গল্প মেঘেরও ক্লেশ আছে >> রুবী ফরায়েজী বিপুল । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প

রুবী ফরায়েজী বিপুল রচিত গল্প ‘মেঘেরও ক্লেশ আছে’ ছোটগল্পটি ভালোবাসা দিবস – ২০১৯ উপলক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩ এ প্রথম স্থান অর্জন করে এবং  মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দিবারাত্রির কাব্য’  এবং আরিফ মিলনের ‘অকৃতজ্ঞ অমানুষ’ উপন্যাসটি পুরষ্কার হিসেবে জিতে নেয় গল্পটি।

১৪ই ফেব্রুয়ারি১৯৮৯সাল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।এখনকার মত প্রেমের এতো হিড়িক্কি নেই।তবুও ক‍্যম্পাসে প্রেম যুগলের সরব উপস্থিতি লক্ষ‍্যণীয়।কেউ হাতে হাত রেখে নিচুস্বরে প্রতিস্রুতি দিচ্ছে-নিচ্ছে, কেউ স্বপ্নে হারিয়ে গেছে প্রিয় মানুষের সঙ্গে, কেউ ফুল-গীটার নিয়ে বসে গেছে প্রেমিকার সামনে,কোনো জোড়া আবার পরিপূর্ণ ভালোবাসার খোঁজে বেরিয়ে পড়ছে প্রকৃতির নিরিবিলি পরিবেশে। ফুলের দোকানে বেশিরভাগ স্টুডেন্টদের ভীড়।আমি একনজ‍রে দেখে নিলাম।

প্রেম বিষয়ে আমি বরাবরই উদাসীন।অন্য আর দশটা মেয়ের মতো সহজে কারোর সঙ্গে প্রেম জমে উঠেনি বা প্রেম আমাকে রাঙ্গাতে পারেনি।
ক্লাসমেট মাহিন গত পাঁচ বছর নিরলস ভাবে এই দিনটিতে প্রপোজ করেই যাচ্ছে। আমি জানি প্রতি বছরের মতো আজও সে কয়েকটি গোলাপি রঙের গোলাপ নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির হবে। পাঁচটি বছর ধরে দেখছি,মাহিন সাধারণ আর দশটা ছেলের মতো নয়। ক‍্যাম্পাসের জাম গাছটার নিচে বসলেও ওর হাতে থাকবে ভারী বই,চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা। গলার স্বর অনেকটাই গম্ভীর। ওকে আমার কখনোই প্রেমিক বলে মনে হয় নি। সে নিতান্তই গ্রামীণ পরিবেশ থেকে উঠে আসা মেধাবী ছাত্র। যার একমাত্র ধ‍্যান ধারণা হচ্ছে জীবনকে সাফল্যের দ্বারে নিয়ে যাওয়া। তার স্বপ্ন সম্পর্কে আমার কখনো কিছু জানার আগ্রহ জাগেনি। তবুও সে অযাচিতের মতো জানিয়েছিল সে এডভোকেট হতে চায়। ওর সবকিছুতেই অনাগ্রহ ছিল কিন্তু আজ কেন জানি এই কপোত কপোতির ভীড়ে নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। মনের চোখ অজান্তেই খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই স্কুল জীবন থেকে একতরফা পাঁচ বছর প্রেম নিবেদন করে যাওয়া মাহিন কে।
অথচ আজ বেলা প্রায় এগারোটা বাজতে চলল, মাহিনের দেখা নেই!আশ্চর্য ভেতরে ভেতরে আমার অস্থিরতা বাড়ছে। টুংটাং হৃদয়ে হাই ভোল্ডেজ…।মনে হচ্ছে খুব কাছের কেউ হারিয়ে গেছে। আমার হৃদয় গাঢ় বিষাক্ত নীলে ছেয়েগেছে। সামনে ঝুরি নামানো বটগাছটির নিচে বসা বড় আপুটির লালপেড়ে শাদা জামদানীটায় হিংসে হচ্ছে। বেনীর ভাঁজে বকুলের ক’গাছি মালা মনে আঁকুপাকু জাগাচ্ছে।পাশে বসে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে সমু ভাই কি প্রশান্তি নিয়ে আহা…তেঁতে উঠা সূর্যটা যেন এখন কেবল আমাকেই তাপ দিচ্ছে! তখন এতো মোবাইল ফোনের চল ছিল না। যোগাযোগের জন্য ল‍্যান্ডফোনই ব‍্যবহার হত। মাহিনের খবর নিতে হলে হলেরুমে যেতে হবে। কিন্তু তাতে আমার সংকোচ হচ্ছে।
দুপুর প্রায় তিনটা অব্দি অপেক্ষা করে বাসায় চলে এসেছিলাম।রাতটা পার হল বড় বিষাদে,অবচেতন মনে একটু পরপর মাহিন এসে পড়ছিল। কিন্তু তখনও বুঝিনি এই প্রথম মনে ভালোবাসা বাসা গেঁড়েছে!
পরদিনই খবর পেলাম মাহিন অসুস্থ, টাইফয়েড হয়ে হস্পিটালে। কয়েকজন বন্ধু মিলে দেখতে চলে এলাম। বলা বাহুল্য বন্ধুমহলে মাহিনের পছন্দের কথা জানা।
তাই আমাকে হস্পিটালের কেবিনে রেখে বাঁদরগুলো পালিয়েছে। মাহিনের আত্মীয়রা কেউ ঢাকায় নেই,তাকে দেখার লোকও নেই- সেবাহীন অধরা আত্মীয়া! সিস্টার এসে নতুন স‍্যালাইন পরিয়ে গেল।চারিদিক কিছুটা নীরব।চোখ হস্পিটালের ফ্লোরে ঠেঁসে দিয়ে কিছুটা সংকোচ হজম করছি।আমার
ভেতর ভাবনার তুফানমেইল ছুটছে অনির্ণেয় গতিতে! নিরবতা কেটে মাহিন কাশি দিয়ে ডাকল–
–বিপুল…”
–হু..
–কেমন আছিস?”
–এইতো…”
–গতকাল কি কি করলি?”
–কি কি মানে?”
–ভ‍্যলেন্টাইনে কি করলি,কোথায় গেলি?”
–একটা ছেলের হাত ধরে ঘুরতে গিয়েছিলাম গাজীপুর শালবনে।”
–ও আচ্ছা!”
–কি আচ্ছা!”
–দোয়া করি সুখী হ…
–আর..?”
–আর.. আমার বিশ্বাস ছিল তুই আমাকে বুঝতে পারবি।”
–আর?”
–তুই যে মিথ্যে বলছিস তা আমার উপর রাগ করেই,
–…..
–আমি অসুস্থ, নইলে ঠিকই তোকে গতকাল উইশ করতাম। আমার তুই ছাড়া আছে কে এতোটা ভালোলাগার?”
–….
–এখনো রাগ করে থাকবি?ওকি কাঁদছিস কেন!দূর পাগলী। এদিকে তাকা..এই…মাহিন উঠে বসার চেষ্টা করতেই স‍্যালাইনে টান পড়ল। গতকাল থেকে জমে থাকা মেঘলা অভিমান আমার ঝরে পড়ছে চোখে।
মাহিন কে উঠতে না দিয়ে আমিই উঠে আসলাম মাহিনের কাছে। বাঁ হাতে মাহিন আমায় বুকে টেনে নিল। সেদিন দুজনেই কেঁদেছি ঠিক কতক্ষণ তা মনে নেই। কিন্তুএই কান্না যেন মিটিয়ে দিচ্ছিল হাজার বছরের দুরত্ব, ঘুচিয়ে দিচ্ছিল সকল লেনদেন। সেদিনই দেখা হয়েছিল কিংবা
স্বপ্নবৃক্ষের চারার জন্ম, জীবনের আয়োজনের সকল সেরা স্বপ্নগুলো।
শুরু হল এক অসীম সম্পর্কের,যার ঠিক উপমা কখনো দাঁড় করাতে পারিনি। প্রেম কি এক মোহময়ী অপূর্ব ভুবন!জীবনের চির চেনা দুর্গম অলি গলি অনেকটাই হয়ে গেল সহজ সুন্দর পথ। মনে হতো শুধু মাহিনের হাত ধরে এগিয়ে যেতে পারি পৃথিবীর সকল বাধা বিপত্তি ঠেলে। ওর চোখে চোখ রেখে আমি পার করে দিতে পারি এমন হাজারটা জীবন।আমি ভাবতেই পারতামনা পাঁচটা বছর আমি মাহিনের ভালোবাসাকে তুচ্ছ করেছি!জীবনের রং
যে কতটা সুন্দর,রঙিন হতে পারে তা মাহিনের ভালোবাসা আমাকে বুঝতে শিখিয়েছিল।ওর সব দাবী আমার কাছে হীরেতুল‍্য! সবকিছুতেই ওর মতের অগ্রাধিকার পেত।জামাকাপড়ের রং থেকে শুরু করে এমনকি সকালের নাস্তায় কি খাব সেটাও মাহিন বলে দিত। দিনেদিনে কেমন যেন মাহিনের উপর নির্ভর হয়ে পড়ছিলাম।

যদিও আমাকে প্রতিষ্ঠিত করা নিয়ে বাবার অনেক স্বপ্ন ;তবু বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এক পাইলট এসে সব লন্ডভন্ড করে দিল বিয়ের প্রস্তাবে।ফ‍্যামিলির সবাই রাজি হয়ে গেল।কেউ বুঝতে চাইলোনা আমারও কেউ পছন্দের আছে,আমিও একজন কে নিয়ে স্বপ্ন দেখি, তাকে ছাড়া জীবনে আমি খোঁড়া!আমার সকল চাওয়া ছাপিয়ে সাদামাটা কেউ একজন শ্রেষ্ঠত্ব কেড়ে নিয়েছে। আমি সবকিছু খোয়াতে রাজি শুধু তার পূর্ণতায়!

কিন্তু সেই মাহিনও এখন দেশের বাড়িতে গেছে।কিছুতেই যোগাযোগ সম্ভব হলনা। নিজের ভেতর নিজে কুঁকড়ে যাচ্ছিলাম! বাবা-মা,চাচা কাউকে বুঝাতে পারলাম না রক্ত মাংসের দলিত পিণ্ডের সঙ্গে ছাড়া আমার অর্ধাঙ্গ হবার যোগ্যতা মাহিন ছাড়া কারো নেই! কিন্তু তাদের চোখে মাহিন ছন্নছাড়া, হতদরিদ্র ঘরের গ্রামীণ বেকার ছেলে মাত্র।

বিয়ের বাকি দশদিন!
আত্মীয়-স্বজন মিলছে উচ্ছ্বসিত আনন্দের ঢাকঢোল নিয়ে।সারাবাড়ি জুড়ে যখন সবাই বিয়ের আয়োজনের ফুলঝুরি নিয়ে বসে আমি তখন আত্মহত্যার কথা ভাবি চোখ বুজে।আমার আমি যেন কিছুতেই মাহিন নাম ছেড়ে মুখ ফেরাতে অপারগ। মুহূর্তে মুহূর্তে আমি যেন ক্ষয়ে যাচ্ছি সময়ের খাতা থেকে।ঠিক এমন মুহূর্তে কি করে যেন টুকটাক কাপড়ের ব‍্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম মাহিনের উদ‍্যেশ‍্যে! অথচ তার ঠিকানা টুকু পর্যন্ত আমার অজানা।প্রথমেই ওর হলে গেলাম, এই ক’দিনে ওর খোঁজে বেশ কয়েকবার আসাতে পাশের রুমের তৌহিদ আমাকে দেখেই এগিয়ে এলো হাসিমুখে…”মাহিন ঘন্টা খানেক আগেই এসেছে বাড়ি থেকে!”

মনে হচ্ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী আমি, চোখের কোণে কতকাল পর যেন প্রাপ্তির আলোর ঝিলিক!শরীরের প্রতিটি অনু-রেনুতে আমি উপলব্ধি করলাম ভালোবাসার সুখ! ঐতো মাহিন আসছে..হাজার কোটি মাইল ফলক মাড়িয়ে আমার জীবন-শহরে!জীবনের শ্রেষ্ঠ উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে গেল যেন বড্ড স্বস্তিতে চোখ বুজে বললাম-

–তুই এসেছিস?”

–হুম.. তুই নাকি খুঁজে গেছিস?কি যেন জরুরি?আরে বলেইতো বাড়ি গেছি নাকি। ”

–বলছি, অনেক কিছু বলার আছে।কিন্তু আগে …

–কি…?”

–মাহিন.. আমি বাড়ি ছেড়ে এসেছি!বাবা
আমার বিয়ে ঠিক করেছেন..

–আশ্চর্য!!”

–কোনো আশ্চর্যের বিষয় নয়।চল আমরা বিয়ে করে বাবার কাছে ক্ষমা চাইব।”

–বলিস কি?এখন বিয়ে!”

–এছাড়া উপায় কি?”

–কিন্তু আমার পক্ষে এখন বিয়ে অসম্ভব।
পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত,
পড়াশোনা শেষ হতে এখনো চার বছর বাকি।নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই আগে।
তুই বাবাকে বুঝিয়ে বল…

–সে বলতে আর কিছু বাকি নেই।”

–এখন আমিও তো কিছু করতে পারছিনা..

মাহিনকে দেখে যতটুকু উচ্ছ্বাস মিলেছিল
তারচে কোটিগুণ বিষাদে ছেয়ে গেল মন। পায়ের তলার মাটি যেন সরে গেল নিমিষেই।অতল থেকে নৈরাশ‍্য গহীন অতল গহ্বরে আমি তলিয়ে যাচ্ছিলাম, সমস্ত পিছুটানের শেকল ছিঁড়েছে অজান্তেই।
মাহিন ফিরে যাচ্ছে…!
বুকের বাঁ পাশটা খামচি দিয়ে ধরেছিল যেন কেউ! ততক্ষণে পিচঢালা রাস্তায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছি মাথাঘুরে,শেষ বারের মতো চোখ বোজার আগে একবার তাকালাম–ঐতো মাহিন চলে যাচ্ছে, অনেক দূরে…!

শুনেছি মানুষের অতিমাত্রায় আবেগের একটি নির্দিষ্ট সময় বা বয়সে হয়ে থাকে,আমি কিংবা মাহিনের ক্ষেত্রে আবেগ বা ভালোবাসা ব‍্যাপারটা জীবনের ভিন্ন সময়ে এসে ধরা পড়েছে। বলতে গেলে সাধারণের চেয়ে কিছুটা বেশি দেরিতে দরদী আবেগ এসে ভিড় জমায়, স্বপ্ন জাগায়, আমি ভেবেছিলাম এই দেরীই হয়তো সবার চেয়ে আলাদা হয়ে ভালোবাসার পূর্ণতা এনে দেবে। ভেবেছিলাম আমার মাহিনের ভালোবাসা জন্ম-মৃত্যুর মতোই জটিল সহজ বিষয়।
কিন্তু সব ভাবনা মিথ্যে করে মাহিন আমাকে ফেলে গেছে!

আমি নতুন করে জেনেছি ভালোবাসা বলে কিছু নেই।প্রেম হচ্ছে অসাধু এক আবেগী আবেদন।যার লক্ষ্য বীপরীতার্থ শরীর। মানুষ অচেনা এক আরামপ্রিয় জীব তাই জীবনের প্রতিচ্ছবিতে ভালোবাসার বেশে কেউ একজনের উপর দায়িত্ব তুলে দিয়ে নিজে স্বস্তি খুঁজে পায়। আমরা তার দায়ভার তুলেছি ভালোবাসার রং কাব‍্যে। জাগতিক সমস্ত কিছুই চলছে স্বার্থের নিরীখে।প্রেম ভালোবাসাও তার উর্ধ্বে নয়।
একসময় সবাই সবার প্রিয় মানুষটিকে ফিল করেনা আর। কারণ তখন স্বার্থের চাওয়া ফুরিয়ে আসে, ফুরিয়ে আসে জীবন, ফুরিয়ে আসে সময়ের রং, সবকিছুই তখন সাদাকালো হয়ে যায়, ধেয়ে আসে বার্ধক্য মৃত্যু!

১৯৯৭ সাল,ফেব্রুয়ারি মাস।আমার গাড়ি ছুটছে রামপুরা টিভি ভবনের পাশ কাটিয়ে উলন রোডের একরামুন্নেছা হাই স্কুলের উদ‍্যেশ‍্যে ।এস এস সি পরীক্ষা হলে, হল পরিদর্শক হিসেবে।গাড়ির সামনের সীটে বসা কনস্টেবল দুটো মোবাইল গুতোচ্ছে কিন্তু আমি ঠিক টের পাচ্ছি দুজনেই লুকিং গ্লাসে আড়চোখে আমার দেখছে।
থ্রীপিস পরে হল পরিদর্শনে গেলে পরীক্ষার্থী ভেবে বসে অনেকেই।তাই বেশ সময় নিয়ে কালো রঙের জামদানী পরেছি।চুল খোলা,হালকা লিপস্টিক, সিম্পল গহনা সাজ। অভিভাবকদের ভীড় ঠেলে গাড়ি স্কুল গেটে ঢুকছে। আমার চোখ কেন যেন এই চিন্তিত অভিভাবকদের দেখতে চায়! এদের চিন্তার মধ্যেও যে স্বার্থ মিশে থাকে তা তারা বুঝতে পারে না।
আমার জন্য এটা দ্বিতীয় পরিদর্শন তবুও একটু ভয় কাজ করছে। আড়চোখে এক নজরে অভিভাবক দেখে নিতেই চোখে প্রচণ্ড ধাক্কা খেলাম! মনে হচ্ছিল আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। হৃদপিণ্ড লাফিয়ে উঠল এক ঝলকে। হার্টবিট বাড়ছে,শ্বাসকষ্ট হচ্ছে!
বাঁ পাশের অভিভাবকের শারির শেষেটায় দাঁড়িয়ে আছে মাহিন!সাদা শার্ট-প‍্যান্ট, গলার কাছের বোতাম টাও লাগানো। হাতে কালো রঙের আলখাল্লা নাকি?
হা হা হা তবে কি “এডভোকেট মাহিন”?
আগের চেয়ে স্বাস্থ্য বেড়েছে। পাশেই তৌহিদ এক পরীক্ষার্থীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে।মাহিন সানগ্লাসটা খুব ধীরে ধীরে নামিয়ে ভালো করে তাকিয়ে দেখছে আমাকে।

কোনো ইচ্ছে ছিলনা দ্বিতীয়বার মাহিনের সঙ্গে যোগাযোগের, তবুও অনিচ্ছায় তাই হতে চললো। নিজেকে আজকাল বড্ড একা লাগতে শুরু করেছে।বুঝতে পারছি মানুষের স্বার্থিক স্বভাব আবারও আমাকে গ্রাস করছে। আমি এই স্বভাবকে বহুবছর আগেই কাটিয়ে উঠতে শিখেছি।তবুও কেন এ স্বভাব মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে?



১৪ই ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে তিনটা শাড়ি চেঞ্জ করেছি। চঞ্চল মন কিছুতেই শান্ত হচ্ছেনা। মা দুবার এসে জানতে চেয়েছেন কোথায় যাচ্ছি। বলার মতো কিছু খুঁজে পাইনি।
সাজগোজে কখনও আমি পারদর্শী ছিলাম না। আজও সিম্পল সাজেই মাহিনের সামনে দাঁড়াতে হবে, তাতে কি! আজ আর কারো মন রাঙ্গাবার প্রেম নিয়ে পথচলার তাড়া নেই।

ফ‍্যাশন ওয়ার্ল্ডের কফি হাউসে অনেকখন বসে মাহিন। আমাকে দেখেই দাঁড়িয়ে চেয়ার টেনে দিল! গম্ভীর ভাব কাটিয়ে তীক্ষ্ম কণ্ঠে বললাম–
–বাহ্ এডভোকেট সাহেবের ভদ্রতা রপ্ত করা হয়েছে বেশ বলতে হবে!”

–আমি আগেও গাম্ভীর্য ও ভদ্রতার ভক্ত ছিলাম সেটা তোর ভালোই জানা।”

–হুম, তো কেমন চলছে দিনকাল?”

–ফিজিক‍্যালি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। মানসিক ভালো কখনো ছিলাম না, মনে হচ্ছে থাকার চেষ্টা করার সময় হয়েছে।”

–ভালো!”

আমি মাহিনের চোখের দিকে তাকাতে পারছিনা কেন জানি।মনে হচ্ছে কিছু একটা ভুল ধরা পড়ে যাবে নিমিষেই।আমি এই ভুলকে আবিস্কার করতে চাইনা।”
মাহিন কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে আস্তে করে ডাকলো —

–বিপুল…”

–শুনছি।”

–তুই কেমন আছিস?”

–ভালো আছি।কেন ডেকেছিস বল?”

–তোকে দেখতে ইচ্ছে করল!”

–হা হা হা…”

–হাসছিস কেন?”

–এমনি, বৌ কেমন আছে তোর?বেবী আছে ?”

একথায় মাহিন কেমন ব‍্যঙ্গের হাসি দিল।
নিজেকে কেমন হেয় মনে হল।মনে হল আমি হেরেছি ঐ মিথ্যে ভালোবাসার কাছে।হেরেছি জীবনের কাছে,সময়ের কাছে।তার জন্য আমিই দায়ী,আমার সরলতা দায়ী! নীরবতা ভেঙে মাহিন বলল

–তোর বাবা মা ফ‍্যামিলি কেমন আছেন?”
তোর ছোট্ট একটা বোন ছিল না,ঐশী কেমন আছে?কিসে পড়ে?”

–মা ভালো,বাবা নেই।ভাইবোন পড়াশোনায় ব‍্যস্ত।”

–আমি তোর বাসায় যেতে চাই। ”

–ও আচ্ছা, হঠাৎ?”

–সেটা বাসায় গিয়েই বলি!

–না এখনই বল?”

–না মানে তোর যদি দ্বিমত না থাকে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছিলাম।”

–কেন কি নিয়ে?”

–বিপুল….!”

–কি নিয়ে আলোচনা?”

–বিপুল আমি জানি আমার উপর তোর অভিযোগ অভিমানের শেষ নেই।আমাকে ক্ষমা করিস।তবে আমি বিশ্বাস করি আমি তোকে ভালোবাসি।গত দুবছর আমি তোকে হন‍্যে হয়ে খুঁজেছি। আমি নিতান্ত গ্রামের ছেলে তখন প্রস্তাব পাঠানোর মুখ ছিলনা। এখন আমি প্রতিষ্ঠিত, তোর পরিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়ানোর যোগ্য হয়েছি।”

–হা হা হা……”

–হাসছিস কেন!?”

–আমি বিবাহিত মাহিন…।।”

–মানে…!কিন্তু আমি যে শুনেছি….”

–ভুল শুনেছিস।।”

–কি বলছিস?”

–ঠিক বলছি,আমাকে উঠতে হবে।ভালো থাকিস।আর হ‍্যাঁ অহেতুক ফোন করবিনা।”

–ওহ্.. আচ্ছা!”

আমি উঠতে যাচ্ছি মাহিন ফের ডাকলো-
কোটের বুকপকেট হাতড়ে একটা গিফট পেপারে মোড়ানো ছোট্ট মুঠোয় পুরোনো যায় এমন একটা বক্স এগিয়ে দিয়ে বললোঃ

–বিপুল..অনেক দিন ধরে এটা আগলে রেখেছি তোকে দেব বলেই,না নিলে কষ্ট পাব একটু বস..।”

আগেই খেয়াল করেছি টেবিলের একপাশে একটা গোলাপি রঙা গোলাপের তোড়া। সেটাও নিজ থেকে হাত বাড়িয়ে নিলাম হয়তো বলতে সাহস পাচ্ছেনা বেচারা। ছোট্ট করে বললাম,,
–যাই?”

–হু…আচ্ছা, তবে ফোনে জ্বালানোর অধিকার টুকু দিস।”

আমি মিষ্টি হেসে বেরিয়ে পড়লাম। গাড়িতে বসে বসে গোলাপ গুলোয় হাত বুলোলাম। মনে হচ্ছে এ আমার সেই মাহিনের দেয়া গোলাপ যার জন্য আট বছর আগে আমি ক‍্যাম্পাসে উদ্বীগ্ন হয়েছিলাম। যার জন্য ভেবেছিলাম ভালোবাসা নামক কিছু একটা বিষয়ের অস্তিত্ব আছে। যাতে হাজার মাইল দূরে থেকেও একে অপরকে ফিল করা যায়। আমি যেন এখনো মাহিন কে ফিল করছি,চোখ বুজে দেখতে পাচ্ছি ঐতো ঐ মাহিন কফি হাউসের সেই টেবিলে বসে এখনো মন খারাপ করে আছে। ঐতো শার্টের হাতায় চোখ মুচছে।আট বছর পর তার চোখে যে অশ্রু জমেছে তাই সত্য, তাই-ই ভালোবাসা।

কিন্তু না। আমি বিশ্বাস করি পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই।যা কিছু আছে তা নিতান্তই ছেলেখেলা।

মাহিন পর্বটা এভাবেই শেষ করতে চেয়েছি। হয়নি বারবার মাহিন সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে।কোনো এক বিচত্র কারণে।এখন দুজনের ব‍্যস্ততার শেষ নেই।তবুও ঘটা করে ফোন করা হয়। মন ভাবায় আসলেই কি ভালোবাসা বলে কিছু আছে?

২০০২ সাল,১৪ ঠা ফেব্রুয়ারি। আজও মাহিন দেখা করতে বলেছে। আমি ডিসিশন নিয়েছি ওর সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ রাখবোনা। ফোন অফ করে সকাল থেকে বেলকনিতে বসে আছি…

ঐশী এসে কয়েকবার খেতে ডেকে গেছে, একমাত্র ভাই অয়ন এসে চুলে বিলি কাটছে
–বুঝতে পারি এসবের পিছনে স্বার্থ কাজ করে।

–অয়ন কত টাকা লাগবে তোর?”

–এই আপু..না মানে বন্ধুরা সবাই মিলে পিকনিকে যাচ্ছি।আচ্ছা তুমি জানলে কি করে আমার টাকা লাগবে?”

–কত লাগবে?”

–না মানে হাজার ছয় হলেই চলে।”

–রাতে নিস,যা এখন..

দুপুরে মা এলেন, কাঁধে হাত রেখে বললেন:

–খাবিনা? কি হয়েছে তোর?”

–খিদে নেই।।”

–আমি বলছিলাম কি …

–বলোনা আমি শুনবোনা।”

–ঐশী, অয়ন ওরা এখন বড় হয়েছে।তোর নিজেকে নিয়ে ভাবা উচিত।”

–হু,স্বার্থপর দুনিয়ায় সবাই নিজেকে নিয়ে ভাবে।”

–বিপুল তোর বিয়েটা সেদিন আমি ভেঙে দিয়েছিলাম তোকে জব করতে দিয়েছিলাম শুধু কি আমার আর আমার
ছোট ছোট সন্তানদের জন্য?তুই কি আমার
সন্তান না?

–মা..পৃথিবীতে কোনো কিছুই অহেতুক নয়।তোমার ছোট মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে বলে সমাজের চোখে আইবুড়ি বিপুলকে তাড়াতে চাইছো!ভেবে দেখো তোমার ছেলে অয়ন কিন্তু এখনো পড়াশোনা শেষ করেনি।”

–কিছু বলবনা,যেদিন মা হবি সেদিনই বুঝবি,মায়ের ভালোবাসা বলেও কিছু আছে।যার পরিধি অসীম।পৃথিবীর কোনো ব‍্যখ‍্যায় তাকে রপ্ত করা যায় না।কোনো সংজ্ঞায় ভালোবাসা পরিপূর্ণ সংজ্ঞায়িত হয়না।স্বার্থ, চাওয়া, আকাঙ্ক্ষা সবকিছুর উর্ধ্বে এই ভালোবাসা।

–এতো বছর পর তোমার মনে হল বিপুল বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে?”

–শুধু আমি চাইনি বলেই বিয়ে করিসনি? ভালো করে ভেবে বলতো শুধু আমিই সন্তানদের ভালো চেয়েছি তুই তোর ভাইবোন দের ভালো চাসনি?”



এসব কথার জবাব আমার কাছে আছে। তবুও চুপকরে থাকি।
মায়ের দেখানো লোভটা ঝালিয়ে দেখতে ইচ্ছা করে। ইচ্ছে করে সত্যি সত্যি মা হই। প্রতি ভ‍্যলেন্টাইনে আমার নষ্টালজিয়ায় পেয়ে বসে। ইদানীং ডিভোর্স প্রাপ্ত ছেলেদের প্রস্তাবের হিড়িক পড়েছে আত্মীয় স্বজন থেকে। এসব দেখে হাসি পায়। আল্লাহ পাক সবার কপালে বিয়ে লিখেন না। আমার কপালেও লিখেন নি।

সময় ,ব‍্যস্ততা কেড়ে নেয় জীবনের অহেতুক আবেগ।আমিও ভুলে যাই আমারও চাইবার ছিল কিছু…!মাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ ও বন্ধ করে দিলাম।পাছে ধরা পড়ে যাই আমি এখনো ভার্জিন!

২০০৯ সাল,১৬ই জানুয়ারি।ঐশীকে বিয়ে  দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পার করে দিচ্ছি। ঐশীকে ছেলেপক্ষ ডাক্তারি পড়তে কোনো বাধা দিবেনা সেই চুক্তি পাকা করতে বেশ বেগ পেতে হল। কিন্তু বিয়েবাড়িতে লোকজনের আলোচনার মূখ্য বিষয়বস্তু আমি। পুরোনো সিমটা খুলে কেন জানি মাহিনের খবর নিলাম।

–কেমন আছিস?”

–তোর অপেক্ষায় আছি..

–ও আচ্ছা!”

–আমি জানি তুই এখনো আমাকে ভালোবাসিস।”

–হা হা,, ওসব মিথ্যে মাহিন।”

–তবে কেন ফোন করেছিস?”

–আজ অনেক বড় একটা দায়িত্ব সেরেছি।
ঐশীকে তার ঠিকানায় পাঠিয়েছি তার পছন্দের ছেলের সঙ্গেই।আমার মনটা খুব হালকা লাগছে।”

–ব‍্যস এটুকু বলার জন্যই?”

–হ‍্যাঁ।।”

–মিথ্যা বলবিনা, আমি সব জানি তুই ..

–কি?”

–বিপুল… আমি এখনো তোকে ভালোবাসি।সত্যি বলছি…! আমি এখনো তোর অপেক্ষায়।সারাজীবন আমি তোর জন্য অপেক্ষা করতে পারি।তুই আমার চেয়ে তোর ভাইবোনদের অনেক বেশি ভালোবাসিস এটাই তো। আমার দিক থেকে তাদের জন্য কোনো বাঁধা থাকবে না। চল বিপুল একবার সেই আগের মতো করে আমার কাছে ছুটে আয়,,,আমি তোকে কখনও অমর্যাদা করবো না।কথা দিচ্ছি বিপুল…। তুই আমার কাছে মিথ্যে বলে পালিয়ে বেড়ালেই ভালোবাসা আড়াল হয়ে যাবে না। আমি দূর থেকে তোকে ঠিকই নজরে রাখব। আমি জানতাম না সেদিন তুই অমন করে রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়বি।
বুঝতে পারিনি …তুই আমাকে এতোটা ভালোবাসিস যে এখন পর্যন্ত কাউকে স্বামীর স্থান দিতে পারিসনি…

–পৃথিবীতে ভালোবাসা বলে কিছু নেই।”
কথা দেয়া নেয়া বলে কিছু নেই। বাবা হঠাৎ করে যদি পৃথিবী ছেড়ে না যেতেন, সেদিন যদি আমার বিয়েটা হয়েই যেতো। তখন এসব ভালোবাসার নাকপঁচা কথা শোনাতিনা। লাইনটা কেটে দিয়ে মনে হল ফোন করাটা ভুল হয়েছে। নিজেকে নিজের ভেতর সামলে রাখা উচিত। অযাচিত রং মিথ্যা মায়ার খাতে যোগান দেয়ার মানে হয়না।

২০১৫ সাল। অয়ন পড়াশোনা শেষে এখন  প্রথম শ্রেণীর ম‍্যজিস্ট্রেট। ভাইবোনকে  শিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে আমি কখনও কার্পণ্য করতে পারিনি।আমি ভেবেছি কেন পারিনি? হয়তো জীবনের শেষ বয়সে আমার পাশে দাঁড়ানোর মতো মানুষের অভাব আমার মনে লুকিয়ে আছে বলেই। বার্ধক্যে কেউ না কেউ তো পাশে থাকতে হবে!অবচেতন মন তারই যোগানদাতা।

অয়নের কাজের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত লোকজন ইদানিং বাসায় আসে।আমার দেখার সময় হয় না। সেদিন বাসা ফিরতে রাত আটটা বেজে গেল।আমার মনেই ছিল না আজ ২ ডিসেম্বর, আমার জন্মদিন। ড্রইংরুমে পা দিতেই ঐশী-অয়নের হৈচৈ শুরু হল।কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই তবুও
দেখলাম দূরে সোফায় বসে ঐশীর বর  হাত নেড়েনেড়ে কেউ একজনের সঙ্গে কথা বলছে। কিন্তু সেই একজনকে বড্ড চেনা মনে হচ্ছে। দু’কদম এগুতেই বুকটা ধ্বক করে উঠল! মাহিন…
মা খুব যত্ন করে মাহিনকে নাস্তা এগিয়ে দিচ্ছেন।

নিজেকে সামলাতে কষ্ট হল,বয়স হয়েছে তো! শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। নিজের রূমে এসে বসে পড়লাম।ছোট ভাইবোন গুলোকি জেনে গেছে মাহিন আমার …ওহ্…

সবাই মিলে দরজায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। আমার আজও সেদিনের মতোই পায়ের নিচটা দুলে উঠছে। মাথাটা ঘুরে উঠল, মনে হল আমি টের পাচ্ছি ঐতো দরজার ওপাশে কতগুলো প্রিয় মুখের সঙ্গে মাহিনের উদ্বিগ্ন মুখ ঘামছে। আমি ফিল করছি ওকে..! ও দীর্ঘ ষোলটা বছর আমার জন্য অপেক্ষা করেছে!কখনও আমার বাড়ির আঙিনা মাড়ায়নি আমার দুঃসময়কে সাপোর্ট করেই?আজ ভাইবোনের কাছে আমার দায়িত্ব ফুরিয়েছে।আমি জীবনের হয়তোবা শেষপ্রান্তে!তবুও মাহিন এগিয়ে আসছে। আমার বদ্ধ দুয়ারে চিন্তিত আঘাত করছে।

ঐ চিন্তাই কি সঠিক ভালোবাসা?এই অপেক্ষার নামই কি ভালোবাসা?অদেখা এক ঐশ্বরিক বিষয়? এর পেছনে কোনো স্বার্থ থাকেনা থাকতে পারেনা। সে একাই তার প্রতিদ্বন্দ্বী,ভালোবাসা নিজেই নিজের সম্পুরক! আমার এতোটা কাল অবিবাহিত জীবনের মূলেও কি মাহিনের প্রতি ভালোবাসা ? যা আমি টের পাইনি এতোটা কাল?

আমার ঐ বদ্ধ দুয়ার খুলে দেয়া উচিৎ, কিন্তু আমি তা পারছিনা। আমার হাত পা অবস হয়ে আসছে।আমার চোখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে…। মাথার ভেতর ভোঁতা যন্ত্রণা হচ্ছে..বুকের বাঁ পাশটাতে প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে।
আমি হয় অ‍জ্ঞান নয়তো মারা যাচ্ছি! আর এখনই আমার বিশ্বাস হচ্ছে পৃথিবীতে ভালোবাসা আছে, আর ভালোবাসা আছে বলেই আমি কখনো বাবা-মা, কখনো ভাইবোন,
কখনও প্রেমিক রূপী মাহিনকে ভালোবেসে জীবনকে উৎসর্গ করতে পেরেছি! হয়তো জীবনের অপরাহ্নেরদেরও রোমান্টিক ইজ্জত থাকে……

‘আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩’ এ তৃতীয় স্থান অর্জনকারী গল্প >> অন্তরালে ভালোবাসা – জান্নাতুল ফেরদৌস



গল্প মেঘেরও ক্লেশ আছে । আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প । লেখক পরিচিতি

লেখকঃ রুবী ফরায়েজী বিপুল
ছোটগল্পঃ গল্প মেঘেরও ক্লেশ আছে
গল্পের জনরাঃ ভালবাসার গল্প
দেশের বাড়িঃ ফরায়েজী বাড়ি,ছাগলনাইয়া, ফেনী।
পড়াশোনাঃ ডঃ খাস্তগীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও চট্টগ্রাম সিটি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (২০১৯)।

রুবী-ফরায়েজী-বিপুল-আত্মপ্রকাশ-লেখক-ruby-forayezi-bipul-attoprokash-writter-min
লেখক- রুবী ফরায়েজী বিপুল

লেখকের কথাঃ

আমি জানি না কোথায় মিশবো বলেই জীবনের সূচনা।ভালোবাসি কবির কলম,কবিতা।দৈব আকাশ কখনো ওজন করে দেখতে পারিনি কতোটা তার স্থায়ী চোখ। আমার ব্যক্তিগত পরিচয় বলতে এতটুকুই অস্বচ্ছ জীবন নন্দিনী! তবে কখনো হলুদ প্রজাপতির মতো মনে শান্তনার কাসুন্দি উড়াই আবার সদ্য শরতের মতো কাশফুলের কাজল আঁকি,তাই আমার তৃতীয় চোখ সাহিত্যের শুদ্ধ তটিনীর তীব্র ভোগী। নিজেকে চিনতে হলে সাহিত্যের কাগজে মফস্বল কলম তুলি। কলমের চোখ মানেই আমার ভেতরের চরিত্র উন্মুক্ত, উন্মুক্তবিপুলতা!! তবে লিখে কখনো তৃপ্তি মেটেনি।

মোঃ ওয়ালীউল্লাহ অলি

http://enlightentricks.com

সমসাময়িক একজন মানুষ। রক্তে মিশে থাকা লেখালেখি থেকেই ব্লগিং এর অনুপ্রেরণা। লিখতে ভালোবাসি। প্রচুর লিখতে হবে, বাঁচতে হলে লিখতে হবে। এই ব্রত মাথায় নিয়েই লিখে চলেছি। বাংলার পাশাপাশি ইংলিশেও ব্লগিং করছি Enlighten Tricks ওয়েবসাইটে।

2 Comments

  • […] ‘আত্মপ্রকাশ নির্বাচিত গল্প প্রতিযোগিতা – ০৩’ এ দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী গল্প >> গল্প মেঘেরও ক্লেশ আছে – রুবী ফরায়েজী […]

  • […] প্রেম বিষয়ে আমি বরাবরই উদাসীন।অন্য আর দশটা মেয়ের মতো সহজে কারোর সঙ্গে প্রেম জমে উঠেনি বা প্রেম আমাকে রাঙ্গাতে পারেনি। ক্লাসমেট মাহিন গত পাঁচ বছর নিরলস ভাবে এই দিনটিতে প্রপোজ করেই যাচ্ছে। আমি জানি প্রতি বছরের মতো আজও সে কয়েকটি গোলাপি রঙের গোলাপ নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির হবে। পাঁচটি বছর ধরে দেখছি,মাহিন সাধারণ আর দশটা ছেলের মতো নয়। ক‍্যাম্পাসের জাম গাছটার নিচে বসলেও ওর হাতে থাকবে ভারী বই,চোখে ভারী ফ্রেমের চশমা। গলার স্বর অনেকটাই গম্ভীর। ওকে আমার কখনোই প্রেমিক বলে মনে হয় নি। বাকি অংশ … […]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *