত্মপ্রকাশ বিচারকদের দ্বারা নির্বাচিত হলে আপনাকে জানানো হবে এবং তা সরাসরি প্রকাশ করা হবে আত্মপ্রকাশে। আপডেট জানতে ফেইসবুক গ্রুপে সক্রিয় থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *