ডাকপিয়ন । জুয়েল ইসলাম । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প

জুয়েল ইসলামের লেখা ‘ডাকপিয়ন’ ছোটগল্পটি আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ১ এ দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে এবং জেমস রোলিন্সের বহুল আলোচিত বই ‘আমাজনিয়া’ পুরষ্কার হিসেবে জিতে নেয়।

“পৌষ মাসের মাঝামাঝি সময়। স্নিগ্ধ নিস্তব্ধ সকালে কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাওয়া প্রকৃতি সহজে শীতের সকালের জানান দিচ্ছে।হালকা গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ঝরে পড়ছে টিনের চালে,খাল-বিল,দূর্বাঘাসের উপর। গ্রামের পাশের পূর্বদিকের লম্বা রাস্তাটা ধরে একজন লোককে সাইকেল চালিয়ে কল্যাণপুর গ্রামে ঢুকতে দেখা যাচ্ছে। এই গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে একহাতে ছাতা আর একহাতে সাইকেল ধরে চালিয়ে আসতে লোকটার যে কষ্ট হচ্ছে তা অনেক দূর থেকেই বুঝা যাচ্ছিলো।

কিছুক্ষণ পরেই লোকটা মতলব কাকার চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালো।লোকটার বয়স আনুমানিক পঞ্চাশের উপরে হবে।কিন্তু কুচকে যাওয়া চেহারা দেখে আরো বেশি বয়স্ক মনে হয়।গায়ে একটা খাকি রঙ্গের শার্ট জড়ানো; আর পরনে একটা লুঙ্গি।লোকটা মতলব মিয়ার দোকানে গিয়ে দাঁড়াতেই তানু পাগলা বলে উঠলো,এই দেহ আমগরে করিম চাচা আইছে।

করিম চাচাকে দেখে সবার চোখে এক অনাবিল খুশির আভা স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হচ্ছে।মতলব মিয়া এগিয়ে গিয়ে করিম চাচাকে একটা গামছা দিলেন হাত-মুখ মুছবার জন্য।

:-ও কাহা, এই বৃষ্টিতে ভিজে তোমারে গেরামে আইতে কইছে ক্যারা? আর আইছো বালা কতা,কিন্তু তোমার শীতের কাপড় কই?
করিম চাচা একটা মুচকি হাসি দিয়ে পাশের টংটাতে বসে পড়ে।এই হাসির কারণ এই গ্রামের সবারই জানা। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবারই পরিচিত আর ভালোবাসার মানুষ এই করিম চাচা। যে মানুষটাকে গ্রামের সবাই এত ভালোবাসে তার কথাগুলো তারা কিভাবে এড়িয়ে যাবে?

গ্রামের শিশুদের কাছে তার পরিচিত নাম :পকেট দাদু। সরকারী পোশাকটার দুটি পকেট সামনে বুকমাঝারে আর দুটি দুই পেশির দিকে। গ্রামের ছোট ছোট বাচ্চাগুলো এতগুলো পকেটসহ শার্ট দেখেনি বলে করিম চাচার পোশাক বাচ্চাদের কাছে খুবই অদ্ভুত লাগে। আর তাই তারা করিম চাচাকে পকেট দাদু বলে ডাকে। করিম চাচাও সেই সুন্দর ডাক শুনে বাচ্চাগুলোকে বুকে জড়িয়ে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলে।তার নাতিন যে আজো তাকে দাদু বলে ডাকতে পারলো না। খুব শখ করে ছেলেকে বিয়ে দিয়েছিলেন। শুধুমাত্র নাতি-নাতনীর মুখ থেকে দাদু ডাক শুনার আশায়।কিন্তু ছেলেটা চাকরির জন্য সেই যে শহরে স্ত্রীকে নিয়ে গেলো আর গ্রামে এলোনা।

সন্তান হওয়ার তিনদিন পর করিম চাচা খবর পেয়েছিলো।রাগ,দুঃখ, অভিমান করিম চাচাকে পাথর করে তুলে। তাই নিজের মতোই সে এই চাকরিটার উপর নির্ভর চলে বাকি জীবনটুকু কাটিয়ে দিতে চায়। মাঝেমাঝে ছেলে বাবাকে ফোন দেয়,কিন্তু করিম চাচা ফোন কেটে দেন। বুকের ভিতর একটা নিদারুণ কষ্ট অনুভব হয় তার।নিরবে অশ্রুকণা ঝরতো এই বৃদ্ধ মানুষটির গাল বেয়ে।কিন্তু এসব তাকে এখন একদম ভাবায় না।

সপ্তাহখানেক আগে করিম চাচা যখন গ্রামের স্কুলটার পাশ দিয়ে সাইকেলে করে আসছিলো তখন হঠাৎ করেই মতলব মিয়ার ছোট ছেলে পিন্টু এসে সামনে দাড়ায়। স্কুল ড্রেস পরা ছেলেটা দু’পা দুদিকে একটু সরিয়ে কোমরে হাত দিয়ে একটু হুংকারে সুরে জিজ্ঞেস করে,
:- ও দাদু তোমার শার্টে এত্তগুলা পকেট ক্যান? এত পকেট দিয়ে কি কর গো?
করিম চাচা ফিক করে হেসে দেয়। সাইকেল থেকে নেমে পিন্টুর কাছে এসে গাল দুটো টেনে বলে,
:- দাদু আমার পকেটগুলোতে আমি রাগ,দুঃখ-কষ্ট,অভিমান আর ভালোবাসি রেখে দিই। তুমি কি আমার ভালোবাসা নিবে?
পিন্টু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। করিম চাচা আলতো করে পিন্টুর গালে চুমু দিয়ে হাতে বিশটা টাকা দিয়ে চলে আসে।

:- বাবা কাপড় কিনে কি করবো বলো? পরতে মন চায়না তো।
:- দেহ কাহা এত কতা বুঝিনা। হয় তুমি কিনবা নইলে বলো আমি বিকালেই আইনা দিমু।
:- পাগল লাগবে না। আমার টাকা আছে না। আমি কিনে নিবো চিন্তা করোনা।
:- নাহ।তুমি মিছা কতা কও। আইচ্ছা সামনে সপ্তাহে যদি কাপড় পইরা আহো তাইলেই আমি বিশ্বাস করমু।
:- আচ্ছা বাবা আচ্ছা। আসবো।
কথাগুলো বলার পর মতলব মিয়ার মুখে কোণে এক চিলতে হাসির ঝলকানি দেখা যায়। করিম চাচা সপ্তাহে একবার গ্রামে আসে।এখন আর সেই আগের যুগের মতো তেমন চিঠির ব্যবহার নেই,তবুও মাঝেমাঝে কিছু চিঠি,মানি অর্ডার, চাকরির কাগজপত্র, পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাকে গ্রামে আসতে হয়।

তানু পাগলা হঠাৎ করে বাচ্চাদের মতো চিৎকার শুরু করে দেয়।
:- কাহা তুমি সেই কহন আইছো। এহনো আমারে কিছু কিনা দিলা না। দেও না তাড়াতাড়ি দেও।সকাল থাইকা কিচ্ছু পেটে যায়নাই।
:- সরি বাবা। এক্ষুণি দিচ্ছি।বাবা মতলব তানুকে কলা আর পাউরুটি দাওতো তাড়াতাড়ি।

তানু কলা আর রুটি নিয়ে গপগপ করে খেতে শুরু করে দেয়। করিম চাচা ছলছল চোখে তানুর দিকে তাকিয়ে থাকে।কত মায়া এই তানুর মুখটায়। একদম বাচ্চাদের মতো।তানু জন্ম থেকে মানসিকভাবে একটু দূর্বল। বয়স বেড়ে গেলেও তার আচারণ বাচ্চাদের মতোই রয়ে গেছে। গ্রামের সবাই ওকে তানু পাগলা বলে। এই পৃথিবীতে তানুর সবাই আছে।বাবা-মা,ভাই-বোন সব।তাদের পরিবার এতোটা স্বাচ্ছন্দ্যে চলেনা কিন্তু তিনবেলার খাবারটা ঠিকই জুটে।তবুও তানু প্রতিদিন সকালের খাবারটা দেরি করে খায়।অপেক্ষায় থাকে কখন করিম চাচা আসবে আর ওকে খাবার কিনে দিবে।অল্পতেই তানু অনেক বেশি খুশি হয়ে যায়।করিম চাচাও এক অদ্ভুত টানে তানুর কাছে চলে আসে।সবসময় নিজের ছেলের মতোই আদর,ভালোবাসায় তানুর সাথে জড়িয়ে থাকে।

তানুর চোখেমুখে পরিতৃপ্তির ছাপ করিম চাচার মনে পূর্ণতার স্বাদ জাগায়। বাইরে এখনো গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।সবাই মিলে খোশগল্পে মেতে আছে।কিছুক্ষণ পর মতলব মিয়া একটু নড়েচড়ে বসলো। করিম চাচার মুখের দিকে একদৃষ্টেতে তাকিয়ে আছে।
:- কাহা আলিবরে তোমার দেখতে মন চায়না? একমাত্র আদরের পুলার সাথে আর কতদিন রাগ কইরা থাকবা। মা মরা পুলাডা না জানি কত কষ্ট পাইতাছে।
করিম চাচা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ভুল বাহানায় চোখের ভিতর ছলছল করা পানিটা মুছে ফেলে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর আবারো একটু মন খুলে কাঁদা যাবে।

:- মতলব আমার ওদের প্রতি কোনো রাগ নেই। সন্তান কখনো বাবা-মার কাছে অপরাধী হয় না। সন্তানের ভুলগুলো ক্ষণিকের কিন্তু সন্তানের প্রতি বাবা-মায়ের যে ভালোবাসা তা আজীবন থেকেকে যায়। আমার তো জীবন এখন শেষের দিকে।চাওয়া-পাওয়ার তেমন কিছু নেই।শুধু এতটুকুই চাইবো আমার কবরে মাটি দেওয়ার জন্য হলেও যেন ছেলেটা একবার আসে।

কাঁধে রাখা গামছাটা দিয়ে মুখ মুছে নিলো করিম চাচা।শেষ জীবনে এসে একজন বৃদ্ধের একবুক কষ্ট কিভাবে সহ্য করা যায়।জলহীন মরুভূমির মতো চোখে যখন জলকণা দেখা যায় সেটা তখন শুধু অশ্রুক্ষরণ থাকেনা,হৃদয়ক্ষরণও হয়।মনে হয় বুকের পাঁজরের প্রতিটা হাড় মটমট করে ভেঙ্গে যাচ্ছে। নিশ্বাসগুলো খুব ঘন এবং তাড়াতাড়ি পড়তে থাকে। মাঝেমাঝে বেঁচে থাকার শেষ ইচ্ছেগুলোও হারাতে থাকে।মুহূর্তেই মতলব মিয়া দেখতে পেলো তার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এমন তো হওয়ার কথা নয়। চোখের সামনে বাবা-মাকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করতে দেখেছে মতলব মিয়া। চোখে কোনো জল ছিলোনা,ছিলোনা কোনো আহাজারি। শুধু দৃষ্টিপথ থমকে গিয়ে সময়কে স্থির করে দিয়েছিলো। একমাত্র সন্তান পিন্টুকে জন্ম দিতে গিয়ে প্রাণের প্রিয় স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়। তবুও মতলব মিয়া কখনো কাঁদেনি।আজ অপরিচিত কারো মায়া নিজেকে নতুন করে কাঁদতে শিখালো।শার্টের হাতলে চোখ মুছে মতলব মিয়া।
:- হুনো কাহা আর কোনোসময় কান্দিবা না। আমরা সবাই আছিনা তোমার সাথে। তাহলে তোমার কিসের দুঃখ কও।
:- তোমাদের দিকে তাকালেই বেঁচে থাকার স্বাদটুকু নতুন করে জাগে। না হলে অনেক আগেই হয়তো এই পৃথিবীর আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত হতাম।
:- এরহম অলুক্ষণে কতা কইবা না কাহা। আচ্ছা আইজ কি খবর নিয়া আইছো?
:- ওহ ভুলেই তো গেছিলাম।আমাদের সুমনের চাকরি তো এবার মনে হয় হয়েই গেলো।এই দেখো কাগজপত্র চলে এসেছে।
:- কি! সুমন ভাইয়ের চাকরি হইয়া গেছে!
এতক্ষণ চুপচাপ নিরব দর্শক হয়ে ছিলো তানু। সুমনের চাকরির খবরটা শুনেই লাফিয়ে উঠে।
:- কাহা তুমি থাহো।আমি যাইয়া খবরটা দিয়া আহি।
:- এই এই তানু দাড়া।আরে শুনে যা তো আগে।উফফ.. ছেলেটাও না হয়েছে একটা

:- কাহা তুমি তো জানোই ও বাচ্চা মানুষ। তাই যখন যেটা ইচ্ছা কইরা ফালায়।
:- ঠিকই বলেছো। তানুটা আজ ভালো হলে পড়াশুনা করে নিশ্চয় অনেক বড় কিছু হতো।কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত…
কথাটা বলেই করিম চাচা ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।
:- হ কাহা সত্য কতা কইছো। যে পুলা বাপ,মা থাহার পরেও কয়েক বছরের পরিচয়ের এক বুড়া কাহারে বেশি ভালোবাসে সে পাগল ছাড়া আর কি অইতে পারে।সারাদিন খালি বড় রাস্তাটার দিকে তাকায় থাকে কহন করিম কাহা আইবো আর আমারে খাওন কিনা দিবো।
:- বড়ই অদ্ভুত এই পৃথিবী। কাছের মানুষগুলো একটু দূরে গেলেই পর মনে হয়,আর ক্ষণিকের পরিচয়ে গড়ে উঠা সম্পর্কের মানুষগুলোই বেশি মনে হয়।উফফ…আচ্ছা আজ আসি তাহলে। মতলব এই কাগজটা একটু কষ্ট করে সুমনের কাছে পৌঁছে দিও।
:- আর একটু থাহো।
:- না বাবা। শরীরটা কেমন যেন লাগছে।আজ আসি। আল্লাহ্‌ হাফেজ।
করিম চাচা সাইকেলটা নিয়ে চলে যায়। যতদূর দৃষ্টি যায় মতলব মিয়া তাকিয়েই থাকে। দিন দশেক পর সুমন চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য শহরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

গত এক সপ্তাহ পর থেকে করিম চাচাকে আর গ্রামে আসতে দেখা যাচ্ছেনা। তানু প্রচণ্ড রকমের কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। এদিকে মতলব মিয়াও চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠছে। মনে মনে নানা আজগুবি কথা ভাবছে,আবার পরক্ষণের বলে উঠছে, ছিঃ ছিঃ কি আবোল-তাবোল ভাবতাছি।
সুমন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। যাবার সময় সুমনের মা বলে দেয় করিম চাচার খোঁজ নিতে।কিছুদিন ধরে তাকে দেখতে না পেয়ে খুবই চিন্তায় আছে সবাই।

সুমন বাজার হয়ে যাবার সময় করিম চাচার সাথে দেখা করতে যায়। গিয়ে দেখে করিম চাচা বিছানায় শুয়ে আছে।মাথার পাশে একটা জলপট্টি আর একটা বাটিতে পানি।
:- একি! দাদু তোমার এই অবস্থা কেন?
সুমন দৌড়ে গিয়ে করিম চাচার পাশে বসে।
:- সারা শরীর তাপে পুড়ে যাচ্ছে আর তুমি কাউকে খবর দাওনি। এত জ্বর নিয়ে বিছানায় পড়ে আছো আর আমাদের একবারও খবর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলে না।
এই কয়দিন জ্বরে করিম চাচার শরীর একদম শুকিয়ে গেছে। মাথায় পানি দিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। তাই নিজে নিজে মাথায় জলপট্টি দিয়ে রাখে। আর কত..?
অল্প একটু কাশিতেই পুরো শরীরটা থরথর করে কেঁপে উঠে করিম চাচার। চোখগুলো ছোট হয়ে এসেছে।তিনদিন ধরে মুখে একটু দানাপানিও পড়েনি।কিভাবে পড়বে? এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কিভাবে রান্না করবে?
আবারো একটু শব্দ করে কাশি দেয়। বালিশে হেলান দিয়ে একটু উঠে বসে।

:- না মানে হয়েছে কি দাদু,তোমাদের শুধু শুধু কষ্ট দিতে মন চায়না।
সুমন কিছুটা রেগে যায়।কপালে ছোটছোট তিনটা ভাঁজ পড়ে।
:- কি! কষ্ট? নিজে যে বিছানায় পড়ে আছো একা একা সেটা কষ্ট না? শুনো অতকিছু বুঝিনা।এখন ডাক্তার আনছি। উনি তোমাকে দেখে ওষুধ দিবে।আমার সময় হাতে সময় নেই,তা না হলে তোমার কাছে থেকে যেতাম। গ্রামে খবর দিচ্ছি ওরা সবাই আসবে।কোনো চিন্তা করোনা।তুমি আগের মতোই সুস্থ হয়ে যাবে।

কথাগুলে শেষ করেই সুমন চলে যায়।করিম চাচা মনে মনে প্রশ্ন করে, বেঁচে থাকবো তো?
কিছুক্ষণ পরেই ডাক্তার আসে।সাথে মতলব,তানু সুমনের মা সবাই আছে। করিম চাচাকে দেখেই তানু কান্না শুরু করে দেয়। বুড়ো মানুষ করিম চাচাও চোখের পানি আটকে রাখতে পারেনা। মতলব মিয়া শক্ত পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক কাকতাড়ুয়ার মতো।সুমনের মা চাচার মাথায় পানি ঢালছেন।

প্রাথমিক পরীক্ষার পর ডাক্তার জানালের করিম চাচা টাইফয়েডে ভুগছেন প্রায় দশদিন ধরে। তারমানে সর্বশেষ গ্রাম থেকে আসার পরপরই। মতলব মিয়া আর সুমনের মা ছাড়া আর কেউ রোগের কথা জানলেন না। মতলব মিয়া এখন বুঝলেন সেদিনের শরীর খারাপ লাগার কারণ।ডাক্তার সাধারণ জ্বর বলে চলে গেলেন।

তানু এখন আর জোরে চিৎকার করে কাঁদতে পারছেনা। গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে এসেছে।কিন্তু চোখ দিয়ে অনর্গল অশ্রু ঝরছে। বিকালের দিকে করিম চাচার অবস্থা আরো খারাপ হয়। পুরো ঘরটায় একটা নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। ডাক্তার বলে গিয়েছিলো এখন বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। করিম চাচা কথা বলার খুব চেষ্টা করছেন কিন্তু শব্দ হচ্ছেনা। মতলব মিয়া মুখের কাছে কান নিয়ে শুনতে পেলেন করিম চাচা বললেন,
:- মতলব,আমাকে একটু পানি খাওয়াবে বাবা?
কষ্টে মতলব মিয়ার বুকটা ফেটে যাচ্ছে। হঠাৎ করে ঘরে প্রবেশ করে আলিব।সবাই অনেকটা চমকে যায় ওর হঠাৎ উপস্থিতিতে।বললো সুমন নাকি ওকে সবকিছু বলেছে।আলিবের চোখ দিয়েও অশ্রু ঝরছে। এই অশ্রু কিসের অনুতাপের নাকি বিদায় বেলার কষ্টের। করিম চাচার তা জানা নেই।পাশে থেজে এক পাঁচবছর বয়সী বাচ্চা বলে উঠে,ও দাদু কি হয়েছে তোমার?
করিম চাচা চোখ তুলে তাকায়। দেখে ফুটফুটে ছেলেটি তার নাতিন।পাশে তানু আর আলিব কান্না করছে।
আচ্ছা চোখের জলগুলো দেখতে তো এক।তাহলে আমি আলাদা রং দেখতে পাচ্ছি কেন?
করিম চাচা ভাবতে থাকে। হঠাৎ একটা বড়সড় নিশ্বাস নেয়।তানুর দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো। দ্বিতীয়বার নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ আর করিম চাচা পাননি।
একটা পূর্ণ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে গেলো।”

আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ১ এ তৃতীয় স্থান অর্জনকারী ‘আলুর ক্ষেতে ইশ্বর’ সামাজিক ছোটগল্পটি পড়তে ক্লিক করুন>>>  আলুর ক্ষেতে ইশ্বর । হাসনাত সৌরভ । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প

ডাকপিয়ন । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প । লেখক পরিচিতি

লেখকঃ জুয়েল ইসলাম
ছোটগল্পঃ ডাকপিয়ন
গল্পের জনরাঃ সামাজিক
দেশের বাড়িঃ জামালপুর
পড়াশোনাঃ ব্যবস্থাপনা,বিবিএস ১ম বর্ষ, সরকারী আশেক মাহমুদ কলেজ,জামালপুর।

juwel-islam-জুয়েল-ইসলাম-attoprokash-writter (1)-min
লেখক- জুয়েল ইসলাম

গল্প লিখতে খুব ভালোবাসি। অবসর সময়টা মুভি দেখে কাটাতে বেশি ভালো লাগে। মাইস্ট্রি, থ্রিলার, এডভেঞ্চার, ফ্যান্টাসি, ডিটেকটিভ আমার প্রিয় জনরা। এসব জনরার গল্প পড়তে ও মুভি দেখতে খুবই ভালোবাসি।

আত্মপ্রকাশ সম্পাদক

http://attoprokash.com

আত্মপ্রকাশে অপ্রকাশিত গল্প এবং বুক রিভিউ এবং প্রবন্ধ প্রকাশ করতে যোগাযোগ করুন (ইমেইল-attoprokash.blog@gmail.com) অথবা ফেইসবুক পেইজ ইনবক্স। সর্বনিম্ন ১০০০ শব্দ হতে যেকোনো ঊর্ধ্ব সীমার ছোট গল্প গ্রহণযোগ্য। আপনার গল্প আত্মপ্রকাশ বিচারকদের দ্বারা নির্বাচিত হলে আপনাকে জানানো হবে এবং তা সরাসরি প্রকাশ করা হবে আত্মপ্রকাশে। আপডেট জানতে ফেইসবুক গ্রুপে সক্রিয় থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *