হরিণ রাজপুত্র – রুপকথার গল্প । আত্মপ্রকাশ

অনেকদিন আগেকার কথা।

এক দেশে ছিলেন এক বাদশা। বাদশার রাজ্য বেশ বড়। তবু সে-রাজ্য চালাবার মতন যথেষ্ট বুদ্ধিও তার ছিল। তাই রাজত্ব চলত ভালোভাবে। যে সময়ের যা কাজ, যে সময়ে যা করবার, সব ঠিক ঠিক হত। বাদশা নিজের কাজ যেমন করতেন, অন্যদের দিয়েও কাজ করিয়ে নিতেন। | বাদশার ছিল একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। সেই ছেলে, মেয়ে আর রাজ্যপাট নিয়ে সুখে-স্বচ্ছন্দে বাদশার দিন কাটত।…

দিনের পর দিন, বছরের পর বছর দেখতে দেখতে কেটে গেল। বাদশার বয়স বাড়তে লাগল। তারপর বুড়ো হয়ে বাদশা মারা গেলেন একদিন।।

ছেলে তখন বড় হয়েছে। সে হল নতুন বাদশা। বাদশা হয়ে সে রাজত্ব চালাতে লাগল। কিন্তু হলে কী হবে? নতুন বাদশা আর পুরনো বাদশার অনেক তফাত।

এ-বাদশার তেমন বুদ্ধি নেই। কাজ করবার তেমন শক্তিও নেই, কাজ করিয়ে নেবারও তেমনি ক্ষমতা নেই—যেমনটি ছিল সেই বুড়ো বাদশার।

এ-বাদশা শুধু একটা কাজ পারে। দেদার খরচ করতে পারে। দুহাতে সে শুধু ধন-দৌলত নষ্ট করতে লাগল। দিন যায়, মাস যায়। কিন্তু বছর আর ঘুরল না। সব ধন-দৌলত শেষ করে ফেলল সে। সমস্ত খরচ করে একেবারে সর্বস্বান্ত হয়ে গেল।

আর তো দিন চলে না। রাজকার্য অচল। কে চালাবে রাজ্য? কেমন করে চলবে রাজ্য? ভেবে কোনো কূল-কিনারা পায় না সে। শেষে এক উপায় ঠিক করল সে।

বোনকে ডেকে বলল, “দেখ বোন, আমাদের যা কিছু ছিল, সব তো খরচ হয়ে গেল। এখন আর আমাদের দিন চলছে না। লোকে এখনো এতটা জানে না বটে, কিন্তু জানতে আর বেশি দেরি নেই। জানতে পারলে আমাদের রক্ষে থাকবে না। রাজবাড়ি থেকে আমাদের তাড়িয়ে দেবে। সে অপমান সহ্য করার চেয়ে এক কাজ করা ভালো। এখান থেকে পালিয়ে অন্য কোথাও চলে যাই আমরা—যেখানে আমাদের কেউ চিনবে না।

কোন তার কথাতেই রাজি হল। রাজি না হয়েই-বা কী করে? সে বেচারি ভালো মানুষ, তাই ভাইয়ের মুখের ওপর কিছু বলতেও পারল না। সে-ও বুঝতে পারল, পালিয়ে যাওয়াই এখন একটি মাত্র উপায়।…

এই ঠিক করে তারা কিছু জিনিসপত্র বেঁধে নিল। তারপর নিশুতি রাতে রাজপুরী থেকে বেরিয়ে পড়ল।

কোথায় যে যাবে তার কোনো ঠিক নেই। শুধু এই রাজ্য ছেড়ে যেতে হবে, এই ভেবে ভাই আর বোন পথ চলতে লাগল।

অচেনা, অজানা পথ তাদের নিয়ে চলল—দূরে, অনেক দূরে। রাজ্যের সীমা তারা পার হল। পার হয়ে গেল অনেক পথ। শেষে গিয়ে পড়ল বিরাট এক মরুভূমিতে।

তখন দিনের আলো ফুটে উঠেছে। পুব আকাশে সূর্য অনেকখানি ওপরে উঠেছে। এ এক নতুন দেশ। কিন্তু এখানে চারি দিকে শুধু বালি। ধুধু করছে বালির স্তুপ।

সেই বালির উপর দিয়ে ভাই আর বোন চলতে লাগল। রোদের তাপ ক্রমেই বাড়ছে। পায়ের নিচে বালি আরো গরম হয়ে উঠছে। হাওয়াও যেন আগুনের হলকা। তার মধ্যে চলতে চলতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ল। তাদের ভারি কষ্ট হতে লাগল। তেষ্টায় গলা একেবারে শুকিয়ে গেল।

তাদের মনে হল, এ মরুভূমি বুঝি আর শেষ হবে না। এত কষ্ট তারা আগে কখনো করেনি। একে বাদশার ছেলে-মেয়ে, তার ওপর কোনোদিন রাজবাড়ি থেকে তারা বেরোয়নি, এত পথ হাঁটেনি।

তাদের কেবলই মনে হতে লাগল, আর বুঝি তারা হাঁটতে পারবে না। মুখ থুবড়ে পড়ে যাবে বালির মধ্যে কিংবা তেষ্টায় প্রাণ বেরিয়ে যাবে।।

এমন সময় ভাই বলে উঠল, “দেখ, দেখ—জল’! আঙুল দিয়ে সে বোনকে দেখাতে লাগল, বালির উপর খানিকটা ঘোলা জল! সেদিকে এগিয়ে যেতে যেতে সে বলল, “দেখ বোন, এই জল না খেয়ে আমি আর একটি পা-ও হাঁটব না।। | তার বােনও তার সঙ্গে এগিয়ে গেল জলের কাছে। কিন্তু ভালো করে দেখে বলল, না ভাই, না। এ-জল খেও না। এ-জলটা ভালো নয়। ভারি নোংরা মনে হচ্ছে। এমন জল খাওয়া ঠিক হবে না। তুমি ভাই একটু ধৈর্য ধরে থাক। আর একটু পরেই হয়তো। ভালো জল পাওয়া যাবে। এতক্ষণ যখন কষ্ট করেছ, আর একটু সহ্য করো।

কিন্তু ভাই তার কথা শুনল না। বলল, আমি আর থাকতে পারছি না। এখনি এ-জল না খেতে পেলে আমি মরে যাব। জল না খেলে আর এক পা নড়তে পারব না। আমায় তুমি বারণ করো না বোন!

এই বলে সে হাঁটু পেতে সেখানে বসে পড়ল। আর সেই জল দুহাতে তুলে তুলে খেতে লাগল। বোনটি অবাক হয়ে চেয়ে দেখল—জল খাবার সাথে সাথে তার ভাইটি একটা হরিণ হয়ে গেল! দেখে সে প্রথমে হতভম্ব হয়ে গেল। কী করবে, কী করা উচিত কিছুই ঠিক করতে পারল না। ভয়ে-দুঃখে বেচারির চোখ ফেটে জল এল। অঝোরে কাঁদতে লাগল সে।

এখন যে সে একেবারে একা ! এখন তাকে কে দেখবে? কার সঙ্গে থাকবে ? আপনার বলতে আর যে কেউ রইল না। এইসব কথা যতই ভাবতে লাগল, ততই কান্নায় বুক ভেসে যেতে লাগল তার।….

হরিণ রাজপুত্র-রুপ-কথার-গল্প-bangla-fairytale-story
হরিণ রাজপুত্র রুপকথার গল্প

এমনিভাবে অনেকক্ষণ কেটে গেল। তারপর সে একটু স্থির হয়ে ভাবল। বুঝতে পারল, এভাবে বসে কেঁদে কোনো ফল হবে না। এই মরুভূমি তো পার হতে হবে।

এই ভেবে হরিণটিকে নিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। তারপর পথ চলতে আরম্ভ করল। হরণও চলতে লাগল তার সঙ্গে সঙ্গে। তাকে আর কিছু বলতে হল না। সে যেন তার সেই ভাইটিই আছে। বাইরে থেকে দেখতে শুধু হরিণ !..

চলতে চলতে সেই মরুভূমি তারা পার হয়ে গেল। আরো কত পথ চলল, তারপর এসে পৌছল তারা এক ঝরনার ধারে।

বোনটি তখন পথ চলার কষ্টে খুবই ক্লান্ত। ভাবনায় মন তার অবশ। এমন সময় সামনে একটি বড় গাছ দেখে তার তলায় বসে সে বিশ্রাম করতে লাগল। হরিণও চুপ করে দাড়িয়ে রইল তার পাশে।

একটু পরে হরিণ বলল, “দেখ বোন, তুমি এই গাছে উঠে থাক। আমি একটু ঘুরে ফিরে আসি, খাবারের খোজ পাই কিনা। তোমার নিশ্চয় খুব খিদে পেয়েছে।

বোন তখন গাছের ওপরে বসে রইল। হরিণ গেল খাবারের খোঁজে। তাতে দুজনেরই ভারি খিদে পেয়েছিল।

হরিণ এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে লাগল। খানিক পরে একটা গাছে কিছু পাকা খেজুর দেখতে পেল সে। সেগুলো সে পেড়ে নিয়ে এল বোনের কাছে। তারপর দুজনে মিলে খেল। | জায়গাটা তাদের দুজনেরই বেশ পছন্দ হল। ঝরনার ধারে সেই গাছতলাটি বড় সুন্দর। যেমন নিরিবিলি, তেমনি চমৎকার সেখানকার দৃশ্য।

এই জায়গা ছেড়ে তাদের অন্য কোথাও যাবার ইচ্ছে হল না। তারা ঠিক করল, এখানেই থাকবে।

বোনটি ভাবল, এ-ই ভালো। নিজেদের রাজ্য থেকে অনেক দূরে এসেছে। এখানে আর কেউ তাদের সন্ধান করতে আসবে না।… সেখানে তাদের একটা একটা করে দিন কেটে যেতে লাগল।

সেই ঝরনাটি ছিল এক বাদশার রাজ্যে। সেই বাদশার ছিল অনেক ঘোড়া। আর সেই ঘোড়াদের জল খাবার জায়গা হল ওই গাছতলার ঝরনাটি। বাদশার ঘোড়াদের প্রায়ই সেখানে জল খাওয়াবার জন্যে নিয়ে আসা হত।ওরা দুজন সেখানে আসার পর ক’দিন থেকে বাদশার ঘোড়াগুলো সেখানে আর আসেনি।

কিন্তু একদিন তারা এল। বাদশার লোকজন ঘোড়াদের নিয়ে এল ঝরনার জল খাওয়াবার জন্যে।

ঘোড়াগুলোকে সেই গাছের নিচে বেঁধে রেখে, সহিসেরা চোঙায় ভরে ঝরনার জল নিয়ে গেল। তারপর ঘোড়াদের মুখের কাছে ধরল জল-ভর্তি চোঙা। | ওদের ঠিক উপরেই বোনটি গাছে বসেছিল। তার ছায়া পড়েছিল চোঙার মধ্যে, সেই পরিষ্কার টলটলে জলে। | জল খাবার জন্যে মুখ বাড়াতেই ঘোড়ারা দেখতে পেল এক পরমাসুন্দরী মেয়ের ছায়া জলে ভাসছে। দেখেই তারা মুখ ঘুরিয়ে নিল—জলে মুখ দিল না।।

সহিসেরা তাদের মুখ ধরে অনেক টানাটানি করল জলের দিকে, কিন্তু কিছুতেই ঘোড়াদের জল খাওয়াতে পারল না। চোঙা থেকে তারা কেবল মুখ ফিরিয়ে নিতে লাগল।

তখন সহিসেরা মনে করল, জলটা বোধহয় আর ভালো নেই। হয়ত ময়লা পড়েছে। তাই ঘোড়ারা খেতে চাইছে না। এই ভেবে চোঙার জল ফেলে দিয়ে আরো জল ভরে নিয়ে এল। কিন্তু এবারেও ঘোড়ারা জল খেল না। সবাই মুখ ঘুরিয়ে নিল একে একে।

 

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

সহিসেরা ব্যাপার কিছু বুঝতে পারল না। ঝরনার জল তো বেশ ঝকঝকে পরিষ্কার। তবে কেন ঘোড়ারা খাচ্ছে না? | তখন ঘোড়াদের নিয়ে তারা ফিরে এল রাজধানীতে। বাদশাকে এসে জানাল, ‘ঘোড়ারা ঝরনার জল খাচ্ছে না, হুজুর। কেবল মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আজ তাদের কী হয়েছে, বুঝতে পারছি না। ‘জলে বোধহয় কাদা ছিল। বাদশা একটু ভেবে তাদের জবাব দিল।

সহিসেরা তখন বলল, না হুজুর। আমরা ভালো করে জল দেখেছি। জল একেবারে তকতকে ছিল। একবার ফেলে দিয়ে চোঙা আবার ভর্তি করে দিয়েছি। ঘোড়ারা তাতেও খায়নি।

‘তাহলে আবার ঝরনার ধারে যাও। ভালো করে চারদিক দেখ। ঘোড়াগুলা হয়তো কাউকে দেখে ভয় পেয়েছে। তোমরা এবার সবদিকে নজর রাখ।

বাদশার হুকুম পেয়ে সহিসেরা গাছতলায় এল। এসে ঝরনার জল দেখতে লাগল। ঠিক যেখানে সেই গাছের ছায়া পড়েছে জলের ওপর।

ভালো করে তাকিয়ে এবার তারা ব্যাপারটা বুঝতে পারল। বাদশা তো ঠিকই বলেছেন ! ঝরনার জলে ও কার ছায়া? ঐ মুখ তো এর আগে এখানে কখনো দেখা যায়নি।

ঝরনার জলে একটি মেয়ের মুখ ভাসছে। হাওয়ায় জল কাপছে আর মেয়েটির মুখের ছায়া সরে সরে যাচ্ছে। জল থেকে সহিসেরা গাছের ওপর লক্ষ করে দেখল—গাছের উপর বসে রয়েছে। এক পরমাসুন্দরী মেয়ে ! তাদেরই দিকে সে চেয়ে রয়েছে। স্পষ্ট মেয়েটিকে দেখতে পেলে তারা।

তারা তখনি গেল বাদশার কাছে। ঘটনাটা জানাল তাকে।

সহিসদের মুখে শুনে বাদশা নিজে এসে সব দেখলেন, ঝরনার ধারে গাছের উপর বসে রয়েছে একটি ফুটফুটে মেয়ে। এমন সুন্দরী মেয়ে বাদশা এর আগে কখনো দেখেননি। তার রূপের আলোয় গাছের উপরটা যেন ঝলমল করছে। মেয়ে তো নয়— একটি চাঁদ!

পূর্ণিমার চাঁদ আর তার গা থেকে জোছনার মতন আভা বেরিয়ে আসছে! দেখে বাদশা আর চোখ ফেরাতে পারলেন না। বাদশা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কে? কোথা থেকে এখানে এসেছ ?  তুমি কি ভূত না পরি ?” রাজকন্যা বলল, ‘আমি ভূতও নই, পরিও নই। আপনারই মতন মানুষ আমি। এই শুনে বাদশা খুব খুশি হয়ে তাকে নিচে আসবার জন্যে অনুরোধ করলেন।

কিন্তু রাজি হল না। বাদশা তাকে অনেক অনুনয়-বিনয় করলেন। কিন্তু সে গাছ থেকে নিচে এল না কিছুতেই।

তখন বাদশার বিষম রাগ হয়ে গেল। রেগে হুকুম দিলেন গাছটা কেটে ফেলবার জন্যে। বাদশার লোকজন গাছ কাটতে আরম্ভ করে দিল। সে এক প্রকাণ্ড গাছ। এক কোপে তো কেটে ফেলা যায় না। তাই অনেকক্ষণ ধরে গাছ কাটা চলতে লাগল।

গাছ তারা কাটছে তো কাটছেই। কাটতে কাটতে দিনের আলো নিভে এল। দেখতে দেখতে অন্ধকারে সব ঢেকে গেল। গাছ-কাটা আর সেদিন শেষ হল না। বাদশার লোকজন আর অন্ধকারে কী করে ! তারা ফিরে গেল সেদিন। ভাবল, পরের দিন এসে বাকিটা শেষ করবে।

এদিকে সেই হরিণ ফিরে এল গাছের তলায়। সমস্ত দিন সে বাইরে ছিল। সে ফিরলে বোন তাকে সব কথা একে একে জানাল।।

সমস্ত শুনে হরিণ বলল, “ঠিক করেছ, বোন, ঠিক করেছ। নিচে নামলে খুব ভুল হত। কে জানে, ওদের মনে কী আছে। কাল যদি ওরা আবার আসে, সাবধান থেকো। গাছ থেকে কিছুতেই নামবে না। যে যাই বলুক, কোনো কথা শুনবে না।

এই বলে সে খানিকটা গাছের উপর উঠে গেল। তারপর জিভ দিয়ে গাছের গা চাটতে লাগল। খানিকক্ষণ চাটবার পর গাছটা আরো বড় হয়ে উঠল। গুঁড়িটা হল আগের চেয়েও মোটা। আর যতখানি কাটা হয়েছিল, সবটা আবার জুড়ে গেল।

পরের দিন সকালে হরিণ বেরিয়ে গেল আহারের খোঁজে।

বাদশার লোকজন আগের দিনের মতোই এসে হাজির হল। এসে দেখে, গাছটা জোড়া লেগে আগের চেয়েও বড় হয়ে উঠেছে। কী ব্যাপার, তারা কিছুই বুঝতে পারল না। আবার কাটতে আরম্ভ করে দিল গাছ। বাদশার হুকুম, গাছ। কাটতেই হবে। | সেদিনও তারা সারাদিন ধরে কাটল। কাটতে কাটতে আবারও শেষ করে ফেলল দিন। কিন্তু গাছ-কাটা শেষ হল না। সেদিনের মতন তাদের ফিরে যেতে হল। ভাবল, পরের দিন এসে বাকিটা শেষ করবে।

তারা চলে যাবার পর হরিণ ফিরে এল। এসে দেখে, আবার সেই কাণ্ড। তখুনি সে জিভ দিয়ে গাছের গা চাটতে আরম্ভ করল। আবারও কাটা গাছ জোড়া লেগে গেল। শুধু তাই নয়। গাছটা হয়ে উঠল আগের চেয়েও শক্ত আর প্রকাণ্ড …

পরের দিন সকালবেলা হরিণ আবার বেরিয়ে গেল। যাবার সময় বোনকে তেমনি সাবধানে থাকতে বলল। বোন বলল, “আচ্ছা। এখন তার অনেক সাহস হয়েছে। বেশ নিশ্চিন্ত হয়ে বসে রইল সে গাছের উপর।

একটু পরেই বাদশার লোকজন এসে হাজির হল। এবার তারা একদল কাঠবেকে সঙ্গে এনেছিল, যাতে সন্ধ্যে হবার আগেই গাছ কাটা শেষ করতে পারে।

কিন্তু গাছের চেহারা দেখে তারা কাজ আরম্ভ করল না। গাছটা যেমন বড়, তেমনি মজবুত। রাতারাতি দুদিন এমন হতে দেখে ভাবল, নিশ্চয় এর মধ্যে জাদু আছে। এ-গাছ কিছুতেই কেটে শেষ করা যাবে না। সে চেষ্টা করে লাভ নেই।

কাঠুরেও বলল, ‘এত বড় গাছ এক দিনে কাটা যাবে না। বাদশার লোকজন তখন ফিরে গেল। অন্য কোনো উপায় বার করতেই হবে এই ভেবে একটা মতলব ঠিক করল তারা।

এক ছিল ডাকসাইটে ডাইনি বুড়ি। সে পারত না এমন কাজ নেই। বাদশার লোকেরা গিয়ে তাকে ধরল। বাদশার কথা আর মেয়েটির কথা সব জানিয়ে বলল, ‘ভূলিয়ে-ভালিয়ে যেমন করে হোক মেয়েটাকে নিচে আনতে হবে। বাদশাকে বলে ভালোরকম বকশিশ তোমায় দেব।

ডাইনি বুড়ি খুশি হয়ে রাজি হল। তারপর জিনিসপত্র নিয়ে ঠকঠক করে লাঠি ঠকে এল সেই গাছের তলায়।।

এসে একটা লোহার তেপায়া দাড় করাল সে। তার উপর উলটো করে বসাল একটা কেটলি। তারপর ঝরনা থেকে খানিকটা জল এনে ঢেলে দিল। কেটলিতে নয় তার নিচেকার মাটিতে। তারপর দুচোখ বুজে বসে রইল। এমনভাবে রইল যেন তার দুচোখ অন্ধ। সে চোখে কিছু দেখতে পায় না।

রাজকন্যা বুড়িকে ওভাবে বসে থাকতে দেখল। দেখে তার মনে ভারী কষ্ট হল। ভাবল, আহা, বেচারি চোখে কিছু দেখতে পায় না।

তখন সে উপর থেকে বলল, “ও বুড়ি ! তুমি যে কেটলি উলটো বসিয়েছ আর জল ঢেলে দিয়েছ মাটিতে। তােমার রান্না কী করে হবে ?

তার কথা শুনে ডাইনি মনে মনে খুব খুশি হল। কিন্তু মায়াকান্না কেঁদে বলল, ‘আমার দুঃখের কথা আর কী বলব, বাছা ! চোখে মোটেই দেখতে পাই না। কোথায় রাখতে কোথায় রাখি, ঠিক-ঠিকানা নেই। তা বাছা, তোমার বড় দয়ার শরীর। তুমি যদি আমার কেটলিটা ঠিক করে বসিয়ে দাও, আমার বড় উপকার হয়।

রাজকন্যার মনে সত্যিই দয়া হয়েছিল। বুড়িকে সাহায্য করতেও তার ইচ্ছে হল। কিন্তু তখনি তার মনে পড়ে গেল, হরিণ-ভাইয়ের কথা। সে তাকে গাছ থেকে নামতে বারণ করে গেছে। তার কথামতো নামা উচিত নয়। তাই গাছ থেকে নামতে ভরসা হল না।

বুড়ি তাকে আরো দু-একবার মিনতি করে বলল, কিন্তু রাজকন্যা নিচে এল না। কিছুতেই। হরিণভাই তাকে যে নিচে নামতে বারণ করেছে।

বুড়ি তখন আর কী করে? লাঠি ঠুকঠুক করে সেখান থেকে চলে গেল। মুখে এমন ভাব করে গেল, যেন তার কত দুঃখ ।।

পরের দিনও বাদশার লোকজন কিংবা কাঠুরে কেউ এল না। শুধু ঠুকঠুক করে এলো সেই ডাইনি বুড়ি। কোনােরকমে আগুন জ্বালাল রান্না করবার জন্যে। কিন্তু খাবার জিনিসের বদলে রান্নার পাত্রে সে দিয়ে ফেলল ছাই।

 

(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

তাই দেখে গাছের ওপর থেকে রাজকন্যা বলে উঠল, ‘আহাহা, বুড়ি? ওকি করলে তুমি ?

বুড়ি তখন মায়াকান্না কেঁদে বলল, “আর বাছা, আমি কি আর চোখে দেখতে পাই? তুমি যদি দয়া করে একবার নিচে আসতে, লক্ষ্মীটি, তাহলে একটু খেয়ে বাঁচতাম। রাজকন্যার বড় ইচ্ছে হল তাকে সাহায্য করে। কিন্তু হরিণ-ভাইয়ের বারণ। সে-কথা মনে করে সেদিনও সে নিচে এল না। বুড়ি খানিকক্ষণ আপন মনে বিড়বিড় করে কী সব বলে চলে গেল। এর পরেরবার সে নিয়ে এল একটা ভেড়া। ভেড়াটাকে সে হাতের ছুরি দিয়ে কাটতে আরম্ভ করল, কিন্তু গলা না কেটে তাকে কাটতে লাগল ল্যাজের দিক থেকে। আর ভেড়াটা যন্ত্রণায় চিৎকার করতে লাগল।

তাই দেখে রাজকন্যার মন ভারি খারাপ হয়ে গেল। জন্তুটার কষ্ট সে আর চোখে দেখতে পারল না। তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে এল। হরিণের কথা তখন ভুলে গেল সে।

বাদশা কাছেই লুকিয়ে ছিলেন। রাজকন্যাকে নামতে দেখে তিনি দৌড়ে এলেন গাছের তলায়। আর রাজকন্যাকে ঘোড়ার পিঠে তুলে নিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন। একেবারে থামলেন এসে প্রাসাদে।

প্রাসাদে একটি ঘরে রাজকন্যাকে রাখা হল। চারদিকে কড়া পাহারা বসল, যেন সে পালিয়ে যেতে না পারে।

বাদশা ভাবলেন, আর দেরি করা উচিত নয়। রাজকন্যাকে তিনি রাতের মধ্যেই বিয়ে করে ফেলতে চাইলেন। | কিন্তু রাজকন্যা তাতে রাজি হল না। বলল, “আগে আমার সেই হরিণকে এনে দিতে হবে। না হলে আমি কোনো কথা শুনব না। তাকে না আনলে আমাকে কিছুতেই রাখতে পারবেন না।

তথন বাদশার হুকুমে সেই বনে লোকজন ছুটল। অনেক খোজাখুঁজির পর নিয়ে এল সেই হরিণকে। হরিণকে পেয়ে রাজকন্যার মুখে হাসি ফুটল। বাদশাকে বিয়ে করতে আর সে

করল না। মহা ধুমধাম করে তাদের বিয়ে হয়ে গেল। হরিণ প্রাসাদেই রইল সেই থেকে।

হরিণকে রাজকন্যা কোনোদিন কাছছাড়া করত না। সারাদিন কখনো বাগানে, কখনো প্রাসাদে সে ঘুরে ঘুরে বেড়াত। অনেক সময় থাকত রাজকন্যার কাছে কাছে। রোজ সন্ধ্যে হলেই বাদশা আর বোনের সঙ্গে দেখা করতে আসত সে। যাবার আগে সে একটা ছড়া বলে যেত।

হরিণ-রাজপুত্র-রুপকথার-গল্প-deer-prince-fairytale-story-attoprokash-min
হরিণ রাজপুত্র রুপকথার গল্প

সামনের একটা পা তুলে দুজনের পায়ে টোকা দিয়ে হরিণ সুর করে বলত, এই ছোট পা-টা আমার বোনের জন্যে,

ওই ছোট্ট পা-টা আমার ভাইয়ের জন্যে।… এমনিভাবে তাদের দিন চলে যাচ্ছিল।

বাদশার ছিল এক কেনা বাদি। সে যেমন কালো, তেমনি বিশ্রী দেখতে। সে কারো ভালো দেখতে পারত না। রাজকন্যার ওপরেও তার ভীষণ হিংসে। কারণ রাজকন্যা একে সুন্দরী, তার ওপর আবার তার বাদশার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। রাজকন্যার ক্ষতি করবার জন্যে সদাই সে সুযোগ খুঁজত।

বাদশার প্রাসাদের বাগান ছিল চমৎকার। তার চারদিকে কেয়ারি করা নানারকমের সৌখিন ফুল। আর সেই সাজানো বাগানের মাঝখানে ছিল একটি ঝরনা। বাগানটি রাজকন্যার ভারি পছন্দ। বাগানে বেড়াতে সে বড় ভালোবাসত।

একদিন সে একা বাগানে বেড়াচ্ছিল। হাতে তার একটি সোনার বাটি আর পায়ে রুপোর চটি। আনমনে সে যাচ্ছিল ঝরনার ধার দিয়ে। সেই কুৎসিত বাদিটা তার পেছন পেছন আসছিল। রাজকন্যার সে দিকে লক্ষ ছিল না। একেই সে অন্যমনস্ক ছিল, আর বাদিটাও আসছিল পা টিপে টিপে। রাজকন্যা তখন জলের খুব কাছে এসে পড়েছে। এমন সময় হঠাৎ বাদি তাকে সজোরে ধাক্কা দিল। রাজকন্যাও টাল সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ল ঝরনার জলে। ঝরনার মধ্যে ছিল একটা প্রকাণ্ড মাছ। রাজকন্যা জলে পড়তেই মাছটা তাকে গিলে ফেলল।

বাদি তখন খুশি হয়ে প্রাসাদে ফিরে এল। তারপর রাজকন্যার সোনালি পোশাক পরে তার জায়গায় বসে রইল। যেন সে-ই রাজকন্যা।।

বাদি শুধু রাজকন্যার পোশাকই পরেনি, মুখটাও অনেকখানি ঢেকে রেখেছিল।

সন্ধ্যাবেলায় বাদশা রাজকন্যার সঙ্গে কথা কইতে এসে তার মুখ দেখে বললেন, ‘একি ! তুমি কি করে মুখখানা এমন বদলে ফেললে ?

বাদি মাথা নিচু করে উত্তর দিল, ‘বাগানে অনেকক্ষণ রোদে রোদে ঘুরেছি তো তাই মুখটা কালো হয়ে গেছে।

বাদশা ভাবলেন, তাই হবে বুঝি। তার কথা বিশ্বাস করে তার পাশে বসলেন তিনি। আর গল্প করতে লাগলেন। এমন সময় হরিণ এল ঘরে। তারপর প্রতিদিনেরবমতন সামনের পা দিয়ে তাদের দুজনকে ঠেলা দিয়ে বলল, এই ছোট্ট পা-টা আমার বোনের জন্যে, আর ওই ছোট্ট পা-টা আমার ভাইয়ের জন্যে।

বলতে বলতেই হরিণ বুঝতে পারল, এ তার বোন নয়। এ সেই বিশ্রী বাদিটা, তার বোনের পোশাক পরে বসে আছে। কিন্তু সে কিছু করল না তখন। আস্তে আস্তে নিজের শোবার জায়গায় চলে গেল। বাদি বুঝতে পারল যে হরিণটা তাকে চিনে ফেলেছে। হরিণ যে রাজকন্যার ভাই, তা সে জানত না। কিন্তু সে যে রাজকন্যার খুবই আদরের, এটা সে জানত। তাই সে রাজকন্যার মতন তার হরিণটাকেও দু’চক্ষে দেখতে পারত না। এখন সেই হরিণ তাকে চিনে নিয়েছে। তাই হরিণের ওপর তার রাগ আরো বেড়ে গেল।

ফলে তার একমাত্র ভাবনা হল—হরিণটাকে কী করে শেষ করে ফেলা যায় !… দুর্জনের ছলের অভাব হয় না। শেষে সে এক মতলব ঠাওরাল। একদিন বাদশাকে জানাল যে তার দারুণ অসুখ করেছে। শুনে বাদশা হাকিমকে পাঠিয়ে দিলেন তাকে দেখবার জন্যে। তখন বাদি করল কী, অনেক মণিমুক্তো হাকিমকে দিল। আর বলল যে, যেন বাদশাকে একটি কথা জানানো হয়। কথাটা হল—ওই হরিণের ফুসফুস না খেলে তার অসুখ সারবে না।

হাকিম সেই মতন বাদশাকে জানাল। তাই শুনে বাদশা অবাক হয়ে গেলেন। বেগমকে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘একি কথা শুনছি? হাকিম ওই হরিণের ফুসফুস তোমায় খেতে বলেছে ! আর তুমিও তাতে রাজি হয়েছ ? এটা কি উচিত কাজ হবে ? তোমার অমন বিশ্বাসী আর পোষা হরিণটাকে তুমি মেরে ফেলতে চাও?

বাদি মুখ নিচু করে আস্তে আস্তে বলল, ‘তা ছাড়া আর উপায় কী? ওই ফুসফুস না খেলে আমি মরে যাব। হাকিম নিজে একথা বলেছে। আর আমি যদি মরে যাই, আমার পোষা হরিণকে তখন কে যত্ন করবে ? কে তা বাঁচিয়ে রাখবে? এতে তবু একজনের প্রাণটা থাকবে।

বাদশা তখন আর কী করেন। হুকুম দিলেন, তবে তাই হোক। হরিণের ফুসফুস বের করা হোক বেগমের জন্যে।

 

হাকিমের কথায় তখন তোড়জোড় আরম্ভ হল। কশাই তার ধারাল ছুরি শান দিয়ে নিল। প্রকাণ্ড উনুনে আগুন জ্বালানো হল। আর মস্ত এক কড়া জল তাতে চাপিয়ে দিল হাকিমের লোকেরা। হৈ চৈ শুনে আর কাণ্ড দেখে হরিণ সবই বুঝতে পারল। তখন বেচারি ছুটে পালাল বাগানের সেই ঝরনার ধারে। সেখানে জলের দিকে চেয়ে তিনবার তার বোনকে ডাক দিয়ে বলল

‘পাথরেতে আছে ছুরি,
কড়ায় ফোটে জল!
আর কোরো না দেরি

এসো এই ঝরনার তল?

জলের নিচে মাছের পেটে বসে তার বোন সব কথা শুনল। বুঝতেও পারল, তাই কী জানাতে চায়। সে-ও তিনবার ভাইকে সাড়া দিয়ে বলে উঠল,

‘আছি আমি মাছের পেটে,
হাতে সোনার থালা;
পায়ে আমার রুপোর চটি…

কচি ছেলে নিয়েই জ্বালা?”

মাছের পেটে থাকবার সময় রাজকন্যার একটা ছেলে হয়েছিল। সেই কথাই হরিণকে জানিয়ে দিল।

ওদিকে হরিণ যখন ছুটে পালিয়ে আসে, বাদশাও তখন এসে ঝরনার ধারে দাড়িয়েছিলেন। ভাই-বোনের ওই সব কথা-বাদশার কানে গেল।

হরিণকে কাছে ডেকে বাদশা আদর করে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার হয়েছে, আমায় সমস্ত খুলে বল।

হরিণ তখন সাহস পেয়ে বাদশাকে একে একে সমস্তই জানাল। আসল রাজকন্যা আছে ঝরনার নিচে, মাছের পেটে। সেখানে তার কোলে বাদশার ছেলে হয়েছে। আর যে বেগম সেজে আছে সে হল ওই বদমায়েশ বাদি, যে রাজকন্যাকে ফেলে দিয়েছে জলে।।

বাদশা তখনি হুকুম দিলেন ঝরনার জল হেঁচে ফেলতে, আর বড় মাছটাকে ধরে তার পেট চিরে দেখতে।

মাছটাকে কাটতেই দেখা গেল পেটের মধ্যে বসে রয়েছে রাজকন্যা, তার এক হাতে সোনার থালা, পায়ে রুপোর চটিজুতো। আর কোলে একটি ফুটফুটে ছোট্ট ছেলে। বাদশা তখন রাজকন্যা আর ছেলেকে সাথে নিয়ে প্রাসাদে চলে গেলেন।

হরিণ কিন্তু সেখানেই দাড়িয়ে রইল। তার হঠাৎ মনে হল, মাছটার রক্তে কী যেন আছে। তার ভারি খেতে ইচ্ছে হল সেই মাছের রক্ত। আর যেই সে মাছের রক্ত খেয়েছে, অমনি হয়ে গেল আগেকার বাদশার ছেলে।

তখনি ছুটে এল সে বোনের কাছে। বোন এতদিন পরে ভাইকে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলল। তখন দু ভাই-বোন অনেকদিন পরে আবার পাশাপাশি বসল। কত সুখ-দুঃখের কথা হতে লাগল দুজনের।

আর ওদিকে বাদশা বাদিকে তলব করলেন। বললেন, তুমি কী চাও? চারটে তেজি ঘোড়া, না, চারটে ঝকঝকে তলোয়ার?

চোখ পাকিয়ে উত্তর দিল, তলোয়ার চারটে আমার শত্রুর গলার জন্যে । আমি নেব চারটে তেজি ঘোড়া যাতে আরাম করে তাদের পিঠে চাপতে পারি। তখন বাদশার হুকুমে তাকে চারটে তেজি ঘোড়ার ল্যাজে বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হল। পরপর সেই ঘোড়াগুলো ছুটতে লাগল তীরের মতন। আর বাদির শরীর টুকরো টুকরো হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল।

ওদিকে বাদশা আর বেগম সুখে-স্বচ্ছন্দে দিন কাটাতে লাগল। আর সেই রাজপুত্র, যে এতদিন হরিণ হয়ে ছিল, সে-ও রইল তাদের সঙ্গে। তারা সবাই মিলে একটা বিরাট ভোজের আয়োজন করল। চার দিন, চার রাত ধরে চলল সেই ভোজের উৎসব। রাজ্যের সবাই ভোজে যোগ দিয়ে আনন্দ করতে লাগল। বাদশা, বেগম আর রাজপুত্র—সকলেরই মনের ইচ্ছা পূর্ণ হল।

বক্সে বন্দী বাকসো

http://enlightentricks.com

2 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *